থার্টি-ফাস্ট নাইট

0
227

সালমান খান জুয়েল

বয়স ৬৫ ছুই ছুই।
একমাত্র আদুরে সন্তান দূর প্রবাসে পড়ে আছে বছর ৫-হতে চললো,
কতটা দিন পার হয়ে গেলো আদুরে সন্তানকে হাত দিয়ে ছুয়ে দেখা হয় না।
যে সন্তানের শৈশব কৈশোর কেটেছে, বাবার আদর স্নেহে- সেই সন্তানও আজ অনেক বছর হলো বাবাকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলতে পারে না, বাবা তোমায় বড্ড ভালোবাসি।

যে সন্তানের সুখের সকল কারণ ছিলো বাবা, সেই সন্তানের চোখের জল মুছে দিতে পারছে না হাতের স্পর্শ করে।

সামনেই ফেব্রুয়ারিতে ছুটি নিয়ে বাবার কোলে মাথা রেখে একদণ্ড স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার খুব ইচ্ছে হচ্ছিল সন্তানের,

বাবার বুকে জমে থাকা দীর্ঘ ৫বছরের আক্ষেপও বোধহয় শেষ হতো, আদুরে সন্তানকে কিছুক্ষণের জন্য বুকে জড়িয়ে।

এতো বছর পরে তার কলিজার টুকরো সন্তান বাড়িতে ফিরবে, তাই সে নানান ধরনের আয়োজনে ব্যস্ত- দীর্ঘ এক-দেড় মাস আগের থেকেই।

এইতো গতকালও ছেলের পছন্দের রাজহাঁসের মাংসের জন্য বাজার থেকে একটা বড়ো সাইজের রাজহাঁস কিনে এনেছে, ছেলে বাড়িতে ফিরে আসা পর্যন্ত বাবা নিজের হাতে রাজহাঁসটিকে খাইয়ে লালন-পালন করবে।
কোথায় যেন শুনেছিলো নিজের হাতের সবকিছুতেই আথিতেয়তায় ভালোবাসা বাড়ে দিগুণ- তাই রাজহাঁস কিনে এনেছে, নিজের হাতে পেলেপুষে সেটা আদুরে সন্তানকে খাওয়াবে।

রাতে ঘুমোতে গেলো মনের সুখে,
সন্তান বাড়ি ফিরছে আরো কত আয়োজনের বাকি আছে।
কাল থেকে এক এক করে সব করতে হবে।

ঘড়ির কাঁটা তখন রাত ১২টায় গিয়ে পড়লো, আচমকা চারপাশে হই হুল্লোড় শুরু হয়ে গেলো।
একের পর এক পটকা আর আতসবাজির ভয়ংকর শব্দ হতে লাগলো। কারণ আজ যে থার্টি-ফাস্ট নাইট।

পটকা আর আতসবাজির শব্দে- বাবার হৃদয় কেঁপে উঠছে, সে বহুদিন ধরে হার্টের রোগে ভুগছে।
সন্তান আরো আগেই হয়তো বাড়িতে আসতো, কিন্তু বাবার হার্টে রিং পরানোর জন্য টাকার জোগাড় করতে, আরো কয়েকবছর থাকতে হয়েছে।

লিখুন প্রতিধ্বনিতেলিখুন প্রতিধ্বনিতে

পটকা আর আতসবাজির শব্দে
বাবার বুকের ব্যাথাটা ক্রমশ বাড়তেই লাগলো, আতসবাজির গন্ধে তার দম বন্ধ হয়ে আসছে। লাইটের সুইস টিপলো, জগের থেকে এক ক্লাস পানি ঢেলে এক চুমুক পান করলোও বটে।
কিন্তু তার হার্টের রোগ অতিরিক্ত শব্দে মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে,
রুমে আলো থাকা সত্বেও চারপাশ অন্ধকার হয়ে আসছে, সন্তানের একখানা ফটো বুকে নিয়ে বাবার নিথর দেহখানা মাটিতে লুটিয়ে পড়লো।

আর কখনোই আদুরে সন্তানের শরীরখানা ছুয়ে দেখা হবে না।

শিক্ষাঃ যদি কারোর নতুন বছর শুরু করতে,
হাজারো প্রাণের বলি দিতে হয়।
তাহলে এমন বছর, আর কখনোই না আসুক।

Previous articleপ্রতিধ্বনির ঈদ সাময়িকী ২০২৫ ‘বৃত্তের বাইরে’
Next articlePoem By Domenico Cipriano || ইতালিয়ান কবির কবিতা
প্রতিধ্বনি
প্রতিধ্বনি একটি অনলাইন ম্যাগাজিন। শিল্প,সাহিত্য,রাজনীতি,অর্থনীতি,ইতিহাস ঐতিহ্য সহ নানা বিষয়ে বিভিন্ন প্রজন্ম কী ভাবছে তা এখানে প্রকাশ করা হয়। নবীন প্রবীণ লেখকদের কাছে প্রতিধ্বনি একটি দারুণ প্ল্যাটফর্ম রুপে আবির্ভূত হয়েছে। সব বয়সী লেখক ও পাঠকদের জন্য নানা ভাবে প্রতিধ্বনি প্রতিনিয়ত কাজ করে চলেছে। অনেক প্রতিভাবান লেখক আড়ালেই থেকে যায় তাদের লেখা প্রকাশের প্ল্যাটফর্মের অভাবে। আমরা সেই সব প্রতিভাবান লেখকদের লেখা সবার সামনে তুলে ধরতে চাই। আমরা চাই ন্যায়সঙ্গত প্রতিটি বিষয় দ্বিধাহীনচিত্ত্বে তুলে ধরতে। আপনিও যদি একজন সাহসী কলম সৈনিক হয়ে থাকেন তবে আপনাকে স্বাগতম। প্রতিধ্বনিতে যুক্ত হয়ে আওয়াজ তুলুন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here