Saturday, July 27, 2024
spot_imgspot_imgspot_img
Homeবুক রিভিউযেভাবে বেড়ে উঠি

যেভাবে বেড়ে উঠি

বুক রিভিউ | আল মাহমুদের যেভাবে বেড়ে উঠি

‘যেভাবে বেড়ে উঠি’ আল মাহমুদের শৈশব কৈশোরের বেড়ে উঠার জীবনী। আল মাহমুদ বাংলা ভাষার শক্তিমান কবি৷ তিনি উপন্যাস ও ছোটগল্পও লিখেছেন। ‘যেভাবে বেড়ে উঠি’ গ্রন্থে আল মাহমুদ তাঁর বেড়ে উঠার সময়গুলো অনেকটা গল্পের ঢংয়ে বর্ণনা করেছেন। যেকোনো পাঠক বইটা পড়লে মনে হবে যেন তিনি জীবনী নয় গল্প লিখেছেন।

আল মাহমুদের ‘যেভাবে বেড়ে উঠিতে’ তার শৈশব কৈশোরের সব গল্পই আমার কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হয় না৷ কিছু কিছু বিষয় হয়তো তিনি কল্পনার মিশেল দিয়ে লিখেছেন। যেটা সচেতন পাঠক হয়তো ধরতে পারবেন। অনেকেই বলে থাকেন, নিজের জীবনী কেউ সঠিকভাবে লিখে না বা লেখার সাহস পায় না। আল মাহমুদের কৈশোরকালের এই জীবনীও আমার কাছে তেমন মনে হয়। তবে, যেভাবে বেড়ে উঠিতে তিনি যেভাবে গল্পের ঢংয়ে লিখেছেন তিনি যদি সাহিত্যিক না হতেন সেভাবে লিখতে পারতেন কি না আমার সন্দেহ আছে।

আল মাহমুদ যখন তার কৈশোরের জীবনী লিখেন তখন তার বয়স পঞ্চাশ। সেটা তিনি বইটিতেই উল্লেখ করেছেন। তাঁর বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ ‘সোনালী কাবিন’ যখন বের হয় তখন তাঁর  বয়স সাঁইত্রিশ। পঞ্চাশের অনেক আগেই তিনি তাঁর কবিখ্যাতি পেয়ে গিয়েছেন।

আল মাহমুদ যদি আল মাহমুদ না হয়ে উঠতেন হয়তো আমি তাঁর জীবনী পড়তাম না। অনেকের জীবনীই তো পড়ি না। বাংলা ভাষার শক্তিমান এই কবির কৈশোরকালের জীবনী হয়তো তরুণ কবি লেখকদের উজ্জীবিত করতে সহায়তা করবে।

ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার মোড়াইলে জন্মগ্রহণ করা আল মাহমুদের এই বইটিতে উঠে এসেছে তার পারিবারিক জীবন, ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর সময়কাল, তাঁর বয়সসন্ধি, কৈশোরের ভালো লাগা, প্রেম, কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগদান, নাস্তিক হওয়া, প্রচুর বই পড়া, কলকাতায় যাওয়া এমনকি কাজের মহিলার সাথে অবৈধ প্রমের কথাও কোনো রাখঢাক ছাড়াই গল্পের ঢংয়ে বলে গিয়েছেন। 

আল মাহমুদ কীভাবে বই পড়ায় আসক্ত হলেন, পাঠাগারের সন্ধান পেলেন এবং পারিবারিক বাঁধা উপেক্ষা করেও কবি হওয়ার তীব্র বাসনা তার কৈশোরে দেখা হওয়া প্রত্যেকটা মানুষের সাথে আলাপ করে গিয়েছেন। 

পুরো বইজুড়ে অনেকগুলো মানুষের সাথে তাঁর চলাফেরা ও জীবন যাপনের বর্ণনা আছে। সেখান থেকে আমার কাছে যে অনুচ্ছেদটি সবচেয়ে ভালো লেগেছে সেটা তুলে দিচ্ছি।

‘আমার চাচীর মধ্যে ছিল এক বিশুদ্ধ গ্রাম্যতা। তিনি যৌথজীবন ভালোবাসতেন। হাঁস মুরগী পালন ভালোবাসতেন। গ্রাম্য বিচার সালিশীর গুণগান গাইতেন। সম্ভবত আমাদের বাড়ীটা তাঁর কাছে ভালো লাগতো না। আমাদের বাড়ীটা ছিলো এক সম্পূর্ণ বিপরীত। যেন অজপাড়া গাঁয়ের মধ্যে আমাদের বাড়ীটা শুধু এক বিন্দু শহর। যেখানে জমিজমা ও ফসলের আলোচনার বদলে বাজারের হালচাল নিয়ে বেশি উৎকণ্ঠা প্রকাশ হত। ঝোলা গুড় রপ্তানী ও বিলেতি কাপড় আমদানির সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে এরা সদা সতর্ক থাকতেন। এরা কেউ সাধারণ ব্যাপারি ছিলেন না সকলেই জাহাজের খবর রাখতেন। এমনকি মেয়েরাও। কিন্তু আমার চাচী ছিলেন এসবের বাইরে। একটু দল ছাড়া কেমন যেন একটু গ্রাম্যও। যদিও আমার চাচীর মত রূপসী নারী আমার মা ছাড়া আমাদের বাড়ীতে আর কেউ ছিলেন না। উভয়েই বিলাসী ছিলেন। তবে, এদের বিলাসীতার মধ্যে ছিল একটা আশ্চর্য ধরনের পার্থক্য।’

Facebook Comments Box
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments