দুর্ঘটনা

0
165

প্রবক্তা সাধু

কাওরান বাজারের ব্যস্ততম সড়কের ঠিক মাঝখান দিয়ে একটি মেয়ে হেঁটে যাচ্ছেন। পরণে হালকা পিংক কালারের খুব সুন্দর একটা সালোয়ার-কামিজ, পায়ে একই কালারের স্লিপার জুতা। কপালের ছোট্ট টিপ এবং হাতের চুড়িও সেম কালারের। ধবধবে ফর্সা শরীর, চুলে মেহেদী করা বলে হালকা লাল-খয়েরি দেখাচ্ছে। চুলগুলো মাথার পেছন দিকে একটু উঁচু করে গোড়ায় গাডার পরিয়ে ঘোড়ার লেজের মতো করে রাখাতে দেখতে অসাম লাগছে। চেহারা আর আভিজাত্য দেখে মনে হচ্ছে তিনি কোনো সম্ভ্রান্ত ঘরের নন্দিনী হবেন। তার গতিবিধি দেখে তাকে একেবারেই উদাসীন মনে হচ্ছে। এভাবে হাঁটতে থাকলে যে কোনো সময়ে একটা মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে, কিন্তু সেদিকে মেয়েটির কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। মেয়েটিকে সাইদুলের কেমন যেনো একটু চেনা চেনাও লাগছে। পাগল না-কি? এভাবে ব্যস্ত সড়কের মাঝখান দিয়ে কেউ হাঁটে? ভাবলো সে, ভাগ্যিস সিগনাল পড়েছে তা-না হলে এতক্ষণে চক্রপিষ্ট হয়ে যেতো। সবচেয়ে অবাক ব্যাপার হলো মেয়েটির এহেন আচরণের জন্য রাস্তার দু’পাশের লোকজনের ভেতরে কোনো উদ্বেগ বা উৎকণ্ঠা দেখা যাচ্ছে না। সাইদুল এই বিষয়টা অনেকক্ষণ যাবৎ লক্ষ্য করছিলো। সে একটি বেসরকারি টেলিভিশনে দু’দিন আগে জয়েন করেছে। চায়ের সাথে টা খেতে নিচে নামলে ঘটনাটা তার নজরে পড়ে। সাইদুল দেখলো সিগনাল ক্লিয়ার এবং গাড়ীগুলো দ্রুত বেগে তা ক্রস করতে চাইছে। নিজের জীবনের মায়া ত্যাগ করে হিতাহিত জ্ঞানশুন্য হয়ে এক দৌড়ে মেয়েটির একটা হাত ধরে রাস্তার অন্য পাশে নিয়ে গেলো সাইদুল। তার দৌড় দেখে রাস্তার আশেপাশের লোকজন হৈ হৈ করে উঠলো। সাইদুলকে বকাঝকা করতে লাগলো। এতো রিস্ক নিয়ে কেউ রাস্তা পার হয়? যদি দুর্ঘটনা ঘটে যেতো? গেঁয়ো না-কি? এমন নানা প্রকার টিটকারি টিপ্পনী শুনতে হলো তাকে। মেয়েটিকে কিছু না বলে ওকেই সবাই বকাঝকা করছে, এটা একেবারে পক্ষপাত মূলক আচরণ। মেয়েদের বেলায় সাতখুনমাপ আর ছেলেদের বেলায় পান থেকে চুন খসাও অপরাধ। আসলে দুনিয়াটা সুন্দরের পূজারী, ভাবলো সাইদুল। পকেটে ফোনটা বেজেই চলেছে। মেয়েটির হাতটা ছেড়ে কলটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে ভারী গলায় বস তাকে চটজলদি অফিসে যেতে বললেন। সাইদুল দেখলো মেয়েটি চলে গেছে। বড়োই স্বার্থপর, ধন্যবাদ-টন্যবাদ না দিয়েই চলে গেলো, ভাবলো মনে মনে। আসলে কাউকে যেচে উপকার করতে হয়না।

লিখুন প্রতিধ্বনিতেলিখুন প্রতিধ্বনিতে

বসের রুমে ঢুকতেই তিনি রাগতঃ কণ্ঠে ধমকের সুরে বললেন, আণ্ডারপাস থাকতে আপনি ওভাবে রাস্তা পার হলেন কেনো? মাথাটাথা ঠিক আছে? এ যাত্রা কপালগুণে একটুর জন্য বেঁচে গেছেন। সাইদুল অপরাধীদের মতো মাথা নীচু করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো। বস একটা দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করে বললেন, জানেন ক’দিন আগে বাংলা টিভির এক সংবাদ পাঠিকা আপনার মতো রাস্তা পার হতে গিয়ে ওখানেই মর্মান্তিক কার দুর্ঘটনায় মারা গেছেন! আজকের মতো সেদিনও আমি বেলকনিতে দাঁড়িয়ে সব দেখেছিলাম। আয়ু আছে তাই বেঁচে গেছেন, একটা মসজিদে জানের সদকা বাবদ কিছু অর্থ দান করবেন।

বসের কথা শুনে সাইদুলের সারা শরীর শিরশির করে উঠলো, মনের ভেতর ভয় আর সন্দেহ উঁকি দিলো, সে বললো, আপনার কাছে তার কোনো ছবি আছে বস?

বস মোবাইলের গ্যালারী থেকে একটা ছবি ফুলস্ক্রিন করে সাইদুলের দিকে বাড়িয়ে দিলেন। সাইদুল ছবিটা দেখেই আঁতকে উঠলো। তার হাত-পা ঠকঠক করে কাঁপছে, আতঙ্কে শিরদাঁড়া বেয়ে ভয়ের একটা ঠাণ্ডা স্রোত নীচের দিকে নামতে শুরু করলো।

Previous articleশীতকাল
Next articleপথশিশুর হাতে নেশার থলি: আমাদের সমাজের ব্যর্থতা
প্রতিধ্বনি
প্রতিধ্বনি একটি অনলাইন ম্যাগাজিন। শিল্প,সাহিত্য,রাজনীতি,অর্থনীতি,ইতিহাস ঐতিহ্য সহ নানা বিষয়ে বিভিন্ন প্রজন্ম কী ভাবছে তা এখানে প্রকাশ করা হয়। নবীন প্রবীণ লেখকদের কাছে প্রতিধ্বনি একটি দারুণ প্ল্যাটফর্ম রুপে আবির্ভূত হয়েছে। সব বয়সী লেখক ও পাঠকদের জন্য নানা ভাবে প্রতিধ্বনি প্রতিনিয়ত কাজ করে চলেছে। অনেক প্রতিভাবান লেখক আড়ালেই থেকে যায় তাদের লেখা প্রকাশের প্ল্যাটফর্মের অভাবে। আমরা সেই সব প্রতিভাবান লেখকদের লেখা সবার সামনে তুলে ধরতে চাই। আমরা চাই ন্যায়সঙ্গত প্রতিটি বিষয় দ্বিধাহীনচিত্ত্বে তুলে ধরতে। আপনিও যদি একজন সাহসী কলম সৈনিক হয়ে থাকেন তবে আপনাকে স্বাগতম। প্রতিধ্বনিতে যুক্ত হয়ে আওয়াজ তুলুন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here