—দ্বিপ্রহর
একটি রক্তাভ শিমুল ফুল পড়ে আছে রাস্তার পাশে। শরীরে লেগে আছে জখমের কালো দাগ। রেণুগুলো শুকিয়ে গেছে। একটা রঙিন প্রজাতি কিংবা মৌমাছি আসেনা তার কাছে। গাছের ডালে যতদিন ছিলো— কালচে পালকের কোকিল এসে গান শুনাতো সকাল বিকাল। রাতে ঝাঁক বেঁধে আসতো কুয়াশার দল। সবসময় কতো কতো পাখি ও পতঙ্গ ঘুরঘুর করো চারপাশে। এখন সেসব অতীত। বোধহয় মৃত্যুর আগে কোনো এক খামখেয়ালি বালকের প্রণয় মাখা হাতের ছোঁয়ায় নতুন কোনো গন্তব্যে যতে পারলে স্বার্থক হতো জীবন!
দোয়েল ডাকা দুপুরবেলা রোদ্দুরের ছিটা আসছে গ্রিলের ফাঁকা গলে। শরীরে লাগতে কেমন মিঠা মিঠা অনুভূত হয়। তেজ নেই রোদ্দুরে। যেন সবার সাথে সূর্যিমামা রোজা রেখেছে। উদারের ক্ষুধাদের হুলস্থুল। অলস বিছানায় ঘুমের আহ্বানে সাড়া দিতে মন টানে তখন। আবার বসতে মন চায় মুসহাফ নিয়ে। এই মুহূর্তে বলা যায় না, মুসাফের মায়া দারুন নাকি নিদারুন! ক্লান্ত দেহটাকে টেনে নিয়ে বসে রেহালের সামনে। তবু নিদারুণ নাম দিতে কোথায় যেন বেঁধে কাটার মত।
ঘনিয়ে আসে ইফতারের ক্ষণ। দস্তারখানে ইফতার কেতাদুস্থ করে রাখা। মজাদার গন্ধের ঢেউয়ে ভেসে যাচ্ছে ঘর-দোর। দোয়ার পরসা সাজায় প্রভুর দরবারে। খানিক বাদে মাগরিবের আজান পড়ে যায়। ঠোটঁ ফুটে বেরিয়ে আসে ইফতারের দোয়া।
একটু আগেও পশ্চিম আকাশে দিব্যি জেগে ছিল যে সূর্যটা— সে চলে গেছে পৃথিবীর অন্তরালে। সেখানে লেগে আছে লাল প্রলেপ যুক্ত আলো-আঁধারির আবির। দিনের পাখিরা ফিরছে নীড়ে। ঘরে ঘরে জ্বলে উঠছে সন্ধ্যা প্রদীপ। আলোয় আলোয় সজ্জিত হচ্ছে শহর। মসজিদের কাঁচের জানালা গলে ঠিকরে পড়ছে ঝাড়বাতির সৌন্দর্য। ইমাম সাহেব নামাজে তিলাওয়াত করছেন গম্ভীর গলায়— ‘ইরজিয়ি ইলা রাব্বিক…’। হে প্রশান্ত আত্মা! তুমি তোমার পালনকর্তার সমীপে ফিরে যাও সন্তুষ্ট ও অসন্তোষভাজন হয়ে। অতঃপর আমার বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও। এবং আমার জান্নাতে প্রবেশ কর। (সূরা ফাজর:২৭-৩০)