Wednesday, January 22, 2025
Homeসংবাদ‘সীমান্তের দুই পারে’ উপন্যাসের পাঠ উন্মোচন

‘সীমান্তের দুই পারে’ উপন্যাসের পাঠ উন্মোচন


শফিক হাসান
মো. রেজাউল করিমের লেখা ‘সীমান্তের দুই পারে’ উপন্যাসের পাঠ উন্মোচন আয়োজন করা হয়
১৭ জানুয়ারি, ২০২৫ শুক্রবার বিকেলে, রাজধানীর হাতিরপুলস্থ অনুপ্রাণন প্রধান কার্যালয়ে।
লেখক, প্রকাশক, আলোচক-সমালোচক মিলিয়ে জমজমাট সময় অতিবাহিত হয়। স্বাগত
বক্তব্যে অনুপ্রাণন প্রকাশনের সহকারী সম্পাদক সদ্য সমুজ্জ্বল বলেন, ‘দেশভাগ,
সাম্প্রদায়িকতা, দাঙ্গার বিষয়গুলো উঠে এসেছে সীমান্তের দুই পারে উপন্যাসে। উপন্যাসের
নায়ক ফয়েজ হলেও তার পিতাই ভিত গড়ে দিয়েছেন। নায়ক চরিত্রকে উজ্জ্বল করতে গিয়ে
লেখক নায়কের বাবার দিকে মনোযোগ দিতে পারেননি বোধহয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘লেখক
অসাধারণভাবে দেশভাগের ইতিহাস উপস্থাপন করেছেন এটা প্রশংসাযোগ্য। কিন্তু উপন্যাসের
মাঝামাঝি অবস্থায় গিয়ে লেখক ইতিহাসচর্চায় বিরতি দিয়ে পারিবারিক গল্পে ঢুকে গিয়েছেন।
এতে ধারাবাহিকতা ক্ষুণ্ন হয়েছে বলেই মনে করছি।’
মুখ্য আলোচক মোস্তফা অভি বলেন, ‘উপন্যাসটির নির্মাণশৈলী হওয়া উচিত ছিল প্রথম দিকে
ইতিহাস, মাঝখানে পারিবারিক বিষয়, শেষদিকে আবার ইতিহাসে ফেরা। মাঝামাঝি পর্যায়ে গিয়ে
তিনি যেভাবে ইতিহাস বাদ দিয়েছেন তাতে উপন্যাস ক্ষতিগ্রস্ত না হলেও আলোটা ম্লান
হয়েছে।’
মোস্তফা অভি আরও বলেন, ‘রেজাউল করিম একঘেয়ে কাহিনী বর্ণনা করেননি। দেশভাগের
বিষয়গুলো পরিপাটিভাবে উঠে এসেছে। ৭০ পৃষ্ঠায় গিয়ে আমরা উপন্যাস নায়কের নাম পাই—
ফয়েজ। সে মেডিকেল কলেজের ছাত্র। দেশভাগ-দাঙ্গা, হিন্দু-মুসলমানের জিঘাংসার কথা বলা
হয়। শুধু ইতিহাস নয়, এই উপন্যাসে ভূগোলও আলোচনা হয়েছে। ভূদৃশ্যের বর্ণনা অসাধারণ।
পদ্মানদীর বিস্তার, রাজশাহী থেকে সিলেটযাত্রা— ফয়েজ ও তার চাচার দৃশ্য অবলোকনে উঠে
এসেছে ভূদৃশ্য বর্ণনা। মনস্তাত্ত্বিক ভাঙাগড়ার বিষয়টি লেখকের অন্যান্য বইয়েও ছিল।
চেতনাপ্রবাহের কাজটি সুনিপুণভাবে বর্ণনা করেছেন লেখক। সব মিলিয়ে বইটি চমৎকার।’
পাঠ-প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে মনস্তত্ত্ববিদ জিয়ানুর কবির বলেন, ‘ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ
শাসকরা চলে যাওয়ার পর দেশ কীভাবে ভাগ হবে— আমরা জানি না। বইয়ে কিছু প্রশ্নের জবাব
পেয়েছি, তবে সব না। নষ্ট রাজনীতির কথা বলেছেন লেখক। দৃশ্যপটে উঠে এসেছে মানুষের
সংস্কৃতি। মানুষ অভিন্ন চেহারার, প্রায় একই বর্ণের— শুধু ধর্ম আলাদা এই বঙ্গে। ধর্ম-
বিদ্বেষের কারণেই হাঙ্গামাগুলো হয় অনেক সময়। লেখক চাইলে এসব দিকেও আরেকটু
আলোকপাত করতে পারতেন।’
পাঠক-শ্রোতার প্রশ্নের জবাব দেন ‘সীমান্তের দুই পারে’ উপন্যাসটির লেখক মো. রেজাউল
করিম। উপন্যাস রচনার পূর্বাপর ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘সব লেখকের জন্যই বাস্তবতা লিংক
হিসেবে কাজ করে। কোন জায়গা থেকে শুরু করবেন এই স্বাধীনতা লেখকের। কোনো একটা
‘টাচি’ জায়গা থেকে শুরু করেন লেখক, যাতে পাঠক আকৃষ্ট হন। উপন্যাসটি ডকু-ফিকশন বলে
কাহিনীর উত্থান-পতন হয়েছে। ফয়েজ নাকি ফয়েজের বাবা উপন্যাসের নায়ক— বিষয়টা
পাঠকই ঠিক করুক।’

বইটির প্রকাশক ও অনুষ্ঠানের সভাপতি অনুপ্রাণন প্রকাশন স্বত্বাধিকারী আবু এম ইউসুফ
বলেন, ‘উপন্যাসটি পাঠকরা পড়ছেন, প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন— প্রকাশক হিসেবে আমার
ভালো লাগছে। এসব আলোচনার মধ্য দিয়ে অনেকেই জানবেন বইটির সম্বন্ধে।’
অনুপ্রাণন প্রকাশনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য জানিয়ে প্রকাশক আরও বলেন, ‘অনুপ্রাণন যাই
করে, আন্তরিকতার সঙ্গেই করে। সততা রক্ষা করে। আমাদের প্রত্যেকটা পাণ্ডুলিপিই
কয়েকজন সম্পাদক পড়ে সিদ্ধান্ত নেন। পাণ্ডুলিপি পড়ে সম্পাদনা পর্ষদ নোট দিয়েছে।
কয়েকটা ব্যাপার আমি লক্ষ করেছি। বাংলা সাহিত্যে ইতিহাসনির্ভর উপন্যাস রচিত হয়েছে
কমই। বিশেষ করে বাংলাদেশের সাহিত্যে দেশভাগের উপরে উপন্যাস বলতে গেলে খুব কম।
সীমান্তের দুই পারে প্রকাশিত হলে শূন্যতা কিছুটা হলেও দূর হবে, এমন ভাবনা থেকেই
উপন্যাসটি প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছি।’
আবু এম ইউসুফ বলেন, ‘ছাত্রজীবনে বঙ্গবন্ধু কলকাতার বেকার হোস্টেলে থাকতেন। বেকার
হোস্টেলের বিশদ বর্ণনা আছে এই উপন্যাসে। দাঙ্গার ঘটনার মধ্যে বাঙালি মুসলমানের
চেতনার যে স্ফুরণ হয়— সেখান থেকেই আমরা মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছি। ইতিহাসভিত্তিক
উপন্যাসের চরিত্র আর উপন্যাসের চরিত্র সমন্বয় করে উপন্যাস লেখা সহজ নয়। কিছুটা
জটিলতা থাকাই স্বাভাবিক। আমি মনে করি, উপন্যাসটি পাঠতালিকায় রাখলে পাঠক ঠকবেন
না।’
বইটির ভূমিকা লিখেছেন কলকাতার প্রখ্যাত প্রাবন্ধিক ও ডকুমেন্টারি ফিল্ম নির্মাতা
সৌমিত্র দস্তিদার। পাঠ উন্মোচন অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন সাংবাদিক অনি আতিকুর
রহমান। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন— কথাসাহিত্যিক মোজাম্মেল হক নিয়োগী, হুমায়ুন কবির,
শৈলজানন্দ রায়, শাহীনুর আসিফ, আলোকচিত্রী এম হায়দার চৌধুরী, এম এইচ আকাশ,
শিক্ষক তানিয়া সুলতানা, ডিএনসিসি কর্মকর্তা মামুন আর রশীদ, লেখক ও মনস্তত্ত্ববিদ
জিয়ানুর কবির, সাংবাদিক সাজেদুর আবেদীন শান্ত ও শৈল্পিক হুমায়ূন। আরও উপস্থিত
ছিলেন— হালিমা আক্তার, মাহমুদুল সামির, মাসুম হোসেন, শাহীন আলম শেখ প্রমুখ।

Facebook Comments Box
প্রতিধ্বনি
প্রতিধ্বনিhttps://protiddhonii.com
প্রতিধ্বনি একটি অনলাইন ম্যাগাজিন। শিল্প,সাহিত্য,রাজনীতি,অর্থনীতি,ইতিহাস ঐতিহ্য সহ নানা বিষয়ে বিভিন্ন প্রজন্ম কী ভাবছে তা এখানে প্রকাশ করা হয়। নবীন প্রবীণ লেখকদের কাছে প্রতিধ্বনি একটি দারুণ প্ল্যাটফর্ম রুপে আবির্ভূত হয়েছে। সব বয়সী লেখক ও পাঠকদের জন্য নানা ভাবে প্রতিধ্বনি প্রতিনিয়ত কাজ করে চলেছে। অনেক প্রতিভাবান লেখক আড়ালেই থেকে যায় তাদের লেখা প্রকাশের প্ল্যাটফর্মের অভাবে। আমরা সেই সব প্রতিভাবান লেখকদের লেখা সবার সামনে তুলে ধরতে চাই। আমরা চাই ন্যায়সঙ্গত প্রতিটি বিষয় দ্বিধাহীনচিত্ত্বে তুলে ধরতে। আপনিও যদি একজন সাহসী কলম সৈনিক হয়ে থাকেন তবে আপনাকে স্বাগতম। প্রতিধ্বনিতে যুক্ত হয়ে আওয়াজ তুলুন।
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments