Thursday, November 21, 2024
Homeফিচারবিভিন্ন দেশের ডাকটিকিটে রবীন্দ্রনাথ

বিভিন্ন দেশের ডাকটিকিটে রবীন্দ্রনাথ


ডাকটিকিটের ইতিহাস অনেকদিনের। ডাকটিকিট একটি দেশের ইতিহাসের ধারক ও বাহক হয়ে থাকে আজীবন। খৃষ্টপূর্ব ৩২২ অব্দে চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের রাজত্বকাল থেকে সংবাদ আদান প্রদানের ব্যবস্থা চালু হয়। চন্দ্রগুপ্তের সময় কতগুলি পায়রা এক স্থান থেকে অন্যস্থানে সংবাদ বহন করে নিয়ে যেত। চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের পুত্র অশোক রাজা হয়েও এই ব্যবস্থা চালু রেখেছিলেন। শের শাহ রাজা হয়ে এবং বাংলাদেশ থেকে সুদূর পাঞ্জাব পর্যন্ত প্রায় ২ হাজার মাইল রাস্তা প্রস্তুত করে যোগাযোগের পথ সুগম করেন। শের শাহের সময় থেকে ঘোড়ায় করে ডাক প্রেরণের সুব্যবস্থা করা হয়েছিল। ডাকটিকিট শব্দটি ইংরেজি postage stamps শব্দ থেকে এসেছে। ইতিহাস আজীবন কথা বলে। এই ইতিহাস মানুষকে ভাবায়,তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রুপ নেয় ইতিহাসে। সেই ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে রয়ে যায় ডাকটিকিট। ডাকটিকিট একটি দেশের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, সভ্যতা ধারণ করে এক রাষ্ট্রের সাথে অন্য রাষ্ট্রের পরিচয় করিয়ে দেয়। তেমনি ভাবে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আমাদের সেই ইতিহাসের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন।


ডাকটিকেট শুধু একখন্ড কাগজ যা ডাক মাসুল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ডাকটিকিট বিভিন্ন কালারের বা বিভিন্ন আয়তনের হয়ে থাকে। এই ডাকটিকিটগুলোতে নানা বর্ণে সজ্জিত হয়ে ফুটে উঠে আসে একটি দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও বরেণ্য ব্যক্তিত্ব ইত্যাদি দিকগুলো। এতে করে সেই দেশকে খুব সহজে চিনতে পারা যায়। প্রতি বছর প্রচুর পরিমাণে ডাক বিভাগ থেকে ডাকটিকেট প্রকাশিত হয়। সাধারণত অধিকাংশ দেশে ডাকটিকিটগুলো চারকোনা বা বক্স আকৃতির হয়ে থাকে। নানা দেশে নানা আকৃতির ডাকটিকিট তৈরী হয়। ত্রিকোনাকার, গোলাকার ও স্টার আকৃতিরসহ বিভিন্ন আকৃতির। এই ডাকটিকিটগুলো সাধারণত কাগজের তৈরি হয়ে থাকে। তবে কাঠের ফাইবার, সিনথেটিক কাপড়ের তৈরি করা ডাকটিকিট ও পাওয়া যায়। নানা প্রকার ডাকটিকিট প্রচলিত আছে। ডাকটিকেটের শ্রেণী বিভাগ। যেমন : সাধারণ ডাকটিকিট, স্মারক ডাকটিকিট, সরকারী ডাকটিকিট। ডাকটিকিটের প্রধান অংশ ৪টি। যথা: ছবি, টিকিটের ছিদ্র, নাম, দেশের নাম।

ডাকটিকিটের জনক বলা হয় যুক্তরাজ্যের রোল্যান্ড হিলকে। ১৮৩৭ সালের কথা, সে সময় নাকি ডাকটিকিট চালুর আগে প্রাপককেই ডাক মাসুল দিতে হতো। চিঠির পাতার ওপর ভিত্তি করে ডাক মাসুল নির্ধারিত হত। প্রায় সময় এই ডাক মাসুল ছলায়কলায় প্রাপকরা দিতে চাইতেন না। সে সময় এই অসুবিধাসমূহ দূর করার জন্য রোল্যান্ড হিল ডাক বিভাগের সংস্কারের প্রস্তাব দেন। এর অন্যতম প্রধান কারণ ছিল ডাকটিকিটের প্রচলন করা।
১৮৪০ সালে তার এই প্রস্তাব অনুসারেই প্রাপকের পরিবর্তে প্রেরক কর্তৃক ডাকমাসুল দেবার রীতি প্রবর্তন হয়। সেই সময় থেকে ওজনের ভিত্তিতে ডাক মাসুল দেবার পদ্ধতি চালু হয়। ১৮৪০ সালে যুক্তরাজ্যে পৃথিবীর প্রথম ডাকটিকিট প্রকাশিত হয়। এই ডাকটিকিটে ব্রিটেনের রানির প্রতিকৃতি ছিল। রানি ভিক্টোরিয়ার ছবি সংবলিত এই ডাকটিকেটটি চালু হয় ১৮৪০ সালের ১ মে। রোল্যান্ড হিল এটি ডিজাইন করেন। তিনি ব্রিটিশ ডাক ব্যবস্থার উন্নতির জন্য অনেক অবদান রাখেন। রোল্যান্ড হিলকে বলা হয় ‘ফাদার অব পোস্টেজ স্ট্যাম্প’। উইলিয়াম হুয়োনের আঁকা রানি ভিক্টোরিয়ার ছবি দেখা যায় পেনি বø্যাকে। এটি ছিল কালো রঙের। কালো রঙের কারণে নাম হয় বø্যাক। এর মূল্য ছিল ১ পেনি। বø্যাক রঙে এবং ১ পেনি মূল্যের কারণে বিশ্বের প্রথম ডাকটিকিটের নাম হয় ‘পেনি বø্যাক’।

বিভিন্ন দেশের ডাকটিকিটে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে স্মরণ করে বিভিন্ন সময় বাংলাদেশ ও ভারতসহ প্রায় ২০টির অধিক দেশে ডাকটিকিট প্রকাশ করেছে। কবিগুরুকে নিয়ে সর্বপ্রথম ডাকটিকিট প্রকাশিত হয় ১৯৫২ সালে ভারতে। আর ওই ডাকটিকিটের দাম ছিল ১২ আনা। ভারতের বাহিরে আর্জেন্টিনা প্রথম কবিগুরুকে নিয়ে ডাকটিকিট প্রকাশ করে ১৯৬১ সালের ১৩ই মে। এই ডাকটিকিটে শিল্পী ওরাসিও আলবারেসের আকাঁ রবীন্দ্রনাথের প্রতিকৃতি নিয়ে প্রকাশিত হয় রবীন্দ্র স্মারক ডাকটিকিট। এই ডাকটিকিটের মুদ্রণ সংখ্যা নির্ধারণ করা হয় ৩০লাখ এবং একই প্রতিকৃতি দিয়ে আর্জেন্টিনা একটি স্মরণিকাও প্রকাশ করে। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ১৯৬২ সালের ৭ ই মেয়ে ভারত সরকার ১৫ পয়সা দামের একটি ডাকটিকিট প্রকাশ করেন। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ভারত সরকার ২০ পয়সার আরাকটি ডাকটিকিট প্রকাশ করেন। এই ডাকটিকিটে রবী ঠাকুরের ছবি ও বিশ্বভারতীর ছবি স্থান পায়। কবির জন্মবার্ষিকীতে ব্রাজিল, বুলগেরিয়া, ভিয়েতনাম, সাবেক সোভিয়েত রাশিয়া, সুইডেন, ভেনিজুয়েলা, রুমেনিয়অ, সেন্ট্রাল আফ্রিকা, কোমারো দীপপুঞ্জ শ্রীলংকা, রিপাবলিক টোগোলাইজ, উরুগুয়ে, স্পেন, গিনি বিসাউ সে সময় ডাকটিকিট প্রকাশ করেছে তারাও।

এরপর নোবেল পুরস্কার প্রবর্তনের ৭৫তম বার্ষিকী উপলক্ষে আফ্রিকান সাগরের আগ্নেয়দ্বীপ থেকে একটি ডাকটিকিট প্রকাশ করা হয়। সেই ডাকটিকিটে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে বেঁেছ নেয়। বাংলাদেশ ১৯৯১ সালে কবির ৫০তম মৃত্যুবার্ষিকীতে বিশ্বকবিকে নিয়ে প্রথম ডাকটিকিট প্রকাশিত হয়। এই ডাকটিকিটে কবিগুরুর ছবি ও শিলাইদহের কুঠিবাড়ির ছবিও রয়েছে। এই ডাকটিকিটের দাম নির্ধারণ হয় ৪ টাকা। আমার সোনার বাংলা তার স্বাক্ষরসহ মুদ্রণ করা হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ২০০৮ সালের ২৬ মার্চ ফাস্ট ডে (ঋরৎংঃ উধু ঈড়াবৎ) কভার বের করে। ২০১০ সালে যুক্তরাজ্যের রয়েল মেল বিশ্বকবির জন্মের সার্ধশতবর্ষ উপলক্ষে এক সাথে ১০টি ডাকটিকিট প্রকাশ করে। এই ১০ টি ডাকটিকিটে কবিগুরু সাথে আইনস্টইন, রমাঁ রল্যাঁ, মহাত্মা গান্ধী, নেতা সুভাষচন্দ্র বসুর ছবিও ব্যবহার করা হয়। সেই ডাকটিকিটে স্থান পেয়েছে কবিগুরুর অভিনীত ‘বাল্মীকি প্রতিভার’ একটি দৃশ্যের ছবি। যেখানে রবী ঠাকুরকে অভিনয় করতে দেখা যায়। চিঠি পাঠাতে সাধারণত স্ট্যঅম্প বা ডাকটিকিট ব্যবহার করা হয়। সাধারণের কাছে এর বাইরে কোনো মূল্য নেই তবে যারা ডাকটিকিট সংগ্রহ করে তাদের কাছে এর রয়েছে বহুগুরুত্ব। সামান্য একটি ডাকটিকিট অসামান্যভাবে প্রতিনিধিত্ব করে দেশকে এবং সেখানকার মানুষের চেতনাকেও, সে জন্য সব দেশেই রয়েছে ভিন্নমাত্রিক এক কদর এই ডাকটিকিটের। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আমাদের দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্যকে তুলে ধরেছেন বিশ্ব দরবারে।

তথ্যঋণ : উইকিপিডিয়া, বাংলাপিডিয়া, দৈনিক ইত্তেফাক।


লেখকঃ তারিকুল আমিন
লেখক, অভিনয় ও আবৃত্তি শিল্পী।
৩য়বর্ষে অধ্যয়নরত, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ।(রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ)
বাড়ি#১০, রোড#০৩, বøক-এ, ঢাকা উদ্যান, মোহাম্মদপুর ঢাকা-১২০৭।

Facebook Comments Box
তারিকুল আমিন
তারিকুল আমিনhttps://protiddhonii.com
লেখক, অভিনয় ও আবৃত্তি শিল্পী। ৩য়বর্ষে অধ্যয়নরত, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ।(রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ) বাড়ি#১০, রোড#০৩, বøক-এ, ঢাকা উদ্যান, মোহাম্মদপুর ঢাকা-১২০৭।
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments