- – টি এইচ মাহির
❏
ঝুম বৃষ্টি।আষাঢ়ের মাঝামাঝি সময়।ঘুম থেকে উঠলো হাশেম।আজ কাজে যাবে না।অবশ্য গত দু একদিন শরীর তেমন ভাল যাচ্ছে না তার।হাশেম পেশায় একজন কৃষক। নিজের ছোট্ট একটা পৈতৃক জমি আছে। ওটাতে চাষ করে তার দিন চলে যায়। নিজের ছোট্ট একটা বাড়ি আছে। তাছাড়া তিন কুলে আপন কেউ নেই হাশেমের।
এমন বৃষ্টির দিনে বেরুবে ভাবল হাশেম।বিলে বৃষ্টিতে জমে পানিতে যদি দু একটা মাছ পাওয়া যায় তাহলে মন্দ কী।যেই ভাবা সেই কাজ। জালটা নিয়ে বেরিয়ে পড়লো হাশেম। বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে বিলের দিকে চলল।
দু একটা মাছ পেলে অনেকদিন পর মাছ ভাজা খাওয়া যাবে।একটু উদর পূর্তি হবে। তাছাড়া বৃষ্টির দিনে মাছ ভাজার সঙ্গে খিচুড়ি। ভাবতেই জ্বীবে জল আসছে হাশেমের। সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে কখন বিলের ধারে চলে এলো বুঝতেই পারলো না।
এখন বৃষ্টি একটু কমেছে। ঝিরঝিরি পরছে। বিশাল বড় বিল হাশেমের গ্রামে। হঠাৎ বিলের মাঝখানে কিছু একটা চোখে পড়লো হাশেমের। মনে হচ্ছে পানির নিচ থেকে পানি উঠছে।সাত সকালে কি চোখে ভূল দেখছে হাশেম?আশে পাশে কেউ নেই।
চুপি চুপি পানির স্তুপের দিকে এগুলো হাশেম।গিয়ে চক্ষু ছানাবড়া!মাঠির নিচ থেকে উঠে আসছে পানি।ছোটো গর্ত থেকে আসা পানির ঘূর্ণন তৈরি হয়েছে।অদ্ভূদভাবে পানি ঘুরছে।হাশেমের মাথা ঝিমঝিম করছে।কি হচ্ছে ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না সে।হঠাৎ ঘূর্ণির টানে কাদায় পা পিছলে পানির ঘূর্ণিতে হারিয়ে গেল হাশেম।
❏
পানির ঘূর্ণিতে হারিয়ে যাওয়ার পর হাশেম নিজেকে একটা রাজপ্রাসাদে আবিষ্কার করল।অপূর্ব এই রাজপ্রসাদে আরও অদ্ভূদ ব্যাপার হলো এখানে কেউ নেই।এক পা দু পা করে হাটতে লাগল হাশেম।সারাজীবন বেড়ার ঘরে কাটানো হাশেম রাজপ্রসাদ দেখে বিষ্মিত।একবুক কৌতুহল নিয়ে দেখছে রাজপ্রসাদের জিনিসগুলি।হঠাৎ একটা ছোট্ট টেবিলে একটা সুন্দর খাম দেখতে পেল সে।কাঁপাকাঁপা হাতে খুলে ফেলল খামটা।একটা চিঠি।কিছু একটা লেখা।একটু আধটু বাংলা পড়তে জানতো হাশেম।চিঠিটা পড়ল,
“ওহে মেহমান,
হাজার বছরে একবার আসে এমন সম্মান।
এ রাজপ্রসাদ,আছে যতো সম্পদ নিখিলে,
সবি তোমার,নিয়ে নাও,ঘূর্ণি পানিতে ডুবিলে।”
খুশিতে চিঠিটা আরো দু তিনবার পড়লো হাশেম।একেই বুঝি বলে কপাল ফেরা।
তারপর হাশেমের আর দুঃখ রইল না।গ্রামে তাকে আর দেখা যায়নি।গ্রামের লোকেরা হাশেমকে দেখতে না পেয়ে কিছুটা চিন্তিত হল।আহা,বেচারা এতিম ছেলেটা কোথায় চলে গেল?
[আষাঢ়ে গল্প]