ভাবমূর্তি কথাটি এখন বহুল আলোচিত। বেশ কয়েক বছর হলো এই কথাটি হরহামেশাই শোনা যাচ্ছে। কিছুতে কিছু হলেই রে রে ভাবমূর্তি নষ্ট হলো। এমন হয়েছে যে কাজের বুয়া থেকে শুরু করে বড়বড় চেয়ারধারী সবার ভাবমূর্তি আজ প্রশ্নবিদ্ধ। এমনকি এই যে আমি এই লেখার শুরুতেই কাজের বুয়াকে টেনে রথি মহারথিদের সাথে বসিয়েছি এতেই হয়তো অলরেডি কারো কারো ভাবমূর্তি নষ্ট করে ফেলেছি।আশ্চর্যজনক ভাবে লক্ষ্য করছি বাজারে বিক্রি হওয়া দুধ,তেল,লবণ এমনকি টিস্যু পেপারেরও মেয়াদ আছে কিন্তু এই ভাবমূর্তির তেমন মেয়াদ নেই। হুটহাট করেই তা নষ্ট হচ্ছে। যে জিনিস এতো দ্রুত নষ্ট হয় তাতো আসলে মারাত্মক রোগাক্রান্ত। তার চিকিৎসা দরকার। কিন্তু কোন ডাক্তার চিকিৎসা করাবে? তেমন ডাক্তারকি আর আছে? যারা চিকিৎসা করাবে তারাইতো ভাবমূর্তি জ্বরে আক্রান্ত। এবার সেই ভাবমূর্তিতে সবচেয়ে বড় আঘাতটি হেনেছে হিরো আলম। সামান্য এক ডিশ ব্যবসায়ী কি করে হিরো হলো? আয়নায় নিজের মূখ দেখেছিস কখনো এমন কথা নিশ্চই অলরেডি তাকে শোনানো হয়ে গেছে।এখন কথা হলো ভাবমূর্তি আসলে কী এবং কিভাবে তা নষ্ট হয় এই কনসেপ্টটা বাঙ্গালী জাতির কাছে আদতে ক্লিয়ার না।
মোটাদাগে বলতে গেলে আমি মনে করি হিরো আলমেরা সংস্কৃতির জন্য অনিরাপদ হলেও দেশের জন্য অনেকের চেয়েই নিরাপদ। এখন আমার মনে করা না করায় হয়তো কারো কিছু যায় আসে না। তবুও আমি অন্তত সেই সব লুটেরা আর পাচারকারীদের চেয়ে অবশ্যই হিরো আলমকে অনেক বেশি নিরাপদ মনে করি। তাছাড়াও ক্ষেত্রবিশেষে সংস্কৃতির জন্যও তিনি নিরাপদ। সে বিষয়ে নিশ্চই কিছু কথা তুলে ধরবো। আর হ্যাঁ আপনারা নিশ্চই দেখেছেন হিরো আলম দেশের তৃতীয় সর্বচ্চো ক্ষমতাধর (পদ পদবীতে তাই বলে) মানুষকে (জনাব ওবায়দুল কাদেরকে) ওপেন চ্যালেঞ্জ করেছেন, আসুন আপনি দলীয় প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করুন আর আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে। দেখা যাক খেলা কেমন হয়। আপনি না বলেন যোগ্য প্রতিযোগির অভাবে খেলা ঠিকমত জমছে না”। হিরো আলম এই কথা বলার মাধ্যমে অবশ্যই একটি সাহসী কাজ করেছে যা গত এক দশকে এই দেশে যাদের বলার কথা ছিল তারা কেউ বলতে পারেনি।
এখন যারা হিরো আলম নিয়ে মাথা ব্যথা. হিরো আলোম যাদের মানসম্মান ধুলোয় মিশিয়ে দিচ্ছে তাদের কাছে যদি প্রশ্ন রাখি এমন কথা বলার মত বুকের পাটা আছে আপনাদের? আমি জানি এই প্রশ্নে আপনারা নিরবতা পালন করবেন। আওয়ামীলীগকে হটিয়ে ক্ষমতার আসনে যাওয়ার স্বপ্ন দেখতে থাকা বিএনপির নেতারাও এভাবে চ্যালেঞ্জ করার সাহস ও মনোবল রাখে না। নুরুল হক নুরও না। হিরো আলমকে যখন উচ্চশিক্ষিত,বাকপটু সাংবাদিকেরা মাইক্রোফোন সামনে এগিয়ে ধরে ক্যামেরা তাক করে চারদিক থেকে ঘিরে ঘরে নানা রকম প্রশ্ন করে তখন তার উত্তর দেওয়া দেখেছেন কখনো?আত্মপ্রত্যয়ী আর দৃঢ়চেতা। হিরো আলম আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলেন। লেখাপড়া তেমন করতে পারেননি। তার পরও তিনি যথেষ্ট গুছিয়ে কথা বলতে পারেন। সে যে উচ্চশিক্ষিত হতে পারেনি এর দায়ভার কি সুশীল সমাজ এড়িয়ে যেতে পারবে?তাছাড়া সমালোচনার খাতিরে আমরা যদি উদাহরণ হিসেবে টেনে আনি তবে দেখা যাবে এখনকার সংসদের এমনও এমপি আছেন যারা দেখে দেখে বাংলাও ঠিকমত পড়তে পারেন না। ইউটিউবে সে সব ভিডিও দেখে নিতে পারেন। এখন যদি আমাকে দুটি অপশন দেওয়া হয় বেছে নেওয়ার জন্য তাহলে আমার করণীয় কী? আমি উভয়ের মধ্যে যোগ্য একজনকে বেছে নিতে বললে কাকে নেব? যে চোর,লুটেরা,পাচারকারী এমন কাউকে নাকি হিরো আলমকে? আপনি কাকে নিবেন?
এই দেশে কী হয় আর কী হয় না সেটাও কি বুঝিয়ে বলার দরকার আছে? যারা ভাবমূর্তি নিয়ে চিন্তিত তাদের কাছে যদি প্রশ্ন করা হয় কোনোদিন বিদেশে অর্থ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে একটাও শব্দ উচ্চারণ করেছেন? ঘুষ,অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেন?ভোট চুরি হয় এটা কি অস্বীকার করেন? তাহলে যারা অভিযোগ করে তারা সবাই মিথ্যা কথা বলে?হিরো আলমেরাতো কারো পিএইচডি থিসিস চুরি করে নিজের নামে চালিয়ে দেয়নি,কারো টাকা আত্মসাৎ করে বিদেশে পাচার করেনি। কারো রিলিফ মেরে দেয়নি। কারো লেখা চুরি করে নিজের নামে চালায়নি। কারো জমি দখল করে নেয়নি,সিন্ডিকেট করে শেয়ার বাজারে ধ্বস নামায়নি,তেল-গ্যাসের দাম বাড়ায়নি।
আমি মনে করি হিরো আলমের গ্রহণযোগ্যতা অনেক বড় বড় উচ্চ শিক্ষিতদের চেয়েও অনেক বেশি। আপনাদের মনে আছে কি না জানি না তবুও মনে করিয়ে দিতে চাই। চুরি করে ধরা খাওয়ার পর “আমার ভুল হয়েছে,ক্ষমা করে দেন” বলা মানুষকে যে দেশে ফুলের মালায় বরণ করা হয়,অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি করা হয় তাতে আপনাদের জাত যায় না? সম্মান নষ্ট হয় না? ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয় না? শুধু হিরো আলম কিছু করলে জাত যায়? এ কেমন ভাবমূর্তি আপনাদের? জনাব আসিফ নজরুল প্রথম আলোতে তাকে নিয়ে কলাম লিখে এখন গালি খাচ্ছেন! অস্বাভাবিক কিছু নয়।আমাকেও চাইলে গালি দিতে পারেন, আমি পরোয়া করি না। আমি অন্তত বিশ্বাস করি দেশের সর্বনাশকারী পিকে হালদারদের চেয়ে হিরো আলমেরা অনেক বেশি নিরাপদ।
এই যে আশরাফুল আলম থেকে হিরো আলোম নাম ধারণ করে আলোচিত হওয়া মানুষটি প্রান্তিক জনগোষ্ঠী থেকে উঠে আসা মানুষ। তার আসল দোষ কী? কাউকে খুন করেছে? জমি দখল করেছে? টেন্ডারবাজি করেছে,ব্রীজ বা কালভার্টে রডের বদলে বাঁশ দিয়েছে? না এর কিছুই করেনি। সে যা করেছে তা হলো সে বাঙ্গালীর ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে। এমন ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে যা দেখাও যায় না,ছোঁয়াও যায় না। হিরো আলমের দোষ ভুলভাল সুরে রবীন্দ্র সঙ্গীত গাওয়া,মিউজিক ভিডিও করা। এইতো? পুলিশ তাকে পুলিশের পোষাক পরতে নিষেধ করেছে। অথচ এই দেশের চলচ্চিত্রে নানা সময়ে পুলিশের পোশাক পরে যা দৃশ্য ধারণ করা হয়েছে তা ভুলে যাওয়ার মত নয়। তাছাড়াও পুলিশ যে সাধু তাওতো নয়। ভালো পুলিশ যেমন আছে দুই চারজন খারাপ পুলিশওতো আছে। পত্রিকার পাতায় হাজার হাজার আকাম-কুকামের সংবাদ হরহামেশাই দেখা যায়। তাতে পুলিশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয় না? হিরো আলমেরা সেই পোশাক পরলে নষ্ট হয়।
চাঁদাবাজি করতে গিয়ে ধরা খাওয়া থেকে শুরু করে পথচারির পকেটে মাদকদ্রব্য ঢুকিয়ে দেওয়া এহেন কাজ নেই যা পুলিশ করেনি। ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ এ প্রথম আলোর নিউজে এসেছে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের চান্দনা চৌরাস্তা (পালের মাঠ) এলাকায় ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা আদায় ও চাঁদাবাজির অভিযোগে জেলা পুলিশের এক কনস্টেবল ও তাঁর সহযোগীকে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছেন এলাকাবাসী। আবার ৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ এ নিউজ হয়েছিল রাজধানীর খিলক্ষেতে এক পথচারীর পকেটে ইয়াবা ঢুকিয়ে মিথ্যা মাদক মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগে গ্রেপ্তার পল্লবী থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মাহবুবুল আলমকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এসবে পুলিশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়নি? এমন ঘটনা হাজার হাজার।
চলচ্চিত্র নির্মাতা দীপঙ্কর দীপনের লেখাটা পড়লাম। তাতে মনে হলো এই দেশের যত মানহানি সব ঘটেছে হিরো আলমের মাধ্যমে। এই দেশের সংস্কৃতির বারটাও বাজিয়েছে হিরো আলম একা। ভাই আমি হিরো আলমের দালাল নই বা এজেন্টও নই। তবে এতোক্ষণ যা লিখলাম তাতে লোকে আমাকে হিরো আলমের দালাল বা এজেন্ট বললেও আমি আশ্চর্য হবো না। আমিতো অন্যের চোখ দিয়ে দেখি না,অন্যের কান দিয়ে শুনি না,অন্যের মাথা দিয়ে ভাবি না। আমার নিজের চোখ,কান,মুখ আছে। মাথাও আছে। আমি অন্তত ভাবতে পারি। বিগত দিনের ইতিহাস টেনে আনতে পারি। পাশাপাশি রেখে মিলিয়ে দেখতে পারি। সেই যে চলচ্চিত্রের অন্ধকার যুগ বলে আপনার যেটাকে উল্লেখ করেন সেকালে চলচ্চিত্র নির্মাতাদের কেউ কেউ মেহেদী,ময়ূরী আরও অনেককে দিয়ে যা অভিনয় করিয়েছে কেউ যদি দেখাতে পারেন হিরো আলম সেরকম অশ্লীল কোনো কন্টেন্ট তৈরি করেছে তবে কথা দিলাম কোনোদিন আপনাদের সমালোচনা করবো না। আর সেই সব সিনেমাও সেন্সর বোর্ড রিলিজ করেছে। এসবে সংস্কৃতির বারটা বাজেনি? আর সেন্সর বোর্ডের ভাবমূর্তি তখন কোথায় ছিল? অথচ সেই সেন্সর বোর্ড “শনিবার বিকেল” মুক্তি দিতে গড়িমসি করছে। আদালতের রায় হওয়ার পরও চিঠি ইস্যু করছে না! এই সিনেমা রিলিজ হলে নাকি ভাবমূর্তি নষ্ট হবে। সিনেমাটা রিলিজ হতো কোথায়? বাংলাদেশে। দেখতো কারা? আমাদের বাঙ্গালীরা। এখানে ভাবমূর্তি নষ্ট হওয়ার কী আছে? আমার মাথা মোটা তাই এটা কোনো ভাবেই ঢুকছে না যে মুভিটি বিভিন্ন আর্ন্তজাতিক আয়োজনে দেখানো হয়েছে তাতে ভাবমূর্তি নষ্ট হয়নি এখন দেশে রিলিজ হলেই সব সমস্যা। মানে হলো এক লোক উদম হয়ে সারা শহরের অলিগলি ঘুরে বেড়িয়েছে তাতে লজ্জা পায়নি এবার নিজের ঘরে ঢুকে নিজের রুমে উদম থাকতে লজ্জা পাচ্ছে। এই না হলে বাঙ্গালীর ভাবমূর্তি? পাশের দেশ ভারত “ফারাজ” নামে মুভি বানিয়ে রিলিজ দিচ্ছে সেটাতো অন্য দেশের মানুষ দেখবে। ভাবমূর্তি নষ্ট হলেতো সেটাতেই বেশি হবে। তা নিয়ে কারো কোনো কথা নেই।
আমার মনে হয় আপনারা মানসিক ভাবে নিজের ধারার বাইরে কাউকে মেনে নেওয়ার জন্য প্রস্তুত নন। আপনারা এক শ্রেণির পাঠকের কাছে তুমুল জনপ্রিয় কাসেম বিন আবু বকরকে গোনায় ধরেননি,আপনারা হিরো আলমকে গোনায় ধরেননি,একসময় আপনারা মমতাজকেও গোনায় ধরেননি (তখন মমতাজকে মানুষ মমোতাজ বলে উচ্চারণ করতো)। আপনারা এ সময়ের তুমুল জনপ্রিয় লেখক আরিফ আজাদকেও গোনায় ধরেন না। এমনকি সাদাত হোসাইনকেও ক্ষেত্র বিশেষে গোনায় ধরতে চান না। এর আর কোনো বিশেষ কারণ নেই বরং একমাত্র কারণ তারা তাদের মত করে দর্শক,পাঠক,শ্রোতা আর ক্রেতা তৈরি করে নিয়েছে যার সংখ্যা কল্পনাতীত। আর এটাই আপনাদের মাথা ব্যাথার একমাত্র কারণ। এই যে জনাব কাদের সাহেব হিরো আলমকে জিরো বানিয়ে দিলেন তাতে কী হলো? উল্টো হিরো আলম তাকেই তার কাতারে নামিয়ে আনলো। কাদের সাহেব যদি নিজে আগবাড়িয়ে ওই কথাগুলো না বলতেন তাহলে হিরো আলমও কাদের সাহেবকে মাঠে নামতে বলতে পারতো না। এখন যদি ওবায়দুল কাদের হিরো আলমের সাথে লড়াইয়ে মাঠে নামতে না পারেন তবে প্রকারান্তে তিনিতো এমনিতেই হেরে গেলেন। আবার যদি মাঠে নামেন তাও প্রকারান্তে হিরো আলমের জয়। সে ওবায়দুল কাদেরের মত নেতাকেও নিজের কাতারে নামিয়ে আনার মত সক্ষমতা রাখে!
বিষয়টা ভিন্ন ভাবে চিন্তা করা যেতে পারে। মানুষের মাথায় যে চুল আছে তা সারা জীবন যতবার কাটা হয় তা জোড়া দিলে কয়েক মাইল লম্বা হবে। কিন্তু কেউ যদি সারাজীবন একবারও চুল না কাটে তার চুলকি এক মাইল লম্বা হবে? মোটেও হবে না। আপনারাই হিরো আলমদের মাথায় তুলে নিয়েছেন আর এখন সেই ওজন সইতে না পেরে ছুঁড়ে মারতে চাইছেন। কিন্তু যে ছায়া আপনার চেয়ে বড় হয়ে গেছে তাকে আপনি ডিঙিয়ে যাবেন কিভাবে?
তসলিমা নাসরিনকে আপনারাই ফেমাস করেছেন, আলোচনায় এনেছেন। হিরো আলমকেও আপনারাই আলোচনায় এনেছেন। নুরুল হক নূর কিংবা ইমরান এইচ সরকার যার কথাই বলি না কেন সব আপনাদেরই কাজের পরিনতি। দূর বিদেশে বসে সেফুদা নামে এক ভাড় মদ খেয়ে মাতলামো করতে করতে ভিডিও করে,গালিগালাজ করে আর বাঙ্গালী হেসে লুটোপুটি খায় এবং হরদম শেয়ার করে। ফলশ্রুতিতে সে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। আবার সেই আপনারাই হায় হায় করেন। দেশের বাইরে বসে সে যে অশ্লীল কথা বার্তা বলে,গালি দেয় তাতে ভাবমূর্তি নষ্ট হয় না? আপনারা যদি এতো কথা না বলতেন তবে হিরো আলম সেই ডিশ ব্যবসায়ীই থেকে যেত। ইউটিউবে ভিডিও দিয়ে কাউকেতো বলেনি আসুন আমার ভিডিও দেখুন। সেই রাখাল ছেলেকে মনে করুন যার চিল্লাচিল্লি শুনে প্রথম বার লোক জড় হয়েছিল পরে আর হয়নি। হিরো আমল বা তসলিমা নাসরিন বা যার কথাই বলি না কেন তারা যা করছে তা নিয়ে এতো সোরগোল না করলে তারা এই অবস্থানে আসতে পারতো না আর আপনাদের মানইজ্জত নিয়ে টানাটানি পড়তো না।
আজ কথা প্রসঙ্গে এক বন্ধু বললো দেশ গোল্লায় গেলেও হিরো আলমকে সে মেনে নিতে পারবে না বা মানবে না। এই যে মেনে নিতে না পারার কারণতো খোদ হিরো আলম নিজেই বলে দিয়েছেন। অশিক্ষিত একজনকে সম্মান দিতে হবে,স্যার বলতে হবে এটা মেনে নিতে পারছেন না। এটাতো অনেকটা সেই অংক শিক্ষকের মত যিনি নিজের নিয়মের বাইরে অংক করলে কেটে দিতেন। এমন অংক টিচারের কথা নিশ্চই এই দেশের মানুষের অজানা থাকার কথা নয়। এই যে হিরো আলমেরা সংস্কৃতির বারটা বাজাচ্ছে বলে আপনারা চিৎকার করছেন ইউটিউব ঘুরে নির্মাতাদের নাটক দেখুন। রুচিহীন সেই সব নাটক নিয়ে মানুষের মন্তব্য শুনুন। উদাহরণ চান? সেই যে বিখ্যাত ব্যাচেলর পয়েন্ট নাটক সেটা নিয়ে পাবলিক ওপেনিয়ন নিয়ে দেখুন। তারপর আপনাদের সম্মানহানী ঘটে না। স্যালুট আপনাদের।
কথার পিঠে কথা এসে যায়। দেশের বর্তমান জনসংখ্যা ষোল কোটি না বিশ কোটি সেটা তুলে রাখলাম। ধরে নিলাম ষোলো কোটি মানুষ। এদের জাতীয় পরিচয় পত্র কিংবা জন্মনিবন্ধন একটু চেক করে দেখুন। সিংহভাগের জন্মদিন পহেলা জানুয়ারি! বিদেশে যাওয়ার সময় অন্য দেশের ইমিগ্রেশন অফিসারেরা অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে সবার জন্মদিন কিভাবে পহেলা জানুয়ারি হয়? মানুষের জন্মতো নির্দিষ্ট তারিখে করানো সম্ভব নয় তাই নয়কি? অথচ আমাদের জন্মদিন পহেলা জানুয়ারি। এতো ভাবমূর্তি নষ্ট হয় না? হোলি আর্টিজেনের ঘটনা বিবিসি থেকে শুরু করে বিশ্ব মিডিয়ায় ঢলাও ভাবে প্রচার হয়েছে। পিকে হালদার থেকে শুরু করে অন্যান্য অর্থ পাচারকারীর কথা বিশ্ব মিডিয়ায় প্রচার হয়েছে। আইএমএফ থেকে শুরু করে বিশ্বব্যাংক পযর্ন্ত অনেকেই নানা সময়ে প্রশ্ন তুলেছে। ভাবমূর্তি তখন নষ্ট হয়নি? আমাদের ভাবমূর্তি নষ্ট হয় শুধু হিরো আলোমদের মাধ্যমে যারা চুরি করেনিম,অর্থ পাচার করেনি,জমি দখল করেনি,খাদ্যে ভেজাল দেয়নি। শুধু এলিট ক্লাসদের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে! আর এলিটরা সেটা মেনে নিতে পারছে না।
দীর্ঘ লেখা একটি গল্প বলে শেষ করি। গল্পটা কম বেশি সবার জানা। এক অফিসের ঝাড়ুদারের ছেলে স্কুলে যাওয়া শুরু করলো। বসকে এসে একজন বললেন অমুকের ছেলেতো স্কুলে যাওয়া শুরু করেছে।বস বললেন আরে স্কুলে গেলেও পাশ করতে পারবে না। বেশ কিছুদিন পর খবর আসলো ছেলেটি পাশ করেছে। বস বললেন আরে পাশ করলেও চাকরি পাবে না। তারপর ছেলেটি চাকরিও পেলো। তখন বলা হলো আরে চাকরি পেলেও বেতন পাবে না। কিন্তু দেখা গেল একদিন সত্যি সত্যি সে বেতনও পেয়েছে। এই যে অবিশ্বাস বা অগ্রাহ্য করার যে রীতি তা চিরকাল থেকে যাবে। কিন্তু তাতে হিরো আলমদের কিছুই যাবে আসবে না। তারা ঠিকই এগিয়ে যাবে। তারপর একসময় সবাই মেনেও নিবে। বাবা মায়ের অমতে পালিয়ে বিয়ে করা ছেলে মেয়েকে যেমন সময়ের ব্যবধানে বাবা মা মেনে নেয় অনেকটা সেরকম। আরো সাম্প্রতিক উদাহরণ দিতে পারি। আলোচিত নায়িকা পরীমণি। তাকেও একসময় গ্রেফতার হওয়ার পর যারা গোনেনি তার মুক্তির পর তারা আবার তার পাশে ঘুরঘুর করতে চেয়েছে। কিন্তু পরীমনি জেল থেকে বেরিয়ে আঙুল দেখিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছে ।সেই দৃশ্য নিশ্চই আপনাদের ভুলে যাবার কথা নয়। আর তাই সব কিছু দেখে মনে হয় বাঙ্গালীর ভাবমূর্তি শেষ পযর্ন্ত হুমড়ি খায় হিরো আলোমের সামনে গিয়ে।
-ইবনে মোশাররফ
প্রাবন্ধিক, সমাজকর্মী
৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩