মধ্য বয়ষ্ক মানুষটির নাম রাফা,রাফায়েল রডরিগেজ। পুরোনো গাড়ির ব্যবসা আছে। তা দিয়েই সংসার চলে। সংসার বলতে সে একা একজন মানুষ। বউ ছেলে মেয়ে কেউ তার সাথে থাকে না। এক সকালে সে নিজে নিজেই তার গাড়ির বিজ্ঞাপন তৈরি করছিল। ক্যামেরা অন করে গাড়িগুলোকে পেছনে রেখে সে নিজের মত করে বলছিল আমি রাফা, রাফায়েল রডরিগেজ— । এমন সময় পাশ থেকে কেউ একজন তাকে অনুকরণ করে কথা বলে ওঠে। রাফা পেছনে ফিরে দেখে এগার বছরের একটি মেয়ে বসে আছে। যেন তাকে ভেংচি কাটছে। সে মেয়েটিকে তাড়িয়ে দেওয়ার জন্য তার দিকে ধাওয়া করলে মেয়েটি দৌড়ে সরে যায়। রাফা আবার ফিরে এসে নতুন করে ভিডিও বানানোর চেষ্টা করে। তখন দেখা যায় সেই ছোট্ট মেয়েটি আবার ফিরে এসেছে এবং ঘরের বারান্দায় টুল পেতে বসেছে। মেয়েটি দেখতে খু্বই মিষ্টি চেহারার অধিকারী,শান্ত আর ভীষণ বুদ্ধিমতি। গায়ে লাল টিশার্টের কলার থেকে হাফ হাতা পযর্ন্ত সাদা স্ট্রাইপ দেওয়া। পরনের জিন্স। দারুন মানিয়েছে তাকে। চুল ফ্রেঞ্চকাট। রাফা তার কাছে এগিয়ে আসে। জানতে পারে তার মা জেলে আছে এবং বাবা তাদেরকে অনেক আগেই তাড়িয়ে দিয়েছে। মেয়েটির নাম অ্যানা। অ্যানা সেদিন সারাদিন তার সাথে ঘুরে রাতে তার বাসায় থাকে। মাঝ রাতে রাফায়েল ঘুম থেকে উঠে ড্রয়িং রুমে এসে দেখে অ্যানা সোফার উপর শুয়ে আছে। রাফা সেখানে আসার পর অ্যানা চোখ পিটপিট করে তাকায়। রাফা তখন নিজের পরিচয় দেয় যে তার নাম রাফা, রাফায়েল রডরিগেজ। অ্যানা বলে আমার নাম অ্যানা এবং আমি জানি তোমার নাম রাফা। তারপর দুজন দুজনকে গুডনাইট বলে ঘুমিয়ে পড়ে।
পরদিন থেকে অ্যানা সব সময় রাফার সাথেই থাকে। রাফা আর অ্যানা কোথাও ঘুরতে গিয়েছিল। ফিরে এসে দেখে রাফার গ্যারেজের সব গাড়ি কর্তৃপক্ষ তুলে নিয়ে যাচ্ছে। সে কোনো ভাবেই তাদের আটকাতে পারে না। অ্যানার উপর রাগ ঝাড়ে যেন সব দোষ অ্যানার। রাফা ভেঙ্গে পড়ে আর অ্যানা তাকে সাহস দিতে চেষ্টা করে। তারপর দুজন বহু দূরে সাগর পাড়ে চলে যায়। যেখানে এমন একটি কুপ আছে যার গভিরতা কেউ জানে না। কুপের পাশে দাড়ালে হঠাৎ বিশাল একটা জলচ্ছ্বাসের মত তৈরি হয়। রাফা জানায় বহুদিন আগে কেউ একজন এই কুয়োয় ঝাপ দিয়েছিল। সাথে সাথে কুয়ো শুকিয়ে দিয়েছিল আর লোকটিকে সাগরের মাঝে নিয়ে ফেলেছিল। অ্যানা অবাক হয়। অ্যানা দেখে রাফা হতাশ হয়ে পড়েছে। রাফা তাকে বলেছে এই ব্যবসার টাকা দিয়েই তার সংসার চলে। রাফার হাতে তখন সামান্য কিছু টাকা ছিল। অ্যানা দেখলো রাফা জুয়ার আসরে যায় বিশেষ করে মোরগের লড়াই হয় যেখানে। একদিন অ্যানা তার পিছুপিছু যায় এবং দেখতে পায় রাফা তার শেষ সম্বল পাঁচ হাজার ডলার হেরে যায়। এগার বছর বয়সী অ্যানার খুব ক্ষুধা লাগে কিন্তু টাকা নেই। তখন ওই ক্লাবের হোটেলে ঢুকে দেখতে পায় একটি টেবিলে পপকর্ণ বাকেট। সেখানে কিছু পপকর্ণ অবশিষ্ট আছে। সে সেগুলো খেতে থাকে। হঠাৎ চোখে পড়ে একপাশে একটা বেবি ট্রলি যা অনেকটা হুইল চেয়ারের মত। বাচ্চা মেয়ের স্বভাব অনুযায়ি অ্যানা সেটা নিয়ে আসে এবং সেখানে বসে খেলতে থাকে। এক ফাঁকে ওর হাতে থাকা পপকর্ণ বাকেটের সব পপর্কণ শেষ হয়ে যায়। এমন সময় পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় এক লোক সেই ফাঁকা বাকেটে ২০ বাকসের একটি নোট দেয়।
বুদ্ধিমতী এনা সাথে সাথে বিষয়টা বুঝে ফেলে। এবার সে ইচ্ছে করেই হুইল চেয়ারের মত করে পুরো হোটেলের বিভিন্ন টেবিলে ঘুরতে থাকে আর তার বাকেটে ডলার এবং বাকস জমা হতে থাকে। রাতে সব ডলার হেরে রাফায়েল যখন বাসায় ফিরবে বলে গাড়িতে ওঠে তখন পেছনের সিট থেকে অ্যানা বেরিয়ে আসে। অনেক গল্প হয়। সে তাকে ডলার দেখায়। পুরো বিষয়টা বলে। সে বলে তুমি চাইলে তোমার ব্যবসার টাকা জোগাড় করতে আমি সাহায্য করবো। রাফায়েল তাতে সায় দেয় না। অ্যানার কাছ থেকে তার মায়ের বিষয়ে জেনে একদিন জেলে গিয়ে অ্যানার মায়ের সাথে দেখা করে এবং অ্যানাকে অ্যানার বাবার কাছে রেখে আসার সিদ্ধান্ত নেয়। এটা শুনেই অ্যানা বলে গিয়ে দেখবে তার বাবা তাকে চেনেই না। অনেক ঘটনার পর একদিন যখন সত্যি সত্যিই অ্যানার বাবার সাথে দেখা করে অ্যানার কথা বলে তখন লোকটা অস্বীকার করে। সে তখন তার নতুন স্ত্রীকে নিয়ে মেতে আছে। অ্যানা এবং রাফা ফিরে আসে। এক চার্চে যায়। সেই সময়ে অ্যানা সেই ক্লাবের মতই হুইল চেয়ারে বসে চার্চে আগতদের কাছ থেকে প্রচুর ডলার সাহায্য পায়। চার্চের দায়িত্বরত মহিলা বিষয়টি টের পায় এবং চার্চের বাইরে এসে অ্যানা ও রাফাকে ধরে ফেলে। অফিসে নিয়ে অনেক কথা হয়।
বুদ্ধিমতি ছোট্ট অ্যানা চার্চের কর্মকর্তাদেরও কনভিন্স করে ফেলে। বলে এটিকে একটি ফান্ড রেইজিং ওয়ে হিসেবে নিতে। কিছু অর্থ চার্চ পাবে বাকিটা অ্যানা পাবে। তারা রাজি হয়। এটা কোনো ভাবেই রাফা মানতে চায় না। এটা অন্যায়। পরে রাফা অ্যানাকে রেখে চলে যায়। অ্যানা চার্চের হয়ে সবার সামনে হুইল চেয়ারে বসে গল্প বলে। মিরাকল হিসেবে প্রচার করে যে সে এখন উঠে দাড়াতে পারে,হাটতে পারে। সবাই ইমপ্রেসড হয় এবং প্রচুর সহযোগিতা করে। কিন্তু এক পর্যায়ে দেখা যায় ৫০ হাজার ডলার আয় হয়েছে কিন্তু অ্যানা তার ভাগের অংশ চাইলে তারা বলে সে সব টাকাতো ডোনেট করে দিয়েছে চার্চের নামে। এমনই নাকি চুক্তি ছিল। কিন্তু ওরা জানতো না অ্যানা কতটা বুদ্ধিমতী। ওদের এই কথাগুলো সে রেকর্ড করে নিয়েছিল। পরে একদিন ব্যবসায়ীদের সম্মেলনে চার্চের জন্য ফান্ড রেইজিং হচ্ছে এমন অনুষ্ঠানে হাজির হয়ে অ্যানা কর্তৃপক্ষকে সেই রেকর্ড দেখায় ফলে বাধ্য হয়ে তারা অ্যানাকে ৩০ হাজার ডলার ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হয়। নানা চড়াই উতরাই পার হয়ে অ্যানা আর রাফায়েল অবশেষে আবার তাদের গ্যারেজ দাড় করাতে পারে। আগে রাফা নিজে মডেল হিসেবে গাড়ি বিক্রির চেষ্টা করে ভিডিও বানাতো এখন অ্যানা সেই কাজটি করে। গাড়ি ধুয়ে দেয় আর ভিডিও করে গাড়ির গুনাগুন বর্ননা করে।
অ্যানা নামের এই মুভিটি চমৎকার লেগেছে। গত কাল ২৩ অক্টোবর ২০২২ তারিখ রাতে মুভিটি দেখলাম। আগেই নামানো ছিল তবে দেখা হয়নি। মুভিতে মাঝে মাঝেই স্প্যানিশ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে তবে বুঝতে অসুবিধা হয়নি। অ্যানা চরিত্রে ডেফিনি কিন নামের মেয়েটি অসাধারণ অভিনয় করেছে। ডেফনি কিন এর আগে লোগান সিনেমায় উলভারিনের মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করেছে। তার অভিনয় দক্ষতা,তার মিষ্টি চেহারা,বুদ্ধিমত্তা আর দূরন্তপনা আমার ভালো লেগেছে। ডেফনি কিন তথা অ্যানাকে খুব আপন মনে হয়েছে।মনে হয়েছে এমন কেউ পরিবারে থাকলে দারুণ সময় কাটে।
লেখকঃ জাজাফী