ছেলেটির নাম নিকোলাস। বয়স বার। বরফের দেশে বাবার সাথে বাস করে। সারাক্ষণই থাকে মৃত্যু ভয় বিশেষ করে কখন না কখন মেরু ভল্লুক এসে আক্রমন করে। ছোট্ট একটি কুড়ে ঘর তাদের। বাবা আর নিকোলাস দুজনের বাস। ঘুমোনোর আগে নিকোলাস বাবার কাছে গল্প শুনতে চায়। একদিন বাবার সাথে ঘুরতে গিয়ে সে ভল্লুকের আক্রমনের শিকার হলেও দুজনই বেঁচে যায়। এর মাঝে এক রাতে নিকোলাসদের বাসায় একটু ইদুর ঢুকে খাবার চুরি করে। ওর বাবা কুড়াল দিয়ে তাকে কেটে টুকরো টুকরো করতে চেষ্টা করলেও পারে না। তিড়িংবিড়িং করে লাফিয়ে সরে যায়। পাশাপাশি নিকোলাস নিজেও ইদুরটাকে মারতে নিষেধ করে। এবং একসময় ইদুরটা নিকোলাসের বন্ধু হয়ে যায়। কিছুদিন পর বাবাকে একটি অভিযানে যেতে হয়। এলফাম নামে এক যাদুর শহর খুঁজে বের করার দলে ভেড়ে। এলফাম এমন একটি শহর যা সাধারণ মানুষের কাছে গল্প হিসেবে আছে। কিন্তু কেউ সেভাবে বিশ্বাস করে না। আর সেটা নিকোলাসদের বাড়ি থেকে অনেক অনেক দূরে। দিনের পর দিন সেখানে ভ্রমন করতে হয়। বরফ ঢাকা পুরো এলাকা। নিকোলাস বাবার সাথে যাওয়ার আব্দার করলেও তিনি না করেন। নিকোলাসকে দেখে রাখার জন্য তিনি তার আপন বোনকে চিঠি লেখেন এবং সেই বোন এসে হাজির হয়। নিকোলাস যদিও তাকে পছন্দ করে না। বাবা অভিযানে বের হওয়ার পর পরই যখন বাড়িতে নিকোলাস আর তার ফুপু ছাড়া কেউ নেই তখন ফুপু নিকোলাসকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। কোথাও থাকার যায়গা নেই। শুধু বরফ আর বরফ। নিকোলাস তার সেই ইদুর বন্ধু আর কিছু জামাকাপড় কম্বল নিয়ে দূরেই কাঠখড়ি দিয়ে তাবুর মত বানিয়ে সেখানে বাস করতে থাকে। এক সকালে ওকে ফুপু ডেকে স্যুপ খেতে দেয়। বেশ মজাদার স্যুপ খেতে থেকে একসময় দেখতে পায় তার প্রিয় একটি খেলনা যা একটি বড় সাইজের মুলা দিয়ে তার মা বানিয়েছিল সেটা দিয়ে স্যুপ রান্না করেছে। এতে নিকোলাসের মন খারাপ হয়। একই সময়ে নিকোলাসের বাবা যাওয়ার সময় তাকে একটা হ্যাট দিয়ে গিয়েছিল সেটাও আগুনে পুড়িয়ে দিতে চায়। তখন নিকোলাস আগুন লাগা অবস্থায় হ্যাটটি নিয়ে বাইরে বেরিয়ে এসে বরফে চাপা দিয়ে আগুন নেভায়।
দেখা যায় আগুনে অনেকটুকু পুড়ে গেছে। ভেতরে কিছুটা নকশা দেখা যাচ্ছে। নিকোলাস সেটা ছিড়ে হ্যাটটা উল্টে দিতেই দেখতে পায় সেখানে একটা নকশা কাটা যা সেই যাদুর শহর এলফামে যাওয়ার পথ নির্দেশ করছে! নিকোলাস সিদ্ধান্ত নেয় বাবাকে খুঁজতে যাবে। যেহেতু অনেক দিন হলেও বাবা ফিরে আসেনি। শেষে ফুপুকে না বলেই সে বেরিয়ে পড়ে। সাথে তার সেই ইদুর বন্ধু। মজার বিষয় হলো একপর্যায়ে নিকোলাস কারো একজনের কথা শুনতে পায় কিন্তু আসেপাশে কেউ নেই। তারপর সে দেখে তার ইদুর বন্ধুটিই কথা বলছে! নিকোলাস অবাক হয় এবং জানতে পারে ইদুরটি আগে থেকেই কথা বলতে পারতো কিন্তু সে বলেনি। এরপর গল্প করতে করতে সেই বরফের মধ্যে ওরা হাটতে থাকে। পথে একটা মেরু হরিণ বা ওই টাইপের প্রাণী যার হরিণের মত সিং আছে ওদেরকে আক্রমন করে। ওরা প্রাণ ভয়ে একটা গাছে ওঠে। পরে দেখতে পায় হরিণটা তীর বিদ্ধ হয়ে আছে। নিকোলাস নিচে নেমে আসে যদিও ইদুর ওকে নিষেধ করে। তীরবিদ্ধ হরিণকে সে তীরমুক্ত করে। তারপর বিদায় জানিয়ে হাটতে শুরু করে। এমন সময় দেখা যায় হরিণটাও ওদের ফলো করছে। একপর্যায়ে ওদের সঙ্গী হয়। নিকোলাসকে ইশারায় বলে হরিণের পিঠে চড়ে বসতে। নিকোলাস চড়ে বসে এবং অবাক হয়ে দেখে সেই হরিণটা খুবই দ্রুত বেগে তাদের নিয়ে বরফের উপর দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। ঘোড়ার মত দ্রুত গতি তার। একসময় তারা সত্যি সত্যিই এমন যায়গায় উপস্থিত হয় যে নিকোলাস জ্ঞান হারায়।
ওই সময়ে ওই পথ দিয়ে এলফামের ছোট্ট সাত বছর বয়সী একটি মেয়ে আর তার দাদু যাচ্ছিল। মানব শিশু দেখে তাদের মায়া হয় এবং তাকে সহযোগিতা করে। যদিও এলফামের সবাই মানুষকে ভয় পায় এড়িয়ে চলে। নিকোলাস কিন্তু এলফাম দেখতে পায় না যদিও সে তখন এলফামের মাঝেই দাড়িয়ে আছে। তখন ছোট্ট মেয়েটি বলে বিশ্বাস নিয়ে তাকাও দেখতে পাবে। তখন আস্তে আস্তে পুরো এলফাম ওর সামনে দৃশ্যমান হয়। ওরা একসাথে এলফামে গেলে রাণীর লোকদের টহল দিতে দেখে। ওরা একযায়গায় গিয়ে দেখে সবােই আনন্দ করছে। মেরি ক্রিসমাস বলছে। নিকোলাস জানেই না ক্রিসমাস আসলে কী। তখন ছোট্ট মেয়েটি ওকে কিছু তথ্য দেয়। নিকোলাস বলে ওর মা ওকে ক্রিসমাস বলে ডাকতো! একসময় রাণী এসে হাজির হয় এবং উৎসব বন্ধ করে দেয়। নিকোলাসকে মানব শিশু হিসেবে বন্দি করা হয় কারণ কিছুদিন আগে মানুষেরা এলফামের এক শিশুকে কিডনাপ করেছে। নিকোলাস কথা দেয় তাকে উদ্ধার করে আনবে কিন্তু কেউ কথা শোনে না। পরে ওকে যেখানে বন্দী করা হয় সেখানে পাখাওয়ালা একটি মেয়ের সাথে পরিচয় হয়। সেই ্ওকে সাহায্য করে। তারপর ওরা বেরিয়ে পড়ে। সেই হরিনের কাধের একটা জায়গায় হাত পড়তেই নিকোলাস অবাক হয়ে দেখতে পায় হরিণটা তাদেরকে নিয়ে আকাশে উড়ছে!
অনেক ঘটনার পর নিকোলাস সেই এলফাম শিশুটিকে উদ্ধার করে ফিরিয়ে দেয়। নেটফ্লিক্সে গতকাল ২২ অক্টোবর ২০২২ রাতে মুভিটি দেখলাম।
লেখকঃ জাজাফী