ই-বুক নিয়ে পাঠকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। তবে যুগের সঙ্গে তাল মেলাতে গেলে ই-বুককে অস্বীকার করা যাবে না কিছুতেই। খুব বেশিদিন নেই, যে হারে কাগজের দাম বাড়ছে, প্রকাশকরা গণহারে ই- বুকের দিকে ঝুঁকলেন বলে! ৩৫ কোটি বাংলাভাষী পাঠকের কাছে ভবিষ্যতে ই-বুক আপনাকে পৌঁছে দেবে, কাগজে ছাপা বইয়ের পক্ষে তা কোনোদিনই সম্ভব নয়।
তবে বাংলাদেশে ই-বুক পাঠকের সংখ্যা খুবই কম। যদিও দেশের বাইরে যারা বাংলা বই পড়েন তাদের সংখ্যাটি বিশাল। এরা দেশে প্রকাশিত নতুন বই পড়তে চান। কিন্তু নানান কারণে তা সম্ভব হয়ে ওঠে না। কাজেই ই-বুক তাদের একমাত্র ভরসার জায়গা হয়ে উঠতে পারে। মুশকিল হল, দেশে হাতেগোনা যে কয়টি ই-বুক প্রকাশনী রয়েছে তাদের মধ্যে ২ – ১ টি ছাড়া অন্যদের মধ্যে পেশাদারিত্বের বড্ড অভাব । ই-বুক বের করেই এরা খালাস! বইটিকে যথাযথ promoteও করে না।
আপনার প্রকাশিত ই-বুক একজন পাঠক কেন পড়তে যাবেন যদি তিনি না জানেন এর ভেতরে মালমসলা কী রয়েছে- এটি সুখাদ্য নাকি খেলে বদ হজম হবার সম্ভাবনা রয়েছে। যার নামে বইটি বেরুলো সেই লেখক সম্পর্কেও কোন তথ্য থাকে না ই-বুকে। তাহলে পাঠক কোন ভরসায় বইটি কিনবেন? কিছু ই-বুক প্রতিষ্ঠান একটি বই বের করে শুধু জানায় অমুক লেখকের বই বেরিয়েছে আর ৩-৪ লাইনের একটা সামারি দিয়ে দেয় যা পড়ে বইটি সম্বন্ধে কোন পরিষ্কার ধারণা নেয়া সম্ভব নয়। আর মানের ব্যাপারেও এদের কোন খেয়াল নেই । এরা quantity চায়, quality নয়। তাই প্রতি সপ্তাহে ডজন ডজন ই-বুক বের হচ্ছে যার সিংহ ভাগ মানহীন। বইয়ের দাম অত্যন্ত কম হলেও সংখ্যাধিক্য আর মানহীনতার কারণে সেইসব বই খুব বেশি বিক্রি হচ্ছে না। আর পাঠক চান নতুন বই। ই-বুকের পুরানো বইগুলোর দাম ৩০-৪০ থেকে ৬০-৭০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। তবে আমি আগেও বলেছি একদম নতুন এবং অপ্রকাশিত বইয়ের মূল্য ১০০ টাকা না রাখা গেলে একজন পেশাদার লেখকের জন্য এ মাধ্যমে লেখালেখি কঠিন হয়ে যাবে।
আমার বিশ্বাস, যদি ভাল এবং নতুন বই দেয়া যায়, ১০০ টাকা দিয়ে সেই বই কেনার মত পাঠকের অভাব হবে না। তবে ই- বুক প্রকাশককে এ জন্য যথেষ্টই promote করতে হবে। লেখকও করবেন যেটুকু তার সাধ্যে কুলায়। কিন্তু মূল দায়িত্বটা প্রকাশকের। ই-বুক প্রকাশক একটি পাণ্ডুলিপি পেয়ে যাচ্ছেন বিনা ক্লেশে। এ জন্য লেখককে তার কোন অগ্রিম পেমেন্ট করতে হয় না। তাকে বই ছাপতে হচ্ছে না। শুধু একটা মেক আপ দিয়ে বইটি ছেড়ে দিলেই হল! এমন মজা হয় না!
অথচ পি-বুকে( ছাপা বই) প্রকাশক অন্তত ২০ টি কঠিন পরিশ্রমের অধ্যায় পেরিয়ে তারপর সন্তানের চেহারা দেখেন। আর প্রতিটি নতুন সন্তান প্রসবে তাকে যে ছোট বা বড় অঙ্কের অর্থ খরচ করতে হয় তা বলাবাহুল্য। যাহোক, ই-বুককে আমাদের দেশের পাঠকদের কাছে জনপ্রিয় করে তুলতে হলে ই-বুক প্রকাশকদের আরও পেশাদার হয়ে উঠতে হবে। টার্গেট শুধু বাংলাদেশ নয়- বিশ্বজুড়ে বাংলাভাষী পাঠকদের হাতে পৌঁছে দিতে হবে ই-বুক।