Sunday, November 24, 2024
Homeসাহিত্যলেখকের ভাবনাপ্রথম মৌলিক রোমান্টিক উপন্যাস হৃদয়ে শ্রাবণ ও কিছু কথা

প্রথম মৌলিক রোমান্টিক উপন্যাস হৃদয়ে শ্রাবণ ও কিছু কথা

১৯৯৩র শেষার্ধে রচিত আমার প্রথম মৌলিক রোমান্টিক উপন্যাস হৃদয়ে শ্রাবণ এর অনেকখানি জুড়ে কাহিনীর অন্যতম চরিত্র অর্কর এক বন্ধুর কথা আপনারা পড়েছেন, পাঠক। তার নাম ফয়সাল। তবে এটি কোন কাল্পনিক চরিত্র নয়। এবং ফয়সালকে নিয়ে যেসব ঘটনা রয়েছে বইতে তার কিছুই বানানো নয়। সব সত্যি। ফয়সাল নামে আমার সত্যি একজন বন্ধু আছে যার সঙ্গে গত ৩৮ বছর আমার দোস্তি। ওই উপন্যাসে পলাশ আপা, মৌরি , লিমা এবং পারমিতা নামে যে চরিত্রগুলোর সঙ্গে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দিয়েছি এরা সবাই রক্তমাংসের মানুষ।

পলাশ আপা ফয়সালের বড় বোন। লিমা এবং মৌরি ছোটবোন। আমাদের পড়শি ছিল ওরা। পলাশ আপা ঢাবিতে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিয়ে পড়তেন। আমিও ওই একই বিষয়ে পড়াশোনা করেছি। ফয়সাল ঢাবিতে চান্স পেলেও এফ রহমান হলের পরিবেশ পছন্দ না হওয়ায় ও ঢাবি ছেড়ে চলে যায়। ফয়সালরা ৬ ভাই বোন। ৩ ভাই, ৩ বোন। পলাশ আপা বটবৃক্ষ হয়ে ভাইবোনগুলোকে ছায়া দিয়েছেন। ওরা সবাই এখন যে যার মত established. এই পরিবারটির সঙ্গে আমাদের ৩৮ বছরের সখ্য। ওরা প্রতিটি মানুষ খুবই আন্তরিক স্বভাবের। আজ দীর্ঘদিন পরে ওদের সঙ্গে আবার দেখা হল। ধান মণ্ডিতে পলাশ আপা এবং তার দুই ছোট ভাই সোহেল ও শোয়েব থাকে। একই এপার্টমেন্টে।

ফয়সাল যে ঢাকা এসেছে , জানতাম না। রাত সাড়ে আটটায় হঠাৎ ওর ফোন। জানালো ও ঢাকায়। আমার জন্য সেবার কিছু বইপত্র নিয়ে এসেছে। কয়েকটি ফার্স্ট এডিশনের বই। ও অনেক আগে বইগুলো জোগাড় করে রেখেছিল কিন্তু ঢাকা আসা হচ্ছিল না বলে বইগুলো নিয়ে আসতে পারে নি। ও থাকবে মাত্র দুই দিন। কী একটা জরুরী কাজে এসেছে। কাজ শেষ হলেই উড়াল দেবে। যানজট আর ধুলোয় ঠাসা রাজধানীতে এলেই ওর নাকি দম বন্ধ হয়ে আসে। আমার জানি দোস্তের সঙ্গে গত চার বছর দেখা- সাক্ষাত নেই। শুধু ফোনে কথা হয়। তাছাড়া পলাশ আপা নাকি কয়েক মাসের জন্য অস্ট্রেলিয়া চলে যাবেন তাঁর দুই ছেলের সঙ্গে দেখা করতে। উনি এতদিন দুবাই থাকতেন। দুবাইয়ের পাট চুকিয়ে মাস কয়েক আগে দেশে ফিরেছেন। পলাশ আপার সঙ্গে আমার দেখা হয় না ২২ বছরেরও বেশি হয়ে গেল। ভাবলাম এবারে একটু দেখা করে আসি।

শোয়েব আর সোহেল বহুবার ওদের বাসায় যেতে বলেছে। নানান কারণে যাওয়া হয়ে ওঠে নি। এবারে সবার সঙ্গেই দেখা হল। আমরা শোয়েবের বাসার সুসজ্জিত ড্রয়িং রুমে বসে বরিশালের স্মৃতি চারণে মেতে উঠলাম। সোহেল বেচারার কয়েক দিন ধরে জ্বর। আমি এসেছি শুনে সে তার ৫ তলার ফ্ল্যাট থেকে নেমে এল দোতলায় আমার সঙ্গে দেখা করতে। অনেক গল্প করার পরে পলাশ আপা ৫ তলায় নিয়ে গেলেন তার এপার্টমেন্টে। খালাম্মা পলাশ আপার সঙ্গেই থাকেন। উনি খুবই অসুস্থ। তাঁর সঙ্গেও আমার দেখা ৫ বছর পরে। ৫ বছর আগে ওনাকে ল্যাব এইড হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিলাম।

আমাকে দেখে খুব খুশি হলেন খালাম্মা। উনি আমাকে বেশ স্নেহ করেন। ফয়সাল দুঃখ করে বলছিল সে বরিশাল থাকে বলে খালাম্মার যত্ন নিতে পারে না। আমি ওকে সান্ত্বনা দিয়ে বললাম, পলাশ আপার মত একজন মানুষের কাছে আছেন খালাম্মা। তার ৫ ছেলেমেয়েই তার যত্নআত্তি করছে। কাজেই ওর মন খারাপ করতে হবে না। খালাম্মা একজন রত্নগর্ভা জননী। তাঁর প্রতিটি ছেলেমেয়ে যে যার জায়গায় সফল। আর খালু মারা যাবার পরে সবার মাথার উপরে ছাতা হয়ে আছেন পলাশ আপা। এরকম একটি বড় বোন যদি আমার থাকত!

পলাশ আপার সঙ্গে ২২ বছর পরে দেখা হলেও তিনি বারংবার বলছিলেন, অপু, তুমি একটুও বদলাও নি। আগের মতোই আছ। পলাশ আপাকে নিয়ে আমার অনেক স্মৃতি আছে যা ভবিষ্যতে আমার কোন উপন্যাসে স্থান পাবে। পলাশ আপা জীবনে বহু সংগ্রাম করেছেন। যতদূর জানি তিনি তার ছোট ভাইবোনদের গায়ে কোন রকম আঁচ লাগতে দেন নি। এই পরিবারটিকে আমি বেশ পছন্দ করি। যদিও ওদের সঙ্গে আমার দেখাসাক্ষাত হয় খুব কম, কিন্তু ওরা জানে না ওদের প্রতি আমার ভালবাসা আগের মতোই আছে।

( প্রথম ছবিতে ফয়সাল এবং আমি। সোহেলের বাসায়। দ্বিতীয় ছবিতে ফয়সালের ছোট ভাই শোয়েব আমাদের সঙ্গে সেলফি তুলছে। আর তিন নম্বর ছবিতে পলাশ আপা তার স্বামী এবং তিন সন্তান সহ.)

Facebook Comments Box
অনীশ দাস অপু
অনীশ দাস অপুhttps://protiddhonii.com
প্রখ্যাত অনুবাদক ও লেখক অনীশ দাস অপু লেখালেখির পাশাপাশি সাংবাদিকতা পেশায় জড়িত। তিনি দৈনিক যুগান্তর- এ সিনিয়র সাব এডিটর হিসেবে কাজ করেছেন । তবে লেখালেখিই তার মূল পেশা এবং নেশা ।
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments