সেদিন দূর সমুদ্দুরে বিজয় কেতন ট্রলার ডুবে, রাতের আঁধারে কে কোথায় চলে গেছে, তা জানা নেই। ছয়জন জেলের মধ্যে আর কেউ বেঁচে আছে কী-না, কে জানে! টানা দুই দিন একরাত জলে ভেসে আমার হাত-পা অসাড় হয়ে এল। ড্রামের রশি ধরে ভাসতে ভাসতে যখন ভোরের আলোয় চোখ খুললাম, তখন প্রিয় বন্ধু আবু কালামের দেখা পেলাম। চারপাশে শুধু জল আর জল। কোথাও একটা জাহাজের দেখা নেই, নৌকা-ট্রলার নেই, একটা পাখিরও আনাগোনা চোখে পড়ল না। আমরা স্রোতের তোড়ে কোথায় ভেসে যাচ্ছি, জানি না। শরীরটা যখন নুনের জলে আর টেকে না, একবার মনে হয় হাত-পা ছেড়ে দিই। আবু কালামের তখন নাকাল অবস্থা। ওর গোঙানিগুলো গড়িয়ে গড়িয়ে শান্ত জলে ছড়িয়ে পড়ছে। প্রিয় বন্ধুর অনিবার্য মৃত্যুর আশংকায় সেই দিনের কথা মনে পড়ল; যেদিন তেতুলিয়া নদীর পাড়ে গড়ে ওঠা বেশ্যাপল্লীতে আবু কালামের সঙ্গে আমার প্রথম দেখা হয়েছিল।
আমি পুরান বাজার আড়তে মাছ বিক্রি করে নৌকায় ছইয়ের ওপর বসে শহরের দৃশ্য দেখছিলাম। ঠোঁটে ধরা বিড়িটার আগুন উস্কে দিয়ে বাতাসে ধোঁয়া ওড়াচ্ছিলাম। ঘাটের কুলি বাবুল তখন হাতের ইশারায় আমাকে ডাঙায় ডাকল। সে কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলল, ছিট কাপড়ের ফ্রকে আবৃত কিশোরীর টনটনে স্তন আর সরু ঠ্যাংয়ের ভাঁজে লুকোনো যোনির গল্প। নদীতীরে গড়ে ওঠা নিষিদ্ধ পল্লীতে ওইসব মেয়েরা থাকে। মদ, গাঁজা ইত্যাদিও সহজে সস্তায় সেখানে পাওয়া যায়। সেখানে কিশোরীর টনটনে স্তনের কথা শুনে আমার ভেতরে পাখি ওড়ার মত লঘু ব্যঞ্জনা শুরু হল। বাবুলের পিছু পিছু শহরের কিনারা ঘেঁষে ঘিঞ্জি পথ ধরে চলে গেলাম সেই পতিতাপল্লীতে। অন্ধকার একটা লম্বা গলিপথ। আশেপাশে প্রস্রাবের গন্ধ। ইলেকট্রিক খাম্বার একেবারে উপর থেকে কাচের বাল্বেও আলো স্যাঁতসেঁতে পথের ওপর জোনাকীর আলোর মত পড়ছে। তাতে পথটা দেখেশুনে কোনোরকম চলা যায়। গলির মাথায় গিয়ে কয়েকটি অর্ধনগ্ন মেয়ের জটলা পেরিয়ে এক যুবকের দেখা পেলাম। সে অন্যমনস্ক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে একা। তাকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম তার নাম আবু কালাম। সে এক তরুনীর ঘরে গিয়েছিল আর মেয়েটির কাছে ধরা খেয়েছে আচ্ছামত। তার ট্যাকের ভেতর রোজগারের টাকাগুলো মোড়ানো ছিল। মেয়েটির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার সময় টাকাগুলো খসে পড়েছিল বিছানায়। মেয়েটি টাকাগুলো তুলে নিয়ে বালিশের তলায় রেখে শুয়ে পড়ল। চলে আসার সময় মেয়েটি সেই টাকাগুলো আর দেয়নি। এমন অপ্রত্যাশিত ডাকাতির ঘটনায় আবু কালামের মন এখন বিষণ্ন। ঘটনাটা শুনে তাকে সান্ত্বনা দিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে দেখলাম— বস্তির মত একলাইনের কতগুলো ঘরের সামনে নোংরা আবর্জনায় ভরা। পাউডার মাখা ফ্যাটকা চেহারার মেয়েগুলো আমাকে নিয়ে টানাটানি করল। তাদের মধ্যে এমন কয়েকজন কিশোরীকে দেখলাম, যারা বয়সে অপরিণত অথচ খদ্দের বাগানোর সমস্ত কৌশল রপ্ত করে ফেলেছে। আবু কালাম অল্প পরিচয়েই আমাকে কতটা আপন মনে করল কে জানে! সে একটা হ্যাঁচকা টান দিয়ে আমাকে পতিতাপল্লীর বাইরে নিয়ে এল। আর সেই ঘটনার পর থেকে-ই আমরা পরস্পরের বন্ধু।
বিজয় কেতন ট্রলারে সমুদ্দুরে যাত্রার সময় আবু কালাম ঠাণ্ডু মাঝির আড়তে কাজ করত। ওকে ঠাণ্ডুর কবল থেকে উদ্ধার করতে আমি সেদিনই তাকে হাই দিতে শুরু করি, যেহেতু একলা সমুদ্দুরে যেতে চাইছিলাম না। কিন্তু আবু কালাম তো কোন কথা শুনে না, সে ঠাণ্ডুর থেকে দাদন নিয়েছিল। ঝড়ঝাপটা উপেক্ষা করে সমুদ্দুরের সঙ্গে যুদ্ধ করতে দাদনের টাকায় কে যেতে চায়? আবু কালাম তখন ঠাণ্ডুকে টাকা ফেরত দিতে অনেক অনুনয় করেছিল, কিন্তু লোকটা শোনেনি। কিন্তু আবু কালামের স্বভাবের সাথে বেঈমানি মেলেনা, তাই আমি একমাত্র উপায় বের করি—দাদনের টাকা চুরি করে ঠাণ্ডুর শালাকে দিয়ে। তারপর আমরা বিজয় কেতনে উঠি।
ঢেউভাঙা জল দিয়ে একরাত পাড়ি দিয়ে আমরা গভীর সমুদ্দুরে পৌঁছালাম। প্রথম দিনটা ভালোই কাটল। কিন্তু দ্বিতীয় দিনের শুরুতেই আকাশের অবস্থা বদলে গেল। সমুদ্দুরে ভেসে থাকতে আমাদের মনোবল ছিল দৃঢ়, কিন্তু আমরা জানতাম না, সামনে যে বিপর্যয় অপেক্ষা করছে। রাতের খাবার শেষে বিড়ি টানতে টানতে আমি টের পাচ্ছিলাম, চারপাশটা একটু অদ্ভুত হয়ে গেছে। আচমকাই বাতাস গরম হয়ে উঠল। তখন পাশের ট্রলার থেকে আকাব্বার মাঝি ডাকল, “ও ব্যডারা, আকাশে কিছু অদ্ভুত ঠেহি নে।”
আমরা তাকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম, যে আকাশে ভুতুড়ে কিছু চলছে। আকাব্বার মাঝি বহু অভিজ্ঞতায় সমুদ্দুরে এসেছে, তাই তার অনুমান গুরুত্ব দিয়ে দেখলাম। তবে অস্বস্তির মধ্যে দ্রুত জাল তুললাম। আর ঠিক সেই সময় দূরের এক অদ্ভুত শব্দ শুনতে পেলাম। শব্দটা আরও নিকটবর্তী হয়ে গিয়ে গর্জন করতে লাগল, যেন কতগুলো হিংস্র প্রাণি ছিঁড়ে আসছে। বিশাল জলরাশির হুঙ্কারে আমাদের ট্রলার বিপর্যস্ত হতে লাগল। দুই ট্রলার বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল।
আবু কালাম এবং আমি প্রবল লড়াই করতে করতে জলে ছিটকে পড়লাম, তবে ড্রামের রশি ধরে আমাদের যুদ্ধ চলছিল। তখন বাতাস একটু কমে আসতে লাগল, জল শান্ত হতে শুরু করল। ভোরের আলোতে চোখ মেলে দেখলাম, আমরা দুজন ছাড়া আর কেউ নেই।
আমরা মৃত্যুকে চোখের সামনে রেখে যখন যমদূতের জন্য অপেক্ষা করছিলাম, তখন অদ্ভুত পাখিগুলো আমাদের উদ্ধার করেছে। আমরা দ্বীপের আশায়, দুই দিন ধরে ড্রামের রশি ধরে ভাসতে ভাসতে অজানা গন্তব্যে চলে যাচ্ছিলাম, জীবনের সমস্ত আশা হারিয়ে, মৃত্যুর প্রহর গুনছিলাম। তখন বিকেল বেলায়, অনেক দূরে, একটা সবুজ তটরেখা চোখে পড়ল। আমি আবু কালামকে তটরেখাটার কথা বলার মতো শক্তি পেলাম না, শুধু হাত দুটো তুলে উঠানোর ব্যর্থ চেষ্টা করলাম। তারপর, খুব কাছেই, জলের ওপর এক লম্বাটে ছায়া পড়ল। একটু পর আরো একটার উপস্থিতি অনুভব করলাম। তারপর একের পর এক ছায়া, অনেকগুলো। মনে হল বিশালাকৃতির কতগুলো দানব পাখি ডানা মেলে আমাদের মাথার ওপর ঘুরপাক খাচ্ছে। ছায়াগুলো দ্রুত আরো কাছাকাছি চলে এল। হঠাৎ ড্রামের দড়িতে টান পড়ল, এবং আমরা ড্রামসহ শূন্যে ভেসে থাকতে লাগলাম। দানব পাখিগুলোর পায়ের সাথে এসে পড়লাম একটি অচেনা দ্বীপে।
আমরা দ্বীপে পা রাখার সঙ্গে সঙ্গে পশ্চিমের অস্তগামী সূর্য সমুদ্রের জল গিলে ফেলছিল। চারপাশে ধীরে ধীরে নেমে এল আঁধার, এবং সেই অন্ধকারে আমাদের কানে ভেসে আসতে লাগল অসংখ্য পাখির কর্কশ ধ্বনি। ভয়, আতঙ্কে আমাদের গা ছমছম করতে লাগল। কে কখন অচেতন হয়ে পড়েছিল, কিছুই মনে নেই। যখন ভোরের নরম আলো চোখে পড়ল, তখন চেতনায় ফিরে এলাম। জীবিত হয়ে উঠল শরীরের অণু-পরমাণু। চারপাশে পাখির অদ্ভুত ধ্বনি আমাদের কানে আসছিল—কখনো মিহি, কখনো কর্কশ। চোখ খুলে দেখলাম, মাথার কাছে জড়ো হয়ে আছে অসংখ্য হলুদ রঙের ফল। ফলগুলো ছিল রসালো এবং সুস্বাদু। কিছু ফল খেয়ে শরীরটা একটু চাঙ্গা হল। তারপর দাঁড়িয়ে চারপাশটা দেখার চেষ্টা করলাম। দিনের আলোতে পাখির প্রকৃত রূপ আমাদের চোখের সামনে পরিষ্কার হয়ে উঠল। দৈত্যের মতো পাখিগুলোর তীক্ষ্ণ এবং বাঁকানো ঠোঁট, মাথার ওপর ঝুঁটি, রক্তবর্ণ চোখ—এমন অদ্ভুত পাখি আমরা আগে কখনও দেখিনি, গল্পেও শুনিনি।
দ্বীপের পুরোটা জুড়ে সূর্যের রোশনি ছড়িয়ে পড়ল, আমরা কাছে ও দূরে তাকিয়ে দেখলাম, কোথাও কোনো বাড়ি-ঘর, কোনো রাস্তা—কোনো চিহ্ন নেই। সমুদ্রের কিনারে গিয়ে দ্বীপের অবস্থান নির্ণয়ের চেষ্টা করলাম, কিন্তু এই অদ্ভুত ঠিকানাহীন দ্বীপের অবস্থান খুঁজে বের করা আমাদের সাধ্যের বাইরে। আমরা হাঁটতে হাঁটতে সমুদ্রের তীরে এগিয়ে চললাম, মানুষের পদচিহ্ন খোঁজার আশায়, কিন্তু কিছুই পেলাম না। জানা নেই, এটা কোন দেশের ভূখণ্ড! কিংবা বাংলাদেশ ছাড়িয়ে আমরা কত দূর চলে এসেছি, কে জানে! সমুদ্রের ফেনা ওঠা জলের কিনারে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করলাম, একটা জাহাজের আশা নিয়ে, কিন্তু কোনো জাহাজ দেখা গেল না। হতাশ হয়ে, আমরা বেঁচে থাকার জন্য প্রাণপণে চেষ্টা করতে লাগলাম। সমুদ্র থেকে ছোট ছোট নদী এসে উপকূলে মিলিত হচ্ছে, সেখান থেকে মাছ ধরার চেষ্টা করলাম। কিছু মাছ পেলেও, খাবার হিসেবে দেয়াশলাই নেই। তাই কাঁচা মাছ খাওয়া শুরু করলাম। প্রথমে বমি হলেও, পরবর্তীতে অভ্যাস হয়ে গেল।
পাখিগুলো দূর থেকে ফল এনে আমাদের জন্য স্তূপ করে রাখে। আমরা সেই ফলগুলো খেতে পাই এবং পাখিগুলো আমাদের সঙ্গে বন্ধুর মতো আচরণ করে। পাখিগুলো ধীর গতিতে ডাকতে থাকে—ধ্বনির ধ্বনি মহাকাশের গভীর থেকে উঠে আসছে, আর মনে হয়, পৃথিবী কেঁপে কেঁপে ওই ডাকের আওয়াজে নিচে নেমে আসছে। তারা তাদের ডাকগুলো যখন একসঙ্গে দেয়, তখন চোখে রক্তচক্ষু দেখে ভয় পেয়ে যাই। ডাক থেমে গেলে, পাখিগুলো ডানা ঝাপটে মাটির ওপর শুয়ে পড়ে, যেন একেবারে শান্ত হয়ে যায়।
দ্বীপটা আয়তনে মোটামুটি একটা গ্রামের মতন, সূর্য দেখে অনুমান করে বলা যায়, উত্তর থেকে দক্ষিণে লম্বালম্বিভাবে সমুদ্রের বুকে চিতিয়ে আছে দ্বীপটা। আমরা সবুজ ঘাসের জমিন ছাড়িয়ে একটু গাছগাছালির আড়ালে ঢুকলাম, একটা নিরাপদ আশ্রয়ের স্থান খুঁজতে। জঙ্গলের ভেতর বুনো গাছের ছ্যাঁতলা ধরা গুঁড়ি, ঝড়ে ভেঙে পড়া লুলো মানুষের মত ঝুলে থাকা গাছ, পুরনো গাছের কালো খোড়ল ইত্যাদি দেখে মনে হল বহু বছর আগেও এখানে হয়তো কোনো মানুষের পদধ্বনি শোনা যায়নি। মুখ ও চুলের ওপর জড়িয়ে যাওয়া চটচটে মাকড়সার জাল সরিয়ে কিছুটা পরিষ্কার জায়গা পেয়ে, আমরা খোলা জায়গায় এসে আশ্রয় তৈরি করলাম। ড্রাম থেকে ছাড়িয়ে নেওয়া দড়ি আর জঙ্গলের লতা কাজে লাগিয়ে একটা মাচা বানালাম। পাখির খসে পড়া পালক কুড়িয়ে জড়ো করে মাচার ওপর বিছানা পাতলাম। এইভাবে, আমাদের বাঁচার পথ কিছুটা সহজ হয়ে গেল। দ্বীপের ভেতর ধীরে ধীরে শীত পড়তে শুরু করল। রাতে শীতের দাপটে দুজন ঠুকঠুক করি, পরস্পরের শরীর থেকে উষ্ণতা শুষে নিই।
মাঝরাতে, যখন চারপাশটা নিঝুম হয়ে আসে, অদ্ভুত ধরনের এক চেতনা জেগে ওঠে আমাদের ভেতর। চোখ খুলে তাকালে শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো যেন একে একে নড়েচড়ে ওঠে। শীতল রক্তের স্রোত ক্রমান্বয়ে গরম হয়ে ধমনিতে ছুটে চলতে শুরু করে। আর ওই মুহূর্তে আমরা আদিম হয়ে উঠি। দিনযাপন করতেই অভ্যস্ত হয়ে উঠলাম। আমাদের শরীরগুলো একে অপরের সাথে সখ্যতা তৈরি করে, দিন দিন পরস্পরের কাছে আরও কাছে চলে আসি।
আমরা বেঁচে থাকতে থাকতে ক্লান্ত হয়ে পড়লাম। প্রতিদিন দ্বীপে ভোরের আলো ফোটে, দুপুর হয়, বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যায় ঝুপ করে আঁধার নামে।
আমাদের সময় আর কাটে না। সমুদ্রের কিনারে বসে বিগত দিনগুলির কথা ভাবতে ভাবতে বিচলিত হয়ে পড়লাম। জন্মভিটা দেখতে মনটা এক অদ্ভুত ভাবে ডুকরে কেঁদে উঠল। আর সেই ভিটা পাহারা দিতে বউকে রেখে এসেছি অনেক বুঝিয়ে পড়িয়ে। বউ তো আমাকে আসতে দেবে-ই না। কিন্তু সমুদ্র আমার নেশা, জালের সুতোয় বাঁধা আমার প্রাণ। কী করে বউয়ের কথায় চুপ করে ঘরের কোণে পড়ে থাকি!
স্ত্রী সংসার ইত্যাদির কথা ভাবতে ভাবতে হঠাৎ আমার মনে একটা আশঙ্কা দেখা দিল—আম্বি কি এখনও আমার পোতা পাহারা দেয়? আমার সমুদ্দুরে আসার দিনক্ষণ ঠিক হবার পর আম্বিকে বলে রেখেছিলাম, শেষ রাতে তাকে মোটেও ঘুমাতে দেব না। পুরুষের এমন ইংগিতপূর্ণ বাক্য না বোঝার মত বোকা মেয়েমানুষ মনে হয় জগতে একজনও নেই। আর আমার সেই কথা শুনে আম্বি মুখ টিপে হাসছিল কয়েকদিন। সে মনে মনে কী ভেবেছিল কে জানে! তবে সেই শেষ রাতে তেমন কিছু হয়নি। আম্বিকে বুকে জড়িয়ে সারারাত কাটিয়ে দিয়েছিলাম ভালোবাসায়। ওর শরীরের উষ্ণতা পেয়েও আমি উষ্ণ হয়নি, বরং শীতল ভালোবাসা আমাদের জড়িয়ে রেখেছিল গভীর ঘুমে। বেড়ার ফাঁক দিয়ে সাপের হিসহিসানির মত বাতাস এসে শরীরে ছড়িয়ে দিয়েছিল প্রশান্তির পরশ। মুহূর্তে চোখের পাতা বুজে গভীর ঘুমে তলিয়ে গিয়েছিলাম আমরা!
সেই কাকভোরে, আম্বি যখন ঠেলা দিয়ে আমাকে জাগিয়ে তুলল, হুড়মুড় করে উঠে দেখি দিগন্ত ফরসা হয়ে এসেছে। দূর পল্লীর শেষ মাথায় আকাশে ঝিকমিক করছে শুকতারা। প্রকৃতিজুড়ে ছিল অপার নিস্তব্ধতা। আর আমি তখনই বেরিয়ে পড়েছিলাম আলীপুরার উদ্দেশে। বোঁচকাটা মাথায় তোলার আগে হাউস মাছের গোলাকার কাটার ভেতর কাইতুম ঢুকিয়ে বেঁধে দিয়েছিলাম আম্বির মাজায়। যাতে সে পরপুরুষের লালসার হাত থেকে রেহাই পেতে পারে। আর আম্বিকে হাত দুটো ধরে আল্লা রাসুলের কিরা দিয়ে বলেছিলাম, আমি না ফেরা পর্যন্ত সে যেন মাটি কামড়ে আমার পোতা পাহারা দেয়।
একবার রওনা করে, মাঝপথ থেকে আবার যখন বাড়ি ফিরে গেলাম, আম্বি খুব বকেছিল আমাকে। কেমন মায়া মায়া করে বলেছিল—দেহ, জউদ্যা ব্যাডা কামে যায় না।
পেট থেকে কাপড়টা সরিয়ে আম্বি আকাশের দিকে তাকিয়ে বলেছিল—”ও খোদাতাল্লা, তুমি প্যাড দেছ ভালো কতা, খিদা দেলা ক্যা?”
আম্বির এই টিটকিরি মারা কথায় অথর্ব লেগেছিল নিজেকে। আর তখন রেগেমেগেই হাঁটা ধরেছিলাম আলীপুরার পথে। অথচ তাকে কথা দিয়েছিলাম, পনেরো দিন পরেই বাড়ি ফিরব। তারপর অনেক অনেক অপেক্ষার দিনরাত্রি পার হয়ে গেল এই অচেনা দ্বীপে! আর কতদিন আমাদের পার করতে হবে, জানা নেই।
আমি জানি, যদিও কথাটার কোনো সদুত্তর নেই, তবুও আবু কালামের কাছে নিরর্থক জানতে চাইলাম, “আম্বি কি এখনো আমার ভিটা পাহারা দেয়!”
আবু কালাম আমার মুখের দিকে করুণ চোখে তাকাল। সে জানে, কত স্বাধ করে আম্বিকে ঘরে এনেছিলাম আমি। যে বছর ধানখালী কোব্বাত মাঝির ডেরায় আম্বির তনু দেহটা একঝলক দেখেছিলাম, একেবারে মজে গিয়েছিলাম মেয়েটার ওপর। উন্মাদ পাগলের মত ধানখালীর বহু মোড়লের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছিলাম আম্বিকে বিয়ে করার জন্য। কত হাতেপায়ে ধরে রাজি করিয়েছিলাম আম্বির বাবা কোব্বাত আলীকে। একরকম চিলের মত ছোঁ মেরেই নিয়ে এসেছিলাম তাকে। কত সময়ের, কত স্মৃতি আছে আমাদের! অথচ আম্বির কাছে আর ফেরা হবে কি-না, আল্লাই ভালো জানেন।
একদিন মাঝরাতে আমার ঘুম ভেঙে গেল। আস্তানার ভেতর আবু কালামকে খুঁজে পেলাম না। তাকে না পেয়ে বুকের ভেতরটা হঠাৎ কেঁপে উঠল। আবু কালাম সাধারণত আমাকে ছাড়া রাতে কোথাও যায় না। চারপাশ হাতড়ে না পেয়ে শোয়া থেকে উঠে দাঁড়ালাম। তাকিয়ে দেখলাম, দ্বীপের জমিনটা খুব নিঃসাড় আর ভুতুড়ে অন্ধকার। আবু কালামকে চাপা গলায় ডাকলাম কিন্তু কোনো সাড়াশব্দ নেই। কোথায় গেল সে, খুব চিন্তায় পড়ে গেলাম! অদ্ভুত পাখিগুলোরও কোনো ডাকাডাকি নেই। দ্বীপটার ভেতর কেমন ছমছমে ভাব! আবু কালামকে খুঁজতে খুঁজতে জঙ্গলের ভেতর থেকে বেরিয়ে সমুদ্দুরের ধারে গিয়ে দাঁড়ালাম। সৈকত থেকে জলের দিকে তাকিয়ে দেখলাম—শুধু আঁধারের সাথে মিশে যাওয়া পাক খাওয়া বাতাস—আর কিচ্ছু নেই। বাতাসের গোঙানির মধ্যে এমন একটা সরব হিংস্রতা যেন বাতাসকে জীবন্ত প্রাণি মনে হয়। কাঠের মরা গুঁড়ির ওপর বসে থাকতে দেখলাম আবু কালামকে। সে কাঁদছে। এমনিতে সে ঘরহারা মানুষ। পরিবার পরিজন নেই, বিয়েশাদী করেনি। একটা দূর সম্পর্কের বোন আছে, তার কাছে মাঝেমধ্যে বেড়াতে যায়। আমার কেমন খটকা লাগল, আবু কালাম তাহলে কার জন্য কাঁদে! তার পিঠে হাত রাখতেই সে চুপ হয়ে গেল। চুপচাপ আমার সঙ্গে এসে শুয়ে পড়ল। এর কিছুক্ষণ বাদে গাছের ফাঁক-ফোকরের ভেতর দিয়ে গভীর সমুদ্দুরের দিকে একটা আগুনের কণ্ডুলির মত দেখলাম। হঠাৎ পাখিগুলো কেমন সচকিত হয়ে উঠল। ওরা দ্বীপের কিনারায় জড়ো হয়ে আগুনের সেই কুণ্ডুলির দিকে ফিরে ডাকতে শুরু করল। পাখিগুলোর সেই ভয়াল ডাকাডাকিতে আমরা যথেষ্ট ভয় পেয়ে গেলাম। আমরা মাচার ওপর বসে সেই কুণ্ডুলির দিকে অনেক্ষণ তাকিয়ে রইলাম। আর আমাদের মনে হতে লাগল, কোনো দূর দেশের জাহাজ পথ ভুলে হয়ত এদিকেই আসছে। কিন্তু নিস্তব্ধ রাতে জাহজের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আকুল আবেদন জানানোর মত কোনো পথ আমাদের জানা নেই। সারারাত পাখিগুলো বাউঙ্গল, বাউঙ্গল শব্দে অনবরত ডাকতে থাকল। ভোরের দিকে আগুনের কুণ্ডুলিটা ক্রমশ মিলিয়ে যেতে থাকল দূর সমুদ্রের গর্ভে। আর সেই ভোর থেকেই পাল্টে যেতে থাকল দ্বীপের চেহারা। আমরা সেই পরিবর্তনের লক্ষণগুলি খেয়াল করতে থাকলাম।
দিনে দিনে প্রকৃতি এমনভাবে রুক্ষ্ম হতে থাকল, যেন দ্বীপের জমিনটা পুড়ে ভাজা ভাজা হয়ে যাচ্ছে। সৈকতের জল নেমে গেছে অনেক দূরে। সমুদ্রতটটা এত চওড়া আর শুকনো হয়ে উঠল, খুব কসরৎ করে জলের কাছে যেতে হয়। ভেজা বালু ঝরঝরে হয়ে বাতাসে উড়তে আরম্ভ করল। ক্রমান্বয়ে দ্বীপে বাড়তে থাকল রোদের উত্তাপ। বনের পাতাগুলো বিবর্ণ হলুদাভ হয়ে ঝরে পড়তে লাগল। আর গাছপালাগুলো হয়ে পড়ল মুণ্ডুচাঁছা কঙ্কাল। দ্বীপের ভেতর আধভেজা মাটি পুড়ে হয়ে পড়ল তামাটে। অপরিপক্ব ফলগুলো অকালে ঝরে পড়তে লাগল মাটিতে। পাখিগুলোর খাবার মত যথেষ্ট ফল এখন বাগানে নেই। ফুরিয়ে আসতে লাগল সামুদ্রিক মাছের যোগান। দ্বীপের চারপাশে ঘুরে খাবার খুঁজতে খুঁজতে পাখিগুলো দিশেহারা। ওরা আমাদের জন্য আগের মত আর ফল যোগাড় করে না। কমতে কমতে একদিন হলুদ ফলের যোগান শূন্যের কোটায় নেমে এল। পাখিগুলো গভীর ক্লান্তিতে নেতিয়ে পড়ল আর আমরা খুব বেশি অস্থির হয়ে পড়লাম। হঠাৎ আমার সেই অদ্ভুত, ভয়াল রাতের কথা মনে পড়ল—যে রাতে সৈকত থেকে অনেক দূরে আগুনের কুণ্ডুলি দেখে আমরা জাহাজ ভেবে ভুল করেছিলাম। হয়ত সেই কুণ্ডুলিটা-ই ছিল কোনো অশুভ সংকেত। হয়ত মহা খরার আগাম বার্তা বুঝে বাউঙ্গল বাউঙ্গল বলে সমস্বরে কেঁদেছিল পাখিগুলো। ইদানিং পাখিগুলো কেমন গোল গোল চোখে আমাদের দিকে তাকায়। ওদের রক্তচক্ষুতে আগের মত আর বন্ধুত্বের ছায়া নেই। ওদের আচরণে আমাদের জন্য নেই আগের মত ভালোবাসা। অথচ, শীতের রাতে যখন আমরা ঠুকঠুক করে কাঁপতাম, পাখিগুলো ডানা ছড়িয়ে ওম দিত আমাদের শরীরের ওপর। আল্লাহর কী এমন অদ্ভুত ইশারা, আমাদের সামনে কী দিন আসছে সেসব কথা ভেবে শিউরে উঠলাম। আমরা অসমতল পাড় ধরে সোজা এগিয়ে যেতে থাকলাম সামনের দিকে। যদি কোথাও কোনো উপায় খুঁজে পাওয়া যায়।
চারদিকে সমুদ্দুর বেষ্টিত দ্বীপটার একদিক ছিল ঘন জঙ্গলে ঘেরা। সে দিকটা ছিল আমাদের জন্য এক ঘোর রহস্য। কতগুলি পেঁচানো লতা গাছের সাথে এমনভাবে জড়িয়ে আছে তার ফাঁক দিয়ে সামনে আট-দশ হাতের বেশি দেখা যায় না। আমাদের মনে হতে লাগল যে দিকটা আমরা দেখতে পাই না হয়ত সমুদ্রের ওই দিকটা দিয়ে কোনো জাহাজ চলাচল করে থাকবে। আমরা প্রাণপণে লতাগুলো দুভাগ করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে থাকলাম। আর সামনে যেতে যেতে আমাদের দৃষ্টিসীমা ক্রমন্বয়ে ছোট হয়ে আসতে লাগল। তবে একটা ফাঁক দিয়ে আমাদের চোখে পড়ল সমুদ্দুরের নীল ধারা, দূরের সাদা মেঘ আর দ্বীপের খাড়া পাড়। অনেক চেষ্টায় আরেকটু সামনে যেতেই জলের কলকল শব্দ শুনতে পেলাম। আমরা বুঝতে পারলাম, সামনে নিশ্চয়ই কোনো নদীর মোহনা অথবা অন্য কোনো জলধারা। গাছের শিকড়ে পেঁচানো লতাপাতায় এবড়োথেবড়ো খাড়া পাড়টা আরেকটু দূরে। তবুও আমরা সামনে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে পারতাম কিন্তু দ্বীপের পাখিগুলো হঠাৎ আমাদের মাথার ওপর তা দিতে শুরু করল। দীর্ঘদিনের দেখাশোনার কারণে আমরা বুঝতে পারলাম, পাখিগুলো এই জঙ্গলের অপরপ্রান্তে যেতে আমাদের বারণ করছে। হয়ত ওখানে অশুভ কোনোকিছু অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য। আমরা একটি রহস্য উন্মোচনের খুব কাছাকাছি গিয়েও ফিরে এলাম। কিন্তু আমাদের ইচ্ছা, এই খরার মৃত্যুপুরী থেকে যে করেই হোক বের হতে হবে। তখন আমার মাথায় একটা বুদ্ধি খেলা করল। আবু কালামের সঙ্গে যুক্তি করে আমরা কাজে লেগে পড়লাম। যে ড্রামের সাথে আমরা ভেসে এসেছিলাম, সেগুলি কাজে লাগিয়ে একটা ভেলা বানানোর চেষ্টা করলাম। শুকনো গাছের গুঁড়ি সংগ্রহ করে একজাতের কালো লতা আর দড়িটা দিয়ে শক্ত করে বাঁধলাম। মোটামুটি একটা শক্তপোক্ত ভেলা তৈরিও হয়ে গেল কিন্তু ভেলায় ভেসে অজানা কোন গন্তব্যের দিকে পাড়ি জমাব সিদ্ধান্ত নিতে পারলাম না। হয়ত রোদের তেজে আমরা নেতিয়ে পড়ব। হয়ত জল আর খাবারের অভাবে শুকিয়ে মরে যাব গহিন সমুদ্রজলে। তবুও এই নির্জন মরণদ্বীপে থাকার কোনো ইচ্ছেই আমাদের নেই।
যেদিন ভেলাটা বানিয়ে শেষ করলাম সেদিন ভোর থেকেই অভুক্ত পাখিগুলো মাটিতে উবু হয়ে শুয়ে পড়তে লাগল। তখন দ্বীপের মাটিতে রোদের উত্তাপে যেন আগুন জ্বলতে শুরু করল। কেমন অদ্ভুত রহস্য দেখা দিল চারপাশে। মরুভূমির মত উষর দ্বীপটা যেন কথা বলতে শুরু করল আমাদের সাথে। গাছপালার মুণ্ডুতে পাতা নেই, ঘাসগুলো পুড়ে মিশে গেছে মাটির সাথে। ভেলার দিকে এগিয়ে যেতে যেতে দেখলাম মুমূর্ষু পাখিগুলো দুর্বলচিত্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে এখানে ওখানে। কয়েকটি মৃত ছানার দেহ দেখে বুঝলাম, ওগুলো গত রাতে মরেছে। আবু কালামকে বললাম, সুযোগ বুঝে সে যেন ভেলার কাছে চলে আসে।
পাখিগুলোর বন্ধুত্বসুলভ আচরণে এতদিনে আমাদের এটাই মনে হয়েছে, ওরা টের পেলে কিছুতেই আমাদের এ দ্বীপ ছেড়ে যেতে দেবে না। খুটার সঙ্গে বাঁধা ভেলায় গিয়ে স্রোতের দিকটা অনুমান করার চেষ্টা করলাম। অপেক্ষা করতে লাগলাম আবু কালামের জন্য। ক্ষুধার সঙ্গে আর কতটা লড়াই করা যায়! চোখদুটো কেমন বন্ধ হয়ে আসতে লাগল, তারপর পাক খেতে শুরু করলাম। আমি আবু কালামের পথ চেয়ে অপেক্ষা করতে থাকলাম অথচ সে তখনও ফিরে আসে না। তাকে ডেকে পাখিদের অচেতন ভাবটা ভাঙানোর কোনো ইচ্ছেই আমার নেই। শেষমেশ সৈকতের সরল পথ ধরে আবু কালামের জন্য উপরের দিকে টলতে টলতে উঠে এলাম। জঙ্গলের কাছাকাছি এসে যা দেখলাম তাতে নিজের চোখকে আর বিশ্বাস করতে পারলাম না। হঠাৎ আমার শরীরটা ঝাঁকি দিয়ে ঝিমুনি ভাবটা চলে গেল। পাখিগুলো জীবন্ত আবু কালামের দেহটা খুবলে খাচ্ছে। পাখিগুলো আবু কালামের চারপাশে জড়ো হয়ে ওর বুকের ভেতর ঘচ ঘচ করে ঢুকিয়ে দিচ্ছে সরু ঠোঁটগুলো। মুগুড়ের পেটানো শব্দের মত আওয়াজ হচ্ছে ওর মাথায়। মুহূর্তে ওর মগজ বেরিয়ে ছিটকে পড়তে লাগল চারপাশে। আমাদের দেখা বরাবরের শান্ত পাখিটা ওর পুরুষাঙ্গ ছিঁড়ে ফেলল। আবু কালাম খুব দাপাতে লাগল আর পাখিগুলো বিরামহীনভাবে ছিঁড়ে ফেলছে ওর শরীরটা। ওর হাত-পাগুলো পলকের মধ্যেই আলাদা হয়ে গেল। আমি তখন দ্রুত ছুটে গিয়ে ভেলাটা ছেড়ে দিলাম। পাখিগুলো সৈকতের দিকে হামাগুড়ি দিতে দিতে জলের খুব কাছাকাছি এসে নিথর হয়ে পড়ল। ওদের নিষ্পলক রক্তচক্ষু আমার দিকে তীরের মত নিক্ষিপ্ত হতে থাকল। উড়ে চলার মত শক্তি ওদের নেই। বাতাসের ঝাপটায় আমার ভেলাটা দ্রুত চলতে লাগল। আর ধীরে ধীরে অদৃশ্য হতে থাকলাম পাখিদের দৃষ্টিসীমানা থেকে। মৃদু তুফানের গর্জন উজিয়ে আমার ভেলাটা এগিয়ে চলছে হয়ত দূর দূর কোনো বন্দরের দিকে- যেখানে গাড়ির চলাচলে ঘর্ঘরিত রাস্তায় মানুষের আনাগোনা। হয়ত সেখানে চলছে প্রাণচাঞ্চল্য কাজকর্মের তাড়াহুড়ো। আমি যেতে চাই লালসার সেই মানব রাজত্বে, যেখান থেকে রাস্তাটা চলে গেছে আমার বাংলাদেশ উপকূলের কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতের পথ ধরে প্রিয় বিঘাই গ্রামের দিকে।
গল্প : বার দরিয়ার দ্বীপ
মোস্তফা অভি
ঢাকা।