মোহাম্মদ মোশাররফ হুসাইন
সভ্যতার ইতিহাসে ইসলামী সভ্যতাই সর্বশ্রেষ্ঠ সভ্যতা যাকে কেন্দ্র করে আজকের আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের উৎপত্তি। শুনতে অবাক লাগলেও এটাই বাস্তব সত্য। যেখানে ভাবা হয় যে, গ্রীক,রোমান সভ্যতা হয়ে মানব সভ্যতা রেঁনেসার ক্রমশ উন্নতির পথে এগিয়েছে। সেখানে আরব মরু বেদুইনরা দাঙা- হাঙামা ছাড়া বিশ্বের জন্যে উল্লেখযোগ্য কিছুই দিতে পারেনি। হ্যাঁ, যদি কিছু দিয়ে থাকে, তবে তা: Dark age বা অন্ধকার যুগ। অথচ এর বাস্তবতা সমপূর্ণ ভিন্ন। যার আলোচনা সামনে আসবে। গ্রীক, রোমান, পারস্য ইত্যাদি সভ্যতা হয়ে জ্ঞান – বিজ্ঞান ইউরোপে এক লাফে আসেনি। বরং তা এক সোনালি যুগ পাড়ি দিয়ে এসেছে। যার কারিগর ছিল তিন মহাদেশে বিস্তৃত বৃহত্তর মুসলিম সভ্যতা। আজকের জ্ঞান -বিজ্ঞান যে উচ্চতায় আসীন হয়েছে। তার পিছনে গ্রীক, রোমান ও অন্যান্য সভ্যতার যত অবদান রয়েছে, তার চেয়ে বেশি অবদান বৃহত্তর মুসলিম সভ্যতার, এটা কোন অতিশয় উক্তি নয়, বরং অকাট্য সত্য।দু:খজনিকভাবে এই সত্যটুকুর দশ ভাগের এক ভাগও আমরা মুসলিমরাই জানি না।
মুসলিম বিশ্ব একসময় বিজ্ঞান ও জ্ঞান চর্চার এক উজ্জ্বল কেন্দ্র ছিল। ইসলামের শিক্ষা ও গবেষণার প্রতি জোর দেওয়ার ফলে মুসলিম বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসাধারণ অবদান রেখেছিলেন।
কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ক্ষেত্র:
- গণিত: অ্যালজেবরা, জ্যামিতি, ত্রিকোণমিতি ইত্যাদি ক্ষেত্রে মুসলিম গণিতবিদরা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন। শূন্যের ধারণা, দশমিক পদ্ধতি, বীজগণিতের মৌলিক নিয়ম ইত্যাদি তাদের উদ্ভাবনের ফসল।
- জ্যোতির্বিদ্যা: মুসলিম জ্যোতির্বিদরা নক্ষত্রের অবস্থান নির্ণয়, গ্রহণ-সূর্যগ্রহণের পূর্বাভাস, ক্যালেন্ডার তৈরি ইত্যাদি ক্ষেত্রে অসাধারণ দক্ষতা দেখিয়েছিলেন।
- চিকিৎসাবিজ্ঞান: মুসলিম চিকিৎসকরা অস্ত্রোপচার, ওষুধ তৈরি, রোগ নির্ণয় ইত্যাদি ক্ষেত্রে উন্নত পদ্ধতি আবিষ্কার করেছিলেন। আয়ুর্বেদ ও গ্রিক চিকিৎসা পদ্ধতির সঙ্গে মিলিয়ে তারা চিকিৎসাবিজ্ঞানকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যান।
- রসায়ন: কাগজ তৈরি, সুগন্ধি তৈল, ধাতু পরিশোধন ইত্যাদি ক্ষেত্রে মুসলিম রসায়নবিদরা উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছিলেন।
- ভূগোল: মুসলিম ভূগোলবিদরা বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের মানচিত্র তৈরি করেছিলেন এবং ভূগোল বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করেছিলেন।
কেন মুসলিম বিশ্ব এত উন্নতি সাধন করতে পেরেছিল?
- ইসলামের শিক্ষার ওপর জোর: ইসলামে জ্ঞান অর্জনকে সবচেয়ে বড় ইবাদত বলে গণ্য করা হয়।
- খলিফা ও শাসকদের পৃষ্ঠপোষকতা: মুসলিম শাসকরা বিজ্ঞান ও জ্ঞান চর্চাকে উৎসাহিত করেছিলেন।
- বাণিজ্য ও যোগাযোগ: সিল্ক রোডের মতো বাণিজ্যপথের মাধ্যমে বিভিন্ন সংস্কৃতির সঙ্গে যোগাযোগ হওয়ায় জ্ঞানের আদান-প্রদান বেড়েছিল।
- বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা কেন্দ্র: বাগদাদ, কায়রোর মতো শহরে বিশ্ববিদ্যালয় এবং গবেষণা কেন্দ্র গড়ে উঠেছিল।
আজকের দিনে মুসলিম বিশ্বের অনেক দেশ আবারও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে উন্নতির পথে এগিয়ে যাচ্ছে। তবে ইতিহাসের সেই সোনালী অধ্যায় ফিরিয়ে আনতে আরও বেশি প্রচেষ্টার প্রয়োজন।