মুহাম্মদ মুহিউদ্দীন ইবনে মোস্তাফিজ
শিশুরা জাতির ভবিষ্যৎ, কিন্তু আজকের বাস্তবতা যেন সেই স্বপ্নকে ধূলিসাৎ করে
দিচ্ছে। যে শিশুদের হাতে থাকার কথা ছিল কলম ও খাতা, তাদের হাতে দেখা যাচ্ছে
মাদকের থলি। এই করুণ দৃশ্য শুধু আমাদের সমাজের ব্যর্থতাকেই প্রমাণ করে না, বরং
ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এক অন্ধকারময় পথের ইঙ্গিত দেয়।
শিশুরা কেন নেশার শিকার?
শিশুর মন খুবই নিষ্পাপ ও গঠনশীল। তাদের মন মাটির মতো, যেভাবে গড়া হবে, সেভাবেই
তারা বিকশিত হবে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, আমাদের সমাজে এই নির্মল মনগুলোকে বিকৃত
পথে পরিচালিত করা হচ্ছে। দরিদ্রতা, অসচেতনতা, পরিবারহীনতা এবং অপরাধীদের
প্রভাবশালী দৃষ্টিভঙ্গি পথশিশুদের মাদকের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
বেশিরভাগ পথশিশু দিনের পর দিন ক্ষুধার্ত থাকে। কিছু অমানবিক ব্যক্তি ও গোষ্ঠী
এই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে তাদের হাতে মাদক তুলে দেয়। প্রথমে বিনামূল্যে মাদক
সরবরাহ করা হয় এবং পরে সেই শিশুগুলো মাদক ব্যবসার সাথে জড়িয়ে পড়ে। এভাবে
তাদের জীবন একটি দুষ্টচক্রের মধ্যে আটকে যায়।
মাদক এবং তার প্রভাব
মাদক শিশুর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে।
মাদকদ্রব্য গ্রহণের ফলে শিশুদের মধ্যে শারীরিক অসুস্থতা, মানসিক অস্থিতিশীলতা,
এবং সামাজিক বিচ্ছিন্নতা দেখা দেয়। অনেক সময় এই শিশুরা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে
জড়িয়ে পড়ে, যা তাদের ভবিষ্যৎকে আরও অন্ধকার করে তোলে। এছাড়া মাদকের
কারণে তাদের পড়াশোনার পথ রুদ্ধ হয়ে যায় এবং তারা সমাজের বোঝায় পরিণত হয়।
সমাজের দায়িত্ব
একটি শিশু যদি নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে, তার জন্য দায়ী শুধু সেই শিশুটি নয়, দায়ী পুরো
সমাজ। শিশুদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করা, তাদের সঠিক শিক্ষা ও নৈতিক
মূল্যবোধ প্রদান করা আমাদের সকলের দায়িত্ব।
করণীয়:
শিক্ষা ও পুনর্বাসন: পথশিশুদের জন্য বিনামূল্যে শিক্ষার সুযোগ তৈরি করা এবং
তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা।
আইনের কঠোর প্রয়োগ: মাদক ব্যবসায়ী ও সরবরাহকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা
নেওয়া।
সচেতনতা বৃদ্ধি: শিশু ও তাদের পরিবারকে মাদকের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে সচেতন
করা।
কমিউনিটি ইনিশিয়েটিভ: সমাজের সচেতন নাগরিকদের এগিয়ে এসে পথশিশুদের জন্য
কাজ করা।
প্রযুক্তির ব্যবহার: শিশুদের জন্য বিনোদনমূলক ও শিক্ষামূলক প্ল্যাটফর্ম তৈরি
করা।
পরিবারিক ভূমিকা: পরিবারকে আরও দায়িত্বশীল হতে হবে এবং শিশুদের প্রতি
যত্নশীল মনোভাব গ্রহণ করতে হবে।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর ভূমিকা: বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন মাদকবিরোধী
প্রচারণা এবং পথশিশুদের পুনর্বাসনে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। সামাজিক সংগঠন
গুলো যদি তাদের সঠিক দায়িত্ব পালন করে তাহলে আমাদের দেশে শিশু কিশোর গ্যাং
তৈরি হয় না। আমাদের নিজ নিজ দায়িত্বে অবহেলার ফল নিষ্পাপ শিশুর হাতে ভয়ঙ্কর
মাদক থলি।
মাদক নির্মূলের প্রয়াসে সরকারি ভূমিকা
সরকারের উচিত মাদকবিরোধী কঠোর আইন প্রণয়ন এবং এর বাস্তবায়ন। পথশিশুদের
জন্য বিশেষ শিক্ষা প্রকল্প ও পুনর্বাসন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন। পাশাপাশি,
মাদক ব্যবসায়ীদের শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
উপসংহার
আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। কিন্তু যদি তাদের মস্তিষ্ককে এখনই সঠিক
পথে পরিচালিত না করা হয়, তাহলে জাতি একদিন শুধুই অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে।
আমাদের সমাজে নতুন প্রজন্মকে বাঁচাতে হলে এখনই উদ্যোগ নিতে হবে। শিশুর হাতে
নেশার থলি নয়, বরং কলম তুলে দিতে হবে। পরিবর্তন সম্ভব, যদি আমরা সবাই সচেষ্ট
হই। সচেতনতা, শিক্ষা, এবং কার্যকর উদ্যোগের মাধ্যমে আমরা পথশিশুদের জীবনে
আলো ফিরিয়ে আনতে পারি। একটি সুন্দর ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ গড়তে হলে এখনই
সক্রিয় হতে হবে।