চৌদ্দ বছর বয়সী বিস্ময়বালক কাইরান কাজী। যে বয়সে তার স্কুলে যাওয়ার কথা সে বয়সে সে কাজ করছে স্পেসএক্সে। মাত্র ১৪ বছর বয়সে ইলন মাস্কের মহাকাশবিষয়ক প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্সের প্রকৌশলী হিসেবে নিয়োগ পেয়েছে কাইরান।
কাইরান কাজীর জন্ম ২০০৯ সালের ২৭ জানুয়ারি। বাবা মুস্তাহিদ কাজী বাংলাদেশের মানিকগঞ্জের বাসিন্দা। অর্থাৎ কাইরান বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত। তার বাবা কেমিক্যাল প্রকৌশলী হিসেবে কাজ করছেন এবং মা জুলিয়া কাজী ওয়াল স্ট্রিট এক্সিকিউটিভ। কাইরান ক্যালিফোর্নিয়ার প্লেস্যান্টনে জন্মগ্রহণ করে। জন্মের ২ বছর পর ডাক্তাররা কাইরেনের বুদ্ধিমত্তাকে ‘off the charts’ হিসেবে ঘোষণা দেয়।
তার আইকিউর মাত্রা অন্য শিশুদের তুলনায় অনেক বেশি ছিল। ডাক্তাররা কাজীর আইকিউ পরীক্ষা করে বলেছিলেন, তার মানসিক বুদ্ধিমত্তা (EQ) ‘আশ্চর্যজনকভাবে উচ্চ’ ছিল। কাইরান প্রথমে মেনসা ইন্টারন্যাশনালে ভর্তি হয়, যা উচ্চ আইকিউ সম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য একটি প্রোগ্রাম এবং ডেভিডসন ইনস্টিটিউটে ইয়ং স্কলার হয়।
তারপর প্রাথমিক শিক্ষার জন্য দ্য কোয়ারি লেন স্কুলে ভর্তি হয়। স্কুলে তাকে প্রায়ই জিজ্ঞেস করা হতো সে জিনিয়াস কিনা। কাইরান বলতো প্রতিভা
হলো এমন জিনিস যা বড় বড় সমস্যাগুলো সমাধান করার জন্য প্রয়োজন। কিন্ডারগার্টেনে পড়ার সময়ে কাইরান তার প্রতিভার সাক্ষর রাখতে শুরু করে।
তার প্রতিভা দেখে মা-বাবা মনে করেন তাকে কলেজে ভর্তি করানোই উপযুক্ত সময়। তাই তৃতীয় গ্রেডে থাকাকালীন কাইরানকে তার বাবা-মা কলেজে ভর্তি করিয়ে দেন। তার ডাক্তার এবং শিক্ষকরা তাকে কলেজে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেন। কারণ সে ইতোমধ্যেই ক্যালকুলাস এবং জৈব রসায়ন রপ্ত করেছিল। কিন্তু ওই বয়সে তাকে কলেজে ভর্তি করাতে কিছুটা বেগ পেতে হয়েছে।
২০১৮ সালে মাত্র ৯ বছর বয়সে ক্যালিফোর্নিয়ার লিভারমোরে লাস পসিটাস কমিউনিটি কলেজে ভর্তি হয় কাইরান। কলেজে সে ছিল সর্বকনিষ্ঠ ছাত্র। একই সঙ্গে STEM টিউটর ছিল। ২০২০ সালে মাত্র ১১ বছর বয়সে কম্পিউটার বিজ্ঞান এবং প্রকৌশল বিষয়ে সর্বকনিষ্ঠ হিসেবে ক্যালিফোর্নিয়ার সান্তা ক্লারা বিশ্ববিদ্যালয়ে (SCU) ভর্তি হয়। ১৭ জুন ২০২৩ তারিখে স্নাতক সম্পন্ন করে। সে তার বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৭২ বছরের ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ গ্রাজুয়েট। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন ২০২২ সালে, একটি সাইবার ইন্টেলিজেন্স ফার্ম, Blackbird.AI-তে ইন্টার্নশিপ সম্পন্ন করে।
তা ছাড়া ২০১৯ সালে অনেক ইন্টারশিপের জন্য আবেদন করার পর ইন্টেলের ইন্টেলিজেন্ট সিস্টেম রিসার্চ ল্যাবের ডিরেক্টর লামা নাচম্যান তাকে গ্রহণ করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন কাইরান তিনটি কাজের অফারও পেয়েছিল। আবার বেশ কিছু কোম্পানি তার আবেদন নাকচ করে দেয়। কিন্তু স্যাটেলাইট ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থা স্পেসএক্স তাকে চাকরির অফার দেয়। ২০২৩ সালের ৩১ জুলাই সে ইলন মাক্সের স্পেসএক্সে মাত্র ১৪ বছর বয়সে সর্বকনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে যোগ দেয়।
সে তার লিংকডইন অ্যাকাউন্টে জানায় বয়সের ভিত্তিতে নয় যোগ্যতার মূল্যায়ন করায় সে বেশ আনন্দিত। যদিও তার লিংকডইন অ্যাকাউন্টটি ডিলেট করে দিয়েছে লিংকডইন কর্তৃপক্ষ। তারা জানায় লিংকডইনে অ্যাকাউন্ট খুলতে হলে কমপক্ষে ১৬ বছর বয়স হতে হবে। তবে কাইরান কাজী ইন্সটাগ্রাম এবং এক্সে (টুইটার) সক্রিয়।
ছোট থেকেই অন্যান্য প্রতিভার অধিকারী কাইরান মাত্র দুই বছর বয়স থেকেই পূর্ণ বাক্যে কথা বলতে পারতো। তার কাছে পড়াশোনা অতটা চ্যালেঞ্জিং মনে হতো না। তার লিংকডইন প্রোফাইলে সে লিখেছিল তার স্বপ্ন এমন ক্যারিয়ার যা ‘চ্যালেঞ্জিং বিষয়গুলো মোকাবিলা করে এবং সাধারণের সেবায় গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করে।’
অবসর সময়ে সে কম্পিউটার গেম খেলতে ও বই পড়তে পছন্দ করে। সাই-ফাই গল্প তার ভালো লাগে। তার পছন্দের লেখক ফিলিপ কে ডিক। বর্তমানে সে বিভিন্ন ভাষা শেখার চেষ্টা করছে। কাইরান স্পেসএক্সে যোগ দিয়ে মঙ্গল গ্রহে মানুষ পাঠাতে সাহায্য করতে চায়। কাইরান জানায়, ‘বিশ্বের সবচেয়ে দুর্দান্ত কোম্পানি’তে যোগ দিতে পেরে সে আনন্দিত।
– টি এইচ মাহির