কামরুন নাহার
২০১৬ সালের নভেম্বর মাসে শীতটা অতটাও পড়েনি,, তবুও হালকা হাওয়া তে গা ভাসিয়ে দেয়ার মত,,, আমি কখনো ঢাকা যাইনি,,, বলতে গেলে নিজের জেলার বাহিরে কখনও পা রাখা হয়নি,, অনেক কড়া শাসনে বড় হয়েছি,, কিন্তু যখন শুনলাম ভাইয়া ভর্তি হতে ঢাবি তে যাচ্ছে ,,তখন আর ঢাকা শহর দেখার লোভ সামলাতে পারলাম না,,, আম্মু আমি আর ভাই,,এই তিনজন মিলে আমার জীবনের প্রথম ঢাকার মাটিতে পা রাখার সৌভাগ্য হলো,,, তখন জানতাম যে ঢাকা অনেক দুর,,যেতে যেতে রাত হয়ে যায়,,, তাই সকাল ৬:০০ টা বাজে সবাই রওনা দিল,,, প্রথমে গাড়িতে তারপর স্পিডবটে তারপর আবার গাড়িতে,,এভাবেই গন্তব্যে পৌঁছাতে সময় হয়ে গেল সন্ধ্যে ৭:০০ টা,, আম্মুর একটা বোন ছিল,, সে হিসেবে খালার বাড়িতেই উঠতে হলো,, সেখানে ভালোই গেল প্রথম দিন,,
দিন দুই পরে,, ঢাবির উদ্দেশ্যে খালার নিজস্ব গাড়িতে রওনা দেয়া হলো,, অবশ্য এর আগেই ভাই ভর্তি হয়েছে,,আমার যাওয়া হয়নি,,, আমি তাই এখন ঘুরতে যেতে চাইলাম,, ক্যাম্পাসের রঙ যতটা না আকৃষ্ট করেছে আমাকে তার থেকে বেশি নানান বর্ণের নানান রকমের মানুষের হাসি ঠাট্টা আমাকে অবাক করেছে বেশি,, কখনো এমন পরিবেশ দেখিনি তাই ভাবলাম হয়তো আমিও কোনো একদিন এই ভার্সিটি তে আসবো,, এভাবেই হাসবো , সবার সাথে মিশবো,, সেখান থেকে চিড়িয়াখানা ঘুরতে নিয়ে গেল ড্রাইভার আঙ্কেল,, সেদিন বৃষ্টি হওয়ার কারণে তেমন ভীর ছিলনা,, প্রথম অভিজ্ঞতা সবসময় দারুন হয়,,, আমার নজর কেড়েছিল সবকিছুর ভিড়ে পরে থাকা মোটাসোটাহৃষ্টপুষ্ট একটা অজগর সাপ,,, যার সামনে দেয়া আছে একটা সাদা ধবধবে খরগোশ,, সাপটা এতটাই মোটু যে মরার মত পরে আছে আর শিকার করতেও পারছে না,,, এটাই হয়তো জীবন যেখানে মৃত্যু জেনেও মানুষের কোনো মায়া হয়না খরগোশ নামক মিষ্টি প্রাণীটার প্রতি,,সবাই উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে কখন সাপটি শিকার করবে তার লেজ দিয়ে আষ্টেপিষ্টে হত্যা করবে একটা জীবন্ত প্রাণ,,, খালার মেয়ের পরীক্ষা ছিল,,, পরীক্ষা শেষে সেখান থেকে তাকে নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে আমার অনেক অভিজ্ঞতা শেয়ার করা হলো তার সাথে,, এরপর কয়েকদিন বিশ্রামের পর বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়ার কথা হলো,,, খালা অনুরোধ করলেন কিছুদিন থাকার কিন্তু ফিরতেই হবে,,, আসার সময় একবার খুব করে দেখে নিলাম এই শহরকে, হয়তো এই অল্প সময়ে অল্প করেই দেখা হয়েছে এই শহরকে,,তাই আজও মনে হয় সেদিনের সেই ঢাকা ছিল আমার কাছে অদ্ভুত এক রহস্যময় ছোট্ট শহর।
ReplyForwardAdd reaction |