Sunday, November 24, 2024
Homeসাহিত্যগল্পফজ মেশিনের আবেদন

ফজ মেশিনের আবেদন

আশরাফ ভাই চায়ের দাওয়াত দিয়েছিলেন ওনার অফিসে।দেশের একটি প্রথম শ্রেনীর ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট তিনি।অনেক দিন দেখা হয়না তাই ভাবলাম গিয়ে চায়ের আড্ডায় শামিল হই।একই সাথে চা পান করা হবে আবার সুখ দুঃখের গল্পও করা হবে।তবে সমস্যা কী জানেন ইদানিং ব্যাংক গুলোতে গ্রাহক সংখ্যার এতো চাপ যে বসে দু’দন্ড শান্তিমত কথাও বলার উপায় নেই।অবশ্য গ্রাহক সেবা দিতে বসে দু’দন্ড শান্তি মত গল্প করার খায়েশ মনে স্থান দেওয়াটাও এক প্রকার অন্যায়।সেবা দেওয়ার সময় এক মাত্র কাজ হলো সেবা দেওয়া। আরাম করা আড্ডা দেওয়ার জন্য অফিস টাইমের বাইরেতো অনেক সময় আছেই।এই দিক থেকে আশরাফ ভাই বেশ রিলাক্সেই আছেন বলা চলে। কাঁচ দিয়ে ঘেরা এসি রুমে নির্ঝঞ্ঝাট তার অফিস।

এগারটার দিকে ফোন দিয়ে রওনা দিলাম।ফুলার রোড থেকে মতিঝিল খুব বেশি দূরে না হলেও রাস্তায় যে যানজট তাতে ঘন্টা দেড়েক সময়ের কমে যাওয়া যাবে বলে মনে হয়নি।ড্রাইভারকে বললাম একটু ফাঁকা রাস্তা খুঁজে সেদিক দিয়ে যেতে।শুধু মাত্র চা খাওয়ার জন্য ফুলার রোড থেকে মতিঝিলে যাওয়া লোক আমি নই। আসলে ওই ব্যাংক থেকে আমার নতুন ফ্যাক্টরীর জন্য লোন পাওয়ার কথা চলছে।কাজ কতদূর এগিয়েছে সেটারও একটু খোঁজ নেওয়া দরকার তাই রথ দেখা আর কলা বেঁচা দুইই এক সাথে করার ধান্ধায় চলে গেলাম ভাইয়ের অফিসে।অফিসে উঠে ভাইয়ের রুমে গিয়ে সামনে চেয়ার টেনে বসলাম। বেশ গল্প আড্ডায় সময় কাটছিল। মাঝে মাঝে এক দু’জন কাষ্টমার আসছিল বিশেষ বিশেষ কাজে, ভাই মিনিটের ব্যবধানেই সেসব সমাধান করে বিদায় দিয়ে আবার আড্ডায় মেতে উঠছিলেন।

পুরো আড্ডায় আমি ছিলাম দর্শক আর ভাইয়ের কথার মুগ্ধ শ্রোতা। তার কথা শুনতে আমার বেশ লাগে বলেই মাঝে মাঝেই দেখা করতে যাই।তিনি আমাকে নানা ভাবে পরামর্শ দিয়ে থাকেন বড় ভাইয়ের মত।তিনি জানতে চাইলেন নতুন ফ্যাক্টরীর কাজ কতদূর এগিয়েছে।আমি জানালাম জিরাবোতে দশ কাঠা জমির উপর আপাতত তিন তলা শেষ করে ফ্যাক্টরী চালু করবো তার পর লোনটা ওকে হলে বাকিটা দেখবো।এরকম সময়ে একজন বুড়ো মত লোক কাঁচের দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে বললো ছার আসতি পারি? আশরাফ ভাই বললেন আসুন আসুন,চেয়ার দেখিয়ে বললেন এখানে বসুন এবং বলুন কি দরকার।

আশরাফ ভাইয়ের কথা মত লোকটি চেয়ারে বসতে গিয়েও না বসেই বললো থাহুক না ছার বসতি অবিনে।আমি এট্টা দরকারে আইছি। কোন অঞ্চলের ভাষা তা আমি বলতে পারবো না কারণ ভাষা বিষয়ে আমি খুব বেশি দক্ষ নই।লোকটি একটি দরখাস্ত এগিয়ে দিল আশরাফ ভাইয়ের সামনে।ভাই সেটা ভালমত পড়ে জানতে চাইলেন আপনি যে পজ মেশিনের আবেদন করছেন আপনার কিসের ব্যাবসা?পজ মেশিন কেন নিবেন?দৈনিক কত টাকা লেনদেন হবে?

আমি লোকটার দিকে তাকিয়ে বুঝতে চেষ্টা করলাম তিনি কী এমন ব্যবসা করতে পারেন যেখানে পজ মেশিন লাগবে। আমারতো মনে হয় তার দ্বারা এমন কোন ব্যবসা করা সম্ভব নয় যেখানে কার্ডে পেমেন্ট করা মত কোন কাস্টমার যাবে।আশরাফ ভাইয়ের কথা শুনে লোকটা বললো ছার আমিতো কুনো ব্যাপসা করিনে।ভাইয়ের সাথে সাথে আমিও খুব অবাক হলাম। ব্যাবসা করেনা অথচ পজ মেশিন চায়! ভাই জানতে চাইলেন তাহলে আপনি কেন পজ মেশিন চান? লোকটা তখন বললো ছার যা দিনকাল পড়িছে আর মানুষজনে যা কেরডিট কাড অইছে তাতে ফজ মেশিন না নিয়ে উপায় কি কন?লোকটির কথাতে আঞ্চলিক টান আছে তিনি পজকে তাই ফজ বলেছেন।শুনতে বেশ মজাই লাগছিল।

আশরাফ ভাই বললেন তাতো ঠিকই বলেছেন। এখনতো সবাই ক্রেডিট কার্ড ডেবিট কার্ডই বেশি ব্যবহার করে। কিন্তু সেসবতো দোকানের জন্য।পজ মেশিনতো কেনাকাটার বিল পরিশোধের জন্য লাগে।আপনিতো কোন ব্যবসা করেন না তাহলে আপনার কেন লাগবে?

লোকটি আমতা আমতা করে বললো ছার আমিতো দৈনিক বাংলার মোড়ে ভিক্ষা করি।যার কাছেই ভিক্ষা চাই হেই কয় টাহা নাই কেরডিট কাড আছে।আমিতো জানিনা হেইডা কি জিনিস।একজনরে কলাম তালি কেরডিট কাডই দ্যান।লোকটা একটা গালি দিয়ে চলে গেল।পরে পাড়ার এক শিক্ষিত লোকের কাছে জানতি পারলাম বিষয়ডা কি। তাই ভাবলাম এট্টা ফজ মেশিন নিলে কেউ কেরডিট কাড কইয়ে ভিক্ষা না দিয়ে যাইতে পারবো না।আমি লোকটির কথা শুনে তার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকলাম।আমার মূখে আর কোন কথা আসলো না।

এর ফাঁকে আশরাফ ভাই তাকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে বিদায় করলেন যে কোন ব্যবসা করা ছাড়া ফজ মেশিন কাউকে দেওয়া হয়না। আশরাফ ভাইও কি করে যেন পজ মেশিনকে ফজ মেশিন বলে ফেললেন। তবে তিনি যে ইচ্ছে করে বলেননি সেটা পরে বুঝলাম।এর অনেক দিন পর একবার আশরাফ ভাই আর আমি ম্যাপললিফে খেতে গিয়ে পেমেন্ট করার সময় মনে পড়লো সেই ঘটনাটা।চুপিচুপি ভাইকে বললাম ভাই এখানে কিন্তু ব্র্যাক ব্যাংকের ফজ মেশিন আছে।ভাই হো হো করে হেসে উঠলেন,কাউন্টারের লোকটা কি বুঝলো কে জানে।
————————————
শিরোনামঃ ফজ মেশিনের আবেদন
#জাজাফী

১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭
#ব্যাংকার_সমাচার

Facebook Comments Box
RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments