প্রস্তুতি ছাড়া যুদ্ধে নেমে পরাজিত হয়ে হাতিয়ারের দোষ দিয়ে লাভ নেই। কেবল মাত্র বোকারাই এটা করে। কথাটি গুরুত্বের সাথে নিয়ে আমরা যদি আমাদের চারপাশের সাথে মিলিয়ে দেখি তবে দেখতে পাবো আমাদের মধ্যেই এমন অনেকে আছেন যারা নিজেদের ব্যর্থতার দায় অন্যের উপর চাপিয়ে দিয়ে দায়মুক্ত থাকতে চায়। আপনি যতই সরে যান না কেন,নিজের ছায়াকে আপনি পিছু ছাড়াতে পারবেন না। সে আপনাকে প্রতিনিয়ত অনুসরণ করবেই।আমাদের চারপাশে অগণিত মানুষের অগণিত সমস্যা। মানুষ হয়ে জন্ম নিয়েছি সমস্যাতো থাকবেই। আদিকালেও মানুষের সমস্যা ছিল,এখনো আছে আর ভবিষ্যতেও থাকবে।কিন্তু সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজে নিতে হবে। পায়ে ধুলো লাগবে ভেবে যেমন গোটা দুনিয়াকে কার্পেটে মুড়ে নেওয়া সম্ভব নয়, তেমনি সমস্যাকে বিরাট আকারে না দেখে সহজ পথে তার সমাধান করার উপায় খুঁজে বের করার মাধ্যমেই সুখী হওয়া সম্ভব। যেমন পুরো পৃথিবী কার্পেটে না মুড়ে নিজের পায়ে জুতো পরার মাধ্যমেই পায়ে ধুলো লাগার হাত থেকে পরিত্রাণ মিলেছে, অনেকটা সেরকমই।
আমাদের দেশে শিক্ষত বেকারের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। আর চাকরি প্রার্থীদের সিংহভাগই হতাশ।আমি জীবনে সবচেয়ে বেশি যে সব কথা শুনেছি তার মধ্যে অন্যতম হলো ” এই দেশে লবিং ছাড়া,ঘুষ ছাড়া,মামা-খালু ছাড়া চাকরি হয় না” । আমি নিশ্চিত এমন কথা কম বেশি সবাই শুনেছেন। তবে আমি কিন্তু এই কথাটি মোটেও বিশ্বাস করি না বা মানি না। তার মানে এই নয় যে, আমি অস্বীকার করছি দেশে নানা ক্ষেত্রে লবিং হয় না। আমি অবশ্যই এটা মানি যে প্রচুর লবিং হয়। তবে ফেয়ারও হয়।কিন্তু আমরা কখনো ফেয়ার হওয়া অংশের একজন হিসেবে নিজেকে দেখি না বা গড়ে তুলতে পারি না। কিংবা বলা চলে গড়ে তোলার চেষ্টাও করি না। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমার সাথে যারা পাশ করে বেরিয়েছে এবং যাদের সাথে আমার যোগাযোগ আছে আমি জানি শতভাগই নিজ যোগ্যতায় চাকরি পেয়েছে। কেউ কেউ খুব ভালো চাকরি পেয়েছে। কেউ কেউ একটু কম। তবে ফেয়ার ভাবে পেয়েছে। যদিও কারো কারো সফলতার মুখ দেখতে অনেক সময় লেগেছে। অথচ হরহামেশাই দেখি মানুষ অনুযোগের সুরে বলে লবিং ছাড়া চাকরি হয় না!
দেশের শীর্ষস্থানীয় চাকরি খোঁজার সাইটের নাম বিডি জবস। আমার এই লেখাটি যারা পড়ছেন এবং এখনো চাকরি পাননি তাদের কাছে আমি প্রশ্ন করতে চাই, আপনারা যে অনুযোগ করে বলেন বিডি জবস থেকে যতই আবেদন করি কখনো ডাকে না। এই কথাটি বলার আগে আমার প্রশ্নটি শুনে নিন। আপনি কোনো একটি চাকরির বিজ্ঞাপন দেখে প্রথমে কী করেন? আমার ধারণা আপনি দেখেন কাথায় পোস্টিং দিবে,কতজন নিবে, স্যালারি কেমন,প্রতিষ্ঠান কেমন,কোন সাবজেক্ট চেয়েছে আর এক্সপেরিয়েন্স চেয়েছে কি না। সাধারণত এসবই দেখে থাকে প্রার্থীরা। কিন্তু বিজ্ঞাপনদাতা প্রতিষ্ঠান যে বিশাল আকারে একটা ক্রাইটেরিয়া দিয়ে থাকে আপনি কি সেসব কখনো মনোযোগ দিয়ে পড়েন? আমার ধারণা অধিকাংশ প্রার্থীই তা পড়ে না। জাস্ট বিজ্ঞাপন দেখে আর হুট করে আবেদন করে ফেলে। তিনি আদৌ সেই পদের যোগ্য কি না নিজে কখনো তা যাচাই করে না। এই সংখ্যা লাখ লাখ।
আমরা এটাকে আরো বিস্তারিত বলতে পারি এভাবে।একটা পজিশনে হয়তো বিশজন লোক নিবে। আবেদন করে পঞ্চাশ হাজার। ধরুন আপনি নিজে চাকরি দাতা। আপনি কি ৫০ হাজার সিভি দেখবেন? নিশ্চই আপনাকে কোনো না কোনো থিওরি ফলো করতে হবে। বিডি জবসের বিজ্ঞাপন দাতারাও সেই রকম থিওরি ফলো করে। যখন দেখে তাদের বিজ্ঞাপন দেখে কয়েক হাজার আবেদন পড়েছে তখন তারা কীওয়ার্ড সিলেক্ট করে দেয়। যাদের সিভিতে সেই সব কীওয়ার্ড ম্যাচ করে তাদের গুলো বাদে বাকি সব সিভি প্রথমেই বাদ পড়ে যায়। খোঁজ নিলে দেখবেন আপনার সিভিটাও তাদের ওই কীওয়ার্ড ফিল্টারিং এর সময়েই বাদ পড়ে গেছে। আর আপনি ডাক না পেয়ে ভাবছেন মামা খালুর জোর নেই বলে আপনি ডাক পাচ্ছেন না কিংবা আপনার যোগ্যতাকে মূল্যায়ণ করা হচ্ছে না। এই যে আপনার সিভিটা কীওয়ার্ড ফিল্টারিংয়ের সময় বাদ পড়লে সেটা কখনো মাথায়ও আসেনি আপনার।ভাবছেন সেটা কিভাবে? শুরুতেই বলেছি তারা তাদের প্রতিষ্ঠানে নির্দিষ্ট একটি পজিশনের জন্য লোক খুজঁছে। তারা সেই মানুষগুলিকেই নিবে, যারা তাদের ক্রাইটেরিয়া ফুলফিল করবে। আপনি তার যোগ্য কি না তা তারা ওভাবেই বাছাই করে আলাদা করবে।
ধরুন ওরা কীওয়ার্ড দিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের যত সিভি জমা পড়বে সব আপনা আপনি বাদ পড়বে। এবার দেখা গেল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কীওয়ার্ড ফিল্টারিং করার পরও আবেদন পড়েছে ৫০০++। তারা লোক নিবে বিশ জন। এতো সিভি তারা দেখবে না। তারা এবার খুঁজবে তাদের পছন্দের নির্ধারিত সাবজেক্ট নিয়ে কারা পড়েছে তাদের। মানে ধরুন তারা কীওয়ার্ড ফিক্সড করলো ম্যাথ,ইংলিশ,ইকোনমিক্স,ম্যানেজমেন্ট,একাউন্টিং,ফিনান্স। এই কীওয়ার্ড নেই এমন সব সিভি তখন বাদ পড়ে যাবে। দেখা গেল এই কীওয়ার্ড ম্যাচ করছে এমন আবেদন সংখ্যাও ২০০ বা তার বেশি হয়ে গেছে। তখন তারা তাদের আরো সব ক্রাইটেরিয়ার কীওয়ার্ড দিয়ে ফিল্টারিং করবে। সেটা হতে পারে কার ওয়ার্ক এক্সপেরিয়ন্সে আছে,কার সিজিপিএ ৩.৭৫ এর উপরে আছে,কে কম্পিউটারে দক্ষ,কার ইংলিশে দক্ষতা আছে। এমন অনেক কিছুই থাকতে পারে যা ওই প্রতিষ্ঠান চায়। আর এই সবই কিন্তু তারা তাদের চাকরির বিজ্ঞাপনে উল্লেখ করে দেয়। আবেদনকারীদের অধিকাংশই তা পড়ে না বলে জানতে পারে না। আবেদন করার আগে পুরো বিজ্ঞপ্তিটা কয়েকবার পড়ে সিভিটা এডিট করুন। যেন তারা যা যা চায় তার অধিকাংশই আপনার সিভিতে থাকে। তবেই না ফিল্টারিং হয়ে আপনার সিভিটা তাদের হাতে যাবে। আর হাতে গেলে তবেই না তারা আপনাকে ইন্টারভিউয়ের জন্য কল করবে।
বহু বছর আগে আমি দৈনিক ইত্তেফাকে একটি লেখা লিখেছিলাম যার মূল বক্তব্য ছিল চাকরি নিয়ে। যদিও রুপক গল্প তবে বাস্তবের সাথে মিল আছে। যারা আগে পড়েননি তাদের জন্য গল্পটা ছোট করে এখানে তুলে দিচ্ছি। এটি গল্পের সারকথা বলা চলে। বিশ্ববিখ্যাত একটি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান লাইবেরিয়াতে বা ওরকম একটা দেশে তাদের অফিস চালু করবে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে সিভি পড়েছে। এক বাঙ্গালীও ছিল। সবাইকে একটি হলরুমে নিয়ে একজন ঘোষণাকারী বললেন যারা আপনারা জাভা পারেন না তারা চলে যান। দেখা গেল রুমের অর্ধেক প্রার্থী বেরিয়ে গেল।সেই বাঙ্গালী ভাবলো এ আর এমন কী? শর্ট কোর্স করে শিখে নেব। সে বসে থাকলো। এবার বলা হলো যারা পিএইচপি পারেন না তারাও চলে যান। দেখা গেল আরো অর্ধেক উঠে গেল। এবারও বাঙ্গালী ভাবলো এ আর এমন কী? শর্ট কোর্স করে শিখে নেব। এভাবে এক এক করে কমতে কমতে হাতে গোনা কয়েকজন অবশিষ্ট থাকলো। বাঙ্গালী ভদ্রলোক প্রতিবারই এ আর এমন কী, শিখে নেব এমন ভেবে বসে থাকলো।
শেষ দিকে দেখা গেল দশ বারজন আছে। তারা লোক নিবে একজন। তো ঘোষক বললো যেহেতু লাইবেরিয়াতে আমাদের অফিস চালু হবে তাই আমরা চাই যারা লাইবেরিয়ার ভাষা জানেন তারা বাদে বাকিরা বেরিয়ে যাক। সেই বাঙ্গালী ভাবলো এ আর এমন কী, শর্ট কোর্স করে শিখে নেব। ভেবে সে বসে থাকলো। বাকি সবাই উঠে গেল। দেখা গেল আর একজন লোক বসা আছে। মানে বাঙ্গালীর সাথে আরো একজন। তখন ঘোষক বললো আপনারা দুজনই সব ক্রাইটেরিয়া ফুলফিল করেছেন। এবার দুজন লাইবেরিয়ার ভাষায় কথা বলুন। দেখি ভাষাগত দক্ষতা কার বেশি। তাকেই নেওয়া হবে। তখন বাঙ্গালী বললো ” স্লামালিকুম ভাই কেমন আছুইন?” অন্য লোকটি বললো, ওয়ালাইকুম সালাম ভাই ভালো আছি! মানে সেও বাঙ্গালী। বুঝুন বিষয়টা।
শুরুতে যে বলেছিলাম চাকরির আবেদনের ক্ষেত্রে চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানের উল্লেখিত ক্রাইটেরিয়া ম্যাচ না করার কারণে সিভি আউট হয়ে যায় এটি তার একটি উদাহরণ মাত্র। আমার সেই লেখাটির শিরোনাম ছিল বাঙ্গালীর শর্ট কোর্স প্রীতি।সুতরাং এতোদিন যে অভিযোগ করে এসেছেন তা ভুলে যান।নিজের দুর্বলতা ঢাকতে গিয়ে অন্যের কাঁধে দোষ চাপিয়ে বরং নিজেরই ক্ষতি করছেন। আফসোস না করে নিজেকে গুছিয়ে নিতে পারলে আপনিও সুবিধা পাবেন। বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি এটা। এখনকার সময়ে অধিকাংশ চাকরির ক্ষেত্রে এমবিএ ডিগ্রিকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। সুযোগ থাকলে আপনি অবশ্যই এমবিএ করুন। আপনার যদি ব্যাংকে চাকরির ইচ্ছে থাকে তবে বিআইবিএম থেকে এমবিএম ডিগ্রি করুন। আর অন্যান্য মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীতেও এমবিএ আর সিজিপিএ খুব গুরুত্ব দেওয়া হয়। পাশাপাশি ইংরেজীতে দক্ষতা দেখা হয়। নিজেকে প্রস্তুত করার পর ট্রাই করে দেখুন। তখন আপনার আগের চিন্তা বদলাতে বাধ্য হবেন।
একাডেমিক বইয়ের পাশাপাশি আত্মউন্নয়নমূলক বই পড়া উচিত। এর মানে এই নয় যে মোটিভেশনাল স্পিকারদের বক্তব্য শুনেই শেষ। আপনি নিজ থেকে ভালো কিছু বই পড়লে সাহস পাবেন। অনেকেই জানে না ঠিক কোন ওয়েতে এগোনো দরকার। তাই তারা সফলতা পায় না বা সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যায়। অফ লাইন বা অনলাইন যেখানেই সম্ভব যত খুশি কোর্স করুন, সার্টিফিকেট অর্জন করুন। আর কিছু হোক বা না হোক বাংলাদেশে সার্টিফিকেটের যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হয়। আমাদের দেশের মানুষ প্রচুর সময় অযথাই নষ্ট করে। আপনি কোনো কিছু পড়লেন তাতে কিন্তু আপনার সময় নষ্ট হয় না বরং সেটা কোনো না কোনো কাজে আসে। আমার এই দীর্ঘ লেখাটি যে আপনি পড়লেন এটা বিফলে যায়নি। নিশ্চই ছিটেফোটা হলেও কিছু তথ্য এখান থেকে আপনি জানতে পারলেন। কিন্তু ধরুন এটা লেখা না হয়ে একটা ফানি ভিডিও হলো। পড়তে যতটুকু সময় লেগেছে সেটা দেখতেও হয়তো ততোটুকুই লাগলো। কিন্তু কিছু কি জানা হলো? ক্ষণিক হাসি আনন্দ ছাড়া আর কিছু পাওয়া হয় না।
অথচ আমাদের অধিকাংশই সেগুলো দেখেই সময় পার করে। পরে হতাশ হয়ে আক্ষেপ করে। শুধু নিজে দেখেই ক্ষান্ত হয় না বরং শেয়ার করে জনে জনে। নিজেও নিজের সময় নষ্ট করে অন্যের সময়ও নষ্ট করায়। অথচ ধরুন এই লেখাটি থেকে কেউ কিছু শিখলো বা জানলো। তা অন্যকে জানার সুযোগ দেওয়ার জন্য এ নিয়ে কাউকে বলবেও না শেয়ারও করবে না।
পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মানুষের তুলনায় বাংলাদেশের মানুষ ফেসবুক,ইউটিউব,ইন্সটাগ্রাম,ইমো,টিকটক বেশি ব্যবহার করে এবং কন্টেন্টও বেশি তৈরি করে। তবে সিংহভাগ কন্টেন্ট আসলে ফানি, যা হাসির খোরাক যোগানো ছাড়া কিছু বয়ে আনে না। এবং সেই সব কন্টেন্টই মানুষ বেশি দেখে। যারা দেখে তারা কিন্তু একটি বিশেষ শ্রেণীর মানুষ নয় বরং সব শ্রেণীর মানুষই দেখে। তবে আমি খুব অবাক হয়ে দেখি সেই তালিকায় এমন অনেকে আছে যারা ক্যারিয়ার নিয়ে চিন্তায় মাথার চুল ছেড়ে কিন্তু ক্যারিয়ার গড়ার পথে যা কিছু করণীয় সে সব বাদ দিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা নিয়মিত টিকটকের ফানি ভিডিও দেখে।অথচ ওই সময়ে সে তাকে প্রস্তুত করে গড়ে তুলতে পারতো।
একজন শিক্ষার্থী যে কিনা খুব বড় কোনো স্বপ্ন দেখে না বরং ভালো রেজাল্ট করে একটা ভালো বেতনের চাকরির আশা করে তার আসলে করণীয় কী? ওই সব ফানি কন্টেন্ট দেখে ঘন্টার পর ঘন্টা ব্যয় না করে তার উচিত কয়েকটি মেজর বিষয়ের দিকে নজর দেওয়া। একাডেমিক পড়াশোনাটা ঠিকঠাক করা যেন একাডেমিক রেজাল্ট ভালো হয়। কেননা আজকাল প্রায় সব চাকরিতেই হাই সিজিপিএ চেয়ে বসে থাকে। আপনি দুনিয়ার সব রকম কাজে এক্সপার্ট হলেও তাদের সেসব বিবেচ্য বলে মনে হয় না বরং তাদের প্রথম পছন্দ আপনার সার্টিফিকেটে উল্লেখিত সিজিপিএ। আমার ধারণা সেই যে প্রথম বার জিপিএ গ্রেটধারীদের মধ্যে যারা এ প্লাস পায়নি (সারা দেশে পেয়েছিলই সামান্য কয়েকজন) তারা এখন চাকরির আবেদনই করতে পারতো না তাদের সিজিপিএ দিয়ে।
তাহলে প্রথম কথা হলো ভালো সিজিপিএ পেতে হবে। আর সেটা পেতে হলে অন্তত পড়াশোনাটা ঠিকঠাক করতে হবে। এরপর যদি আমরা ধরি চাকরির বিষয়ে, তাহলে দেখা যায় চাকরিতে দুই বা তিনটি ধাপ অতিক্রম করতে হয়। প্রিলিমিনারি,রিটেন আর ভাইভা। এগুলোর আদতে কোনো সিলেবাস নেই। আমার ধারণা বিভিন্ন বিষয়ে এ দেশের ছেলে মেয়েরা যত তথ্য মুখস্থ করে পৃথিবীর আর কেউ তা জানে না। কাজের সাথে কোথাও সংশ্লিষ্টতা নেই এমন সব বেহুদা প্রশ্ন দিয়ে ভরা থাকে প্রশ্নপত্র। এখন সিস্টেম যা চলছে তা কবে বদলাবে সেটা যেহেতু জানা নেই তাই ভালো একটা চাকরি পেতে হলে অবশ্যই ওই সব হাবিজাবি মুখস্থ করা লাগবে। নিজ দেশ ব্যতীত পৃথিবীর অন্য কোনো দেশের মানুষের কাছে যদি আপনি জিজ্ঞেস করেন হাঙ্গেরির রাজধানীর নাম কী? নিশিথ সূর্যের দেশ কাকে বলে? পৃথিবীর ছাদ কাকে বলে? কেউ বলতে পারবে না। আমাদের দেশের ছেলে মেয়েরা পারবে। কারণ তারা বাধ্য হয়ে অন্য দেশের নানা তথ্য মুখস্থ করে একটা চাকরি পাওয়ার আশায়।
যেহেতু ভালো একটা চাকরি পাওয়ার জন্য পরীক্ষায় এই সব আজগুবি টাইপ প্রশ্নের উত্তর দিতেই হয়, তাই টিকটকের পিছনে ঘন্টার পর ঘন্টা সময় ব্যয় না করে একটু পড়াশোনা করা দরকার। এর বাইরে আছে ভাইভা। ভাইভার জন্য ব্যপক প্রস্তুতি নেওয়া উচিত। বিভিন্ন দেশের মানুষ ডেমো ভাইভা তৈরি করে রেখেছে। সেসব কিন্তু আমাদের ছেলে মেয়েরা দেখে কম। যারা খুব সচেতন তারা কিন্তু হাবিজাবি দেখে সময় নষ্ট করে না বরং তারা তাদের প্রয়োজনীয় বিষয় নিয়েই বেশি সময় ব্যয় করে। ফলে তারা সফল হয়। আপনি আগে নোট করুন কোন কোন বিষয় বাস্তব জীবনে আপনার জন্য দরকারি। তারপর সেগুলোর পিছনে সময় ব্যয় করুন। দেখবেন সফলতার পিছনে আপনাকে ছুটতে হবে না বরং সফলতা নিজেই এসে ধরা দেবে।আমাদের যে বন্ধু সফল, তার সফলতা দেখে আমাদের খুব ঈর্ষা হয় অথচ কখনো ভাবি না যে সেই সফলতা পেতে সে কী কী করেছে। আমরাও যদি তা করতাম তবে তাদের মতই আমাদেরও সফলতা আসতে পারতো।
এই সময়ে কম্পিউটারের জ্ঞান থাকাটা আবশ্যক হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেই সাথে ইংরেজী বলা,লেখা এবং পড়ার যোগ্যতা থাকাটাও জরুরী। মাতৃভাষার বাইরে ইংরেজী এবং অন্য আরো কোনো ভাষা জানা থাকলে ভালো সুবিধা পাওয়া যায়। আমরা প্রশ্ন করতে লজ্জা পাই। নিজে কিছু না জানলে যারা জানে তাদের কাছ থেকে জেনে নিতে দ্বিধা বোধ করি। এতো আত্মসম্মান নিয়ে থাকলে জীবনে কিছুই শেখা হবে না।তাছাড়া এখন ইউটিউবে লাখ লাখ ভিডিও আছে। সেগুলো দেখেও কিন্তু অনায়াসে নানা বিষয়ে শিখে নেওয়া যায়।
ছোট্ট একটি জীবন। সব কিছু করার মত সময় হবে না কারো। যে সময়ে নিজেকে প্রস্তুত করার কথা সেই সময় অযথা নষ্ট করা মানে নিজেই নিজের ক্ষতি করা। আপনার কাছে একটি গাছের চারা আছে যা সময় মত পরিচর্যা করার মাধ্যমে সারাজীবন সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। কিন্তু যত্ন না নিলে তা আর কখনো ফল দিবে না। একবার আপনি নিজেকে নিয়ে ভাবুন। প্রতিযোগিতাপূর্ণ সমাজে কয়েকটি সার্টিফিকেট ছাড়া টিকে থাকার মত রসদ আপনার আাছে? যদি না থাকে তবে সেগুলো অর্জন করে তবেই যুদ্ধে নামুন। সব সময় মনের মধ্যে নেগেটিভ চিন্তা না রেখে পজিটিভ দিকটা দেখুন। আপনি নিশ্চই জানেন পৃথিবীর এক দিকে যখন অন্ধকার থাকে অন্য দিকে তখন দিনের আলোয় পরিপূর্ণ থাকে। আপনার জীবনও তাই। সঠিক পথে পা ফেলতে পারলে রাত পেরোলেই যেমন দিন আসে তেমনি আপনার জীবনেও সফলতার আলোয় ভরে উঠবে।
-ইবনে মোশাররফ
প্রাবন্ধিক,সমাজকর্মী
২৭ জানুয়ারি ২০২৩