তমসুর হোসেন
জোরে হাওয়া লাগলেই পাতারা উড়ে আসে
দক্ষিণের বারান্দাটা খসখসে শুকনো পাতায় ভরে যায়
পাতার মনে হয় একটুও ওজন নেই
গাছের শাখায় ওরা দিব্বি টলটলে সতেজ থাকে
রোদের তাপে হাওয়ার দোলায় দিনভর নৃত্য করে
আয়ু হারালে ওরা উদ্বাস্তের মতো উড়ে বেড়ায় এখানে সেখানে
কুঁকড়ে যাওয়া শিরদাঁড়াকে চাকা করে গড়িয়ে চলে
হাওয়ার তাড়না ওদের ইচ্ছেমতো চালিয়ে নিয়ে যায়
শাখা থেকে খসিয়ে মাটিতে সবেগে ছুঁড়ে ফেলে যায়।
তখন থাকে না ওদের বেড়ে উঠার উদ্দাম মাদকতা
সবুজের সমারোহে ক্লোরোফিলের চাদরে গড়াগড়ি খেয়ে
রোদের ঐশ্বর্যে পুষ্ট হওয়া হয় না আর কোনদিন
এখন ভগ্ন তনুতে ক্ষয়ের বিষাদ গুঞ্জন
পত্রজালিকার মৃতকোষে অনন্তের বেদনার গান।
বারান্দায় বসে ঝরাপাতার ক্রন্দন শুনি একান্ত নির্জনে।
ওদের নীরব আর্তি আমার বুকে শোকের মাতম তোলে
নশ্বর ধরা হতে চলে যেতে ওরা আমাকে ডাকে সমস্বরে
যেখানে চিরহরিৎ বসন্তের উল্লাস সেখানে সদলে যাবে ওরা
হাওয়ার গাড়িতে যোজন যোজন পথ পাড়ি দেবে
এখানের ক্ষণিক বসন্ত ওদের নিঃস্ব আর সর্বশান্ত করেছে
ঝরাপাতার কান্নায় আমি বিমুঢ় উদাস হয়ে যাই
ভাবি আমাকেও একদিন ছিন্নপত্রের মতো চলে যেতে হবে।
তমসুর হোসেন
কবি ও গল্পকার।
সরকার মঞ্জিল, কলেজ রোড।
ফুলবাড়ি, কুড়িগ্রাম।