Tuesday, December 3, 2024
Homeসাহিত্যকবিতাজাকির আলমের গুচ্ছ কবিতা-২

জাকির আলমের গুচ্ছ কবিতা-২

এখনো প্রতীক্ষায় থাকি

এখনো মাঝ রাতে হৃদয়ের দ্বার খুলে

প্রতীক্ষার অবসানে তোমাতে হারাই।

এখনো সন্ধ্যাপ্রদীপ জ্বালিয়ে পূজার অর্ঘ্য সাজিয়ে

স্মৃতির নদী সাঁতরে বেড়াই।

এখনো বিরহ মনে অনিয়মের হাত ধরে

উষ্ণতার পরশ পেতে তোমাকে খুঁজি।

এখনো পাহাড় ঘেঁষা চাঁদের জ্যোৎস্নায়

আমার পৃথিবী বলে তোমাকেই বুঝি।

এখনো প্রজাপতি বেশে ফুলের বনে

মধুপানে ছুটে যাই তোমার অবনী।

এখনো তৃষ্ণার্ত প্রাণে চোখের নেশায়

ডুবে যাই তোমাতে ওহে সজনী।

এখনো মিলনের সুখ পেতে দুরন্ত শরীর

অধীরতায় কাতর রতিক্রিয়ার ছলে।

এখনো ভালোবাসি তাই গভীর আবেগে

ভেসে যাই সুদূরে বরফ গলা জলে।

এখনো মন কাঁদে বিরহের যাতনায়

ফিরে এসো বীথিকায় অভিমান ভুলে।

এখনো মোহিত আমি তোমার প্রেমে

হাত বাড়িয়ে টেনে নাও তোমার ওই বুকেতে তুলে।

মাটির প্রতিদান

নিঝুম রাতে ভালো লাগে ঝিঁঝি পোকার গান

ঝিকিমিকি তারার আলোয় নিত্য করি স্নান।

শিশির ভেজা দূর্বাঘাসে প্রজাপতির খেলা

বিকেলের হিরণ রোদে বসে স্বর্গের মেলা।

খেয়াপাড়ের মাঝি-মাল্লা ছোটে উজান ঘাটে

গাঁয়ের বধূ হারিয়ে যায় আঁকাবাঁকা বাটে।

পুকুর জলে শালুক ফোটে প্রাণে জাগে দোল

হাসি মুখে তীব্র সুখে ঘুমাই মায়ের কোল।

বনেরধারে পাখির গানে মেতে উঠে মন

বেলী ফুলের মধুর ঘ্রাণে তোলে শিহরণ।

গোধূলির অরুণ আলো পরশ মাখে গায়

কিশোর মন মায়ার টানে দূরে চলে যায়।

পাহাড় ঘেরা সবুজ ভূমি ঠোঁটে আঁকে চুম

চাষীর ঘরে ফসলের পড়ে সুখের ধুম।

স্বদেশের জল-মাটি মায়ের মতো আপন

দেশের তরে গোটা জীবন করেছি অর্পণ।

পাখি ডাকা নিঝুম দুপুরে

পাখি ডাকা বসন্তের নিঝুম দুপুরে

জলকেলী জলে ভাসে মেঘের ছায়ে।

মনশিখিনী নেচে ওঠে ঘুঙুর নূপুরে

সবুজ বনানীর এক শ্যামল গাঁয়ে।

ক্লান্ত পৃথিবীর প্রাণের নিঃশ্বাসে

উড়ে যায় মেঘমালা অচিন প্রান্তর।

ঘাসের বুকের রোদেলা মিহির বিশ্বাসে

অনুভবে কেঁপে ওঠে ভূলোক অন্তর।

রজনী স্বপনে নিভুনিভু বিধুর বুকে

বাগিচার ফুল ঝরে নীহার জলে।

অচেনা দেশের হাস্যোজ্জ্বল মানবীর মুখে

খুঁজে পাই সুখ প্রকৃতির হৃদয় তলে।

উর্বর মৃত্তিকার সোনালি ধানের ক্ষেতে

ফিঙে মন গেয়ে যায় কৃষকের গান।

ফেরারী আকাশে অবিরাম উড়ে যেতে

বাঁধা পড়ে অকস্মাৎ অবুঝ প্রাণ।

আঁকাবাঁকা ধরণীর ঝলমলে রূপালি আলোয়

স্নান করে চকোরী সুরভিত মেঘলা নিশি।

দূরের সীমানায় রাতের নিকষ কালোয়

চাতকের পাখাতলে অঝোর প্রতীক্ষায় মিশি।

ভালোবাসা তুমি

ভালোবাসা তুমি প্রেমিকার হাসি রিক্ত মনের বেদন

তোমার জন্য আকাশের বুকে গেঁড়েছি বিজয় কেতন।

ভালোবাসা তুমি ফুলের রেণু অবিনাশী স্বপ্নের ভেলা

তোমার জন্য রাতের আঁধারে চাঁদের আলো করে খেলা।

ভালোবাসা তুমি প্রভাতীর কিরণ শিশির ভেজা মাঠ

তোমার জন্য আদি থেকে মানুষ গড়েছে প্রেমের হাট।

ভালোবাসা তুমি দূর আকাশে ভেসে চলা মেঘের পাল

তোমার জন্য নিশীথিনী জেগে কেটে গেছে অনন্তকাল।

ভালোবাসা তুমি শ্রাবণ নিশির ক্ষিপ্ত মনের রোদন

তোমার জন্য ভাবনার ঘোরে দেখেছি প্রিয়ার বদন।

ভালোবাসা তুমি কুড়িয়ে পাওয়া পাতা কুড়ানির হাসি

তোমার জন্য দরিয়ার জলে নিদাঘের ছায়ায় ভাসি।

ভালোবাসা তুমি সায়াহ্নপ্রদীপ শুকনো পাতার ধ্বনি

তোমার জন্য দ্রোহের আসমান ঢেলেছে বিষের ফণী 

ভালোবাসা তুমি বেদনার দহন পুড়িয়ে করো নাশ

তোমার জন্য যাযাবর জীবন নরকের ঘরে বাস।

মল্লযুদ্ধের অভিসন্তাপ

একুশ বছর পর আবার হবে দেখা

কোনো এক বাংলোতে চেনা মানুষের ভিড়ে।

প্রতীক্ষায় কেটে যাওয়া প্রতিটি প্রহর

দোলা দিবে আবার অবুঝ মনের নীড়ে।

ভুলে যাবো হলফনামা স্মৃতি মুছে যাবে

রয়ে যাবে জমা কিছু বেদনার ক্রন্দন।

স্বপ্নের সিঁড়ি বেয়ে ক্রমাগত হেঁটে চলা

বাঁধা রবে বিনিসুতোয় আত্মার বন্ধন।

শ্রাবস্তী মুখশ্রী মলিনতায় যাবে ঢেকে

মোটা ফ্রেমের চশমায় জগৎ আঁধার।

তিরিক্ষি চাহনিতে নীরবতা অনুক্ষণ

জড়াবে বিকিরণে নিঃসীম আলোর নিগড়।

প্রমাদের দৌরাত্মে যে জীবন কেটে গেছে

পায়নি কদাপি কোনো সুখের প্রসারণ।

হিসাবের জটিলতায় মেলে না পুনশ্চঃ

বিদায়ক্ষণে পাওয়া কিছু অধিগ্রহণ।

জগতের নিয়মে সময় বড় নিষ্ঠুর 

আঘাতে আঘাতে নাশিত হয় অভিঘাত।

বাস্তুহারা উদ্বাস্তু মানুষের মল্লযুদ্ধে

তুমি আমি মুখোমুখি অদম্য প্রতিঘাতে।

তোমার নামে সন্ধ্যা নামে

তোমার নামে সন্ধ্যা নামে অঝোর ফুলের বনে

ফাগুন হাওয়া ছুঁয়ে যায় নত অবুঝ প্রাণে।

প্রজাপতির পাখনা মেলে তোমার উড়ে চলা

প্রাণের অধিক ভালোবাসি হয় না কভু বলা।

বৃষ্টি ভেজা মেঘলা দিনে তোমার ঠোঁটের হাসি

মন ছোঁয়া সুর-সঙ্গীতে প্রেম যমুনায় ভাসি।

নিঝুম রাতে চাঁদের আলোয় শুক্ল মাখামাখি

দৃষ্টি জুড়ে তোমার ছবি বিভোর নয়নে দেখি।

রাত্রি যখন আঁধার নামে খুঁজি তোমার মুখ

হৃদয় মাঝে এলে তুমি পাই যে অপার সুখ।

হাজার তারার মাঝে তুমি মিহি সোমের আলো

মনের ঘরে তোমায় রেখে বাসি অনেক ভালো।

কাব্য কথায় তোমার নামে লিখি প্রেমের চিঠি

সঁপে দিলাম জীবন তরী যাওগো তুমি উঠি।

কাছে পাওয়ার অভিপ্রায়ে তোমার কাছে আসি

এই জন্মে তুমি আমার শ্যাম কালিয়ার বাঁশি।

Facebook Comments Box
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments