Friday, December 27, 2024
Homeসাহিত্যরাজনৈতিক প্রবন্ধআমার দৃষ্টিতে সোভিয়েত ইউনিয়ন পরবর্তী প্রেক্ষাপট

আমার দৃষ্টিতে সোভিয়েত ইউনিয়ন পরবর্তী প্রেক্ষাপট

আমি এখানে আমাদের শ্রদ্বেয় শাহাব আহমেদ ভাই তিনি লেনিনগ্রাদের এখন আমেরিকায় চিকিৎসক পেশায় আছেন । তার বড পরিচয় তিনি একজন নামকরা লেখক।অসাধারন লেখেন গত 30 Sept 2022 বিডি নিউজ২৪ বেরহছিলো ।তার চুম্বক অংশ তুলে ধরলাম ।পাশাপাশি আমাদের সময়ের কথা ও বলব। “যে পরিবর্তনের জোয়ার এনেছিল রুশ বিপ্লব, কোথায় গেল সেই অর্জন? কেন ৭০ বছর পরে, ১৯৯২ সালে, সুপার পাওয়ার রাশিয়ার এক বিশাল জনগোষ্ঠীর অবস্থা ছিল সেই ১৯২১ সালের মতই? কেন কিছুই বদলায়নি? অথচ মহাকাশ বিজয় হয়েছে। বিশাল সমাজতান্ত্রিক বিশ্ব তৈরি হয়েছে। তৃতীয় বিশ্বের হাজার হাজার লাখে লাখে ছাত্র-ছাত্রী এনে বিনামূল্যে পড়াশুনো শিখিয়ে স্ব স্ব দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।

সারা দুনিয়ার ভাতৃপ্রতীম কমিউনিস্ট পার্টিগুলোকে লালন পালন করা হয়েছে অর্থ সাহায্য, পার্টি স্কুল, পার্টি হোটেল, বিমান ভাড়া, খাদ্য, চিকিৎসার খরচ বহন করে। কিন্তু অর্ডিনারি সোভিয়েত পেনশিওনার, যারা যুদ্ধ করে নাৎসিবাদের মহামারী থেকে বিশ্বকে রক্ষা করেছে এবং সোভিয়েত ইউনিয়নকে মহান গৌরীসেন বানিয়েছে, তারা আজ ক্ষুধায় রাস্তায় পড়ে পড়ে মারা যাচ্ছে। অথবা তাদের ফ্লাটগুলো বিভিন্ন কূট চালে কেড়ে নিয়ে রাস্তায় ছুঁড়ে ফেলা হচ্ছে কিংবা তারা নিঁখোজ হয়ে যাচ্ছে।

মানুষ মানুষের জন্য নয়। সারা বিশ্বের সমাজতন্ত্রীরা এতকাল সোভিয়েত ছদ্ম সমাজতন্ত্রের মধু খেয়েছে, স্ট্যালিন ও তৎপরবর্তি প্রতিটি নেতাকে মহান নেতা বলে তোষামোদ করেছে, মার্কসবাদ-লেনিনবাদের তত্ত্ব কপচাতে কচলাতে এমনই ‘ফানাফিল্লা’ অবস্থায় পৌঁছেছে যে তাদের চোখে পড়ে নাই এই দেশটিতে মানুষের মৌলিক অধিকার সামান্যতমও নেই। তারা সমস্বরে চিৎকার করছে এই পতন সাম্রাজ্যবাদের চক্রান্ত। সাম্রাজ্যবাদ ধ্বংস করে দিল বিশ্বমানবতার মধুচক্র, যেন সাম্রাজ্যবাদ আগে চক্রান্ত করে নাই।

লেনিন ট্রটস্কিরা টিকে ছিলেন উনিশ শ আঠারো, উনিশ, বিশ ও একুশ সালের সেই দুঃসময়ে। কিন্তু গর্বাচেভরা পারলেন না। পারলেন না, কারণ চাইলেন না দেশটা টিকে থাকুক। ১৯৯২ সালে তারাই দাবি করেন যে, একটি বিড়াল, একটি কুকুরও ইউরোপের পুঁজিবাদি দুনিয়ায় বেশি স্বাধীনতা ভোগ করে, বেশি যত্ন পায়। একজন শ্রমিকের অবস্থা অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে এদের চেয়েও ভালো। তারপরেও তারা প্রয়োজনে ধর্মঘট করতে পারে। শিক্ষা, চিকিৎসা, বাসস্থান, চলাচল, ভ্রমণ, বিশ্রাম, ছুটি, বিচার ও আত্মপক্ষ সমর্থনের অধিকার ইওরোপের প্রতিটি পুঁজিবাদী দেশে তাদের তুলনায় বেশী নিশ্চিত।

এতকাল তাদের যা বলা হয়েছে, তা সত্য নয়।”

(শাহাব আহমেদ)

অর্থাৎ রুশ বা সোভিয়েত ইউনিয়নে যা গেলানো হয়েছে তা পুরাটাই ছিল ভাঁওতাবাজি। কিয়েভের থাকাকালীন সময়ে পার্টটাইম হিসাবে একটি ভারতীয় কোম্পানীতে সুযোগ করে দেন শ্রদ্বেয় রমা দত্ত।আমাদে প্রিয় রমা দা । রমা দা আজ আর আমাদের মাঝে নেই । আমাদের সম্পর্কে ছিল আপন ভাইয়ের মত।সুযোগ পেলেই দাদার বাসায় অথবা দাদা আমার বাসায় প্রায় আসতেন। দাদার পছন্দ ছিল আমার হাতের খুব ঝাল দিয়ে গরুর মাংস। বৌদি ছিলেন রাশান এবং তার জমজ ছেলে দুটি ঝাল খেতে পারেনা তাই দাদার যখনই দেশি খাবার এর ইচ্ছে হলে আমি তার বাসায় কিংবা আমার বাসায় রান্না বান্না হতো সুযোগ পেলেই। আমাদের কোম্পানীর একজন ডিরেক্টর প্রায় সময় কিয়েভে আসতেন শ্রদ্বেয় স্বপন সেন । বর্তমানে স্যারের বয়স ৮০ উপরে সুস্হ আছেন ।স্যার আমাকে নিজ সন্তানের চোখে দেখেন আজও আমাদের সাথে যোগাযোগ টা বন্ধ হইনি।

আমাদের বিয়ের পর পরই আমার স্ত্রী কে নিয়ে কোলকাতায় স্যারের সাথে দেখা করতে তার বাসায় গিয়েছি। ইউক্রেন ১৯৯২ দিকে ভিষন এক অস্থির সময় পার করছিল স্হানিয় মুদ্রার নাম ছিল কুপন ।প্রতিদিন মুদ্রার দর উঠানামা করতো ডলারের সাথে । আমরা যারা বিদেশি তারা ডলার ভাংগালে মনে হতো যেন সেই নবাব সায়েস্তা খাঁনের যুগে বসবাস করছি। ১ডলারে ৫ কেজি গরুর মাংস । ১০ ডলার দিলে ২০ কেজি ওজনের’বেলায় আমুর’ আমাদের দেশের কাতল মাছের মত।সদ্য ধরা নেপর নদীর মাছ। ২০২০ তে যখন গিয়েছি দেখেছি এইরক বড় মাছের কেজি ২০ ডলার এর মত। ভাবছেন এত সস্তা!! কিন্তু সাধারন মানুষের জীবন খুবই খারাপ অবস্হায় ছিল মাসের বেতন মাত্র ১০ ডলার ।

আপনারা বলতে পারেন আজকের বাংলাদেশ চা বাগানের শ্রমিকের মত। মুদ্রাস্ফীতি সংকট অত্যান্ত ভয়াবহ! ইউক্রেনে মুদ্রাস্ফীতির হার ছিল ১৯৯৩ সালে ১০১৫৫.০৪%। যা ১৯৯২ সালের তুলনায়ও ৮১৫৪.৫০% বেশি এবং ১৯৯৪ সালের পরের বছরের তুলনায় ৯৭৫৩.৯০%বেশি। মুদ্রাস্ফীতির শতকরা হারের সর্বশেষ এত বেশি বেড়েছে, যখন ফল, শাকসবজি এবং ডিমের মতো কিছু প্রধান পণ্য একই সময়ের মধ্যে অনেক বেশি ব্যয়বহুল হয়েছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি, বিশেষ করে দৈনন্দিন জিনিসের জন্য, সবচেয়ে দরিদ্র পরিবারগুলিকে সবচেয়ে বেশি আঘাত করে৷ এর থেকে পুনরুদ্ধার পাওয়া ও জীবনযাত্রার মান ধরে রাখা বড্ড কঠিন। অপরাধ ,সহিংসতা এবং মৃত্যু উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিল অর্থনৈতিক দুর্যোগে ।

এটা পাবেই যেহেতু অপরাধ এতই প্রচলিত ছিল, এটা আর আশ্চর্যের কিছু ছিল না যে সমাজ শুধুমাত্র অপরাধমূলক উপায়ে কাজ করতে পারে। আত্মহত্যা বা নিহত হওয়ার জন্য প্রায় অন্যান্য শিল্পোন্নত দেশের নাগরিকদের তুলনায় রাশিয়ানরা অনেক অনেক বেশি কিন্তু কেন?? এর প্রধান কারন ছিল সাধারন মানুষ, যাদের একটি বড় অংশ ইতিমধ্যেই দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করছিল। অনেক মানুষ তাদের মৌলিক চাহিদা বা তাদের চিকিৎসা ব্যয় বহন করতে পারে না বলে ছেড়ে ভাগ্যর উপর ছেড়ে দেয়। দারিদ্র তার হাত থেকে বাচঁতে নিজেদের সোনা দানা অ্যাপার্টমেন্ট ইত্যাদি বাংলাদেশের ডেসটিনি, যুবক এইসব নানা কিসিমের কোম্পানীতে লগ্নি করে ফতুর হয়।এই রকম একটি কোম্পানি АО «МММ» — крупнейшая в истории России финансовая пирамида এইসকল ফিনালসিয়াল পিড়ামিড এর কারনে আত্মহত্যা ,মৃত্যু অপরাধ সব বাড়তে থাকে।

ইয়েলতসিন প্রশাসন জনসাধারণকে শান্ত করার প্রয়াসে অ্যালকোহল বিক্রির উপর সমস্ত নিষেধাজ্ঞা সরিয়ে দেয়। মানে হলো মদ খেয়ে বুঁদ হয়ে থাক প্রতিবাদ করা ভুলে যাও দুঃখকষ্ট ভুলে থাক। যার ফলস্বরূপ একটি স্বল্প তহবিলের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার উপর বিশাল বোঝা। প্রচুর মানুষ অসুস্হ হয়ে পড়ে। মানুষ ঘরে বানানো মদে যা অত্যান্ত সস্তা সহজলভ্য অনেক ক্ষেত্রে বিষক্রিয়াতে মানুষ মারা যায়।হতাশা থেকে আসক্তি, তার পরে মৃত্যু! এটা কি আত্মহত্যা নয়?

সোভিয়েত-পরবর্তী রাশিয়া হয়তো কিছু ক্ষেত্রে অগ্রগতি করছে, রুশদের জীবনযাত্রার মান ২০১০ -এর দশকে বাড়তে শুরু করেছে। Усло́вная едини́ца প্রচলিত ইউনিট (সংক্ষেপে u. e) প্রাক্তন ইউএসএসআর-এর দেশগুলিতে বিদেশী মুদ্রায় অর্থের পরিমাণ বা অফিসিয়াল বা বিনিময় হারে রুবেলে কিংবা তাদের মুদ্রার এর সমতুল্য অর্থ বোঝাতে মুল কথা সবিহবে ডলারে তবে ঐদিনের রেট অনুযায়ি।ধরন ৩ue মানেহল ৩ডলারের সমপরিমান স্হানীয় মুদ্রা। এই শব্দটির উত্থান ১৯৯০এর দশকে রাশিয়ায় অর্থনৈতিক সংস্কারের সাথে জড়িত।আজো বলবৎ । হ্যা কি হলো প্রতিটি পন্য গায়ে সংস্কার কি হয়েছে?

১৯৯৯ সালে ভ্লাদিমির পুতিন ক্ষমতা গ্রহণের সময়, যথেষ্ট অর্থনৈতিক অগ্রগতির হয়ে ছিল তবে সেই সময়ে ইয়েলৎসিনের রেটিং হতবাক ভাবে নিম্ন স্তরে নেমে গিয়েছিল। পুতিন একটি নতুন মুখ এবং জনগনের আশার আলো হিসেবে দেখা হতো। সে হয়তো এমন কেউ একজন বিগত দশকের দুর্দশার বিপরীতে আলো নিয়ে আসবে।পুতিন সুন্দর ভাবে কথা বলে। ভোট সহ যদিও রাশিয়ার রাজনৈতিক ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে, তবুও সেখানে বিশ্বাস আর ন্যায্যতার ঘাঁটতি ছিল প্রকট। মস্কোর মেয়র ইউরি লুসকভ ছিলেন পুটিনের রাজনৈতিক দল তৈরির কারিগর। তার পাহাড় পরিমান দূর্নিতি এক্টা উদাহরন দেই।

লুস্কভের স্ত্রী বাতুরিনার ফোর্বসের মতে, ২০০৮ সালে মোট সম্পদ ছিল US$4.2 বিলিয়ন, ২০০৭ সালে US$3.1 বিলিয়ন থেকে,২০০৬সালে US$2.3 বিলিয়ন।তিনি এখন লন্ডনে বসবাস কারি একজন বিজনেজ ওমেন। একজন মেয়রের স্ত্রীর যদি এতপরিমান সম্পদ থাকে ভাবুন এতবড় দেশের অন্যান্য সরকারী কর্মকতা এবং রাজনৈতিক নেতাদের কি অবস্হা ।আপনাদের নিশ্চয় মনে আছে রোমান আব্রাহামভিচ তিনি ছিলেন রাশিয়ার Governor Chukotka অটোনমির 2000 – 2008 হয়েছিলেন পৃথিবীর সেরা পাঁচ ধনীর একজন। কোন যাদুর কাঁঠির পরশে? পুটিনের এই ঘনিস্ট বন্ধু ছিলেন ইংল্যান্ড এর চেলসি ফুটবল ক্লাবের মালিক ইউক্রেন যুদ্ধের অজুহাতে তার সব বাজেয়াপ্ত। ক্লাব বিক্রি হয় ৪ বিলিয়নে। এই পরিমান টাকা বাংলাদেশ সরকার আই এম এর কাছে ঋণ চেয়েছে।

ক্লাব বিক্রির টাকা দেবে ইউক্রেন যুদ্ধের খরচ হিসাবে। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন পর দারিদ্র্য থেকে অনেক লোক বেরিয়ে এসেছে, তবুও আরও বেশি মানুষ এখনও এমন একটি দূর্নিতির ব্যবস্থায় হতাশ বোধ করে । যা সাধারন মানুষের অপরাধ এবং সহিংসতাকে উত্সাহিত করে। ইউক্রেনের ক্রিমিয়া দখল ২০১৪ এবং২০১৭ সালের মধ্যে রাশিয়ান রুবেলের পতনের ফলে একটি নতুন আর্থিক সংকট দেখা দেয়। ২০১৪ সালে তেলের দাম কমে যাওয়া এবং রাশিয়ান অর্থনীতিতে উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল ক্রেমিয়া দখলের কারণে।

গর্বাচেভের সময় প্রধান সংস্কারগুলির মধ্যে একটি ছিল সমবায়ের মাধ্যমে ব্যবসা মিল কারখানা পরিচালিত করা , যা সোভিয়েত ইউনিয়নের পরে ব্যক্তিগত মালিকানাধীন ব্যবসায় পরিণত হয়েছিল। এই সমবায়গুলি সফল হয়েছিল, কিন্তু একটি ভিন্ন সমস্যার তৈরি হয়েছিল পুলিশ শুধুমাত্র রাষ্ট্রীয় উদ্যোগের প্রতিস্ঠান রক্ষা করবে। সারা দেশে তৈরি হয় বড় বড় অপরাধী চক্র। এদেরকে বলা হতো ক্রিসা বা বাংলায় বল্লে ঘরের চালা। এর অর্থ হল যে সারা দেশে অপরাধী চক্র গড়ে উঠেছে যারা অর্থের বিনিময়ে ‘সুরক্ষা’ প্রদান করে, সম্ভবত চাঁদাবাজি বললে ভাল হয়। কিয়েভে সেই সময় দুটি গ্রুপ ছিল একটা “কিসিলভ” আর একটা জরজিয়ান “তাতারেন”আমার ছোট প্রতিস্ঠান ছিল কিয়েভের গোলোসিভস্কি প্লাসাদে হোটেল মিরে আমাকে প্রতিমাসে তাতারেন গ্রুপকে ৫০$ দিতে হতো।

রমা দাদা কে জিজ্ঞেস করছিলাম আপনি কত করে দেন ? তার একটা ফুজি কালারের ল্যাব ছিল। তিনি ২০০$ করে দিতেন তাতারেন গ্রুপকেই। ইউক্রেন রাশিয়া আলাদা দুটি দেশ হলেও সবই চলতো একই ধারায়।বর্ডার গুলি ছিল নামে মাত্র অনেকটা বর্তমানের ইউরোপের মত। প্রায় প্রত্যেকেই সুরক্ষার জন্য কাউকে না কাউকে অর্থ প্রদান করছিল। কিন্তু গ্যাংগুলি দ্রুত বুঝতে পেরেছিল যে এই ছোট বাজারগুলি পরিচালনা করা তেমন লাভজনক না। পরিবর্তে, তারা সদ্য-ধনী ব্যবসায়ীদের এবং ব্যাঙ্কারদের লক্ষ্যবস্তু করতে শুরু করে, যাদের অনেকেই গ্যাং সদস্যদের দ্বারা চুক্তি নাতো হত্যার শিকার হতে হতো। এই অপরাধপ্রবণতা শুধু অভ্যন্তরীণ নয়, বিদেশী ব্যবসায়ীদের সাথেও সমস্যার সৃষ্টি করেছে। একটি রাশিয়ান ব্যবসায় বিনিয়োগ করার চেষ্টা করা মানে প্রায়শই গ্যাংস্টারদের সাথে লেনদেনের করতে হতো। যারা সুরক্ষার জন্য অর্থ দাবি করা গ্যাংস্টারদের এবং পুলিশ এবং সরকারের সাথে নিবিড় যোগাযোগ ছিল যা শীর্ষ পর্যায়ে পর্যন্ত পৌঁছে ছিল।

দেখেন তো মিল খুঁজে পান কিনা বর্তমান বাংলাদেশের সাথে !! এই পতনে কে সুবিধা নেয়? স্নায়ুযুদ্ধের সময় যেভাবে পশ্চিমাদের সাথে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত থাকা সত্ত্বেও ( ইতিহাসবিদ স্টিফেন কোটকিনের রাশিয়ার ব্যতিক্রমীতার বিশ্লেষণ তুলে ধরছি ) রাশিয়া এখনও অন্যান্য দেশের তুলনায় উন্নয়নের কিছু প্রধান সূচকে পিছিয়ে রয়েছে। শ্রম অধিকার, সামাজিক ব্যয় এবং কর নীতিতে র‍্যাঙ্কিং নিচের দিকে । রাশিয়া তার সমস্ত পশ্চিমা প্রতিবেশীদের পিছনে এবং জর্জিয়ার মতো অন্যান্য প্রাক্তন সোভিয়েত রাষ্ট্রগুলির থেকে পিছিয়ে, সমতার আন্তর্জাতিক স্কেলে মাত্র পঞ্চাশতম স্থানে রয়েছে। ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সমীক্ষা এটি নিশ্চিত করেছে, যে ‘প্রি-ট্যাক্স জাতীয় আয়ের প্রায় অর্ধেক রাশিয়ার শীর্ষ ১০% কাছে এ যায়’, এরা কারা ?

প্রাক্তন বা বর্তমান আমলা , প্রাক্তন গ্যাংস্টার এরাই বিলিয়নিয়ার, এরাই রাজিনিতিবিদ। ইউক্রেনের বিলিয়নিয়ার ইগর কলমস্কি যার বড় পুত্র আজকের ইউক্রেনের রাস্ট্রপতি জিলেনস্কি এবং বরিস বিরজভস্কির বড়পুত্র আজকের ভ্লাদিমির পুটিন । বরিস নিমসভ কে সাইজ করতে বিরজভস্কি পুটিনে টেনে নিয়ে আসেন অবশ্য পুটিন তার প্রতিদান দিয়েছে ২ জন কেই মেরে ফেলে। তবে জিলেন্সস্কি তার মনিবের প্রতিদান ঠিক ভাবেই দিয়েছে। ইগর কলোমস্কি তার প্রিভাত ব্যাংক সহ সব কিছুই ফেরত পেয়েছেন সুদে আসলে। বুক ফুলিয়ে দেশেও ফেরত এসেছেন ,সে অন্য প্রসংগ। বড় দেশগুলির মধ্যে অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় এত বিলিয়নেয়ার ! অনুপাতে ভাবা যায়?

তাদের অফশোর অ্যাকাউন্টে লুকানো বিপুল সম্পদ (রাশিয়ার জিডিপির ৭৫% পর্যন্ত অনুমান করা হয়) ১৯৯০ থেকে ১৯৯৪ সালের মধ্যে পুরুষদের আয়ু ছয় বছরেরও বেশি কমে গেছে। ১৯৯৮ সালেও যদি দেখি এবং ডেভিড স্যাটারের মতে, ‘ বিশ্বের শিল্পাউন্নত দেশ গুলির মধ্য সর্বনিম্ন’, ১৯৯৮ সালে গর আয়ু ছিল ৫৭। পশ্চিমের অনেকেই ১৯৯০ এর দশকে রাশিয়ায় মৃত্যুর হার বিশ্বাস করতে চাইতেনা গত এক দশক ধরে প্রতি বছর জনসংখ্যা ৭লাখ ৫০ হাজার কমেছে। ১৯৯৮ সালে, যখন রাশিযা রাষ্ট্র ৪০ বিলিয়ন ডলারের ঋণে খেলাপি হয়েছিল, মুদ্রা বিনিময়ের হার ঘন্টায় ঘন্টায় মধ্যে পরিবর্তন হয়েছিল। সেই দুরাবস্হার স্বীকার ব্যাক্তিগত ভাবে আমিও হয়েছিলাম । সেই অবর্ননীয় কস্টের দিন গুলি মনে পড়ে। আমি তখন মস্কোতে ছিলাম আমার আপন বড় ভাই আমার সাথে থাকতেন। উনি আমার দৈন্যদশা দেখে বল্লেন আমি তবে দেশেই ফিরে যাই । তিনি দেশে ফিরে এসেছিলেন । অনুমান করা হয় যে সঙ্কটের সময় রাশিয়ার জীবনযাত্রার মান ৪০% নিচে চলে গিয়েছিল।

সোভিয়েত-পরবর্তী রাশিয়ান অর্থনীতির পতনের অন্যতম প্রধান ফলাফল। যদিও এটি সম্পূর্ণরূপে সুষ্ঠু এবং অবাধ নির্বাচন ব্যবস্হা ছিল না, ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিলুপ্তির পর ইয়েলৎসিনের নির্বাচন ছিল এক শতাব্দীরও বেশি সময়ের পরে সত্যিকারের গণতন্ত্রের কাছাকাছি । যদিও এটি সত্য ইয়েলৎসিনের নির্বাচনি প্রচারণাকে কাজে লাগাতে সরকারি তহবিল ব্যবহার এবং সরকারের দুটি প্রধান জাতীয় টেলিভিশন নেটওয়ার্কের কার্যক্রম এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ স্বাধীন সংবাদপত্র গুলি সমর্থন করার কারণে, ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে যে নির্বাচনী সমস্যায় জর্জরিত হয়েছিল। তার প্রভাব ছিল মনোপুলি ব্যাবস্থা। তোষনারিরা তাদের ঝোলা ভরে । তার পরেও কিন্তু গনতন্ত্রে হাওয়া ছিল। পুটিন ২০০৮ সালে তৃতীয় মেয়াদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করতে পারা (সাংবিধানিক ভাবে পর পর তিন বার প্রেসিডেন্ট হওয়া যায় না)বন্ধু দিমিত্রি মেদভেদেভ রাষ্ট্রপতি হওয়ার একদিন পরই মেদভেদেভ এর ঘাড়ে বন্দুক রেখে মিডিয়ার স্বাধীনতা কে নির্বাসনে তার পরবর্তি ইতিহাস পুরো দেশটাকেই তো হিম ঘরে পাঠিয়েছেন। ২০০০ এর দশক জুড়ে পরবর্তী সমস্ত নির্বাচনকে জর্জরিত করেছে, আপনারা তাকে কি বলবেন ??একজন সৈরশাসক না কি সৈরাচারী শাসন!

Facebook Comments Box
শহীদুল ইসলাম
শহীদুল ইসলামhttps://protiddhonii.com
একজন প্রবাসী বাংলাদেশী লেখক ও গবেষক। দীর্ঘদিন ইতালিতে বসবাস শেষে বর্তমানে বামিংহামে পরিবার সহ বসবাস করছেন। ঘুরতে ভালোবাসেন আর ইতিহাস ঐতিহ্যের প্রতি রয়েছে প্রবল আগ্রহ।
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments