Sunday, November 24, 2024

অপেক্ষা

ছেলেটির নাম সাহিদ।একটু দুষ্ট প্রকৃতির ছেলে কিন্তু মেধা তার অসম্ভ ভালো । সে সাইন্স বিভাগ নিয়ে পড়াশুনা করেছে। সে ছোট বেলা থেকে শুনে এসেছে তার দাদিমার কাছে যে পড়াশোনা করে যে গাড়ি-বাড়ির মালিক সে। তাদের পরিবার ছিলো একটি নিম্নবিত্ত পরিবার। খুব কষ্টে দিন কাটাতো তারা। তার জীবনে স্বপ্ন ছিলো সে বড় হয়ে ভালো কিছু করবে। সমাজে নিজের নাম,বাবা-মায়ের নাম উজ্জ্বল করবে এই প্রর্ত্যশা করেছিল সবসময়। তার বাবার স্বপ্ন ছিলো তার ছেলে একদিন পাইলট হবে,সে এইদেশ থেকে ঐদেশ ঘুরবে উড়োজাহাজে করে! আর মায়ের স্বপ্ন ছিলো সে একজন সমাজের প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি হবে যে সমাজ ও জাতিকে সুন্দর করে তুলবে। কথায় আছে না? “মায়ের দোয়া কখনো বিফলে যায় না।” ঠিক তাই!আজ সে সমাজের একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি।তার এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে এক মানুষরূপী ফেরেস্তা। সাহিদ আজও সেই মানুষরূপী ফেরেস্তাটাকে একটিবার দেখার অপেক্ষায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। তোমাদের জানতে ইচ্ছে হচ্ছে না গল্পটা কি?? তার জীবনের মোড় কে ঘুড়িয়েছে? কে সেই ফেরেস্তা যাকে সে পাগলের মত খুঁজে বেড়াচ্ছে?

অপেক্ষা জিনিসটা কতটা কষ্টের সেটা যে করেছে সেই জানে শুধু। সেটা হতে পারে কোনো জিনিস এর তরে বা কোনো মানুষ এর তরে। কিন্তু আজকের গল্পটা এক ভিন্নরকম মানুষের  খোঁজে । আমরা পড়াশোনা করি নিজেকে সুশিক্ষিত করে গড়ে তুলতে এবং নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে ভালো একটা চাকরি করতে। কথায় আছে, “শিক্ষার শিকড়ের স্বাদ তেতো  হলেও এর ফল কিন্তু মিষ্টি হয়।” -( এরিস্টটল)
।এই বাণিটি আসলেই সত্য নিজেদের বাস্তব জীবনে।

চলো এবার জেনে নেওয়া যাক মানুষটি সম্পর্কে—

“সালটা ছিল ২০১০, দিনটি ছিল পরিচ্ছন্ন আকাশের নীল প্রতিবিম্ব।।সাহিদ তখন দশম শ্রেণির ছাত্র।সাহিদ এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছিলো। সেইদিন বাংলা  পরীক্ষা ছিল।
” সৃজনশীল লিখা শেষ। কিছুক্ষণ পরই নৈর্ব্যক্তিক দেওয়া হলো। ৪০ টা নৈর্ব্যক্তিক। সময়ও ৪০ মিনিট।৪ মিনিটে ৪ টা নৈর্ব্যক্তিক পূরণ করলো। ৫ মিনিটের
মাথায় একটা নৈর্ব্যক্তিক-এ আটকে গেল! হঠাৎ কি যেন মনে করে পাশের এক বন্ধু আতিকের আন্সার শীট-এর দিকে ঘাড় ঘুরিয়েছিলো।
ঠিক তখনই ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব তাদের হলের বারান্দা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব জানালা দিয়ে তার ঘাড় ঘুরানো দেখে ফেললেন! সঙ্গে সঙ্গে তিনি হনহন করে হলের ভিতর ঢুকে পড়লেন। এগিয়ে আসলেন সাহিদের দিকে। আস্তে করে তার আন্সার শীট-টা হাতে নিলেন। তারপর সেটা নিয়ে গিয়ে টেবিলের উপর রেখে দিলেন। সাহিদ হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তার হাত-পা কাঁপাকাঁপি  শুরু হয়ে গেছে। হলে তিনজন শিক্ষক গার্ড দিচ্ছিলেন।তারা তিনজনই সাহিদের অপরিচিত।

অন্যকোনো স্কুল এন্ড কলেজের হবে। কোথাকার সাহিদ জানতো না। ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব দায়িত্বরত  তিন’জনকেই হুংকার দিয়ে বললেন- “খবরদার! আমি না আসা পর্যন্ত এই ছেলেকে শীট দিবেন না।” বলেই তিনি আগের মত হনহন করে রুম থেকে বেড়িয়ে চলে গেলেন।সাহিদ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। বুকের ভিতর ধুকধুক করছে। অপেক্ষায় আছে ম্যাজিস্ট্রেট কখন আবার আসবে। কখন আনসার শীট ফিরে পাবে।সময় চলেই যাচ্ছে তরতর করে। ম্যাজিস্ট্রেট আর আসে না।সাহিদকেও আর শীট দেওয়া হয় না। সময় যত বাড়ছে, সেই সাথে বেড়ে চলছে তার বুকের ধুকধুকানি। ২০ মিনিট পার হয়ে গেল।

ম্যাজিস্ট্রেট -এর আসার কোনো নাম গন্ধ নেই।দু’জন গার্ড এর মধ্যে একজন স্যার দরজা কিঞ্চিৎ সরিয়ে বাইরে উঁকি দিলেন,ম্যাজিস্ট্রেট আসছে কি-না দেখার জন্য। কারণ ততক্ষণে ৩০ মিনিট পার হয়ে গেছে। উঁকি দিয়ে দেখলেন ওই এরিয়ার মধ্যে ম্যাজিস্ট্রেট এর কোনও চিহ্ন মাত্র নেই!সাহিদের বুঝতে বাকি রইলো না যে ম্যাজিস্ট্রেট আজ আর আসবেন না। ম্যাজিস্ট্রেট না আসলে তাকে শীট-ও দেওয়া হবে না। ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব সত্যিই আর আসেনি।সামান্য ঘাড় ঘুরানোর শাস্তি যে এতটা ভয়াবহ হতে পারে সেটা তার জানা ছিল না। সাহিদের হাতেরতালু ঘামছে। কানে শব্দ ভনভন হচ্ছে এবং মাথাটা যেন কাটা কম্পাসের ৩৬০° ঘুরছে।।আর ৫ মিনিট পর ওয়ার্নিং বেল দিয়ে দিবে।

সে তখন পুরোপুরি আশা ছেড়ে দিয়েছিলো। কারণ এই ৫ মিনিট সময় বাকি থাকতে শীট দিলেও মাত্র ৫ মিনিটে ৩৫ টা নৈর্ব্যক্তিক সে সঠিকভাবে পুরণ করতে পারবে না। ফলাফল, নৈর্ব্যক্তিক-এ ফেইল আসবে। আর নৈর্ব্যক্তিক-এ ফেইল আসা মানে পুরো সাবজেক্ট ফেইল। আর একটা সাবজেক্ট ফেইল মানে এসএসসি পরীক্ষায় ফেইল! ফেইল করা হয়তো সাধারণ ব্যাপার হতে পারে, কিন্তু সবাই যখন জানবে সাহিদ বাংলার মতো একটা সাবজেক্টে ফেইল করেছে, তখন সে সবাইকে কি জবাব দিবে?তার ঠিক সেই মুহূর্তের অবস্থা আমি লিখে বা বলে বর্ণনা করতে পারব না। নাহিদ, সৈকত , সায়েম, ওরা তাকিয়ে আছে সাহিদের দিকে। সাহিদ খেয়াল করলো তার চোখ থেকে অঝোরে পানি পড়তে শুরু করেছে সাথে তার বন্ধুদের চোখের পাতাগুলি ভেজা দেখা যাচ্ছে। চাপা কান্না যাকে বলে। কোনো শব্দ হচ্ছে না। তবে বুকটা ফেটে যাচ্ছে।

চোখের পানি গাল গড়িয়ে সেদিন গায়ের শার্ট ভিজিয়েছিলো। কারণ ততক্ষণে ওয়ার্নিং বেল দিয়ে দিয়েছে।সাহিদ মাথা নিচু করে বসে আছে।ততক্ষনে আতিক আর নাহিদ বের হয়ে গেল।আর রাফি ও মহিউদ্দিন বের হয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল।সাহিদ শেষমেষ ডানে-বামে তাকিয়েছে।কিন্তু দেখলো কোনো আশা নেই। তাই বের হয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলো।ঠিক তখনই তার পিঠে সে একজনের নরম হাতের স্পর্শ অনুভব করলো।সাহিদ মাথা তুলেতেই দেখে সেই স্যারটি! যিনি ম্যাজিস্ট্রেট আসছেন কি-না দেখার জন্য বারবার দরজা ফাঁকা করে বাইরে উঁকি দিচ্ছিলেন। স্যারের হাতে তার আন্সার শীট। স্যার আন্সার শীট-টা তার হাতে দিলেন।তারপর নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নপত্রটা নিজের হাতে নিলেন। বললেন, ‘তোমাদের ক্লাসের ফার্স্টবয় কে?’ সাহিদ অনিক কে দেখিয়ে দিলো।ও তাদের হলেই ছিল। স্যার সাহিদের নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নপত্র টা নিয়ে অনিকের কাছে গেলেন। ওর ততক্ষণে সবগুলো নৈর্ব্যক্তিক পূরণ করা শেষ। কি ঘটছে কিছুই বুঝতে পারছিলো না সাহিদ।

অনিককে বললেন- ‘দ্রুত এই নৈর্ব্যক্তিক গুলোর সঠিক উত্তর গুলোর উপর কলম দিয়ে একটা করে “ডট” দিয়ে দাও।’.. ও তাই করলো। নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নপত্রের সঠিক উত্তর গুলোর উপর একটা করে ‘ডট’ দিয়ে দিলো। ২ মিনিটে। আর মাত্র ৩ মিনিট বাকি আছে। স্যার এবার প্রশ্নপত্রটি সাহিদের হাতে এনে দিলেন। তারপর বললেন- ‘দ্রুত এই ডট চিহ্ন দেখে দেখে আন্সার শীট-এর বৃত্ত গুলো ভরাট করে দাও।’ সাহিদ ধূমকেতুর গতিতে বৃত্ত ভরাট করা শুরু করলো। সবগুলো ভরাট করতে ৫ মিনিটের মত লেগে গেল। ভরাট করে মাথা তুলে দেখলো সবার শীট জমা দেওয়া শেষ। পুরো হলে সাহিদ একাই বসে আছে।আর ওই স্যারটি চুপচাপ দাঁড়িয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছেন। সবার শেষে তার শীট জমা নিলেন তিনি।

সাহিদ শীট জমা দিতে গিয়ে আবারও কেঁদে ফেললো।এবার স্যারকে সাহিদ জড়িয়ে ধরলো। আশ্চর্য ব্যাপার হচ্ছে, এই অচেনা ভদ্রলোকটির  চোখেও পানি টলমল করছে।
একদমই অপরিচিত কোনো ছাত্রের জন্য কোনো শিক্ষক চোখের জল ফেললেন!রীতিমত অবাক করার বিষয়।যাই হোক,সাহিদ তখনও স্বাভাবিক হতে পারছিল না। হাত পা তখনও কাঁপছে। সাহিদ হল থেকে বের হয়ে এলো চোখ মুছতে মুছতে। শুনতে পেলো স্যারের শেষ কথাটা- ” ভালো থেকো সব সময়। আর মন দিয়ে লেখাপড়া করবে।জীবনে সব কিছু ছেড়ে গেলেও অর্জন করা বিদ্যা কখনো ছেড়ে যায় না।”তখন সাহিদ ফোন ব্যবহার করতো না। মোবাইল নাম্বার রেখে দেওয়ার কোনো চিন্তাভাবনাও তার মাথায় আসে নি। সেই সময় তার শুধু এটাই মনে হচ্ছিলো যে তার সামনে কোনো মানুষ রূপে ফেরেস্তা দাঁড়িয়ে আছে।এরকম মানুষ পৃথিবীতে একশ’বছরে একজন জন্মায়।

পরের পরীক্ষাগুলোতে সারা সেন্টারে সাহিদ সেই স্যারকে তন্ন তন্ন করে খুঁজলো,কিন্তু পেলো না তাঁর দেখা।আজও পায় নি। তার নাম কি, জানে না। কোন কলেজের শিক্ষক, তাও জানে না। জানে না  কোথায় তিনি থাকেন। মানুষটা কেমন আছে তাও জানে না।এখনও প্রতিবছর এসএসসি পরীক্ষার সময় সাহিদ তাদের এলাকার প্রতিটা সেন্টারের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। কোনো একদিন হয়তো সেই মানুষরূপী ফেরেস্তাটার সাথে দেখা হয়ে যাবে, সেই আশাই। যদি আবার কোনোদিন তাদের আরেকটিবার দেখা হতো তাহলে তার চেয়ে বেশী খুশি বোধ করি এই পৃথিবীতে আর কেউ হতো না। সাহিদ আর একটিবার সেই শিক্ষককে জড়িয়ে ধরতে চায়।

আগের বারের চেয়ে আরো শক্ত করে ধরতে চায়।আর চিৎকার করে বলতে চায়,”আমি খুব ভালো আছি।আমার আজকের এই ভালো থাকার দুর্গম পথটা যে সুগম করিয়ে দিয়েছে সে আপনিই স্যার। আপনার ঐদিনের মহৎ কাজটা আমাকে নতুন জীবন দিয়েছে।আপনার ঐদিনের কথাটা আমাকে পরবর্তী দিনগুলোতে অনুপ্রাণিত করেছে। স্যার আপনাকে যদি একবার পেতাম জড়িয়ে ধরে এই খুশির সংবাদটি দিতাম।” আজ সাহিদ একজন ম্যাজিস্ট্রেট।তার এই কৃতিত্বটা সেই শিক্ষকের পায়ে উৎসর্গ করতে চায় সে। কারণ ঐদিনের পরীক্ষাটায় সেই শিক্ষক তাকে দয়া করেছে বলেই আজ সে প্রতিষ্ঠিত। তাঁর সেই অতুলনীয় সাহায্য টা সাহিদকে আজ এই জায়গায় দাঁড় করিয়েছে। জানে না সে আর সেই মানুষটির দেখা পাবে কিনা। এই অপেক্ষা নিয়ে বেঁচে আছে সে আদৌ। কিন্তু কি করা সাহিদের ভাগ্য যে তাকে দিচ্ছে না ধরা !!..নসিবের উপর বিশ্বাস রেখে শুধু হেঁটে চলেছে কোনো একদিন দেখা হবে এই  আশায়। সে আদৌ অপেক্ষারত….। এখানেই সমাপ্ত।

যাই হোক,তবে সময় একদিন না একদিন ধরা দিবেই তাদের আমার বিশ্বাস। তাই বন্ধুরা প্রতিটি মানুষ তার জীবনের প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পিছনে একটা কারণ থাকে। এই গল্পেটাতেও তারই উদাহরণ। প্রতিটি শিক্ষক আমাদের ভালো চায়। কোনোদিন খারাপ চায় না। তারা তাদের নিজ সন্তানের মত আমাদের ভালোবাসে। ভালো দিক-নির্দেশনা গুলো আমাদের শিখিয়ে দেয়।জীবনের প্রতিটি মূহুর্তে কোন কাজটা নেতিবাচক কোন কাজটা ইতিবাচক এই কাজগুলো বুঝিয়ে দেয়।পৃথিবীতে বোধ হয় শিক্ষকরাই একমাত্র জাতি যারা অন্যের সন্তানের সাফল্য দেখে নিজেরা গর্ববোধ করে। তাদের কাছ থেকে শিক্ষা পাই আমরা।  ওই শিক্ষা থেকে আমরা নিজেদের কে প্রতিষ্ঠিত করি।তাই যারা আমাদের জীবন গড়ার কারিগর তাদের তো আমরা মাথায় তুলে রাখা উচিত। তাদের ওই শিক্ষার কারনে আজ আমরা নিজেদের কে সুশিক্ষায় সুশিক্ষিত মনে করি!! কিন্তু তাদের আবদানটা ভুলে যাই। তাই শিক্ষকদের আমরা সম্মান করবো।
প্রতিটি শিক্ষককে সমানভাবে সম্মান করা,সমানভাবে ভালোবাসা, তাদের পাশে থাকা, খোঁজ খবর রাখা আমাদের কর্তব্য।

আর মনে রাখবেন শিখার কোনো শেষ নেই শিখার কোনো দেশ নেই!. তবে সুশিক্ষা এবং কুশিক্ষা বলে দুইটি কথা আছে ।
এর মধ্যে কুশিক্ষা অশিক্ষার চেয়েও খারাপ !!.
সুশিক্ষা হয় সৎ চিন্তার অনুসরণে.
আর কুশিক্ষা হয় কুচিন্তার অনুকরনে !..

তাই বুন্ধুরা, তোমরা যারা এই গল্পটা পড়ছো তোমরা সবসময় গুরুজনদের সম্মান করতে, শ্রদ্ধা করতে, ভালোবাসাতে ভুলো না যেন। এই গল্প থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে নিজেকে সঠিকভাবে গড়ে তুলো;যাতে আর কখনো শিক্ষকরা তাদের ছাত্রদের কাছে সম্মানহানী না হয়।শিক্ষকদের ভালোবাসতে শিখো। আজ এই অবধি,আল্লাহ হাফেজ।

নাম : মো: ইব্রাহিম জুয়েল
ঠিকানা : ফুলগাজী, ফেনী
কলেজ : ফেনী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট

Facebook Comments Box
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments