মুহাম্মদ মুহিউদ্দীন ইবনে মোস্তাফিজ
ফিলিস্তিন এক পবিত্র ভূমি, যেখানে মৃত্যু আসতে ভয় করে। কারণ এই ভূমির মানুষ জানে কীভাবে মৃত্যুকে বরণ করে নিতে হয়। সেখানকার মায়েরা সন্তান জন্ম দেন শুধুই দুটি কারণে গাজি হওয়ার জন্য অথবা শাহাদাতের জন্য। নবদম্পতিরা আশায় বুক বাঁধে, যেন তাদের সন্তান হয় এক বীর যোদ্ধা। এই মায়েরা সন্তানকে মৃত্যুর জন্য লালন-পালন করেন, যেন তারা রাবের সন্তুষ্টির জন্য নিজেদের জীবন উৎসর্গ করতে পারে।
তাদের জীবনের লক্ষ্যই হয়ে ওঠে আল্লাহর পথে জিহাদ করা। স্বামী ও সন্তানকে উৎসর্গ করতে এই মায়েরা প্রস্তুত। যেন তাদের পরিশ্রমের পরিণতি হয় আল্লাহর কাছে সন্তুষ্টির প্রতিদান। তাদের হৃদয়ে ভর করে এক অদ্ভুত শক্তি যা পৃথিবীর মায়েদের তুলনায় ব্যতিক্রমী। যদি পৃথিবীর প্রতিটি ঘরে এমন মা থাকত, তবে মুসলিম উম্মাহ হয়তো আবারও খিলাফার পুনরুত্থান দেখতে পেত।
ফিলিস্তিনের এই মায়েরা কাঁদেন না, বরং সন্তানদের মৃত্যুর খবর শুনে খুশিতে প্রাণ খুলে হাসেন। যেন তাদের সামনে জান্নাতের দরজা খুলে গেছে। মৃত্যুর পরে তাদের সন্তান জান্নাতে প্রবেশ করেছে, সেই দৃশ্য তাদের চোখে ভাসে। তাদের এই ত্যাগের মহিমা যুদ্ধের ময়দান থেকে পাওয়া শিক্ষা, যা তাদের অটুট আত্মবিশ্বাসী করে তোলে।
কিন্তু আমরা? আমরা যারা নিরাপদ দূরত্বে বসে তাদের এই দৃশ্য দেখি, আমাদের অবস্থান কী? কলমও আমাদের দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে। শহীদ ভাই-বোনদের জন্য আমরা কী করতে পেরেছি? না পেরেছি দোয়ায় তাদের শামিল করতে, না পেরেছি তাদের পাশে দাঁড়িয়ে শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে।
যখন কিয়ামতের ময়দানে আমরা তাদের সামনে গিয়ে দাঁড়াবো, তখন কোন মুখে তাদের চোখে চোখ রাখবো? সেই লজ্জার কথা ভেবেই ইচ্ছা হয় যেন মাটি ফেটে যায় আর আমরা সেই লজ্জা থেকে লুকিয়ে থাকতে পারি। আমাদের অক্ষমতা আর অপ্রস্তুতি আমাদের বিবেককে দংশন করে প্রতিনিয়ত। আর সেই দংশনের বিষেই আমরা ধীরে ধীরে ডুবে যাই।
ফিলিস্তিনি মা এক অসামান্য মায়ের প্রতিচ্ছবি, যে আমাদের অনুপ্রাণিত করে, আবার আমাদের নিজের সীমাবদ্ধতার মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়।