মনির হোসেন
একসময় এক দূর দেশে, সবুজ পাহাড় আর নীল নদী ঘেরা ছোট্ট একটি গ্রাম ছিল। গ্রামের নাম ছিল “নীলপুর”। এই গ্রামে সবাই শান্তিতে থাকত, কিন্তু তাদের মধ্যে সবচেয়ে আলাদা ছিল এক ছোট্ট মেয়ে, নাম তার “নীলা”। নীলার চোখ ছিল নীল আকাশের মতো, আর তার হাসি গ্রামের সবাইকে আনন্দ দিত। নীলার খুব ভালো লাগত গল্প শোনাতে আর শুনতে। সে প্রতিদিন বিকেলে গ্রামের বড় বটগাছের নিচে বসে গল্প বলত, আর সবাই জড়ো হত তার গল্প শুনতে।
একদিন, নীলা বনের মধ্যে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল। হঠাৎ সে দেখতে পেল একটা ছোট্ট আলোর বল, যেটা ঝলমল করছে। নীলা অবাক হয়ে গেল, কারণ সে আগে কখনো এমন কিছু দেখেনি। সে আলোর বলটার কাছে গেল, আর দেখল সেটা আসলে একটা জাদুর জিনিস! আলোর বলটা তাকে বলল, “নীলা, আমি তোমাকে একটা বিশেষ জায়গায় নিয়ে যাব, যেখানে তুমি সবচেয়ে সুন্দর গল্প খুঁজে পাবে। কিন্তু সেখানে যাওয়ার পথে অনেক চ্যালেঞ্জ আছে। তুমি সাহসী হলে চলো।”
নীলা ভাবল না, সে রাজি হয়ে গেল। আলোর বলটা তাকে এক জাদুর দরজার সামনে নিয়ে গেল। দরজা খুলতেই নীলা দেখল এক বিশাল জঙ্গল, যেখানে সব গাছের পাতা সোনার রঙের। কিন্তু জঙ্গলের মাঝখানে ছিল এক ভয়ঙ্কর ড্রাগন, যে সবাইকে ভয় দেখাত। নীলা ভয় পেল না, সে ড্রাগনের সামনে গেল আর বলল, “তোমার কি দরকার? আমি তোমাকে সাহায্য করতে চাই।”
ড্রাগন অবাক হয়ে গেল, কারণ কেউ তাকে আগে কখনো এভাবে কথা বলেনি। সে বলল, “আমি একা থাকতে খুব ক্লান্ত হয়ে গেছি। আমি চাই কেউ আমার বন্ধু হোক।” নীলা হাসল আর বলল, “তাহলে আমি তোমার বন্ধু হব।” ড্রাগন খুব খুশি হল, আর নীলাকে জঙ্গলের শেষ প্রান্তে নিয়ে গেল, যেখানে ছিল এক সুন্দর ঝর্ণা। ঝর্ণার পাশে ছিল এক গুপ্ত দরজা।
নীলা দরজা খুলল আর দেখল ভেতরে এক বিশাল লাইব্রেরি, যেখানে সবচেয়ে সুন্দর গল্পগুলো রাখা আছে। নীলা খুব খুশি হল, কারণ সে জানত এই গল্পগুলো তার গ্রামের সবাইকে আনন্দ দেবে। কিন্তু তখনই আলোর বলটা তাকে বলল, “নীলা, এই গল্পগুলো শুধু তোমার নয়। এগুলো সবাইকে শেয়ার করতে হবে।”
নীলা বুঝতে পারল, জাদুর গল্পগুলো শুধু তার জন্য নয়, এগুলো সবাইকে একসাথে আনন্দ দেবে। সে গল্পগুলো নিয়ে গ্রামে ফিরে গেল, আর সবাইকে বলল তার নতুন অভিযানের কথা। সেই দিন থেকে, নীলা আরও বেশি গল্প শোনাত, আর তার গল্পগুলো শুনে গ্রামের সবাই একসাথে আনন্দ পেত।
আর ড্রাগন? সে নীলার বন্ধু হয়ে গেল, আর মাঝে মাঝে গ্রামে এসে সবাইকে জাদুর গল্প শোনাত। নীলপুর গ্রাম হয়ে উঠল গল্প আর আনন্দের জায়গা, যেখানে সবাই একসাথে থাকত, আর কেউ কখনো একা থাকত না।
আর নীলা? সে বুঝতে পারল, সবচেয়ে বড় জাদু হল ভালোবাসা আর বন্ধুত্ব। সেই দিন থেকে, নীলার গল্পগুলো শুধু মজার নয়, বরং সবার মনে আশা আর ভালোবাসার আলো জ্বালা।