বর্ষায় খোদার রহমতের বৃষ্টিতে বোনা আমন ধান ( যা হেমতি ধান নামেও পরিচিত, সেচ শুরু হওয়ার আগে থেকে এখনও প্রধান চাষের ফসল ) অগ্রহায়ণে ঘরে ওঠে।
আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায়স্বরুপ এলাকার হুজুর সাহেবকে ডেকে এনে নিজেদের ও মৃতদের জন্য দোয়া কালাম পড়া হয়। নতুন ধানের নতুন চালের ভাত ও রুটি, গরুর মাংস প্রথম পাতে ওঠে হুজুরের। পরিবারের সবাই মিলে গরম ভাত, মাংস খেয়ে নবানের মাধ্যমে শুরু করে নতুন বছর।
কঠোর পরিশ্রম শেষে পাওয়া ধান থেকে দুই এক মণ বিক্রি করে বাড়ির জিনিসপত্র, নতুন জামা কাপড়, ছোটদের জন্য খেলনা । বাড়ির মা বোনেরা চলমান দোকানে সের হিসেবে ধানের বিনিময়ে শুটকি, চুড়ি, ফিতা, মলা সহ অন্যান্য তৈজসপত্র কিনে। দোকানি দোয়ার মাধ্যমে শুরু করে হালখাতা। ধান বিক্রি করে টাকা দিয়ে মিষ্টি খেয়ে আসে দাদা নাতি।
ধানের আটা দিয়ে তৈরি করা হয় নানান পদের পিঠা, পরমান ( পায়েস )। পরিবার প্রতিবেশি ছাড়াও পিঠা নিয়ে যাওয়া হয় মেয়ে, বাবার বাড়ি। আত্মীয়, বাচ্চাকাচ্চায় ভর্তি হয় বাড়ি। ধানের খড়ে সবার খেলাধুলা আর রাতে গায়ের চুলকানি।
মানুষ ছাড়াও গবাদিপশুর সারাবছরের খড়, ভুষি, খুদ আসে এসময়। নয়া ধান খেয়ে তাজা হয় শুকনো হাঁস মুরগী, ডিম দেয়া শুরু করে। ক্ষণস্থায়ী চারণভূমি হয়ে ওঠে সকল ফাঁকা মাঠ। কিংবা কচিকাচা খেলে গোল্লাছুট, কানামাছি। পুরো বাড়ি, গ্রাম খিলখিলিয়ে ওঠে। সাথে পশু, পাখিরাও।
আনন্দের মাধ্যমেই শুরু হয় নতুন বছর। নতুন বছর মানেই নতুন কিছু। কিন্তু বৈশাখে মানুষের জীবনযাত্রায় সেই পরিবর্তন দেখি না। পক্ষান্তরে সব কিছু হেমন্তে নতুন ধানকেন্দ্রিক। ধান কাটার আগেও কার্তিক মাসকে বলে অভাবের মাস এবং অগ্রহায়ণ আসে সমৃদ্ধি নিয়ে। আল্লাহর নেয়ামতে সারাবছর খাওয়ার দানা আসে, নতুন বছর তাই শুরুও হয় তার শুকরিয়া আদায় করে।