মুজাহিদুল ইসলাম মোমেনশাহী
ফিলিস্তিন, যাদের প্রভাত হতো প্রিয়জনদের মুখ দেখে। পূর্বাকাশে সূর্য উদিত হওয়ার সাথে -সাথে যারা নতুন দিনের নতুন হিসাব করতো তারা এখন তাদের পল্লী গাঁয়ের ছোট থেকে ছোট গলিতেও দেখছে রক্তের ছোপ; আপনজনদের মৃত মায়াবী চেহারা, সাদা কাফনে মোড়ানো ফুটফুটে সুন্দর জান্নাতি শিশুদের লাশ।
চিরচেনা সবুজ শ্যামল সুবিস্তৃত যে মাঠগুলো তাদের চোখ শীতল করতো, প্রতিদিন তাদেরকে নিত্যনতুন যে অপূর্ব নজরকাড়া দৃশ্য উপহার দিতো,সে-ই মাঠগুলোই এখন তাদেরকে রক্তের গালিচা হয়ে সংবর্ধনা জানাচ্ছে। প্রিয় জন্মভূমির মাঠ-ঘাট আঁকাবাঁকা মেঠোপথ পল্লীগাঁয়ের চোখ জুড়ানো দৃশ্য সব তাদের কাছে অপরিচিত মনে হচ্ছে।
চাঁদের মতো সুন্দর ফুটফুটে শিশুরা ;যে বয়সে তাদের দিনগুলো অতিবাহিত হওয়ার কথা ছিল আনন্দ -উল্লাস উৎসাহ ও উদ্দীপনার সাথে প্রক্ষান্তরে এই বয়সটাতেই তারা নানা রকম জুলুম নির্যাতন ও বিপদ -আপদের নীরব সাক্ষী হয়ে আছে।
এই ক্ষুদ্র জীবন ;এতে কতো শতো পরিস্থিতির সম্মুখীন, কতো শত আনন্দের উচ্ছল দিনগুলো বিলীন প্রিয়জনদের সুখ -স্মৃতি নীরব নিভৃতে এসব ভেবে তাদের চোখ সজল হয়ে যায়। যে বয়সে তাদের বাবা- মায়ের কোলে ঘুমানোর কথা ছিল সে বয়সে চোখের সামনে নিজের বাবাকে নির্দয়ভাবে হত্যা করা হচ্ছে। দশ মাস দশ দিন গর্ভে ধারণ করা প্রিয় মা-কে চোখের সামনে নিমিষেই রক্তে রঞ্জিত করা হচ্ছে। অন্যদিকে মায়ের সামনেও আদরের সন্তানটিকে নির্মমভাবে বুলেটের আঘাতে জান্নাতে পাঠিয়ে দিচ্ছে।
সন্তানহারা মা নির্ঘুৃম নগরীতে রাতের আধাঁরে প্রিয় সন্তানের শোকে স্মৃতিকাতর হয়ে যায়;চোখ দুটো ভিজে একাকার হয়ে যায়, স্বীয় কাপড়ের আঁচল দিয়ে চক্ষুদ্বয় মুছতে- মুছতে হঠাৎ স্বপ্নের রাজ্যে হারিয়ে যায়, স্বপ্নে মা তাঁর শিশুকে দেখে আর জিজ্ঞেস করে —ঃ
:- খোকা!কেমন আছো?
:- মা, আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।
:-খোকা! যখন ওই দুশমনেরা তোমার শরীরে গুলিবিদ্ধ করেছে তখন তোমার কষ্ট হয়নি?
:-মা, যখন ওরা আমাকে গুলি করেছে তখন হালকা কষ্ট অনুভব হয়ছে; কিন্তু পরক্ষণেই আবার অনেক শান্তি অনুভব করেছি। আর তখনই আমার চোখের সামনে ভেসে উঠে অপূর্ব সুন্দর সবুজ-শ্যামল উদ্যানরাজি (জান্নাত) সুবহানাল্লাহ্।
সকালবেলা মায়ের ঘুম ভাঙ্গে ;তিনি নিমিষেই ভুলে যান সন্তান হারানোর ব্যথা-বেদনা ; আনন্দের আতিশয্যে অশ্রুসিক্ত হয়ে সন্তান হারা মা-টি আল্লাহর চরনে লুটিয়ে পড়ে………..।