মায়িশা আবসারী আদীবা
তাকে আমি আকাশলীনা বলে ডাকি। প্রকাশ্যে নয় , গোপনে। সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করেছিলাম,আমায় একজন বন্ধু দিন, আমার শুন্যতা দূর করুন।তার মাস কয়েক পর ক্যাম্পাসে হঠাৎ একজন বললো” তুমি কোন ডিপার্টমেন্ট?”
ব্যস। তারপর চললো ঘন্টা খানেকের আড্ডা । বুঝলাম আমার প্রার্থনা বিফল হয়নি। অবশ্য , পুরোপুরি নিশ্চিত তখনো ছিলাম না। তারপর কেটেছে দীর্ঘ দিবস দীর্ঘ রজনী। অনিশ্চয়তাও কেটেছে সেই সাথে । একদিন ক্যাম্পাস থেকে বাড়ি ফিরছি একসাথে। হঠাৎ বাস নামিয়ে দিল পলাশী মোড়ে। আর যাবে না। কি ভয়ংকর অবস্থা। কিচ্ছু চিনি না । তবে আরো কিছু দূর গেলে বাকিটা হয়তো চিনে যেতে পারবো এই ভরসায় আমরা রিকশায় উঠলাম। কিন্তু দুর্ভোগের মাত্রা সেদিন কিছুটা বেশি ছিল বোধ হয়। রিকশা আমাদের নামিয়ে দিল অন্যপথে।
আমি কিছুই চিনতে পারছি না ।তবে আকাশলীনা এবার খানিকটা চিনেছে। কিছু অভিজ্ঞতা, কিছু অনুমানকে সঙ্গ করে আমায় আমার গন্তব্যে পৌঁছে দিল সে। আমি জীবনের পথও ঠিক এমনি করে মাঝে মাঝে হারিয়ে ফেলি। দ্বিধায় পড়ি। তখন আকাশলীনা কে মনের অজান্তেই হয়তো খুঁজি। কিন্তু আঁধার অরণ্যে আমায় যে একাই হাঁটতে হবে।এইতো নিয়ম ।তাই সেই অরণ্যের হদিস সে পায় না কখনো।
যাকগে সেসব কথা, এবার আসি আকাশলীনা নামের প্রসঙ্গে। জীবনানন্দ আমার কাছে চিরকালই দুর্বুদ্ধ । তবে কেউ কেউ বলে আকাশলীনা হলো আকাশের বিস্তার আর মুক্তির প্রতীক। আবার কেউ বলে এটা ভিনদেশী শব্দ যার অর্থ তারা। এইসব অলংকরণ তো তাকেই মানায়। আমার একাকীত্বের আঁধারে এই তারাটাই তো জ্বলে উঠেছিল সেদিন। যে তারা কে দূর থেকে ক্ষুদ্র একটি কণা বলে ভ্রম হয় অথচ কাছে এলে তার বিশালতায় বিস্ময় জাগে।
দিনলিপি লেখার এই পর্যায়ে হঠাৎ থামলাম। আর লিখতে ইচ্ছে করছে না । হাত বাড়িয়ে এলিনা ফেরান্তের my brilliant friend উপন্যাসটা পড়তে শুরু করলাম । উপন্যাসের সাথে আমার জীবনের কোনো মিল নেই । এলেনা আর রাফায়েলার সাথেও আমার এবং আকাশলীনার অনেক পার্থক্য। তবু ও কেন যেন মনে হলো অনুভূতির আদ্রতায় যে নদীর জন্ম সে সাগরে গিয়ে দূরের কোনো এক অজানা নদীর সাথে মিশে গেছে। এ তো গেল উপন্যাসের কথা। আরো কত গল্প দেখি চারিপাশে। ভিন্ন আঙ্গিকে সেই একই পুরোনো গল্প, সেই একই অনুভূতি।
আমি আবার দিনলিপি লিখতে বসলাম । পাতা উল্টে লিখলাম,” আকাশলীনা, তুমি কে? অনুভূতির ডাকনাম?”