রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমন গেল বছর ২৪শে ফেব্রুয়ারির পরে কত লোক রাশিয়া ছেড়ে গেছে তার সঠিক সংখ্যা অজানা। তবে রাশিয়ানরা যে দেশগুলিতে এসেছে , সেই দেশগুলির অভিবাসন পরিষেবাগুলির প্রতিবেদন বলে মিলিয়ন ছাড়ি যাবে । রাশিয়া বলছে কয়েক হাজারের কথা এটা রাশিয়ান প্রোপাগান্ডা । সারা বিশ্বে রুসোফোবিয়া (রাশিয়ার প্রতি ঘৃনা )ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে এবং আমাদের কাছে এটা প্রত্যাশিত নয় তবে এটাই বাস্তবতা । উদাহরণস্বরূপ, পৃথিবীর সব দেশে দেশে ইউক্রেনের পতাকা সর্বত্র ঝুলছে।রাশিয়ানরা পশ্চিমের দেশগুলিতে যেতে পারছে না ভিসা জটিলতার কারনে ।তাই অনেকটা বাধ্য হয়েই সবথেকে বেশি রাশানরা এসেছে তাদের নিকটতম প্রতিবেশি দেশ গুলিতে।
অভিবাসীদের আগমনের কারণে, মূল্যবৃদ্ধির সাথে সাথে অর্থনীতিও বৃদ্ধি পায়। রাশিয়া থেকে ব্যাপক অভিবাসন কিভাবে আর্মেনিয়া, জর্জিয়া এবং তুরস্কের সাধারণ মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করেছে তা আমি খুঁজে বের করার চেস্টা করছি। সেই অনেক আগে গৃহযুদ্ধের সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে পালিয়ে আমেরিকার বিখ্যাত কবি সাহিত্যিক সংগিতজ্ঞ দেশ ছেড়ে বিদেশে গিয়েছিলেন। সোভিয়েত আমলের ভয়ংকর শাসনে অনেক বিখ্যাত মানুষ ইউনিয়ন ছেড়ে পশ্চিমের দেশগুলি তে অভিবাসী হয়ে ছিলেন । এমন কি সোভিয়েত সৈরশাসক (কারো কারো কাছে লৌহ মানব) যোশেপ স্টালিনের নিজের মেয়ে সিভেলানা ও তার বাবার অত্যাচারী শাসন কে মেনে না নিয়ে আমেরিকার অভিবাসী হয়ে ছিলেন।
এখন বর্তমানে রাশিয়ান শিল্পীরা একই ভাগ্যের সম্মুখীন হচ্ছেন: তাদের অভিনয় রাশিয়ায় নিষিদ্ধ, এবং তারা নিজেরাই অভিবাসী হতে বাধ্য , কেউ কেউ প্যারিসে, অন্যরা জর্জিয়া বা পর্তুগালে চলে গেছে। তাদের ভাগ্য এবং তাদের দেশ ও জাতি ছেড়ে যাওয়ার অভিজ্ঞতাকে যারা এখনো রাশিয়ায় বসবাস করছেন ইচ্ছে থাকা সত্বেও বেডহতে পারছেন না । রুশ শিল্পীরা তাদেরনিজ দেশের সাথে সম্পর্কযুক্ত করার প্রয়াসে চালিয়েছেন , একটি গানের এলবাম তারা বের করেছেন নাম “আফটার রাশিয়া” । অ্যালবামের গানগুলি রাশিয়ান ভাষার যেসকল কবি সাহিত্যিক দেশত্যাগ করেছেন অর্থাৎ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন তাদের লেখা “অলক্ষিত প্রজন্মের” কবিদের কবিতার উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। দেশত্যাগী কবি সাহিত্যিক এক্টা মেলবন্ধন রচিত হয়েছে।
এতো গেল কবি সাহিত্যকদের কথা এবার আসি সাংবাদিক দের কথায় পুটিনের দুঃশাসনে কয়েক হাজার সাংবাদিক সংবাদ কর্মি দেশ ছেড়েছেন ! রাশিয়ার মিডিয়া সম্পূর্ন ভাবে সরকারের নিয়ন্ত্রনে সারাদিন রাত সেখানে মিথ্য প্রপাগান্ডা ছড়ানো হয়। মেডুজা এবং টিভি চ্যানেল ডোসত আজ প্রতিবেশি দেশ লিথুনিয়া থেকে তাদের কার্যক্রম চালুরাখার চেস্টা করে যাচ্ছে । একি রকম অবস্হা বেলারুশের ও সৈরচারী লুকাশেন্ক নেক্সটা সম্পাদকে যুদ্ধ বিমান পাঠিয়ে লিথুনিয়ান বেসরকারী বিমানে বেলারুশে নামতে বাধ্য করলো। কারন সেই বিমানে ভ্রমন করছিল নেক্সটার সম্পাদক। ২০২০/২১ সালে বেলারুশের ভুয়া নির্বাচন এবং সৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের এবং পরে ঘটে যাওয়া প্রধান সংবাদ উত্স হিসাবে এটির বিশ্বস্ত একটি মাধ্যমে হিসাবে প্রতিস্ঠিতকরে এই নেক্সটা !
এটি ছিল (বেলারুশ)দেশের বৃহত্তম টেলিগ্রাম চ্যানেলে । যদিওপাশাপাশি ইউটিউবে মূল ভিডিও গুলি প্রকাশিত হয়, ২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ান আগ্রাসনের সময়, নেক্সটা সংঘাতের রিপোর্ট করার জন্য একটি অপারেশনাল টুল হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছিল। এক মিলিয়নেরও বেশি ফলোয়ার সহ, নেক্সটা রাশিয়ান-ভাষী বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় টুইটার অ্যাকাউন্ট চালায়। নেক্সটা লাইভ ২০২২ সালের মে মাসে দর্শকের দিক থেকে অন্যান্য বেলারুশিয়ান ইউটিউব চ্যানেলকে ছাড়িয়ে গেছে। বেলারুশের কর্তৃপক্ষ নেক্সটা র উপর চাপ প্রয়গ অব্যাহত রাখছে । নেক্সটা র এর লোগোকে অক্টোবরের ২০২০ সাল থেকে বেলারুশে চরমপন্থী বিষয়বস্তু হিসেবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নেক্সটা প্রতিস্ঠাতা রোমান প্রোটাসেভিচ এবং তার বান্ধবী সোফিয়া সাপেগাকে দুইজন গ্রীসে গিয়েছিলেন ছুটি কাটাতে। ফিরছিলেন লিথুনিয়ার রাজধানী ভিলনুসে ।
২৩ মে, ২০২১ তারিখে তাদের ফ্লাইট, রায়নায়ার ফ্লাইট 4978, ফ্লাইটি যখন বেলারুশের আকাশ সীমায় রাজধানী মিনস্কের কাছে বেলারুশিয়ান এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল প্রচার করে এই বিমানে বোমা আছে আকাশে মিগ ২১ বোমারু বিমান পাঠিয়ে বিমান টিকে মিনস্ক (বেলারুশের রাজধানি)নামতে বাধ্য করে । তাদের উদ্দেশ্য ছিল রোমান প্রেত্রভিচকে গ্রেফতার । সেই কাজে তারা সফল । একটি মিথ্যা বোমার হুমকির কারনে ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশন জুলাই ২০২২ থেকে বেলারুশিয়ান সরকারের বিমান চালনায় “অবৈধ হস্তক্ষেপ” বলে মনে করে। তার খেসারত ও তো কম দিচ্ছেনা। একমাত্র রাশিয়া আর চায়না ছাড়া বেলারুশের বিমান সারা পৃথিবীতে অবৈধ। মাথা মোটা স্বৈরাচ কে কে বোঝাবে। প্রোটাসেভিচকে ২০২১ সালের জুন মাসে থেকে গৃহবন্দী করা হয়েছে। তার বান্ধবী সাপেগাকে ৬ মে, ২০২২এ “সামাজিক ঘৃণা উস্কে দেওয়ার” জন্য ছয় বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আলা পুগাচেভা সংগিত শিল্পী তিনি রুশভাষী মানুষের কাছে ভারতের লতামংগেস্কর মত ।
রুশভাষী অনেক সংগীত শিল্পী আছে আলা পুগাচেভার জনপ্রীয়তা কিংবা তার আসপাশে দাঁড়া নোর ক্ষমতা বিগত ৫০ বছরে কারো হয়নি এবং আগামি ৫০ বছরে কেউ আসবে এরকম মনে হয়না। পুটিনের ইউক্রেন আক্রমন শিল্পী মনে মেনে নেয় নি ! প্রতিবাদ করেছেন ! বিনিময়ে এই বৃদ্ধা বয়সে আজ দেশ ছাড়া ! ম্যাকসিম গালকিন জনপ্রিয় টিভি উপস্থাপক ,কমেডিয়ান , তার শো গুলি ভিষন জনপ্রিয় ঘন্টার পর ঘন্টা মানুষ মন্ত্রমুগ্দের মত বসে থাকে । যুদ্ধের প্রতিবাদ করায় তিনি দেশ ছাড়া ! পুটিনের মন্ত্রীরা বলছে তিনি বিদেশীর এজেন্ট কেউ কেউ বলছে আগবাডিয়ে বলছে তার সমস্ত সম্পদ ক্রোকের কথা।