অদ্ভুতুড়ে অতিথি
ফ্যান্টাসির অবাক সৌন্দর্যময় এক জগত!!!
আপনাদের কি মনে আছে সেই নিশ্চিন্তপুরের কথা? কিংবা মনে রয়েছে মুশফিক উজ-জামান চৌধুরী ওরফে মশাকে!? সে নিশ্চিন্তপুরের ১টি স্কুলে ক্লাস সিক্সে পড়ে। অথবা মশার মামা মহান রহস্যভেদী (!) রঞ্জু মামাকে। কিংবা দুঃসাহসী (!) ওসি আজমত আলী অথবা আশফাক খান বা বহিরাগত জ্ঞানী প্রকৃতির খিজির আলীকে?
কোনো কিছু বা কাউকে মনে না পড়লেও সমস্যা নেই, ‘অদ্ভুতুড়ে বইঘর’-এর সবাইকেই পাচ্ছেন ‘অদ্ভুতুড়ে অতিথি’ বইটিতে।
আচমকাই সীমান্তবর্তী এ ছিমছাম, নিঝুম শহরে রাত দশটার পর তুষারপাত হলো। অথচ, হাতেগোনা ক’জন ছাড়া রাত নয়টার মধ্যে ঘুমের অতলে তলিয়ে যাওয়া এ অদ্ভুত শহরের কেউই জানল না তা! এ কিসের আলামত কে-ই বা বলতে পারে!
গোলরক্ষকের ভূমিকায় পাক্কা চৌদ্দটা গোল খাওয়া মুশফিক কীভাবে-ই বা নিশ্চিন্তপুরের স্কুল দলের মূল স্ট্রাইকার বনে যায়! এ কি আদৌ সম্ভব?
‘নিশ্চিন্তপুরের আকাশে আজ দুর্যোগের ঘনঘটা…’ খিজির আলীর এমন আবেগঘন ডায়লগে বাগড়া বসিয়েছিলেন আশফাক আহমেদ। কিন্তু, আসলেই কি নিশ্চিন্তপুরের আকাশ মেঘমুক্ত ছিল? ছিল নাতো!
আরও অনেক প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে আপনাদের অতি অবিশ্যি সংগ্রহ করতে হবে সাম্ভালাখ্যাত শক্তিমান উপন্যাসিক শরীফুল হাসান এর ফ্যান্টাসি জনরার উপন্যাস ‘অদ্ভুতুড়ে অতিথি’।
বই এর সম্পাদনাতে বেশ কিছু ভুল থেকে গেছে যার দিকে সংশ্লিষ্ট সম্পাদক বা প্রকাশকের সতর্ক দৃষ্টি রাখা উচিত পরবর্তীতে।
১। ‘আতা মিয়া এক পা এক পা করে পিছু হাঁটছে, ‘; এখানে “হাঁটছে” এর বদলে “হটছে” অনেক বেশি উপযুক্ত ছিল। (পৃষ্ঠা-১৫, প্যারা-১)
২। ৫০ নং পৃষ্ঠাতে দুটো ভুল। প্রথমটা হলো, ”কি?’ আগ্রহের সাথে জিজ্ঞেস করল আশফাক।’ দ্বিতীয়টা হলো, ”যে বিশাল আলখেল্লা গায়ে দিয়ে আছেন, শীত লাগবে কি করে!”
‘কি’ দিয়ে প্রশ্ন করলে যদি হ্যাঁ বা না উত্তর পাওয়া যায় তবে ‘কি’ লিখতে হবে। আর ‘কি’ দিয়ে প্রশ্ন করলে যদি হ্যাঁ বা না উত্তর পাওয়া না যায়, অন্য যে কোনো উত্তর দিতেই হয় সেক্ষেত্রে ‘কী’ লিখতে হবে।
৩। আমি দৌড়াতে শুরু করলাম। রঞ্জুমামা’ও পিছু নিলেন। (পৃষ্ঠা-৮৬)
কনভার্টেড কমা একটি শব্দের ওপর তখনই দেয়া হয়, যখন একটি শব্দকে সংক্ষেপ করা হয়। যেমন- কয়েকজনকে সংক্ষেপ করলে লেখা যায় ক’জন। এক্ষেত্রে “রঞ্জুমামা’ও” ভুল হয়েছে এ সিদ্ধান্তই অনায়াসে নেয়া যায় বটে!
পরবর্তী মুদ্রণ যদি করার ইচ্ছে থাকে প্রকাশক মহাশয়ের, তবে এ সমস্ত ভুল সংশোধনের বিনীত অনুরোধ রইল তাঁর প্রতি।
আরেকটি ছোট্ট অনুরোধ রইল প্রকাশকের প্রতি, সুলেখক শরীফুল হাসান এর পরবর্তী ‘কিশোর অ্যাডভেঞ্চার বা ফ্যান্টাসি জনরা’ এর বইয়ের ভিতরের অলংকরণে যেন আরেকটু কড়া দৃষ্টি রাখা হয়। ঢাকা কমিক্স এর প্রতিষ্ঠাতা এবং মনোলোভা কার্টুন, কমিক্স ও প্রচ্ছদ আঁকা ‘মেহেদী হক’ প্রচ্ছদের অতুলনীয়তার ব্যাপারে কোনো দ্বিমত পোষণ করার নেই। কিন্তু, অতুল কার্টুনিস্ট ও প্রচ্ছদ আঁকিয়ে শ্রীমান মেহেদী হক অথবা অন্য কোনো চমৎকার কার্টুনিস্টকে দিয়ে ভিতরের অলংকরণ বা ইলাস্ট্রেশন করা হলে বইটি আরও অমূল্য রত্নে পরিণত হতো। বইয়ের ভিতরের ইলাস্ট্রেশনে যা ছিল তা হলো, কার্টুনিস্ট মেহেদীর প্রচ্ছদ থেকে ধার করা কয়েকটি ইলাস্ট্রেশন আর ইন্টারনেট থেকে ধার করা কিছু ইলাস্ট্রেশন যা আমার কাছে দৃষ্টিসুখময়তার সংজ্ঞার মধ্যে আদৌ পড়েনিই বোধ হলো!
‘অদ্ভুতুড়ে বইঘর’ বইটি অর্জন করেছিল ‘কালি ও কলম পুরষ্কার’, সেই প্রেক্ষিতে আমার মনে হচ্ছে উপরোক্ত বইয়ের সিক্যুয়াল বা ২য় পর্বের অর্জন করা উচিত শিশু-কিশোর ক্যাটাগরিতে বাংলা অ্যাকাডেমি ঘরানার কোনো পুরষ্কার! অনেকে এটাকে আদিখ্যেতা বলতেই পারে, কিন্তু একজন সরস পাঠকের ভূমিকা নিয়ে আমার এ কথা বলতে একদমই বাধবে না। কারণ, ১ম পর্বের চেয়ে দ্বিতীয় পর্ব অন্নেক বেশি আমায় মুগ্ধ করেছে; এবং মুগ্ধ করেছে নিশ্চিন্তপুরের ফুটবল দলকে মুশফিক এর অকস্মাৎ সুপারম্যান হয়ে পড়ে এ প্রথমবারের মতো শক্তিশালী খেলোয়াড়ে ভরপুর নিরানন্দপুর ফুটবল দলকে হারিয়ে দেয়া! সামনেই বিশ্বকাপ, আর ফুটবল নিয়ে এমন অপূর্ব বর্ণনা ফুটবল ভক্তদের মুগ্ধ করবেই।
‘অদ্ভুতুড়ে অতিথি’ উপন্যাসটি স্রেফ কিশোর মননের অধিকারীদের আকৃষ্ট করবে তাই নয়, অন্যান্য মননের অধিকারীদেরও সমানভাবেই মুগ্ধ করবে- এ আশাবাদ নির্বিঘ্নেই ব্যক্ত করা যায়।
এক নজরে ‘অদ্ভুতুড়ে অতিথি’:
বইয়ের নাম: অদ্ভুতুড়ে অতিথি
লেখক: শরীফুল হাসান
জনরা: কিশোর ফ্যান্টাসি
প্রকাশনা: অন্যধারা
বই এর বর্ণনা: ৮০ গ্রাম অফসেট কাগজ
মুদ্রিত মূল্য: ৩৬০ টাকা
প্রকাশকাল: সেপ্টেম্বর, ২০২২।