লেখকঃ হাসবি খাতুন
লাইব্রেরী , এই নামের সাথে আমারা সবাই পরিচিত। কিন্তু খুব কম মানুষই পাওয়া যাবে যারা নিয়মিত লাইব্রেরী নামক জ্ঞানগর্ভ জায়গায় সময় কাটাতে চাই। হাতে গুনা কিছু লোক অবশ্য আছে যারা লাইব্রেরীতে প্রশান্তি খুঁজতে যায় । তারা লাইব্রেরীতে এমন এক প্রশান্তি পায় যা অন্য কোথাও পায় না । তাই হয়তো বার বার সেই নিরিবিলি জায়গায় বইয়ের মধ্যে ঢুকে থাকে ।
রিকশায় বসে বসে এই কথায় ভাবছিলো মোহাম্মদ রাসেল। রাসেলের বই খুব পছন্দ। ছোট বেলায় বইয়ের প্রতি আলাদা টান ছিল তার । গল্প, কবিতা , উপন্যাস, সাইন্স ফিকশন, গোয়েন্দা কাহিনী যখন যা পেত তা আগে শেষ করে পরে বাকি সব কাজ করতো। তখন সে ভাবতো বড় হয়ে পৃথিবীর সব বই পড়ে শেষ করবে । কিন্তু সময়ের পালাবদলে সে কথা ভুলে গেছে সে । ভুলে গেছে ঠিক এমনটা না , ইউনিভার্সিটির ক্লাশ , টিউশনি করে ক্লান্ত দেহ নিয়ে আর বই পড়তে ইচ্ছে করে না। বইয়ের বদলে মোবাইলে নিজেকে হারায় ।
আজকে একটা বইয়ের খোঁজে লাইব্রেরীতে যাচ্ছে মোহাম্মদ রাসেল। বইকে আর সময় দেয়া হয় না ভেবে মনে মনে কষ্ট পায় সে ।
মামা নামেন চইলা আইসি।
রিকশাওয়ালার কথার কল্পনা থেকে বাস্তবে ফিরে সে । ভাড়া মিটিয়ে লাইব্রেরীতে ঢুকে। ব্যাগ যথাস্থানে রেখে হাঁটতে থাকে বইয়ের রাজ্যে । সারি সারি বইয়ের তাক , নতুন পুরাতন হাজার হাজার বই যেনো তাকে সাদরে আমন্ত্রণ জানাচ্ছে । হঠাৎ করে তার বুক কেঁপে উঠল। অজানা কোন কারণে বুকের মধ্যে চিনচিনে ব্যথা অনুভব হতে লাগলো তার । স্মৃতির পাতায় খুঁজে পেলে একটি শপথের কথা ,সেই শপথ নিজেকে দিয়েছিলো সে “পৃথিবীর সব বই পড়তে হবে”।
স্থির হয়ে কিছুক্ষণ বসে থাকলো রাসেল। তারপর ভাবলো আদৌও কি সম্ভব পৃথিবীর সব বই পড়া ?
মস্তিষ্ক থেকে উত্তর আসলো না । তাই বলে কি আমরা বই পড়বো না?
অবশ্যই পড়তে হবে , পৃথিবীর সব বই না পড়তে পারলেও তো কিছুটা পড়া যাবে । সেটাই অনেক বড় কিছু।
হেঁটে হেঁটে সব বই দেখা শুরু করলো রাসেল। চোখে একধরনের প্রশান্তি আসে বই দেখলেও । তারপর একটি মলাট ছেড়া বই হাতে নিলো , ১৯৩০ সালের বই এটি । বইটি যেনো তাকে দুঃখের সাথে বলছে রাসেল আমাকে কেউ পড়ে না । কেউ আমার মধ্যে ডুব দিয়ে জ্ঞান আহরণ করে না । অনেক দিন পরে তুমি আমায় ছুঁয়ে দেখলে,, আমার ভীতরটা দয়া করে একটু পরে দেখো । আমি অনেক সমৃদ্ধ একটা বই । আমাকে পড়লে তোমার কোন ক্ষতি হবে না বরং তুমি উপকৃত হতে পারবে। পাশের তাকে আরেকটি বই যেনো ডাকলো রাসেল কে । সে এই বই রেখে সেই বইয়ের কাছে গেলো । সেই বই আরো অনুনয় করে বললো রাসেল আমি ১০০ বছর আগের বই । দয়া করে আমাকে একটু পড়ো । আমাকে অনেক বছর কেউ ছুঁয়েও দেখে না । আমার খুব কষ্ট হয় তোমরা যখন আমাকে রেখে অন্য বই পড়ো । কম হোক আর বেশি হোক সব বইয়েরি চাহিদা তাকে কেউ পড়ে দেখুক । আমাকে ফেলে যেও না রাসেল। একটু পড়ে যাও। আশে পাশের হাজারো বই যেনো আজ রাসেল কে বলছে আমার কাছে আসো , আমার কাছে আসো আমার কাছে আসো ….
রাসেলের মাথা চক্কর দিয়ে উঠলো। সে দ্রুত লাইব্রেরী থেকে বের হয়ে গেলো । তারপর খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে নিজেকে নিজে ধিক্কার দিতে লাগলো ছিঃ রাসেল তুমি পৃথিবীর এত এত বই আছে এক কানা করিও পড়ে শেষ করতে পারলে না । বরই আফসোস!
আজকে আর বই পড়া হলো না রাসেলের। বাসায় চলে আসলো সে। আসার সময় পিছন ফিরে বললো আমি আসবো আবার আসবো তোমাদের কাছে ,প্রিয় বই ।
।্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্
নাম: হাসবি খাতুন
পড়াশোনা: ইডেন কলেজ
ঠিকানা: যাত্রাবাড়ী,ঢাকা