– শর্মিলা বহ্নি
এখনও জীবন্ত সেইদিন,
শীতের সকালে পড়তে গিয়ে রোজ হলুদের ফুল ছিঁড়েছি কোচ ভরে।
সারারাত কুয়াশা পড়ে হলুদের ফুলের মধ্যে ভরা পানি কতজনের মুখে ছুঁড়ে দিয়েছি আচমকা।
ঠান্ডা বরফ পানি, টলমল চেহারা তার।
গ্রীষ্মের দুপুরে পড়তে গিয়ে চিরচিড়ে গাছের মধ্যে বসে কত বেনেবউ ধরেছি।
বেটে খাটো গাছের চিকন লম্বা চিরচিড়ে পাতা আজও অনুভূতি হয়ে আছে এই প্রাণে।
কখনো তাদের পাতা দুমড়েমুচড়ে দিয়ে গা ডুবিয়ে শুয়ে পড়েছি গাছের উপর।
পিটের তল দিয়ে সুড়সুড় করে হেঁটে চলে গিয়েছে বেনে বউ পোকা।
আবার স্যার আসার কিছু আগে দৌঁড়ে জবোথবো হয়ে বসে পড়েছি বই খুলে।
এখনও জীবন্ত সেইদিন,
বেনে বউ ধরা নিয়ে কত জনে সাথে হলো আড়ি,
হলুদ ফুলের পানি দেওয়াতে কত জনে হলো মুখ ভারি।
সাদা সাদা খই ফল গাছ থেকে কুড়িয়ে পেয়েছি, তাও নিয়ে কাড়াকাড়ি।
আমার সেসব চঞ্চলতার ছাপ কি এখনো লেগে আছে সেখানে? নাকি বিলীন হয়ে গেছে বহু আগে?
আমার মত মলিন মুখে শুধু কল্পনা করে যায় বোধহয়।
হঠাৎ একদিন বিদায় নিয়ে চলে এলাম,
আর দেখা হলোনা কারো সাথে।
আচ্ছা তারা কি আমায় খোঁজে শীতের প্রভাতে
কিংবা গ্রীষ্মের দুপুরে চিরচিড়ে গাছের মাঝে?
চিরচিড়ে গাছের বেনেবউও কি হারিয়ে গেছে আমার মতই?
নাকি হলুদের ফুল এখনো অপেক্ষা করে থাকে রোজ?
সে তো ফোঁটে নিশ্চয়, রাতের কুয়াশারাও তো নিয়ম করে বরফ পানি ঢেলে দিয়ে যায় হলুদ ফুলে।
আমার মত করে কেউ কি আর হলুদ ফুল ছিঁড়ে?
কনকনে শীতে কেউ কারো মুখে ছুঁড়ে দেয় সেই পানি?
সেই দৃশ্য দেখে কি হলুদ গাছেরা দূর থেকে মৃদু হেসে ওঠে?
জানি এখন আর তেমন আনাগোনা নেই সেখানে।
কান ঝাঁঝালো কন্ঠস্বরও এখন আর শোনা যায় না,,
আমার হাসি কিংবা গল্পের ধ্বনি গত কয়েক বছর ধরে পৌঁছায় না ওদের কানে।
মাঝেমাঝে কল্পনায় সাক্ষাৎ হয়,
আমি বুঝতে পারি ওরাও হারিয়ে গেছে তীব্র অভিমানে।