Sunday, March 9, 2025
Homeসাহিত্যগল্পভাষার বিড়ম্বনা 

ভাষার বিড়ম্বনা 

সালমান খান জুয়েল

গ্রীষ্মের দুপুর প্রচন্ডরকমের গরম পড়েছে, গাছের পাতা গুলো বোধহয় ধর্মঘট করেছে। নয়তো বা আলসে হয়েছে, কোন কিছুর বিনিময়েই তারা আজ নড়বেনা বলে পণ করেছে।
দুপুরের খাবার শেষ করে সবেমাত্র শিমুল তুলার বালিশে মাথাটা কাত করেছে আকাশ, চোখের কোনে খানিকটা ঘুম লেপ্টে আছে। হটাৎই ফোনের কিড়িং কিড়িং আওয়াজ কানে আসলো, ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে শুভ বলছে- আকাশ ভাই কেমন আছেন? -এইতো বেশ, তো আপনার কি খবর? -আমিও ভালো তবে একটা বিষয়ে গভীর চিন্তিত, যার কারণে এই অসময়েও আপনাকে ফোন না করে পারলাম না। -তা কি বিষয়ে আপনার ফোনের উদ্দেশ্য? (আকাশের প্রশ্ন)

জবাবে শুভ বললো
-ভাই আপনার কাছে বিড়ালের ভাষা জানার কোন বই আছে? ( খানিকটা আশ্চর্য হয়েই অবাক কন্ঠে আকাশ, শুভকে জিগ্যেস করলো) ভাই আপনার এই অদ্ভুত প্রশ্নের কি জবাব হওয়া উচিৎ?

-আসলে আপনিতো জানেন আমার একটা বিড়াল আছে, আজ দুপুরের সময় লক্ষ করলাম ও আমার রান্না করা খাবার চেটেপুটে খাচ্ছে। কৌতুহল বশত তাকে জিগ্যেস করলাম কিরে খাবারটা কি খুব বেশিই মজা হয়েছে?
ও মিউ মিউ করে কি যে বললো,
তা ঠিক বুঝে উঠতে পারলাম না।

ওর ভাষা জানতে পারলে ভালো হতো, খাবারটার ঠিক প্রশংসা করলো নাকি বদনাম করলো সেটা বোঝা যেতো।
এই কারণেই বিড়ালের ভাষা জানার বই আছে কি-না জানতে চাওয়া,

তাছাড়া আপনিতো লেখক মানুষ তাই ভাবলাম এমন কোন বই আপনি নিজেই লিখেও ফেলেছেন হয়তো, আপনিতো আবার অগুনিত বঙ্গানুবাদ বইও লিখেছেন।

protiddhonii.com estimated website worthprotiddhonii.com domain valuewebsite worth calculator

হয়তোবা বিড়ালেরটাও লিখেছেন, কিন্তু লোক লজ্জার ভয়ে বইটা প্রকাশে আনছেন না।

প্রকাশ্যে এলে বইটির নাম হতে পারতো-
এই ধরুন বিড়ালের ভাষা শিখুন মাত্র ৩০দিনে।

লিখুন প্রতিধ্বনিতেলিখুন প্রতিধ্বনিতে

ঐযে বাসে/ট্রেনে বিভিন্ন ছন্দে মিলিয়ে হকারেরা গলা হাঁকিয়ে বলে না! কোরিয়ান,চায়না,মালয়েশিয়ান ভাষা শিখুন মাত্র ৩০দিনে।

কোরিয়ান,চায়না ভাসা বঙ্গানুবাদ করতে পারলে, আমার মনে হচ্ছে বিড়ালেরটাও বঙ্গানুবাদ করা যাবে- প্রায় কাছাকাছি ভাষা।
শুধু একটু টানাটানির বিষয় থাকে আর-কি, এই যেমন ভাবুন বিড়ালেরা বলে মিউ, আর তারা বলে চ্যাংয়ু…

আমার ধারনা বঙ্গানুবাদ বই লেখকেরা,
একটুখানি চেষ্টা করলে এটাও পারবে।
তাই আপনাকে কল করা।

(আকাশের দুপুরের ঘুমের সময়টা অযথাই বকবক করে কাটিয়ে দেওয়ায় কিছুটা বিরক্ত হলেও, শুভর উদ্ভট কথা শুনে না হেসে পারলো না।)
-হা,হা,হা, শুভ ভাই আপনার উদ্ভট কথা শুনে আমি হাসতে হাসতে শেষ, তবে অত্যান্ত দুঃখের সহিত বলতেই হচ্ছে আমার কাছে ঐ ধরনের কোন বই নেই,
কিন্তু আমি আপনাকে একটা পরামর্শ দিতে পারি- সেটি হলো, আপনি নিজেই এমন একটা বই লিখে ফেলুন।
প্রথম পান্ডুলিপি প্রকাশেই বাজিমাত করবেন। হা,হা,হা,হা…..

-না,না,না, প্লিজ ভাই- এটা আমার পক্ষে সম্ভবনা, প্রথমতো আমি কোন লেখক না তার উপর ওদের ভাষায় গুরুতর একটা সমস্যা রয়েছে সমস্যাটা কি জানেন?

-নাতো, কি সমস্যা বলুনতো? (খানিকটা কৌতূহলবশে আকাশের প্রশ্ন।)

-ওদের ভাষার সকল শব্দই একই,
এই যেমন ধরুন জিগ্যেস করলাম
তোর নাম কি?
উত্তরে শুধু বলবে মিউ,
বাবার নাম কি?
মিউ,
মায়ের নাম কি?
ঐ একই উত্তর-
মিউ..

একই উত্তর বারবার শুনে মেজাজ খারাপ হলো, পরে রেগেমেগে বললাম কিরে তোর ১৪ গুষ্টির নাম-ই, মিউ নাকি?

উত্তরে কি বলে জানেন?

-নাতো কি বলে?

-আর কি বলবে?
ঐ একই উত্তর- মিউ।

(শুভর উদ্ভট কথাবার্তায়, আকাশ এবার উচ্চস্বরে হেসে উঠলো।)
-হা,হা,হা,হা,হা, প্লিজ ভাই আমি এখন ফোন ছাড়ছি, আমি আর হাসতে পারছি না।
আপনার সঙ্গে আর কিছুক্ষণ কথা বললে, হাসতে হাসতেই পাগল হয়ে যাবো। হা,হা,হা,

-ঠিক আছে রাখছি তবে বিড়ালের ভাষায় বই লেখার বিষয়টা মাথায় রাখবেন, তাতে করে আমার মতো শতশত বিড়াল প্রেমিরা বেশ উপকৃত হবে।

(সন্ধ্যে নাগাদ দক্ষিণি জানালার পাল্লা খুলে, এক কাপ রঙ চায়ের সঙ্গ নিয়ে,
কাঠের চেয়ারটা টেনে টেবিলে বসেছে আকাশ, কিছু একটা লেখার উদ্দেশে।
অনেকক্ষণ খাতায় কলম ঘোরানোর পরেও, নতুন কিছু লেখার জন্য মাথায় কোন টপিক আসছে না।
হটাৎ তার শুভর কথা মনে হলো, আচ্ছা বিড়ালের ভাষায় বই লিখলে কেমন হয়?

না,না তা কেমন দেখায়, পাঠকেরা-ই’ বা কি ভাববে?

(অন্য মনে ভাবছে) একবার চেষ্টা করলে ক্ষতি কি? লিখতেতো দোষ নেই, মানসম্মত না হলে, ছাপাখানায় না-হয় না পাঠালাম।

(অনেক চিন্তা ভাবনার পরে, বিড়ালের ভাষায় বই লেখার সিদ্ধান্ত চুড়ান্ত হলো, কিন্তু বিড়ালের জীবনযাপন সম্পর্কে তারতো কোন ধারণা নেই,
সেতো আবার বাস্তবমুখী লেখক। বাস্তবতার প্রসঙ্গ ছাড়া লিখতে পারেন না।
মনে মনে স্থির করলো, বিড়াল সম্পর্কে ধারণা নিতে কাল ভোরে নাহয় শুভর থেকে একটা বিড়াল নিয়ে আসা যাবে।

পরদিন ভোরে শুভর থেকে একটা বিড়াল নিয়ে আসলো, কিন্তু সমস্যা ঘটলো অন্য খানে। নতুন যায়গা এসে বিড়ালটি খুবই অস্বস্তিবোধ করছে, কিছুই মুখে তুলছে না, আকাশ খুবই চিন্তিত হয়ে পড়লো কারণ এভাবে চলতে থাকলে, বিড়ালটিতো না খেয়েই মারা যাবে। সে ফোন করে বিষয়টি শুভকে জানালো, শুভ বললো, আপনি ওর সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তুলুন, ও যে খাবার গুলো পছন্দ করে, সেই খাবার গুলো ওকে খেতে দিন।
কথামতো আকাশ বিড়ালটির সঙ্গে খাতির জমানোর চেষ্টা করছে, বাজার থেকে কয়েকটি বড়ো বড়ো সাইজ দেখে পুঁটিমাছ নিয়ে আসছে- চুলার আগুনে সেই গুলো মাছ ভাজা হয়েছে, শুনেছে বিড়াল ভাজা মাছ খুবই পছন্দ করে। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার বিড়ালটি ভাজা মাছ পেয়েও মুখে তুলছে না, আকাশ ভারি চিন্তায় পড়ে গেলো। সে আর কোন উপায় না পেয়ে বিড়ালটিকে মাছ খাওয়া শেখানোর জন্য, একটা ভাজা মাছ কাটা না ছাড়িয়েই নিজের মুখে পুরে দিলো, তার ধারণা বিড়ালতো কাটা সহ মাছ পছন্দ করে। হয়তোবা তার দেখা দেখে, বিড়ালটাও মাছ মুখে তুলবে।
কিন্তু এখানেই ঘটলো বিপত্তি, মাছের গায়ে কামড় বসাতেই আকাশের গলায় একটা কাটা ফুটে গেলো।

গলায় কাটা ফুটে ভারি যন্ত্রণার মধ্যে পড়ে গেলো, কিছু খেতে পারছে না। ব্যাথায় ঠিকঠাক কথাও বলতে পারছে না, গলার কাঁটা ছাড়াতে শুভর পরামর্শে শুকনো ভাত গিলে খাওয়া থেকে শুরু করে, গ্রামের ফকির কবিরাজের ঝাড়ফুঁক সেই সঙ্গে মুরব্বিদের পরামর্শ অনুযায়ী বিড়ালের পায়ে ধরে ক্ষমা চাওয়া কোনটাই বাদ রাখলো না। কিন্তু কোন কিছুতেই কিছু হলো না, বরং মনে হচ্ছে গলায় কাঁটাটা আরো বেশ এঁটেসেটে বসেছে,
পরিশেষে আর কোন উপায় না পেয়ে ডাক্তারের শরণাপন্ন হলো, ডাক্তারের চেম্বারের নরম তোশকের উপর তাকে শোয়ানো হলো। ডাক্তার টর্চ জ্বেলে আকাশের মুখের মধ্যে যন্ত্র ঢুকিয়ে যখনই কাঁটাটা বের করতে গেলো, ঠিক তখনই পাশ থেকে একটা পুরুষ বিড়াল ভয়ঙ্কর কন্ঠে ম্যাউ করে ডেকে উঠলো, বিড়ালের ডাক শুনে আকাশ ভয়ে লাফিয়ে উঠলো- তখনই ডাক্তারের হাতে থাকা যন্ত্রে ধাক্কা লেগে গলার কাঁটাটা পেটের মধ্যে চালান হয়ে গেলো।
আকাশ অনুভব করলো তার গলার কাঁটাটা এখন আর নেই। কিছুটা শান্তি অনুভব করলো, রাতে বাসায় ফিরে কিছু খায়তে গিয়ে টের পেলো কাটাটা চলে গেলেও দীর্ঘক্ষণ আটকে থাকায় গলার ভিতরটা ব্যাথা হয়ে আছে। যার কারণে বাধ্য হয়েই রাতে কিছু না খেয়েই শুয়ে পড়লো, সারাদিনের ধকল সামলে আর গলার ব্যাথায় সে খুবই ক্লান্ত হয়ে পড়লো। যার কারণে বালিশে মাথা রাখতেই গভীর ঘুমে ডুবে গেলো।
খুব ভোরে শুভর ফোনে আকাশের ঘুম ভাঙ্গলো, ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে শুভর কন্ঠ ভেসে আসলো। -আকাশ ভাই একটা বিষয়ে গভীর চিন্তিত, যার কারণে এই অসময়েও আপনাকে ফোন না করে পারলাম না।

(শুভর কথা শুনে আকাশ চমকে উঠলো, ভীতি কন্ঠে শুভকে বললো)

-প্লিজ ভাই, আমি আগে থেকেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি, আজ আবার কোন নতুন বই লেখার পরামর্শ দিয়েন না।

যার নাম হতে পারে, এই যেমন ধরুন “কুকুরের ভাষা শিখুন মাত্র ৩০ দিনে”…

Facebook Comments Box
প্রতিধ্বনি
প্রতিধ্বনিhttps://protiddhonii.com
প্রতিধ্বনি একটি অনলাইন ম্যাগাজিন। শিল্প,সাহিত্য,রাজনীতি,অর্থনীতি,ইতিহাস ঐতিহ্য সহ নানা বিষয়ে বিভিন্ন প্রজন্ম কী ভাবছে তা এখানে প্রকাশ করা হয়। নবীন প্রবীণ লেখকদের কাছে প্রতিধ্বনি একটি দারুণ প্ল্যাটফর্ম রুপে আবির্ভূত হয়েছে। সব বয়সী লেখক ও পাঠকদের জন্য নানা ভাবে প্রতিধ্বনি প্রতিনিয়ত কাজ করে চলেছে। অনেক প্রতিভাবান লেখক আড়ালেই থেকে যায় তাদের লেখা প্রকাশের প্ল্যাটফর্মের অভাবে। আমরা সেই সব প্রতিভাবান লেখকদের লেখা সবার সামনে তুলে ধরতে চাই। আমরা চাই ন্যায়সঙ্গত প্রতিটি বিষয় দ্বিধাহীনচিত্ত্বে তুলে ধরতে। আপনিও যদি একজন সাহসী কলম সৈনিক হয়ে থাকেন তবে আপনাকে স্বাগতম। প্রতিধ্বনিতে যুক্ত হয়ে আওয়াজ তুলুন।
এই ধরণের আরো লেখা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

প্রতিধ্বনির বর্তমান মূল্যprotiddhonii.com estimated website worthprotiddhonii.com domain valuewebsite worth calculator

সাম্প্রতিক লেখা

Recent Comments