ভেনিসের নৌকা গন্ডোলা! ভেনিস নগরটি মূলত কতগুলো দ্বীপের সমষ্টি। ইতিহাস থেকে জানা যায়- জলদস্যুদের হাত থেকে রক্ষা পেতে ভাসমান এই শহরটি গড়ে উঠেছিল। পরে ধীরে ধীরে মানুষের সংখ্যা বাড়তে থাকে আর সমৃদ্ধ হয়ে উঠতে থাকে শহরটি। ১৬ শতকের ভেনিস একটি সমৃদ্ধ প্রজাতন্ত্র ছিল। নানা ধরণের নৌকা ভেনিসের খালে ধারে ঘুরে বেড়াত: বাটেলাস, ক্যাওরলিনাস, গ্যালি, গন্ডোলাস… গন্ডোলা, বহু শতাব্দী ধরে যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম এবং আজ ভেনিসের আইকনিক প্রতীক, আজকের এবং পূর্বের টা দেখে আপনাদের কাছে ভিন্ন ভিন্ন মনে হতে পারে । গন্ডোলা একটি ঐতিহ্যবাহী সরু এবং দীর্ঘকায় ভেনিসিয়ান দাঁড়টানা নৌকা। একটি লম্বা বৈঠার সাহায্যে নৌকাটি চলে, নৌকাচালককে বলে গন্ডোলিয়ার। ক্যানালেটো এবং অন্যান্য ভেনিসিয়ান চিত্রশিল্পীদের আঁকা চিত্রগুলি একটি প্রুফ আপনি দেখতে পাবেন। গন্ডোলা ছিল বিলাসবহুল নৌকা, ধনী ব্যক্তিরা নিজেদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নিজেদের নৌকা আরও সুন্দর এবং মূল্যবান উপকরণ এবং বিভিন্ন ব্যয়বহুল ফ্রিল দিয়ে সজ্জিত করে। এ যেন নৌকা সাজানোর প্রতিযোগিতা।
১৫৬২ সেনেট একটি আইন পাশ করা হয় সব গন্ডলা একই রকম কালো রংঙ্গের হতে হবে উপরি ভাগে কোন ছাদ দেয়া যাবেনা খোলা রাখতে হবে। এ যেন এক সাম্যবাদি ব্যবস্হা । যার লক্ষ্য ছিল করে অর্থের অপব্যবহার এবং সম্পদ প্রদর্শনকে রোধ করার । ভেনিসিয়ান গন্ডোলাগুলি “স্কেরি” (একবচন “স্কেরো”) নামে নির্দিষ্ট ওয়ার্কশপে তৈরি করা হয়। এগুলোর নেতৃত্বে ছিলেন প্রতিভাবান কারিগরা । কাঠের উপাদানের উপর নির্ভর করে আটটি ভিন্ন ধরনের কাঠ ব্যাবহার করা হয়। যেমন সহায়ক কাঠামোর জন্য ওক, পানি স্পর্শকারী অংশগুলির জন্য লার্চ এবং ফার, ইত্যাদি।
গন্ডোলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল ফোরকোলা (ওরলক): যা গন্ডোলারকে ভারসাম্য বজায় রাখে। গন্ডোলিয়ার কৌশলে ফোরকোলার উপর নির্ভর করে ।নৌকার ধীরগতিতে এগিয়ে রোয়িং, শক্তিশালী সামনের রোয়িং, বাঁকানো, পিছনের দিকে সারি করা এবং থামানো। সামনের অলঙ্কারকে বলা হয় ফেরো; এটি গন্ডোলার পিছনে দাঁড়িয়ে থাকা গন্ডোলিয়ারের(নৌকার চালক) জন্যএবং বসার যায়গা র ওজনের ভারসাম্য রক্ষাকরে।
আপনি কি কখনও ভেবে দেখেছেন যে গন্ডোলিয়ার একপাশে দাঁড়িয়ে থাকা সত্ত্বেও কেন গন্ডোলাগুলি উল্টে যায় না? এবং কেন গন্ডোলিয়ার সবসময় একই পাশে সারি থাকা সত্ত্বেও তারা নিজেদের মধ্য গুতো গুতি করেনা? কারণ এই নৌকাগুলো অপ্রতিসম এবং সামান্য ডানদিকে ঝুঁকে আছে। গন্ডোলিয়ারের ওজন ই তাদের স্থিতিশীল করে তোলে – আসলে প্রতিটি গন্ডোলা অন্যদের থেকে আলাদা কারণ এটি প্রতিটি পৃথক গন্ডোলিয়ারের শরীর অনুযায়ী তৈরি করা হয় (ঠিক ফোরকোলার মতো) – এবং স্ট্রোকগুলি তাদের সোজা করে দেয় কারণ তারা অপ্রতিসম। এই এক বিরাট ইন্জিয়ারিং। অনুমান করা হয় যে ১৭এবং ১৮ শতকের মধ্যে ৮ থেকে ১০ হাজার গন্ডোলা ছিল। কিন্তু এখন সেখানে আজ প্রায় চার শতাধিক গন্ডলা রয়েছে, ইচ্ছে করলে কেউ নতুন গন্ডলা তৈরি করা যাবে না।এখন সেই শত বছরের পুরাতন কারখানায়ে নতুন বা তৈরি রক্ষনাবেক্ষন সবই করে ।পুরাতন এক্টা ধংস করে নতুন দেয়া যাবে।নৌকার সংখ্যা বারানোর সুযোগ নাই। তাদের প্রায় সবাই পর্যটকদের বহন করে। এক একটি একটি গন্ডোলা একটি বিলাসি গাড়ী মত। যার মুল্য বাংলাদেশ মুদ্রায় ৩০/৪০লাখের কাছাকাছি । যদিও সরকারী আদেশ অনুযায়ী কালো রংঙ্গের পরেও অনেকগুলি অলঙ্কৃতভাবে সজ্জিত এবং আরামদায়ক আসন এবং মখমলের সোফা রয়েছে । ভেনিসের চারপাশে ঘুরতে ও বেড়াতে অত্যান্ত ব্যায়বহুল এই নৌকা ৩০ মিনিট বাংলাদেশের ৭হাজার টাকা নেয়। মাঝে মাঝে গন্ডোলিয়ারদের মধ্যে বিশেষ রেগাটাতে (রোয়িং রেস) ও করা হয়।
লেখকঃ শহীদুল ইসলাম