পাবনার পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র আমাদের ভবিষ্যৎ !!!
এই শিরোনামে কখনো লিখতে হবে ভাবিনি। কিন্তু অতীত ইতিহাস ঘাটলে এ নিয়ে লেখার প্রয়াস পাই। দেশের একটি মেগা প্রকল্প হিসেবে রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র অবশ্যই একটি বড় ঘটনা,আলোচিত বিষয়। সরকার এই প্রজেক্ট তুলে ধরে দাবী করতেই পারে দেশের উন্নয়ন কতটা গতিশীল অবস্থায় আছে। আবার ভালো মন্দ দুটো দিকও আমাদের ভাবতে হবে। আজকের এই লেখাটি মূলত সেসব নিয়েই।
একটু পিছনে ফিরে তাকালেই ক্যালেন্ডারের পাতায় চোখের সামনে ভেসে ওঠে ২৬ এপ্রিল, ১৯৮৬। রাশির সাথে যুদ্ধরত ইউক্রেনের সাথে যার রয়েছে ভয়াবহতম ইতিহাস। ১০৮৬ সালের ২৬ এপ্রিল ইউক্রেনের চেরনোবিল পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ঘটেছিল যা ঘটেছিল , সেটা ছিল ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র দুর্ঘটনা।
আমরা জানি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে জ্বালানি হিসেবে প্রধানত ইউরেনিয়াম ব্যবহার করা হয়। আর ইউরেনিয়াম অত্যন্ত দাহ্য পদার্থ এবং অত্যন্ত শক্তিশালী। চেরোনবিলে যে দুর্ঘটনা ঘটেছিল সেখানে অনেক গুলো চুল্লির মধ্যে একটি চুল্লি বিস্ফোরিত হয়, যার ফলে পরিবেশে তেজস্ক্রিয় পদার্থের ব্যাপক বিকিরণ ঘটে। কেন ঘটেছিল এমন ভয়াবহ বিস্ফোরণ? কারণ অনুসন্ধান করে দেখা গেল পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নকশায় মারাত্মক ত্রুটি ছিল, এবং ত্রুটি পাশাপাশি যথাযথ নিরাপত্তা প্রোটোকল অনুসরণ করতে ব্যর্থতার সংমিশ্রণে বিস্ফোরণটি ঘটেছিল।
চেরনোবিল বিপর্যয় এবং ফুকুশিমা দুর্ঘটনা!!!
ফুকুশিমা দুর্ঘটনাটি ১১মার্চ, ২০১১-এ জাপানের ফুকুশিমা দাইচি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ঘটেছিল। জাপান এমনিতেই ভুমিকম্প প্রবল দেশ।দুর্ঘটনাটি একটি 9.0 মাত্রার ভূমিকম্প এবং এর ফলস্বরূপ সুনামির কারণে ঘটেছিল। ভূমিকম্পের ফলে প্ল্যান্টের চুল্লিগুলি স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যায়, কিন্তু সুনামির ফলে প্ল্যান্টের ব্যাকআপ জেনারেটর প্লাবিত হয়, যার ফলে চুল্লিগুলির শীতলতা হ্রাস পায়। এর ফলে পারমাণবিক পদার্থ সাগরের পানিতে দ্রবীভূত হয় এবং পরিবেশে তেজস্ক্রিয় পদার্থ নির্গত হয়।
এই উভয় বিপর্যয়ের পরিবেশ এবং মানব স্বাস্থ্যের জন্য বিধ্বংসী পরিণতি ছিল। চেরনোবিল বিপর্যয়ের ফলে ৩১ জনের তাৎক্ষণিক মৃত্যু হয়েছিল, (সোভিয়েত মিথ্যা প্রপাগান্ডা সব কিছু কম করে দেখানো।) যেখানে বিকিরণের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ক্যান্সার এবং অন্যান্য বিকিরণ-সম্পর্কিত অসুস্থতার কারণে হাজার হাজার অতিরিক্ত মৃত্যুর কারণ ছিল।তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে ছে কয়েকশ মাইল।যার ভোগান্তি এখনো আছে।
ফুকুশিমা দুর্ঘটনার ফলে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মৃত্যু ঘটেনি, তবে বিকিরণ এক্সপোজারের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব এখনও রয়েছে ।
উভয় বিপর্যয়ের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা থেকে হাজার হাজার লোককে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে এবং উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক প্রভাব পড়েছে সেই দেশ গুলিতে তা কাটিয়ে উঠা দুঃষ্কর।
পারমাণবিক চুল্লিতে ব্যবহারের পর অবশিষ্ট তেজস্ক্রিয় পদার্থ, যাকে আমরা বলি পারমাণবিক বর্জ্য, সেগুলো খুব বিপজ্জনক। কারণ, এসব পদার্থ থেকে স্বল্পমাত্রায় হলেও পারমাণবিক বিকিরণ ঘটতে থাকে, যা মানুষের জন্য হুমকি। তাই এগুলো বিশেষ ব্যবস্থায় মাটির গভীরে এমনভাবে পুঁতে রাখা হয়, যেন বাইরে বিকিরণ না ঘটে।
এটা তো সত্যি পারমাণবিক বর্জ্য অত্যন্ত তেজস্ক্রিয় এবং হাজার হাজার বছর ধরে বিপজ্জনক থাকতে পারে। পারমাণবিক বর্জ্যের তেজস্ক্রিয়তা জীবন্ত প্রাণী এবং পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। পারমাণবিক বর্জ্যের সংস্পর্শে বিকিরণ অসুস্থতা, ক্যান্সার, জেনেটিক মিউটেশন এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে। পারমাণবিক বর্জ্য বিভিন্ন রূপ নিতে পারে, যার মধ্যে খরচ করা জ্বালানী রড, পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দূষিত উপকরণ এবং পারমাণবিক প্রক্রিয়ার অন্যান্য তেজস্ক্রিয় উপজাত।
সবচেয়ে বিপজ্জনক এবং দীর্ঘস্থায়ী পারমাণবিক বর্জ্যকে উচ্চ-স্তরের বর্জ্য হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়, যার মধ্যে পারমাণবিক চুল্লি থেকে ব্যয়িত জ্বালানী অন্তর্ভুক্ত। উচ্চ-স্তরের বর্জ্যে তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ রয়েছে যা হাজার হাজার বছর ধরে বিপজ্জনক থাকতে পারে। পারমাণবিক বর্জ্য নিরাপদে পরিচালিত হয় তা নিশ্চিত করার জন্য, এটি সাধারণত বিশেষ সুবিধাগুলিতে সংরক্ষণ করা হয় যা ফুটো প্রতিরোধ(designed to prevent leaks) এবং বর্জ্যকে পরিবেশ থেকে বিচ্ছিন্ন রাখার জন্য ডিজাইন করা হয়।
পারমাণবিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য বিভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন পন্থা রয়েছে, কিন্তু সাধারণ পদ্ধতির মধ্যে রয়েছে গভীর ভূতাত্ত্বিক ভাণ্ডারে সঞ্চয়, দরকারী পদার্থ আহরণ এবং বর্জ্যের পরিমাণ কমাতে পুনঃপ্রক্রিয়াকরণ এবং নির্দিষ্ট স্থানে বিশেষায়িত পাত্রে সংরক্ষন ।আমাদের কি সেই ব্যাবস্থা আছে এটা যে ভিষন রকম ব্যয়বহুল প্রক্রিয়া আমাদের কি সেই সক্ষমতা আছে।যদিও বলা হচ্ছে রাশিয়ায় ফেরত নিয়ে যাবে কিন্তু রাশিয়ার কি সেই সক্ষমা আছে তারা তো আন্তর্জাতিক নিষেধআজ্ঞায় নিজেরাই চিরা চেপ্টা !একটি ছোট্ট দুর্ঘটনা পাবনা সহ আসপাশের কয়েকটি জেলার কি অবস্হা হবে???