Thursday, January 30, 2025
Homeইতিহাস ঐতিহ্যবিজ্ঞানে মুসলিমদের অবদান

বিজ্ঞানে মুসলিমদের অবদান

মোহাম্মদ মোশাররফ হুসাইন

মোহাম্মদ মোশাররফ হুসাইন 

সভ্যতার ইতিহাসে ইসলামী সভ্যতাই সর্বশ্রেষ্ঠ সভ্যতা যাকে কেন্দ্র করে আজকের আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের উৎপত্তি। শুনতে অবাক লাগলেও এটাই বাস্তব সত্য। যেখানে ভাবা হয় যে, গ্রীক,রোমান সভ্যতা হয়ে মানব সভ্যতা রেঁনেসার ক্রমশ উন্নতির পথে এগিয়েছে। সেখানে আরব মরু বেদুইনরা দাঙা- হাঙামা ছাড়া বিশ্বের জন্যে উল্লেখযোগ্য কিছুই দিতে পারেনি। হ্যাঁ, যদি কিছু দিয়ে থাকে, তবে তা: Dark age বা অন্ধকার যুগ। অথচ এর বাস্তবতা সমপূর্ণ ভিন্ন। যার আলোচনা সামনে আসবে। গ্রীক, রোমান, পারস্য ইত্যাদি সভ্যতা হয়ে জ্ঞান – বিজ্ঞান ইউরোপে এক লাফে আসেনি। বরং তা এক সোনালি যুগ পাড়ি দিয়ে এসেছে। যার কারিগর ছিল তিন মহাদেশে বিস্তৃত বৃহত্তর মুসলিম সভ্যতা। আজকের জ্ঞান -বিজ্ঞান যে উচ্চতায় আসীন হয়েছে। তার পিছনে গ্রীক, রোমান ও অন্যান্য সভ্যতার যত অবদান রয়েছে, তার চেয়ে বেশি অবদান বৃহত্তর মুসলিম সভ্যতার, এটা কোন অতিশয় উক্তি নয়, বরং অকাট্য সত্য।দু:খজনিকভাবে এই সত্যটুকুর দশ ভাগের এক ভাগও আমরা মুসলিমরাই জানি না।

মুসলিম বিশ্ব একসময় বিজ্ঞান ও জ্ঞান চর্চার এক উজ্জ্বল কেন্দ্র ছিল। ইসলামের শিক্ষা ও গবেষণার প্রতি জোর দেওয়ার ফলে মুসলিম বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসাধারণ অবদান রেখেছিলেন।

কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ক্ষেত্র:

  • গণিত: অ্যালজেবরা, জ্যামিতি, ত্রিকোণমিতি ইত্যাদি ক্ষেত্রে মুসলিম গণিতবিদরা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন। শূন্যের ধারণা, দশমিক পদ্ধতি, বীজগণিতের মৌলিক নিয়ম ইত্যাদি তাদের উদ্ভাবনের ফসল।
  • জ্যোতির্বিদ্যা: মুসলিম জ্যোতির্বিদরা নক্ষত্রের অবস্থান নির্ণয়, গ্রহণ-সূর্যগ্রহণের পূর্বাভাস, ক্যালেন্ডার তৈরি ইত্যাদি ক্ষেত্রে অসাধারণ দক্ষতা দেখিয়েছিলেন।
  • চিকিৎসাবিজ্ঞান: মুসলিম চিকিৎসকরা অস্ত্রোপচার, ওষুধ তৈরি, রোগ নির্ণয় ইত্যাদি ক্ষেত্রে উন্নত পদ্ধতি আবিষ্কার করেছিলেন। আয়ুর্বেদ ও গ্রিক চিকিৎসা পদ্ধতির সঙ্গে মিলিয়ে তারা চিকিৎসাবিজ্ঞানকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যান।
  • রসায়ন: কাগজ তৈরি, সুগন্ধি তৈল, ধাতু পরিশোধন ইত্যাদি ক্ষেত্রে মুসলিম রসায়নবিদরা উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছিলেন।
  • ভূগোল: মুসলিম ভূগোলবিদরা বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের মানচিত্র তৈরি করেছিলেন এবং ভূগোল বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করেছিলেন।

কেন মুসলিম বিশ্ব এত উন্নতি সাধন করতে পেরেছিল?

  • ইসলামের শিক্ষার ওপর জোর: ইসলামে জ্ঞান অর্জনকে সবচেয়ে বড় ইবাদত বলে গণ্য করা হয়।
  • খলিফা ও শাসকদের পৃষ্ঠপোষকতা: মুসলিম শাসকরা বিজ্ঞান ও জ্ঞান চর্চাকে উৎসাহিত করেছিলেন।
  • বাণিজ্য ও যোগাযোগ: সিল্ক রোডের মতো বাণিজ্যপথের মাধ্যমে বিভিন্ন সংস্কৃতির সঙ্গে যোগাযোগ হওয়ায় জ্ঞানের আদান-প্রদান বেড়েছিল।
  • বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা কেন্দ্র: বাগদাদ, কায়রোর মতো শহরে বিশ্ববিদ্যালয় এবং গবেষণা কেন্দ্র গড়ে উঠেছিল।

আজকের দিনে মুসলিম বিশ্বের অনেক দেশ আবারও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে উন্নতির পথে এগিয়ে যাচ্ছে। তবে ইতিহাসের সেই সোনালী অধ্যায় ফিরিয়ে আনতে আরও বেশি প্রচেষ্টার প্রয়োজন।

লিখুন প্রতিধ্বনিতেলিখুন প্রতিধ্বনিতে

Facebook Comments Box
প্রতিধ্বনি
প্রতিধ্বনিhttps://protiddhonii.com
প্রতিধ্বনি একটি অনলাইন ম্যাগাজিন। শিল্প,সাহিত্য,রাজনীতি,অর্থনীতি,ইতিহাস ঐতিহ্য সহ নানা বিষয়ে বিভিন্ন প্রজন্ম কী ভাবছে তা এখানে প্রকাশ করা হয়। নবীন প্রবীণ লেখকদের কাছে প্রতিধ্বনি একটি দারুণ প্ল্যাটফর্ম রুপে আবির্ভূত হয়েছে। সব বয়সী লেখক ও পাঠকদের জন্য নানা ভাবে প্রতিধ্বনি প্রতিনিয়ত কাজ করে চলেছে। অনেক প্রতিভাবান লেখক আড়ালেই থেকে যায় তাদের লেখা প্রকাশের প্ল্যাটফর্মের অভাবে। আমরা সেই সব প্রতিভাবান লেখকদের লেখা সবার সামনে তুলে ধরতে চাই। আমরা চাই ন্যায়সঙ্গত প্রতিটি বিষয় দ্বিধাহীনচিত্ত্বে তুলে ধরতে। আপনিও যদি একজন সাহসী কলম সৈনিক হয়ে থাকেন তবে আপনাকে স্বাগতম। প্রতিধ্বনিতে যুক্ত হয়ে আওয়াজ তুলুন।
এই ধরণের আরো লেখা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

সাম্প্রতিক লেখা

Recent Comments