ভোট

0
189

আইনুন নাঈমা

টানা তিনবার চেয়ারম্যান থাকার পর ফয়েজ উদ্দিন তালুকদার  এবারের ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে ফেল মারলেন একটি ভোটের ব্যবধানে। এই নির্মম পরাজয় তিনি মানতে নারাজ। প্রতিবারের মতো তার একমাত্র সহচর মনু চৌকিদারের সাথে রাতের আঁধারে কাঁচা টাকার সাথে কাঁচা মিষ্টি হাসি উপহার দিয়েছিলেন। কোন সে আহাম্মক বেঈমান ,তার প্রাপ্য ভোট থেকে বঞ্চিত করেছে ?এখন যার সাথেই দেখা হয় অবিশ্বাসে চোখ ছোট হয়ে আসে।

-ভোটটা জাগা মতো দিয়েছিলি মনা?

-হ ,মিয়া ভাই ,ভোট জাগা মতোই দিছিলাম

-বেশ। তোর মনে আছে ?তুই যখন গেদা ছিলি ইট ভাটায় কাজ করতিস । ততই  তোর  চোখ মুখ আংড়া হচ্ছিলো। দয়া করে তরে সীমান্তের কারবারে কাজ দিছিলাম।

মনা মাথা নাড়ে। তার মনে আছে।  তার আরো মনে আছে এই কারণে কয়েক বার লাল ঘরে হাজিরা দিতে হয়েছে। রিমান্ডের মার খেয়েও মুখ খোলেনি।                                          

-এখন তুই চৌকিদার

-আপনার দয়া।

মনু বারে বারে হাই তুলছে। ভোট গুনতে দেরি হওয়ায় রাতে পর্যাপ্ত ঘুম হয় নাই।

_মিয়া ভাই ,বিশেষ কোনো কাজ আছে? ভেন বেলায় ডাকলেন যে ?

ফয়েজ উদ্দিন মাথা চুলকে বললেন _কেন ডাকছি ? অহন মনে পড়তাছেনা। রাত থেকে মাথার দিক দিশা নাই ,তয় নুহুল খাবার পর একবার দেখা করে যাস। সম্মানীর হিসাবটা সারব।

_বলি কি মিয়া ভাই ,মাথা গোনে গোনে সন্মানী দেয়া ঠিক হয় নাই। তা না হলে খাঁ সাহেবের জায়গায় আজ আপনি থাকতেন ,অত আঁটসাঁট হিসাব সব জায়গায় চলে না।

-ঠিক বলছস

মনু যে রাস্তা দিয়ে আসছিলো সেই রাস্তা দিয়েই ফিরে গেলো। দুশ্চিন্তা আর অবসাদে চোখ বুজে আসে ফয়েজের। গা এলিয়ে দেন ইজি চেয়ারে। পায়ের কাছে পরে থাকে পত্রিকা।

-আপনার চা

বিরক্তিতে এক চোখ খুললেন-জবেদা ,রাখো

জবেদা ফয়েজের দ্বিতীয় স্ত্রী। আঁচলে চাবির ভারী ছড়া। এই চাবির ছড়া তাকে কেড়ে নিতে হয় নাই ,ভাগ্যের খেলায় জিতেছেন। বছর পাঁচেক আগে ভয়ানক কঠিন রোগে মারা গেছে ফয়েজের দ্বিতীয় স্ত্রী। কোনো রকম ভূমিকা না করেই বললেন

-জবেদা বেগম ,মনে আছে ? তোমরা মা বেটি খাঁ বাড়িতে ভারানীর কাজ করতে। উত্তর চরে তোমাদের একটা ছনের বাড়ি ছিল। তোমার মা কে সবাই হরবোলা চৌরানি বলে ডাকতো।

-হুম

জবেদার চোখ ঝাপসা হয়ে আসে। চোখের পানিতে যেন ফেলে আসা দিন গুলোই দেখতে পায়।

লিখুন প্রতিধ্বনিতেলিখুন প্রতিধ্বনিতে

ছনের একটি ঘর। চার দিকে শুকনো কলাপাতার দিবরির বেড়া। আসে পাশে আর কোনো বসতি নাই। চার দিকে ধু ধু বালুর সাগর। সারাদিন ধান ভানার কাজ। সন্ধ্যায় গাঙের ঠান্ডা পানিতে গোসল সেরে ফুটিয়ে নিতো একচড়া আলু ভাত। ভরা পেটে শরীল বেয়ে আসে ঝিমুনি। সদ্য বিধবা মা আর কৈশোর লগ্ন মেয়ের  রাত কাটতো ভয়ে। সেই ভয় কোনো কালেই শেয়াল কুকুরের ছিলনা।  ভয় কেটেছে ফয়েজের বয়সের দোষে -জবেদার সাথে নিকাহ হওয়ার পর। এখন  জবেদার ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে -কাঠ খুট্টা শরীলে মাংসের আস্তর ,দুই একটা গয়নার উঁকিঝুঁকি ।

-ভোটটা জাগা মতো দিছিলা ?

ফয়েজ উদ্দিন  ঝরঝরে গলায় জিজ্ঞাসা করে।

-হ ,জবেদা মিনমিনে গলায় উত্তর দেয়।

-খাঁ র বউয়ের লগে এত গপসপ কিসের ?এই বয়সে সখি আইনা দিমু? পুতুল বিয়া বিয়া খেলবা ?

কথার ঘা খেয়ে জবেদা পালিয়ে বাঁচে।

ফয়েজ একা একা বকে যায়। তার কথায় সায় দেয় কয়েকটি চঁড়ুই পাখি।

সূর্য হেলে গেছে ,দূরে আছরের আজান পড়ছে। জবেদার  বড় ছেলে সবুজ  হাঁপাতে হাঁপাতে আসে।  ধপ করে বসে পরে ফয়েজের সামনের চেয়ারটিতে। হাতে লাটিম। লাটিম ঘুরাবার বয়স অনেক আগেই উত্তীর্ণ হয়ে গেছে। বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী। গাল দিয়ে লালা নিংড়ে পড়ছে।

-বাবা ,ও বাবা …আমারে হোন্ডা কিন্না দিবা ?

-বাপজান ,হটাৎ হোন্ডা কিনবার চাও কেন?

 -কাল ভোট দিতে গেছিলাম। খাঁ র পোলা মুরাদে কয় আমারে হোন্ডা কিনে দিবে ,খালি হোন্ডার উপর একটা ছাপ নিবে।

-তুই ছাপ দিয়েছিস ?

সবুজ কাঁদ কাঁদ হয়ে  বললো ,দিয়েছি ,এখন হোন্ডা কিনে দিচ্ছেনা

ফয়েজের হাত পা থর থর করে কাঁপতে থাকে…..শুয়োরের বাচ্চা ….দাড়া…

Previous articleকবিতার এক পাতা || ২৮/০৩/২০২৫
Next articleপ্রতিধ্বনির ঈদ সাময়িকী ২০২৫ ‘বৃত্তের বাইরে’
প্রতিধ্বনি
প্রতিধ্বনি একটি অনলাইন ম্যাগাজিন। শিল্প,সাহিত্য,রাজনীতি,অর্থনীতি,ইতিহাস ঐতিহ্য সহ নানা বিষয়ে বিভিন্ন প্রজন্ম কী ভাবছে তা এখানে প্রকাশ করা হয়। নবীন প্রবীণ লেখকদের কাছে প্রতিধ্বনি একটি দারুণ প্ল্যাটফর্ম রুপে আবির্ভূত হয়েছে। সব বয়সী লেখক ও পাঠকদের জন্য নানা ভাবে প্রতিধ্বনি প্রতিনিয়ত কাজ করে চলেছে। অনেক প্রতিভাবান লেখক আড়ালেই থেকে যায় তাদের লেখা প্রকাশের প্ল্যাটফর্মের অভাবে। আমরা সেই সব প্রতিভাবান লেখকদের লেখা সবার সামনে তুলে ধরতে চাই। আমরা চাই ন্যায়সঙ্গত প্রতিটি বিষয় দ্বিধাহীনচিত্ত্বে তুলে ধরতে। আপনিও যদি একজন সাহসী কলম সৈনিক হয়ে থাকেন তবে আপনাকে স্বাগতম। প্রতিধ্বনিতে যুক্ত হয়ে আওয়াজ তুলুন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here