Tuesday, December 3, 2024
Homeফিচারবৃটিশ সাম্রাজ্যের সূর্যাস্তের করুণ পটভূমি

বৃটিশ সাম্রাজ্যের সূর্যাস্তের করুণ পটভূমি

হিটলার চেয়েছিলেন নিজ হাতে নতুন বিশ্ব ইতিহাস লিখতে। লিখে ফেলেছিলেনও প্রায়। কিন্তু মারাত্মক ভুল করে ফেললেন তার দুটি চালে। প্রথমটা ফ্রান্স দখলের পর হিটলার ইংল্যান্ড দখলের গড়িমসি করে আর দ্বিতীয়টা ভুল সময়ে রাশিয়া আক্রমণ করে।

ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী তখন উইন্সটন চার্চিল। চার্চিল ছিল ঝানু রাজনীতিবিদ। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে তিনি প্রমাণ রাখলেন তিনি শুধু রাজনীতিবিদই নন একজন সফল কূটনীতিবিদও বটে। ব্রিটেনের সামনে রাস্তা খোলা ছিল একটাই। যদি নতুন মহাশক্তি আমেরিকা তাঁদের পাশে দাঁড়ায়।

প্রধানমন্ত্রী উইন্সটন চার্চিল যোগাযোগ করলেন আমেরিকার রাষ্ট্রপতি ফ্রাংকলিন রুজভেল্ট এর সাথে। রুজভেল্ট ছিলেন সুযোগের অপেক্ষায়। তিনি তাঁর মত করে আগেই পরিকল্পনা করে ফেলেছিলেন; অপেক্ষায় ছিলেন সুযোগটা ঠিকমত কাজে লাগানোয়। তৈরি হবে নতুন ইতিহাস।

রুজভেল্ট চার্চিলের সাথে মিলিত হলেন আটলান্টিক মহাসাগরে। তারা ভাসছিলেন ব্রিটেনের রণতরী ‘প্রিন্সেস অফ ওয়েলস’ এ। তিনদিন আলোচনা করলেন তাঁরা। রুজভেল্ট চার্চিলকে জানালেন তাঁর প্রস্তাব। আমেরিকা তার সর্বোচ্চ দিয়ে ব্রিটেনকে বাঁচাবে।শর্ত একটাই, যুদ্ধ শেষ হলে সারা পৃথিবীতে ব্রিটেনের অধীনে যত ভূখণ্ড আছে, সেখানে স্বাধিকার দিতে হবে। মানে হল, ব্রিটিশ উপনিবেশগুলোর মানুষ স্বাধিকার পাবে। তাঁরা নিজেরা চাইলে ব্রিটেনের অধীনে থাকবে, না চাইলে স্বাধীন হয়ে যাবে।

চার্চিল কিন্তু নিরুপায়। যদিও ইচ্ছা করলে তিনি এই প্রস্তাব নাও মানতে পারেন। জাহাজের উপর দাঁড়িয়ে তিনি চারদিক তাকালেন। তারপর গভীর ভাবনায় ডুবে গেলেন। তার মনে হল, হিটলার আসছেন লন্ডনের দিকে। রুজভেল্টের কথা না শুনলে তাঁর গোটা সাম্রাজ্যই চলে যাবে জার্মানির হাতে। অন্যদিকে, রুজভেল্টের কথা শুনলে যুদ্ধ শেষে স্বাধীন হয়ে যাবে ব্রিটিশ উপনিবেশ একে একে। ব্রিটেনের মুকুট থেকে ধীরে ধীরে খসে পড়বে একটি একটি পালক। চার্চিল আবার ভাবলেন, এই প্রস্তাব মানলে ব্রিটেনের মানুষ আমাকে ছাড়বে না। কিন্তু যুদ্ধটা ব্রিটেন জিতে যাবে। চার্চিল ভাবলেন, আমি আর প্রধানমন্ত্রী হতে পারব না। আর হয়েছেও তাই। পরের নির্বাচনে তিনি হেরেছিলেন।

আটলান্টিকের বুকে দাঁড়িয়ে চার্চিলকে মানতে হল রুজভেল্টের কথা। ১৯৪৫ সাল; শেষ হয়ে গেল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। আর এক এক করে স্বাধীনতা লাভ করলো বৃটিশ শাসিত কলোনিগুলো। নতুন পরাশক্তি হিসাবে আবির্ভাব ঘটলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের!

Facebook Comments Box
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments