২০১৯ সালে পোকামাকড়ের ব্যথা অনুভব বিষয়ক একটি গবেষণায় বলা হয়, কিছু কিছু পোকামাকড় ক্রনিক ব্যথা অনুভব করতে পারে যা প্রাথমিক ক্ষত নিরাময়ের পর দীর্ঘস্থায়ী হয়।
পৃথিবীতে এখনও পর্যন্ত প্রায় দশ লাখ প্রজাতির পোকামাকড়ের সন্ধান মিলেছে। কিন্তু লন্ডনের রয়্যাল এন্টোমলজিক্যাল সোসাইটির ধারণা অনুযায়ী, এর প্রকৃত সংখ্যা এক কোটি হতে পারে।
এত বিপুল সংখ্যায় থাকা সত্ত্বেও অন্যান্য পশুপাখিকে নিয়ে যে পরিমাণ গবেষণা হয়েছে, সেরকম মনোযোগ পায়নি কীটপতঙ্গ। এমনটাই মনে করেন স্পেইনের ইউনিভার্সিটি অভ স্যান্টিয়াগো দ্য কম্পোস্টেলার প্রফেসর হোজে কারলোস ওতেরো। এল পাইস অবল্মবনে
তবে এ অবস্থার পরিবর্তন ঘটছে। বিজ্ঞানীরা অনুধাবন করতে পেরেছেন আমরা যে ইকোসিস্টেমের কল্যাণে বেঁচে থাকি তার অনেক কিছুই নির্ভর করে কীটপতঙ্গের উপর। এসব কীটপতঙ্গ মনুষ্যজাতির বেঁচে থাকার জন্য অত্যাবশ্যক।
‘পোকামাকড়েরাও কি ব্যথা অনুভব করে?’ বিজ্ঞানজগতে এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে অনেক বছর ধরে। সম্প্রতি এ বিতর্কের উত্তরের সন্ধানে একদল গবেষক মাঠে নামেন। তারা খুঁজে পান, ব্যথা অনুভূত হওয়ার জন্য যে মেকানিজমের প্রয়োজন সেসব কীটপতঙ্গের রয়েছে। কিন্তু এ তথ্য ব্যথা অনুভুতির প্রমাণের জন্য যথেষ্ট নয়।
গবেষকদলের একজন লন্ডনের কুইন মেরি ইউনিভার্সিটির সেন্সরি অ্যান্ড বিহেভিয়ারাল ইকোলজির প্রফেসর লার্স চিটকা ব্যাখ্যা করেন, এটা এমন একটা সময় যখন মানুষ এবং পশুসম্পদ উভয়ের প্রয়োজনে পোকামাকড় ইন্ডাস্ট্রির ব্যাপক প্রসার ঘটছে। ২০১৩ সালে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (ফাও) বিশ্বে ক্ষুধা নিরাময়ে পোকামাকড়কে পুষ্টিকর, প্রোটিনসমৃদ্ধ ও সহজলভ্য খাবার বলে ঘোষণা করেছে।
‘দ্য মাইন্ড অভ দ্য বী’ বইয়ের লেখক লার্স বলেন, গবেষণা এবং শৈল্পিক খাতে এসব পতঙ্গের ব্যবহারের ক্ষেত্রে কোনো আইনি কাঠামো নেই। তাদের নিয়ে কাজের আগে তাদের কেমন অনুভূত হয় তা বিবেচনায় রাখারও জোর দাবি জানান তিনি। তার মতে তা না হলে ব্যাপারটা মুরগির মতো অন্যান্য প্রাণীদের পালা ও অতঃপর জবাইয়ের মতো হয়ে যাবে।
ওতেরোর মতে কীটপতঙ্গও ব্যথা অনুভব করে। যেভাবে ব্যাপকহারে তাদের হত্যা করা হয় তা নির্মম। তাই তিনি এ সংক্রান্ত আইনি বিধিনিষেধের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
তিনি বলেন, ‘কারেন্ট বায়োলজি’তে প্রকাশিত গবেষণা অনুযায়ী পশুপাখির নসিসেপশন নামে একটি সেন্সরি মেকানিজম থাকে তা তাদেরকে সম্ভাব্য ক্ষতিকারক উদ্দীপক এড়িয়ে যেতে সাহায্য করে। এর একটি উদাহরণ হলো, যখন একটা পশু বা পাখি খুব উষ্ণ কোনো কিছুর সংস্পর্শে আসে, তখন এর ত্বকে থাকা বিশেষ কিছু রিসেপ্টর সেই উত্তপ্ত বস্তুকে এড়িয়ে যেতে সংকেত দেয়। এটি সব ধরনের পশুপাখির ক্ষেত্রেই হয়ে থাকে।
তবে এ ধরনের প্রতিক্রিয়া এবং ব্যথার মধ্যে পার্থক্য করা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ তারা যে ব্যথা অনুভব করে তার প্রমাণ হিসেবে নসিসেপশনের উপস্থিতিই পর্যাপ্ত নয়।
উদাহরণস্বরূপ, একজন আহত সৈনিক তার যুদ্ধক্ষেত্রের ক্ষত অনুভব করতে পারেন না যতক্ষণ না তিনি আশ্রয়শিবিরে ফিরে আসেন। এটি তার এন্ডোজেন সংক্রান্ত নিদ্রাকর্ষক সিস্টেমের ফলাফল।
২০১৯ সালে পোকামাকড়ের ব্যথা অনুভব বিষয়ক একটি গবেষণায় বলা হয়, কিছু কিছু পোকামাকড় ক্রনিক ব্যথা অনুভব করতে পারে যা প্রাথমিক ক্ষত নিরাময়ের পর দীর্ঘস্থায়ী হয়। ‘সায়েন্স অ্যাডভান্সেস’ নামক একটি জার্নালে জানা যায়, গবেষকেরা একটি মাছির পায়ের নার্ভকে ক্ষতিগ্রস্ত করে দেন। সেই ক্ষত নিরাময়ের পরে মাছিটির অন্য পাটি অতি সংবেদনশীল হয়ে পড়ে।