এখন আর লুকাতে চাই না। আমি মানুষটা এককীত্বকে মৃত্যুর মতো ভয় পাই। গত তিন বছর আমার প্রচন্ড অভিমান হয়েছিলো আমার সহযোদ্ধাদের উপর, বাংলাদেশের উপর। শনিবার বিকেলকে কেন্দ্র করে আমার উপর যে অন্যায় করা হচ্ছিলো তা কেবল আমাকে এবং আমার বউকেই একা একা বইতে হচ্ছে ভেবে কত রাত যে মনে মনে অভিমানে দেশ ছেড়ে চলে গেছি তার ইয়ত্বা নাই। কত রাত যে ঘুমাতে পারি নাই, হিসাব নাই।
কালকে রাতেও আমি ঘুমাতে পারি নাই। তবে কষ্টে না, কৃতজ্ঞতার আনন্দে। মানুষের হৃদয়ের জন্য কৃতজ্ঞতার চেয়ে ভালো কোনো ওষুধ আজো আবিষ্কার হয় নাই। কাল রাত সিডনি সময় তিনটায় যখন ঘুমাতে যাই তখনও বাচ্চু ভাই, পিপলু ভাই, অমিতাভ, জুলহাজরা হয়তো আমাদের বন্ধুদের ফোন দিয়ে যাচ্ছে শনিবার বিকেল মুক্তির দাবিতে বিবৃতিতে নাম অন্তর্ভুক্তির জন্য। আর আমি ঘুমাবার চেষ্টা করছি। কিন্তু আমার চোখের পাশ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে। আমি কাত হয়ে শুয়ে যাতে তিশা টের না পায়। ও আমার মেয়েকে ছড়া শোনাচ্ছে।
সব সময় তো এরকম হয় না যে আমরা আমাদের জড়তাকে ঠেলে একটা কোনো উদ্যোগ নিতে পারি, এক সাথে। সেই হিসাবে আজকের দিনটা আমাদের দেশের শিল্পীদের জন্য একটা মনে রাখার মতো দিন। শনিবার বিকেল মুক্তির দাবিতে ১৩০ জন শিল্পী একটা বিবৃতি দিয়েছেন যেটা হয়তো কালকে পত্রিকায় দেখবেন সবাই। আপনি যদি নামের লিস্ট দেখেন, তাহলে বুঝবেন কেনো এটা আমাদের জন্য, আমাদের পরের জেনারেশনের জন্য একটা বিশেষ মানে বহন করে। এখানে এমন মানুষেরা আছেন যাদেরকে আপনি নিয়মিত বিবৃতিতে খুঁজে পাবেন না।এখানে মূল ধারা-বিকল্প ধারা-নতুন ধারা-পুরাতন ধারা নানা মত-পথের মানুষ আছেন। আমাদের মত ভিন্ন হতে পারে, পথ ভিন্ন হতে পারে, কিন্তু শিল্পীর স্বাধীনতার প্রশ্নে আমরা এক। আমাদের ভবিষ্যতের প্রশ্নে আমরা এক। এখন আমরা জানি, আমরা যখন এক হয়েছি, আর কোনো কিছুই “আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবে না”!
বিশ্বাস করি, আপিল কমিটি আগামী পরশু যে সভায় বসবে সেখানে তাদের সুবিবেচনার পরিচয় দিবে। এবং দ্রুত শনিবার বিকেল দর্শকদের কাছে যেতে পারবে।
আমি আমার কলিগদের সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। আমি জানি এই ১৩০ জনের বাইরে আরো কয়েক হাজার শিল্পী বন্ধু আছেন যারা আমাদের এই দাবীর সাথে একমত। কিন্তু তাড়াহুড়ার কারনে সবার সাথে যোগাযোগ করা যায় নাই নিশ্চিতভাবেই! সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা।
লেখকের ফেসবুক পোস্ট থেকে-