ফাহাদ হোসেন ফাহিম
পথে প্রান্তরে, স্টেশনের চত্বরে চোখে পড়ে কি জীবন্ত লাশের পাহাড়?
জীর্ণ কায়ে, শীর্ণ পায়ে, বুভুক্ষার অক্সিডেশনে ক্লান্ত প্রাণের সহস্র কঙ্কালসার!
বদনে হাসি, গলায় ফাসি; ফায়ারব্রিকের মতো অচঞ্চল জীবনের খাকি রং,
কুলি মজুর, বাসের হেলপার, অভুক্ত পেটে অগ্রকর তার হয়েছে ভারি স্ট্রং।
শহরের পথে প্রান্তরে ইটের কীটের পরে মলিন বদনে নগরফুলের বসবাস,
ফুলের ক্যালিক্সে কালো ছায়ার ছাপ কিন্তু দুচোখে বেঁচে থাকার উচ্ছ্বাস।
অনিকেতন প্রান্তরে গৃহ তাদের, লোহার মতো শক্ত হাড়, করতলে আগুন জ্বলে,
বৃষ্টিতে ভিজে কাঁটায় রাত, বাদর রাতে চোখের কালিও বারবার যায় বিফলে।
ক্ষুধা তার অভ্যেস, পুরনো ফতুয়া চামড়া তার, বাতি চাঁদের আলো,
নগরের পাশে নিভৃতে বাঁচে সহস্র নগরফুল, কেউ বাসে না তাদের ভালো।
সকালে জুটে না খাবার, দুপুরে তপ্ত সূর্যের প্রহার, বয়সে ছোট জীবনভার,
মার্গশিশু হয়ে, বস্তির কোণে হাজারো হাজারো জীবন্ত লাশের মুমূর্ষু সংসার।
ঈদের দিন মার্কেটের পুতুলের গায়ে পোশাকের বাহার, অথচ জীবন্ত দেহ খালি,
পথশিশু হয়ে জন্ম বলে, ক্ষুধার জ্বালা মিটাতে মিটাতে সরু হয়ে পড়ে অন্ননালি।
স্বপ্ন দেখে জীবনে, “একদিন হলেও মুখে পুড়বে পোলাও মাংস কাবাব! “
ধনের পাহাড়, কৃষ্ণ দেয়ালের রাজারা নষ্ট করে তণ্ডুল অথচ নগরফুলের তীব্র অভাব।
চোখের অক্ষিকোটরে অভিযোগের জল, ডাস্টবিনে খোঁজে বেড়ায় জীবিকার বায়ু,
কাঁটাতারের বেড়া টপকাতে গিয়ে ফুরিয়ে যাচ্ছে চপল মনের ছোট্ট জীবনের আয়ু।
নেই মায়ের মমতা, বাবার শাসন; মানুষ হয়েও সমাজ থেকে ভীষণ দূরের জীবন,
যুগান্তরের ঘুর্নিপাকে ইটপাথরের ভিড়ে করো আজ অবহেলিত জীবনকে অনুধাবন।
ধুলোয় মোড়ানো শরীরের ভাঁজে যদি ভোলাও একটুখানি মায়ার পরশ,
একটু ছোঁয়াতে দেখবে মুখে মহামূল্য হাসির বন্যা, মনটা আনন্দে তার বিবশ।
সময় এসেছে এবার, চোখের চামড়া থেকে হঠাও বিভেদের রক্তশূন্য চশমা,
তুমি হাত বাড়িয়ে দিলে দেখবে নগরফুল ফুটবে গোলাপ হয়ে; হবে অনুপমা।
চিত্র পাল্টে যাবে, নতুন চিত্রকর আনবে রঙিন চিত্র, মমতায় ভেজা মানবিক চিত্রপট,
নবাগত পটুয়ার চিত্রপটে পথশিশু বলে রবে না কিছু, গর্জিত হবে মনুষ্যত্বের দাপট।
আমি প্রতীক্ষায় আছি সেই আগন্তুকের যে মুখে মুখে বিলিয়ে দিবে হাসির ছটা,
নতুন চিত্রে পথশিশুর রং হবে রঙিন, কালো জীবনে ফিরবে রামধনু, মিটবে রংহীন কাঁটা।