আরিয়ান খান হাবিল
উৎসর্গ:- সকল প্রবাসী ভাইদের প্রতি
৩ অক্ষরে গড়া একটি শব্দ “প্রবাস”। শুনতে আকর্ষনীয় মনে হলেও প্রবাসীদের কাছে শব্দটি জেলখানার মতো এক বন্দী জীবন। যারা কখনো প্রবাসে যান নি তাদের কল্পনায় প্রবাস মানে কতই না আরামদায়ক, সুখ-শান্তির জায়গা।
জীবিকার তাগিদে নিজের মাতৃভূমি, পরিচিত পরিবেশ, এবং চেনা মানুষদের ছেড়ে অজানা এক দেশে নতুনভাবে শুরু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া মোটেই সহজ নয়।
নিজের প্রিয় মাতৃভূমি ছেড়ে চলে যাওয়া প্রবাসীদের জন্য বড় কষ্টের একটি বিষয়। এর সঙ্গে জড়িয়ে থাকে আবেগ, স্বপ্ন, চ্যালেঞ্জ এবং নতুন সম্ভাবনার হাতছানি।
কেউ কেউ কর্মজীবনের জন্য প্রবাসী হন, কেউ বা পরিবার নিয়ে সারাটি জীবন কাটাতে। তাদের গল্প অনেক ভিন্ন ৷ দেশ থেকে মানুষ বিদেশে পাড়ি জমায় দেশের মানুষগুলোকে ভালো রাখার জন্য। একটু স্বচ্ছলভাবে বেঁচে থাকার তাগিদে প্রতিনিয়ত হাজারো বাংলাদেশি তরুন প্রবাসে পাড়ি জমান। জীবিকার তাগিদে মাতৃভূমির মায়া ত্যাগ করে প্রবাসী পরিচয়ে কাটিয়ে দেন যুগ যুগান্তর।
প্রবাসীদের কাছে তাদের মাতৃভূমি একটি আবেগের নাম। বিদেশের উন্নত সুযোগ-সুবিধা থাকা সত্ত্বেও, বাংলাদেশের মাটি, সংস্কৃতি, এবং পরিবেশের প্রতি ভালোবাসা কখনো কমে না। দেশের ভাষা, ঐতিহ্য, এবং দৈনন্দিন জীবনের সরলতা থেকে দূরে থাকা প্রবাসীদের জন্য বড় এক ধরনের অভাববোধ তৈরি করে।
তরুনদের যেই বয়সে বাবা-মায়ের ছায়াতলে থেকে জীবন অতিবাহিত করার কথা সেই বয়সে তারা পরিবারের হাল ধরার জন্য নিজ মাতৃভূমি, বাবা-মা, ভাই-বোন, আত্মীয় স্বজন ছেড়ে প্রবাস নামক জেলখানা বরন করে নেন।
রোদ বৃষ্টি, অসুখ-বিসুখ উপেক্ষা করে কাজ করা প্রতিদিনের রুটিন। অসুস্থতা আসলে পাশে কেউ থাকে না! প্রবাসে আপন বলতে কেবল প্রবাসীই। প্রবাসীদের দুঃখ-কষ্টের অন্ত নেই। না ঘুমিয়ে, না খেয়ে, সময়মতো না খেয়ে ক্ষুধার্ত পেট নিয়ে দিনরাত পরিশ্রম করে যান।
সকাল থেকে সন্ধ্যা, প্রচণ্ড গরম বা শীতের মধ্যে কাজ করে তাঁরা মাস শেষে পরিবারে টাকা পাঠান। কিন্তু পরিবারের জন্য যে ত্যাগ তাঁরা করছেন, তাঁর আসল মূল্য তাঁরা নিজেরা প্রায়ই পান না।
একজন মানুষ দেশে থেকে যে-কোনো কাজ কেতে পারে না, লোকচক্ষুর ভয়ে! কিন্ত প্রবাসে লোকচক্ষুর অন্তরালে সব কাজ নির্দ্বিধায় করতে হয়। একজন প্রবাসীর কাঁধের উপর ভর করে কয়েকটা জীবন স্বপ্ন দেখে ভালো থাকার, সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার।
প্রবাসীদের স্বপ্ন থাকে দীর্ঘদিন বিদেশে কাজ করে দেশে ফিরে আসার কিন্তু তা আর হয়ে ওঠে না! প্রবাসীদের জীবনের দুঃখ কষ্ট, ত্যাগ ও সংগ্রামের কাহিনি কোনো কল্পনা নয় বরং বাস্তব। প্রবাসীদের জীবনে সবচেয়ে বড় দুঃখ হলো প্রিয়জনদের থেকে দূরে থাকা। দিন-মাস, বছর, কখনো যুগের পর যুগ কেটে যায় তবুও দেশে ফেরা হয়না কারোর কারোর।
প্রবাসীদের এই সংগ্রাম আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা, কারণ তারা নিজেরা কষ্ট সহ্য করে পরিবার ও দেশের জন্য একটি ভালো ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার চেষ্টা করেন। প্রবাসীদের জীবনের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা থাকা উচিত এবং তাদের ত্যাগকে সবসময় মূল্যায়ন করা উচিত।
দেশের অর্থনীতিতে প্রবাসীদের অবদান অনস্বীকার্য। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করে। ভালো থাকুক সকল প্রবাসী’রা।