Friday, October 18, 2024
spot_imgspot_img
Homeসাহিত্যলেখকের ভাবনাকেন লিখি : না পাওয়ার থেকে পাওয়ার মানসিকতা একটু বেশি

কেন লিখি : না পাওয়ার থেকে পাওয়ার মানসিকতা একটু বেশি

তারিকুল আমিন

কেন লিখি? আমার মতে ‘কেন?’ এর উত্তর হয় না। ‘কেন?’ শব্দটি খুব ছোট
তবে এর ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ বিশাল। কেন? এর উত্তর খন্ডন করতে গেলে ধোয়াসায়
পরে যেতে হয় প্রতিটা লেখক, কথাসাহিত্যিকগণদের। এর খÐন চিত্র দিয়ে আস্ত
একটা উপন্যাস রচিত হবে। তবে সেই কেন? এর শেষ হবে না। কারণ কবি,
কথাসাহিত্যিক, গল্পকার, শিশুসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক প্রভৃতি ব্যক্তিগণ আজও
কেন এর উত্তর দিতে পারেনি। আমরা যারা লেখালেখি করি। এই প্রশ্নের
মুখোমুখি হয়নি এমন লেখক হয়তো কমই আছে। পরিচিত- অপরিচিত কারো
সাথে দেখা হলেই প্রশ্নেরবানে জজরিত করে তোলেন কেন লিখি? কত টাকা
লিখে আয় করি। সংসার চলে নাকি ইত্যাদি। আমার প্রশ্ন হচ্ছে মানুষ এতো
প্রশ্ন নিয়ে রাতে নিদ্রাযাপন করে কীভাবে? কে, কী করলো? কে কীভাবে
সংসার চালালো। কার ঘরে উনুন চলে না ইত্যাদি চিন্তা নিয়ে রাত্রি কীভাবে
কাটে? আমার বাপু এতো চিন্তা করার সময় নেই।
আমি নিরেট সাধারণ একজন মানুষ। সাদামাটা জীবনাচার। আমার সব প্রশ্ন,
সব উত্তর আসে কালো কলমের প্রতিটা বণে, প্রতিটা শব্দে, প্রতিটা বাক্যে।
আমার ভালো থাকার অন্যতম জায়গা হচ্ছে নিরব স্থান, নদী, পাহাড়, জঙ্গল,
গ্রন্থাগার বা পুরোনো বইয়ের ধুলোপড়া দোকানে।
লেখালেখিটা বলতে পারেন পিতা সুত্রে পাওয়া। বাবা কবি অথই নূরুল আমিন।
লেখালেখি শুরুটা কোথা থেকে তা খুব একটা মনে নেই। তবে এতোটুকু মনে
আছে যখন ২০০৯ সালে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ি তখন বন্ধু আশরাফুল এর কবিতা লেখা
দেখতাম। দুজন দুজনার কবিতা পাঠ চক্র চলতো টিফিনের ফাঁকে। তবে লিখতাম
অনেক আগে থেকেই। তখনও জানতাম না লিখলেই কবি হয়। তখন মনে আসতো
আর কলম চলতো। এরপর প্রথম কবিতা প্রকাশ পায় কবি বশিরুজ্জামান বশির
সম্পাদিত কিশোর কলম ম্যাগাজিনে। কবিতার নাম ছিল ‘ঝিকি মিকি ছোট
তারা’। প্রকাশিত হয় ২০১৫ সালের বইমেলায়। এরপর দীঘ পাঁচ বছর কেটে যায়।
লেখালেখি, অভিনয়, আবৃত্তি চলতে থাকে। তবে লেখা কোথায় দিতে হয়? কীভাবে
দিতে হয়? তা জানা ছিল না। এরপর বশির আংকেল আসে। এসে বলে তারিকুল
তোমার একটি কবিতা দিও। আমি হাতে লিখে কবিতা দিলাম। কিছুদিন পর
আংকেল এসে নব ভাবনার মুজিব সংখ্যা হাতে তুলে দেয়। দেখি আমার লেখা
কবিতা ‘মুজিব সেনা’ প্রকাশিত হয়। ২০২০ সালে এখন আমি
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি। এখন বুঝতে পারি পত্রিকা বা ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হলে
কত আনন্দ। এই আনন্দটা তারাই অনুভব করে যারা লেখেন। এরপর লিখতে থাকি।
লেখার প্রতি আগ্রহ বাড়তে থাকলো। এখনও বুঝতে পারছি না। লেখা কীভাবে
দিব। পরে ফেসবুকে দেখি লেখা চায়। দিলাম লেখা। পরে বলে আপনাকে ৫টি বই।
১০টি বই কিনতে হবে। আমি বললাম কত পড়বে বলে ৫০০ টাকা, ১০০ টাকা। তখন
বললাম না ভাই দরকার নেই। পরে হতাশ হলাম তবে লেখা বন্ধ করিনি। দেখতে দেখতে
১টি বছর কেটে গেলো। ২০২১ সালে হঠাৎ রাস্তা দিয়ে হাটতে হাটতে একটি
গল্প মাথায় আসলো ‘এলিয়েন খাবে পান্তাভাত’ পরে লিখে ফেলাম গল্পটি। পরে
আংকেলকে বললাম। আমার এই গল্পটি নব ভাবনার প্রকাশ করুন না। পরে নব ভাবনায়

কিশোর আঙ্গিনায় প্রকাশ হলো আমার প্রথম গল্প। পরে বশির আংকেল বলল আমার
সাথে চল। গেলাম নব ভাবনার অফিসে। এরপর ইমরুল আংকেল আমাকে উৎসাহ দিল
প্রবন্ধ লিখতে। বাবা ডাকটিকিটের ইতিহাস নিয়ে লিখবে। তোমাকে
তিনমাস সময় দিলাম। পরে লেখা শুরু করলাম। এ থেকেই বই পড়া শুরু। বইয়ের প্রতি
ভালোবাসা শুরু। এতো দিন বই কিনে রেখে দিতাম। এখন বই পড়লে নিজের
দুঃখগুলো ভুলে ডুবে যাই বইয়ের পড়তে পড়তে। আমার প্রথম প্রবন্ধর প্রকাশিত
হয় ‘ডাকটিকিট: আদি থেকে অন্ত’। এখান থেকেই শরু এখন পুরো দস্তে
প্রবন্ধ আর গল্প লিখছি। এখন ধীরে ধীরে বিভিন্ন পত্রিকা ও ম্যাগাজিনে লেখা
প্রকাশিত হচ্ছে। সচিত্র বাংলাদেশ, নবারুন, শৈল্পিক, ফুলকুঁিড়, কারুবাক,
প্রতিধ্বনি ও চন্দ্রবিন্দু, ছোটদের সময় ইত্যাদি।
অনেকে অনেক প্রশ্ন করে বই কয়টা, বই কেন বের কর নাই, আর কবে করবে
ইত্যাদি। তবে একথায় আমার বই বের করা মত দুসাহস নেই। বা কখনও ইচ্ছে করি
না। বা চিন্তাও নেই। তবে ২০২৩ সালের নভেম্বরের দিকে হঠাৎ দাদু মারা যায়। দাদা
নানা মারা গেছে। এখন নানি বেঁেচ আছে। তাই মাথায় আসে বই বের করবো।
পরে অনেকের সাথে কথা হয়। তবে ছোটদের সময় প্রকাশনির শ্রদ্ধাভাজন বড় ভাই
শিশুসাহিত্যিক গোলাম সারওয়ার ভাইয়ের সাথে আলোচনা করি। তার কথা এবং
ব্যবহার আমার ভালো লাগে। তাকে আমার পান্ডুলিপি দেই। তিনি আমাকে বই
বের করতে সহযোগিতা করলো। বুদ্ধি দিল। পরে তার কথামত এ বছর ২০২৪ সালে
তার প্রকাশনি থেকে বের হচ্ছে আমার প্রথম শিশুসাহিত্যির বই ‘এলিয়েন
খাবে পান্তাভাত’
আমি যে কয়টি মানুষের নিকট কৃতজ্ঞ থাকবো। তারা হচ্ছে মা-বাবা, বশির
আংকেল। নব ভাবনার নিবাহি সম্পাদক ও আমার লেখার পত্রপ্রদশক ইমরুল কায়েস।
আমার ম্যাম ফ্লোরা সরকার। যিনি আমাকে বই কিনতে এবং বই পড়তে উৎসাহ
সৃষ্টি করেন। ছোটদের সময় ম্যাগাজিনের মামুন সারওয়ার ভাইয়ের নিকট।
সবশেষে বলবো কবিগুরু রবীন্দ্রনাথই তো বলেছিলেন তার ‘ভাষা ও ছন্দ’
কবিতায়Ñ
‘অলৌকিক আনন্দের ভাব,
বিধাতা যাহায়েছেন,
তাহার বক্ষে বেদনা অপার।’
আমি মনে করি লেখালেখিই হতে পারে সেই অপার বেদনা থেকে মুক্তির উপায়
কিংবা কোনো অলৌকিক আনন্দের উৎস। তাই কেউ কেউ লেখেন সেই আনন্দ
খুঁজতে, কেউ লেখেন সমাজের দায়বোধ থেকে। সমাজ পরিবতনের অন্যতম
হাতিয়ায় হচ্ছে কলম। সেই বোধ থেকেই লিখি। না পাওয়ার থেকে পাওয়ার
মানসিকতা একটু বেশি। যেমন পাঠকের ভালোবাসা আর লেখার বিনিময়ে
সম্মানী। পাওয়ার জন্য নয় দেয়ার জন্য লিখি। এই কথার সাথে পুরোপুরি একমত
না হলেও কিছুটা একমত পোশন করি সব সময়।

প্রাবন্ধিক, গল্পকার, অভিনয় ও আবৃত্তি শিল্পী।


Facebook Comments Box
প্রতিধ্বনি
প্রতিধ্বনিhttps://protiddhonii.com
প্রতিধ্বনি একটি অনলাইন ম্যাগাজিন। শিল্প,সাহিত্য,রাজনীতি,অর্থনীতি,ইতিহাস ঐতিহ্য সহ নানা বিষয়ে বিভিন্ন প্রজন্ম কী ভাবছে তা এখানে প্রকাশ করা হয়। নবীন প্রবীণ লেখকদের কাছে প্রতিধ্বনি একটি দারুণ প্ল্যাটফর্ম রুপে আবির্ভূত হয়েছে। সব বয়সী লেখক ও পাঠকদের জন্য নানা ভাবে প্রতিধ্বনি প্রতিনিয়ত কাজ করে চলেছে। অনেক প্রতিভাবান লেখক আড়ালেই থেকে যায় তাদের লেখা প্রকাশের প্ল্যাটফর্মের অভাবে। আমরা সেই সব প্রতিভাবান লেখকদের লেখা সবার সামনে তুলে ধরতে চাই। আমরা চাই ন্যায়সঙ্গত প্রতিটি বিষয় দ্বিধাহীনচিত্ত্বে তুলে ধরতে। আপনিও যদি একজন সাহসী কলম সৈনিক হয়ে থাকেন তবে আপনাকে স্বাগতম। প্রতিধ্বনিতে যুক্ত হয়ে আওয়াজ তুলুন।
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments