হাসনাহেনার ঐশী

0
95

মেহেদী হাসান

হাসনাহেনার সৌরভে আজ পুরা ঢাকা শহর ছাইয়া গেছে। বা আমার তা-ই মনে হইল। মেট্রো থিকা নামার পরেই ঢাকার পিক্যুলিয়ার গন্ধ ডিঙাইয়া, ব্যক্তি বিশেষের দামি কমদামি পারফিউম বা গায়ের গন্ধ ছাপাইয়া আমার সমস্ত চিত্তরে এই ফুলের সুবাস বোবার নাহান বশ কইরা রাখছিলো। পরিকল্পনা ছিল, যে কারোরই সাথে হোক, ঢাকার কেন্দ্রে ঘুরতে যাবো। কিন্তু শরৎের চিরায়ত বিবাগী হাওয়ার নাহান, ‘বন্ধুরা’ও কর্মব্যস্ততায় শুকনা পাতার মত ঝইরা যায়। সে যাক। রবী ঠাকুরের প্রবচনরে আক্ষরিকার্থে নিয়া একলা চললাম। হেমিংওয়ে নাইলে সার্ত বলছিলো একলা থাকাবস্থায় যদি নিজেরে বেবাক নিঃসঙ্গ লাগে তাইলে মিয়া আপনে অসৎসঙ্গেই আসেন। আমি সৎ থাকবার জিদেই মনে হয় এই তত্ত্বের ফলিত রূপ দেখতে উদ্যত হইয়া উঠি।

টি.এস.সির দিকে যাইতে চাইসিলাম। কিন্তু নবমীর জনস্রোতে ঠিক উলটা পথে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দুর্গা মন্দিরের মুখে ভাইসা উঠলাম। ধূপ, করতাল, কাসা, ঢাক-ঢোল, মানুষের গুঞ্জরনে সন্ধ্যা সয়লাব। হাস্নাহেনার সুবাসযোগে আমার নির্জীব নিরানন্দ মানসতটে একটা মথিত ভালবাসার মুকুল নিভৃতে ফুটে। নাকি আবাগের আতিশয্যে কল্পনা উঁকি দিল? দূর্গা দেবীর প্রশান্ত প্রসন্ন দৃষ্টি আমাকে ঠেলে অতীতে নিয়ে গেল। ঐশীর শ্যামল মুখ, ক্রুব্ধ চাহনী, অহং-সর্বস্ব বাক্যবাণ, মৃগসম পদচারণ আরো বাস্তব ও বানোয়াট উপমা নতুন এক অনুভূতির স্পর্শ দিয়ে গেল।

শুনি, সে আজ বুয়েটে ম্যাকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ পড়ে। পড়ুক। খুব উন্নতি করুক।
২০-৩০ শতাংশ ভিন্নধর্মাবলম্বীরাও যে আসে নাই, তা বোধহয় সত্য নয়। প্রচ্ছন্ন ঠাট্টা ও তামাশা দর্শনে অনেকেরই জুড়ি মেলা ভার। স্বর্গের আপাত নিশ্চয়তা কেমন বিকার ঔদ্ধত্যেই না লোকের ব্যবহারে মূর্ত হয়।

সে যাক।

নর-নারী, যুবতী-প্রৌঢ়া, শিশু-বুড়ো সুন্দরতম কুর্তি, শাড়ি, ধুতী, পাঞ্জাবি ও জুতা যোগে গায়ে সুগন্ধি মাইখা আমার হাসনেহনার সাথে যেন এক অজ্ঞাত সমরে লিপ্ত। হাতের তৈরি চুড়ি, পিঠা-পুলি, বাদ্যযন্ত্র, স্বাত্ত্বিক ভোজনের বাবুই পাখির নাহান সাজানো ছোট ছোট দোকানগুলির উপর ধনস্ফীত কর্পোরেট ফুড-স্টোরগুলাও যেন রং-বেরঙের আলোর আতিশয্যে খড়গহস্ত।

দেখি, রাস্তার কুকরগুলার চোখে মুখে উচ্ছিষ্ট-ভোগের এক অভাবিতপূর্ব তৃপ্তি! যেন দাওয়াতিরিক্ত বরপক্ষকুলের হঠাৎ আগমন। এক তড়িঘড়ি হুলুস্থুল আয়োজন।

ক্ষুধা-পীড়া-সঞ্জাত অশ্রুবারি যেন বহুকাল ধইরা তাদের মুখমন্ডলে আঁইকাবাঁইকা ছড়া কাইটা গেসে । ধূলিমাখা লুচি, সবজি, মুরগীর গোস্তো পাইয়া শুকনা রেখা গুলা যেন খুশির অশ্রুবারিতে ফের সজল।

লিখুন প্রতিধ্বনিতেলিখুন প্রতিধ্বনিতে

ফ্রয়েড সাহেবের ভালো-বুড়ার প্রহরীরে টপকাইয়া সবকিছুর সাথেই অস্তিত্বের অভিন্নতার অনুভূতি ফেনাইয়া উঠতে লাগলো। মধ্যবয়সী বাবাখোড়ের এই নিরাভরণ অকপট বাবাসেবনের সাথে আমার দুঃখঘোচানোর পন্থার কেমন এক মিল দেখতে পাইলাম। নিদারুণ স্থবির মানসতটে সঙ্গোপনে যেন এক প্রফুল্লতার বান ছুইটা গেল। চকিতেই মিল্টন সাহেবের সুবিখ্যাত খোয়ানো স্বর্গের এক পংক্তি শ্রাবণমেঘের আড়ালে সূর্যের নাহান উঁকি দেয়:

‘মন খোদ এমন এক জায়গা, নিজের মধ্যেই বানাইতে পারে নরকরে স্বর্গ, স্বর্গরে নরক…’

আমার মেজাজ-মহাশয় কি এই আপ্তবাক্যের শ্বাশত, অখন্ডনীয় ও অলঙ্ঘনীয়তার মোহ-পাশে নত? হঠাৎই বা মনে পড়লো কেন? নাকি এই লেখা স্বীয় অস্তিত্বের অকিঞ্চিকরত্ব লাঘবের এক করুণ-হাস্য-রসোদ্দ্রেকসম প্রয়াস?

তবে, সব কিছু ছাপাইয়া এই অপার্থিব সুবাস এক অবারিত আনন্দ-পাশে ঐশীর নাহান আমার সমস্ত চিত্তরে কয়েকদিন ব্যাপি বিবশ ও বেকুল কইরা রাখলো।

Previous articleকিশোর গ্যাং: সামাজিক সমস্যা ও আমাদের দায়
Next articleআকাশলীনা
প্রতিধ্বনি
প্রতিধ্বনি একটি অনলাইন ম্যাগাজিন। শিল্প,সাহিত্য,রাজনীতি,অর্থনীতি,ইতিহাস ঐতিহ্য সহ নানা বিষয়ে বিভিন্ন প্রজন্ম কী ভাবছে তা এখানে প্রকাশ করা হয়। নবীন প্রবীণ লেখকদের কাছে প্রতিধ্বনি একটি দারুণ প্ল্যাটফর্ম রুপে আবির্ভূত হয়েছে। সব বয়সী লেখক ও পাঠকদের জন্য নানা ভাবে প্রতিধ্বনি প্রতিনিয়ত কাজ করে চলেছে। অনেক প্রতিভাবান লেখক আড়ালেই থেকে যায় তাদের লেখা প্রকাশের প্ল্যাটফর্মের অভাবে। আমরা সেই সব প্রতিভাবান লেখকদের লেখা সবার সামনে তুলে ধরতে চাই। আমরা চাই ন্যায়সঙ্গত প্রতিটি বিষয় দ্বিধাহীনচিত্ত্বে তুলে ধরতে। আপনিও যদি একজন সাহসী কলম সৈনিক হয়ে থাকেন তবে আপনাকে স্বাগতম। প্রতিধ্বনিতে যুক্ত হয়ে আওয়াজ তুলুন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here