Thursday, November 21, 2024

বন্দী ঘর 

বন্দী ঘর 

আব্দুর রাফি শেখ 

আজকের জগৎ বড়ই স্বার্থপর। আজকের জগতে বিরল সব প্রতিভা হয়ে আছে ঘরবন্দী, হয়ে আছে পাতালে জীবাশ্ম  স্বরূপ। যদি কেহ সেই প্রতিভাকে ফুটিয়ে তুলতে সহযোগিতা না করে তবে তাহা জীবাশ্মের  ন্যায় পাতালেই থাকিবে পড়িয়া। প্রকাশ হবে না কভু জগৎ মাঝারে। প্রতিভা কখনো খুঁজতে হয় না। নির্দিষ্ট সময় হলে তা আপন ইচ্ছায় বেরিয়ে আসে। কিন্তু আজকের জগতে তা অসম্ভব বললেই যথার্থ হবে। কেননা সকল প্রতিভাকে আজ দমিয়ে রাখা হচ্ছে গুরুজনদের ইচ্ছা নামক বিশাল পাহাড়ের পৃষ্ঠতলে। নিজের ইচ্ছাকে দমিয়ে রেখে অন্যের ইচ্ছাকে বাধ্যতামূলকভাবে পূরণ করা কি বন্দি ঘরের চেয়ে কিছু কম? বন্দী ঘরে যেমন মানুষ ছটফট করে মুক্তির জন্য, উদাসীন হয়ে থাকে এক ছটাক আলোর প্রতীক্ষায় এবং বারংবার আত্মবিশ্বাস হারিয়ে নিজেকে নিজে শতবার হত্যা করে। তেমনি অন্যের ইচ্ছা পূরণে নিজের ইচ্ছাকে, প্রতিভাকে দমিয়ে রাখা নিজেকে নিজে শতবার হত্যার চেয়ে কিছু কম নয়। প্রতিভা তখনই ফুটে উঠবে যখন কারো ইচ্ছা স্বাধীনতা পাবে। মানুষ রোজ রাত্রি জুড়ে স্বপ্ন দেখে তার অপূর্ণতা পাওয়া বহু ইচ্ছা নিয়ে। তবে রাত পোহালে সেই মানুষই ফিরে যায় বাস্তবতার ভিড়ে। তারা দুর্বল, তারা অলস, তারা শুধুই স্বপ্নের রাজ্যের রাজা। বাস্তবে পরের ইচ্ছাই পরাধীন। যারা নিজের স্বপ্নকে একমাত্র লক্ষ্য হিসেবে মেনে নিতে জানে তারাই জগতে বিরল থাকবে চিরকাল। এটা সম্ভব শুধুই তাদের অসামান্য চেষ্টার কারণে। তাহারা কেমন গুরুজন যাহারা জীবন্ত ইচ্ছাকে পাহাড়ের পৃষ্ঠতলে দমিয়ে রাখে? তাহারা কি জানতে চাই না তাদের সন্তানের ইচ্ছা কি? স্বপ্ন কি? নাহ্ তারা জানতে চায় না, কেননা তারা শুধুই তাহাদের মনের ইচ্ছা, স্বপ্ন পূরণ করতে চাই সন্তানের দ্বারা। এতে সন্তানের জীবনটাও চলে যাক না কেন তাহারা শুধু চায় সাফল্যতা। ধিক্কার সেই সকল গুরুজনদের যাহারা নিজ সন্তানের চেয়েও সন্তানের সাফল্যকে গুরুত্ব দেয় অধিক। গুরুজনদের উদ্দেশ্যে আমি বলতে চাই, “সন্তান বাঁচিলে বাঁচিবে  সন্তানের সাফল্যতা এবং সন্তানের ইচ্ছা বাচিলেই বাঁচিবে সন্তান”। অর্থাৎ সবকিছুর মূলেই একজন সন্তানকে তার ইচ্ছা স্বাধীনতা দেয়ার কোন বিকল্প নাই। সন্তানদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, জীবনে চলার পথে বহু বাধা আসিবে তাই বলে থেমে থাকলে চলবে না। ধৈর্য ধারণ করে সকল ঘরবন্দী ইচ্ছাগুলোকে মুক্ত করতে হবে। তবেই তুমি অর্জন করতে পারবে তোমার আত্মার শান্তি। আজকের জগতে গুরুজনরা সন্তানের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয় সন্তানের সাফল্যকে। এভাবে যদি চলতে থাকে তবে সকল সফলতা থেকে যাবে দেয়ালের ওপারেই। কেননা সাফল্যতা অর্জনের জন্য কোন সন্তানেরই আত্মা প্রস্তুত থাকিবে না। উদাহরণস্বরূপ, “কোনো শিশুর পেট খাদ্যপূর্ণ হওয়া শর্তেও যদি কোনো মা জোরপূর্বক সন্তানকে আরো গেলানোর চেষ্টা করে, তবে সন্তান তখন তার পেটে থাকা সকল খাদ্যই বাহির করিয়া দেয়। অর্থাৎ পেট খাদ্যপূর্ণ থেকে হয়ে যায় খাদ্যশূন্য”। এমনি করে একদিন হয়তো গুরুজনদের ইচ্ছা, স্বপ্ন জোরপূর্বক সন্তানদের কাঁধে চাপিয়ে দেয়ার কারণে প্রতিটা সন্তান তাদের প্রকৃত জ্ঞান অর্জনের আগ্রহটাই হারিয়ে ফেলবে। ফলে ধীরে ধীরে সাফল্য তো দূরের কথা প্রকৃত জ্ঞান আহরণেই থেকে যাবে অক্ষম। নাম মাত্র শিক্ষিত হলেও বুদ্ধিতে থেকে যাবে নির্বোধ। কেননা জোরপূর্বক সব কিছুর সাধন সম্ভব হলেও কারো মনের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে তাকে দিয়ে সাফল্য অর্জন সম্ভব নয়। যেহেতু আজকের জগতে গুরুজনরা জোরপূর্ব সন্তানের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে নিজেদের স্বপ্ন পূরণ করতে চায় সেহেতু সন্তানদের দ্বারা কোনো সাফল্যতা অর্জন হবে বলে আমি মনে করি না। অনেক গুরুজনই আমার কথা শুনে বলতে পারেন আমরা সন্তানদের দ্বারা মোটেও আমাদের স্বপ্ন পূরণ করতে চায় না, আমরা তো কেবল তাদের ভালো অবস্থায় দেখতে চাই। তাই তাদের ভালোর জন্যই তাদেরকে উপদেশ দেই। আবার তারা এটাও বলতে পারেন কিসের মনের ইচ্ছা কিসের একটা ভালো চাকরি পেলেই তো সাফল্যতা অর্জিত হয়। কিন্তু না তাহারা ভুল ভাবছেন কেননা সাফল্যতা ভালো চাকরি পেলে অর্জিত হয় না। কোনো মন তার ইচ্ছাকে স্বাধীনতা দিয়ে যে জ্ঞান অর্জন করে সেই জ্ঞানই তার সাফল্যতার প্রতীক। ভালো চাকরি করে অনেক টাকা উপার্জন সফলতা অর্জন করেই যদি সাফল্যতা অর্জন করা যেত, তাহলে কেন সেইসব সাফল্য অর্জনকারীদের অঢেল ইচ্ছা ও স্বপ্ন দেয়ালের ওপারে রয়েছে বন্দি। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু যেমন বলেছিলেন,“তোমরা আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাদেরকে স্বাধীনতা দেব”। তেমনি আমিও বলতে চাই তোমরা সন্তানদেরকে ইচ্ছা স্বাধীনতা দাও, তারা তোমাদেরকে সাফল্যতা এনে দেবে। আমি জানিনা যে, আমি আপনাদেরকে সন্তানদের ইচ্ছা স্বাধীনতার গুরুত্ব কতটুকু বোঝাতে পেরেছি। প্রিয় পাঠক বৃন্দ স্থির মাথায় ভেবে দেখুন আজ আপনাদের মাঝে সন্তান হারা অনেক গুরুজন রয়েছেন। যাদের সন্তান স্বেচ্ছায় পৃথিব ভুবন ত্যাগ করেছে। ভেবে দেখুন সন্তানরা কেন তাদের মূল্যবান জীবনটা ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিল। তারা তাদের গুরুজনদের কাছে চেয়েছিল তাদের ইচ্ছা স্বাধীনতা। আশা করি এখনো পাঠকদের মন এতটাও নিষ্ঠুর হয়ে যায়নি যে, তারা আমার কথাগুলো মূল্যহীন ভেবে অবজ্ঞা করে চলে যাবে। প্রমথ চৌধুরীর বই পড়া প্রবন্ধে উল্লেখ আছে, “ধনের সৃষ্টি যেমন জ্ঞান সাপেক্ষ তেমনি জ্ঞানের সৃষ্টি মন সাপেক্ষ”। এতে বোঝা যায় সবকিছুর মূলে রয়েছে মন। আর মনের প্রশান্তি হচ্ছে মনের ইচ্ছাকে স্বাধীনতা দেওয়া। মনের ইচ্ছা স্বাধীনতা না পেলে মন কর্তৃক কোনো কাজই সম্ভবপর নহে। সুতরাং গুরুজনদের উচিত তাদের সন্তানদেরকে বন্দী ঘরের দ্বার ভেঙে মুক্ত আকাশে ডানা মেলে উড়ার অনুমতি দেওয়া। হয়তো তাদের মধ্য থেকে এমন সব প্রতিভা বেরিয়ে আসতে পারে যা আজ পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত প্রায়।

আব্দুর রাফি শেখ 

জেল রোড ঘোপ, যশোর।

Facebook Comments Box
প্রতিধ্বনি
প্রতিধ্বনিhttps://protiddhonii.com
প্রতিধ্বনি একটি অনলাইন ম্যাগাজিন। শিল্প,সাহিত্য,রাজনীতি,অর্থনীতি,ইতিহাস ঐতিহ্য সহ নানা বিষয়ে বিভিন্ন প্রজন্ম কী ভাবছে তা এখানে প্রকাশ করা হয়। নবীন প্রবীণ লেখকদের কাছে প্রতিধ্বনি একটি দারুণ প্ল্যাটফর্ম রুপে আবির্ভূত হয়েছে। সব বয়সী লেখক ও পাঠকদের জন্য নানা ভাবে প্রতিধ্বনি প্রতিনিয়ত কাজ করে চলেছে। অনেক প্রতিভাবান লেখক আড়ালেই থেকে যায় তাদের লেখা প্রকাশের প্ল্যাটফর্মের অভাবে। আমরা সেই সব প্রতিভাবান লেখকদের লেখা সবার সামনে তুলে ধরতে চাই। আমরা চাই ন্যায়সঙ্গত প্রতিটি বিষয় দ্বিধাহীনচিত্ত্বে তুলে ধরতে। আপনিও যদি একজন সাহসী কলম সৈনিক হয়ে থাকেন তবে আপনাকে স্বাগতম। প্রতিধ্বনিতে যুক্ত হয়ে আওয়াজ তুলুন।
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments