জেলের কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন

0
177

মুহাম্মদ মুহিউদ্দীন ইবনে মোস্তাফিজ

আব্দুল করিমের ছোটবেলা থেকেই জেলে পেশার প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিল। তার বাবা,
যিনি ছিলেন একজন দক্ষ মৎস্যজীবী, তাকে নিয়ে জলে নৌকায় মাছ ধরতে নিয়ে
যেতেন। বাবার সঙ্গে কাটানো সেই আনন্দময় দিনগুলোতে করিম মাছের পিছু পিছু ছুটে
যেত, বাবার পরিচয় ও শৌর্য্যের গল্প শুনত। বাবার হাতে ধরে নদীর জল তার কাছে
স্বপ্নের মতো ছিল।
কিন্তু একদিন, অসুস্থতার কারণে বাবাকে হারাল। বাবা মারা যাওয়ার পর করিমের
জন্য সবকিছু বদলে গেল। পরিবারের আয়ের একমাত্র উৎস হয়ে উঠল বাবার পেশা,
এবং এখন পুরোপুরি তার কাঁধে এসে পড়েছে সেই দায়িত্ব। করিমের মন ভারাক্রান্ত,
কিন্তু সে জানে, জীবনকে এগিয়ে নিতে হলে তাকে সাহসী হতে হবে।
প্রথম দিন যখন নৌকা নিয়ে বের হয়, তার হাত কাঁপছিল। পুরনো স্মৃতিগুলো চেপে
ধরছিল। বাবার অভিজ্ঞতা ও শেখানো পাঠগুলো তার মনে গেঁথে ছিল। গভীর জলে
নৌকা চালানোর সময় করিম অনুভব করল, যেন বাবার উপস্থিতি তার পাশে রয়েছে।
আব্দুল করিম, সাহসী হতে হবে! বাবার কথা মনে পড়ল। করিম মাছ ধরতে শুরু করল।
প্রথমে কিছু মাছ ধরতে পারল না, কিন্তু অদৃশ্য কোনো শক্তি তাকে আবার সাহস
দিল। সে মাথা উঁচু করে জলে চোখ রাখল। হঠাৎ, একে একে মাছগুলো টোপের দিকে
আসতে লাগল। করিম আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়ল।
দিন শেষে, নৌকায় ফিরতে ফিরতে করিম জানত, সে বাবার স্বপ্নকে বাস্তবায়ন
করছে। জেলের কাজ তার জন্য শুধু পেশা নয়, বরং বাবার স্মৃতির প্রতি কৃতজ্ঞতা
জ্ঞাপন।
বছর গড়িয়ে যায়, করিম প্রতিদিন নদীতে যেত এবং মাছ ধরার পাশাপাশি বাবার
গল্পগুলোও মানুষের সঙ্গে শেয়ার করত। সে বুঝতে পারল, বাবার শিক্ষা ও
মূল্যবোধের শক্তি তার জীবনে নতুন করে আলো ফুটিয়েছে।
এখন, যখনই সে নদীর তীরে দাঁড়িয়ে মাছ ধরার জন্য অপেক্ষা করে, তার মনে হয়
বাবার হাসি তাকে উৎসাহিত করছে। করিম সিদ্ধান্ত নিল, এই পেশা শুধু জীবিকা নয়,
বরং বাবার প্রতি তার কৃতজ্ঞতার প্রতীক।
এখন থেকে আমি এই কাজকে আরও ভালোভাবে করব, সে মনে মনে বলল। এটা শুধু
আমার পেশা নয়, এটি আমার বাবার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা।
এভাবেই আব্দুল করিম জেলের কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে চলল, বাবার স্বপ্নকে
বাস্তবে রূপ দেয়ার জন্য প্রতিদিন নতুন উদ্যমে।

লিখুন প্রতিধ্বনিতেলিখুন প্রতিধ্বনিতে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here