আমার বন্ধু ছবদুল (ছদ্মনাম) অনেক টাকা পয়সার মালিক। আমি তাকে বললাম দোস্ত আমরা যে সময়ে বসবাস করছি এই সময়ে টাকাই সব। টাকা হলে হাতির দাত মেলে,বাঘের চোখ মেলে এমনকি বাঘের দুধও মেলে। বন্ধু ছবদুল আমার কথা শুনে থ! আমি কি আসলেই সত্যি বলছি কি না তা নিয়ে সে কনফিউজড। কারণ আমিতো প্রমাণ ছাড়া কথা বলি না। আমি তার দিকে তাকিয়ে বললাম মনু অবিশ্বাস করার উপায় নেই। জাজাফী যা বলে তার হেরফের হয় না। তুমি যদি খাবার খেতে গিয়ে দেখো স্বাদ মুরগীর মাংসের মত লাগছে,দেখতেও মুরগীর মাংস লাগছে কিন্তু জাজাফী বলছে এটা খাসির মাংস তাইলে ধরে নিবা ওটা আসলেই খাসির মাংস। আমার কথা শুনে বন্ধু এবার হাসলো। ও জানে আমি এটা রসিকতা করে বলেছি। কিন্তু টাকা হলে যে সব কিছু করা যায় বা পাওয়া যায় সেই কথাটা অবশ্য সিরিয়াসলি বলেছি এটা সে বিশ্বাস করেছে।
আমার দিকে চায়ের কাপটা এগিয়ে দিয়ে (মনে মনে কেউ কেউ ভাবতে পারে ওয়াইনের গ্লাসটা এগিয়ে দিয়ে) সে নিজেও এক কাপ চায়ে চুমুক দিতে দিতে বললো দোস্ত আমারতো ম্যালা ট্যাহাপয়সা। এই ট্যাহাপয়সা দিয়ে কি মনের খায়েশ মেটাতে পারুম? আমি বললাম তুই একবার বলেই দেখ তোর মনের খায়েশ ক্যামনে পূরণ করবি সেই বুদ্ধি আমার। সারা জীবনতো সবাইকে ফ্রিতে বুদ্ধি পরামর্শ দিলাম। কনসালটেন্সি ফি নিলে এতোদিন ঢাকা শহরে দুইতলা বাড়ি করে ফেলতে পারতাম।
আমি যে কথাটা ভুল বলিনি তা আমার বন্ধু ছবদুল জানে। সে বললো হ তোর কতা অবশ্য ঠিক। তুই পরামর্শ দিছিলি বইলাইতো আইজকা আমি বিরাট ট্যাকাওয়ালা অইছি। যাই হোক সে আর ভণিতা না করে বললো দোস্ত আমার খুব শখ বলিউডের বিখ্যাত অভিনেতা অক্ষয়কুমারকে আমার বাড়িতে দাওয়াত দিমু। আমি কইলাম ধুর এইডা কোনো কথা কইলি? আমার দোস্ত টাকাওয়ালা আর তার এই সামান্য খায়েশ পূরণ হইবো না এইডা হইবার পারে? আমি আরো এক ধাপ এগিয়ে বললাম তোরবাড়িতে শুধু অক্ষয় আসবে না বরং তোর বাড়ির টয়লেটও পরিস্কার করে দিবে। আগেই কইছি টাকায় সব হয়।
আমার কথা শুনে বন্ধুর চোখ কপালে। বলে কসকি হালায় এইডাও কি সম্ভব নাকিরে? আমি কইলাম সব সম্ভব।তারপর ওরে কইলাম তুই একটা টয়লেট ক্লিনারের ফ্যাক্টরি দে। এই যেমন হারপিক আছে ওরকম তোর কোম্পানীর নাম দিতে পারিস জাজাফীক কিংবা ছবদুলিক। তবে ভুলেও ভাবিলীক টাইপ নাম দিস না। আমার কথা শুনে সে নড়েচড়ে বসলো। আগ্রহ সহকারে তাকালো। আমি বললাম এরপর তুই একটা এডফার্মের সাথে কথা বলবি এবংতাদের বুঝাবি যে তুই একটা বিজ্ঞাপন বানাতে চাস তোর প্রোডাক্টের এবং সেটার জন্য কাস্টিং করতে চাষ অক্ষয় কুমারকে। এবং বাজেট যা লাগে লাগুক। সেই সাথে শর্ত দিবি শুটিং হতে হবে তোর বাড়িতে।
আমার কথা মত ছয় মাসের মধ্যে ছবদুল ফ্যাক্টরি তৈরি করে নাম দিল জাজাফীলিক টয়লেট ক্লিনার। এবং সেটার জন্য বিজ্ঞাপন নির্মাণ করবে বলে একটি বড় ফার্মের সাথে যোগাযোগ করলো যারা এর আগেও অক্ষয়কে দিয়ে বিজ্ঞাপন করিয়েছে।এবং সত্যি সত্যিই দেখা গেল অক্ষয় রাজি হয়েছে। আমার বন্ধু ছবদুল উত্তেজিত হয়ে আমাকে ফোন দিয়ে নির্ধারিত তারিখে ওর বাড়িতে থাকতে বললো। আমি গিয়ে হাজির। শুটিং হবে। অক্ষয় উপস্থিত। লোকেশন ছবদুলের টয়লেট। আমি ওকে বলেছিলাম এক সপ্তাহ টয়লেটে হাগু করে ফ্লাশ করবি না। যেন রংক্যাটক্যাটে হয়ে থাকে। সে তাই করেছিল। এবার রোল ক্যামেরা অ্যাকশন বলার সাথে সাথে অক্ষয় কুমার হাতে টয়লেট ব্রাশ নিয়ে ছবদুলের টয়লেটে ঢুকে জাজাফীলিক ক্লিনার লাগিয়ে ব্রাশদিয়ে পরিস্কার করতে লাগলো। আমার বন্ধু ছবদুল অবাক হয়ে সেটা দেখতে লাগলো।
তার বিশ্বাসই হচ্ছে না যে টাকার বিনিময়ে বিজ্ঞাপনের নামে সে তার নিজের হাগুকরা টয়লেট পরিস্কার করাচ্ছে বিখ্যাত এক কুশীলবকে দিয়ে। আমার দিকে তাকিয়ে সে একটা স্যালুট দিল। বললো দোস্ত তুই এক মহান কালাকার। তোরে স্যালুট। তুই এটা কী দেখাইলি? আমি কইলাম কনসালটেন্সি ফি কত হতে পারে বল? সে হাসলো। বললো তোকে দুবাইয়ের গোল্ডসুকে আমার যে দোকানটা আছে সেটা লিখে দিলাম। আমি বললাম লাগবে না দোস্ত। তোর দোকান তোরই থাক। সে তারপর নতুন নতুন দোকান এটা সেটা উদ্বোধন করে আর বিখ্যাতদের নিয়ে হাজির করে। সে বুঝে গেছে টাকা হলে সব হয়।
বহু বছর পর বহু বছর পর দুবাইয়ের গোল্ড সুকের সামনে দাঁড়িয়ে ছবদুলের মনে পড়ে যাবে সেই দূর বিকেলের কথা যেদিন তাকে সঙ্গে নিয়ে চায়ের পেয়ালায় চুমুক দিতে দিতে জাজাফী বলেছিল টাকা হলে হাতির দাত মেলে,বাঘের দুধ মেলে এমনকি হিরো আলমের সাথে একই মঞ্চে অক্ষয়কুমারকে দিয়ে দোকান উদ্বোধন করা যায়।
১৬/০৩/২০২৩