আলী ইমাম ভাইয়ের সঙ্গে কবে পরিচয় এতদিন পরে মনে নেই। তবে এটুকু মনে আছে প্রথম পরিচয়ের দিনেই তিনি আমাকে তার মিষ্টি হাসি দিয়ে বরণ করে নিয়ে আপন করে নিয়েছিলেন। আমি তাঁর অসংখ্য বইয়ের গুণমুগ্ধ পাঠক। তাঁর লেখা অসাধারণ দুটি শিশু সাহিত্য তিতিরমুখী চৈতা এবং অপারেশন কাঁকনপুর আমার খুব খুব প্রিয় দুটি কিশোর উপন্যাস। সেই কৈশোরে পড়া বই দুটি নিয়ে নিজের উচ্ছ্বসিত আবেগের বহিঃপ্রকাশ আলী ইমাম ভাইকে খুব ছুঁয়ে গিয়েছিল । তবে আক্ষেপ করে বলেছিলেন, এখনকার প্রজন্ম তাঁর এই বই দুটি পড়া দূরে থাক, নামও শুনেছে কিনা সন্দেহ।
আলী ইমাম ভাইয়ের সঙ্গে আমার কদাচিৎ দেখা হত। কারণ আমি খুব কম বাংলাবাজারে যাই আর ওনার প্রধান চারণক্ষেত্রই ছিল বইয়ের ঘ্রাণে ভরপুর জায়গাটি। তবে ছয় মাসে বা বছরে একবার আকস্মিক দেখা হয়ে গেলেই তিনি সাগ্রহে আমার লেখালেখির খবর জানতে চাইতেন।
একবার দুপুরবেলা কী একটা জরুরী কাজে জিনিয়াস প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী হাবিবুর রহমান ওরফে রুবেল ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। ওখানে আলী ইমাম ভাইয়ের সঙ্গে দেখা। আমাকে দেখে হৈ হৈ করে উঠলেন। অনুযোগও করলেন কেন বাংলাবাজারে এত কম যাই। রুবেল ভাই বললেন, দাদা এরকমই। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া তাঁর টিকিটিও বাংলাবাজারে দেখতে পাবেন না। সেদিন দুপুরে প্রকাশক সাহেব বিখ্যাত বিউটি বোর্ডিং এ আমাদের সবাইকে ভূরি ভোজ করিয়েছিলেন। খেতে খেতে আড্ডা হল। পরে জিনিয়াসের অফিসেও আলী ইমাম ভাইয়ের সাথে অনেক গল্প হল।
বিখ্যাত এই শিশু সাহিত্যিকের সঙ্গে আমার সর্বশেষ দেখা হয় দশ বছর আগে, ২০১২ সালে গাজী টিভির একটি অনুষ্ঠানে। ওই অনুষ্ঠানে তিনি আমাকে আর সময় প্রকাশনীর প্রকাশক ফরিদ আহমেদকে আমন্ত্রণ করেছিলেন হরর সাহিত্য নিয়ে কথা বলার জন্য। আমার ততদিনে ১০০ টি হরর বই বেরিয়ে গেছে শুনে খুবই চমৎকৃত হয়েছিলেন আলী ইমাম ভাই। মূলত এ বিষয়টি নিয়ে কথা বলতেই আমাকে আমন্ত্রণ। লাইভ ওই অনুষ্ঠানে তিনি আমার হরর অভিজ্ঞতার কথাও জানতে চেয়েছিলেন। আলী ইমাম ভাইয়ের প্রাণবন্ত উপস্থাপনায় দারুণ জমে উঠেছিল অনুষ্ঠানটি।
আমার প্রিয় এই লেখকটিকে আমার একটি হরর উপন্যাস উৎসর্গ করেছিলাম। পিশাচের প্রতিহিংসা। তিনি আমার হরর খুব মনোযোগ দিয়ে পড়েন শুনে বইটি তাঁকে উৎসর্গ করা। বইমেলায় তিনি তখন লাইভ উপস্থাপনা করতেন। একদিন গিয়েওছিলাম বইটি তাঁকে হাতে হাতে দেব বলে। কিন্তু কী কারণে যেন সেদিন তিনি মেলায় আসতে পারেন নি বলে আর দেয়া হয় নি। পরে প্রকাশকের কাছে বইটি দিয়েছিলাম আলী ইমাম ভাইকে পৌঁছে দিতে। তিনি দিয়েছিলেন কিনা জানি না। কারণ আলী ইমাম ভাইয়ের সঙ্গে আমার আর দেখাও হয় নি, কথাও হয় নি। আর কোনোদিন দেখাও হবে না, কথাও হবে না। কিন্তু তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা এবং ভালবাসা থেকে যাবে চিরদিন।