গতকাল সাউথ আফ্রিকার কিংবদন্তী ফাস্ট বোলার ডেইল স্টেইন টুইট করেছেন;
-‘আমি জানি এই টুইট হাশিমের নজরে হয়তো আসবে না। কিন্তু আমি তবুও বলতে চাই আমার বন্ধু হাশিম আমলা একজন কিংবদন্তী ক্রিকেটারের চাইতেও আমার দেখা সেরা একজন মানুষ! ‘
মনে আছে আপনাদের, এর আগে ডেইল স্টেইন বিশ্বকাপে সাউথ আফ্রিকার খারাপ ফলাফলের পর টুইট করেছিলেন,
-‘যখনই আমি হতাশ হই আমি আমার বাম পাশে ফিরে তাকাই।দেখতে পাই হাশিম কোরআন পড়ছেন!
আমি এই দৃশ্য দেখে হতাশা ভুলে যাই তাতক্ষনিক! ‘
এ ভি ডি ভিলিয়ার্স। নিসন্দেহে বর্তমান আধুনিক ক্রিকেট যুগের সেরা ব্যাস্টম্যানদের একজন ছিলেন।
ভিলিয়ার্স গতকাল টুইট করেছেন হাশিম আমলার উদ্দেশ্যে;
– ‘বন্ধু হাশিম! কোথায় থেকে শুরু করবো?
আমার কয়েক দিন,মাস,সপ্তাহ, বছর লাগতে পারে তোমাকে ব্যাখ্যা করতে।
বিশ্বাস করো বন্ধু,তোমাকে নিয়ে আমি একটা বই লিখে ফেলতে পারবো।
তুমি সব সময় আমার একজন ভাই হয়ে পাশে ছিলে,যার সাথে আমি নিরাপদ বোধ করতাম’।
হাশিম আমলা..
আমার প্রিয় খেলোয়াড়। যিনি গতকাল অবসর নিয়েছেন সকল ধরনের ক্রিকেট থেকে।
ক্রিকেটের ব্যাংটিং যদি হয় শিল্প,তবে আমলা ছিলেন সেই শিল্পের সেরা চিত্রকারদের একজন।
টেস্ট, ওডিআই, টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে খেলেছেন মোট ৬৭৬ টি ম্যাচ।
রান করেছেন ৩৪,১০৪ টি।
সেঞ্চুরি ৮৯ টি আর হাফ সেঞ্চুরি ১৭৫ টি।
এই অবিশ্বাস্য রেকর্ড ক্রিকেটার হাশিম আমলার কিংবদন্তী হয়ে মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নেয়ার জন্য যথেষ্ট।
কিন্তু, আমার বিশ্বাস ক্রিকেটের বাইরে মানুষ হাশিম আমলা নিশ্চিত ভাবে প্রভাব ফেলে গেছে আমার মত অনেকের জীবনে।
হাশিম আমলা হয়তো একমাত্র ক্রিকেটার বিশ্ব ক্রিকেট দুনিয়ায় যার কোন হেটার্স নাই। এমনকি ইন্ডিয়ার ক্রিকেট লাভারসরা পর্যন্ত হাশিম আমলাকে ক্রিকেট থেকে অবসর নেয়ার পর থেকে টুইটারে ভাসাচ্ছেন ভালোবাসায়!
রোজা রেখে কত ম্যাচ যে হাশিম খেলেছেন তার হয়তো কোন পরিসংখ্যান নাই। কিন্তু জানলে অবাক হবেন, সাউথ আফ্রিকার হয়ে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে হাশিম আমলার করা একমাত্র ত্রিপল সেঞ্চুরিটি (৩১১*) করবার সময় চলছিল রমজান মাস। আর আমলা এই ত্রিপল সেঞ্চুরি করেছেন আমলা রোজা রেখে।
সাউথ আফ্রিকার জাতীয় ক্রিকেট দলের ড্রেসের স্পন্সর CASTLE।
CASTLE হচ্ছে অ্যালকোহল পণ্য (বিয়ার)। সাউথ আফ্রিকাকে এই স্পন্সর বাবধ বড় অংকের অর্থ দেয়া হতো এই বিয়ার কোম্পানির পক্ষ থেকে।
হাশিম আমলা তার খেলার পোশাকে CASTLE লোগোটা ব্যাবহার করতেন না ,কারন অ্যালকোহল ইসলাম ধর্মে হারাম।
আমলার ধর্মীয় পরিচয় এবং দাঁড়ি রাখার কারনে ক্রিকেট ম্যাচ ধারাভাষ্যকার অস্ট্রেলিয়ান ডিন জোন্স একবার শ্রীলঙ্কার সাথে আফ্রিকার ম্যাচে করে বসেন ‘অসভ্য’ আচরন।
সাংগাকারার ক্যাচ আমলা তালুবন্দী করবার পর কমেন্ট্রি বক্স থেকে জোন্স বলে উঠেন।
– এই মাত্র সন্ত্রাসী আমলা ক্যাচ ধরলো।
খেলা পরবর্তী জোন্স নিজের ভুল বুঝতে পেরে আমলার কাছে ক্ষমা চাওয়ার পর আমলা বলেছিলেন;
– জোন্সের উপর আমার ক্ষোভ নাই। আমি মুসলমান। আর একজন মুসলমানের দায়িত্ব হলো কেউ ক্ষমা চাইলে তাকে ক্ষমা করে দেয়া!
ক্রিকেটের বাইরে গিয়ে ব্যক্তি হাশিম এম্বাসাডর হয়েছেন নিজের ধর্মের এবং বিশ্বাসের।
অমুসলিম একটা দেশে থেকেও নিজের ধর্মীয় অনুশাসন পালন করে আপন হয়ে উঠেছেন আফ্রিকা সহ সারা বিশ্বের ক্রিকেট অনুরাগীদের।
তাই তো হার্ষা ভোগলে মন্তব্য করেছিলেন,
ক্রিকেট যদি হয় ভদ্রলোকের খেলা,তবে হাশিম আমলা হচ্ছে ক্রিকেটের ব্রান্ড এম্বাসাডর…
Thank You #HashimAmla bhai for the great Memories.
লিখেছেন- রাশেদুজ্জামান