কর্ণফুলী,লুসাই পাহাড় থেকে নেমে আসা পৃথিবীর অন্যতম খরস্রোতা নদী।বার আউলিয়ার পূণ্যভূমি চট্টগ্রামকে অলংকৃত করেছে কর্ণফুলী।প্রায় ৩২০ কি.মি দৈর্ঘ্যের কর্ণফুলী চট্টগ্রামের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।মাছ আহরণ, জলবিদ্যুৎ সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর্ণফুলীর অবদান রয়েছে। কর্ণফুলী নদীর ইতিহাস হাজার বছরের।মধ্যযুগীয় পুঁথিতে কর্ণফুলীর নাম কাঁইচা/কাইঞ্চা খাল। তবে কর্ণফুলী নদীর নাম কর্ণফুলী হওয়ার পিছনে রয়েছে মজার এক ইতিহাস। সবচেয়ে বেশি প্রচলিত আছে রাজকুমারীর গল্পটি।
আরাকান রাজকুমারীর প্রেমে পড়ে এক পাহাড়ি রাজপুত্র। এক রুপালি পূর্ণিমা রাতে কাঁইচা খালে তারা বের হয় নৌকাভ্রমণে।
নদীর ঢেউয়ের সঙ্গে জোছনার জলকেলি রাজকন্যাকে আপ্লুত করে দেয়। ঘোরের মাঝে অসাবধানতাবশত হঠাৎ রাজকন্যার কান থেকে কানফুল খুলে নদীতে পড়ে যায়৷এই কানফুলটি রাজপুত্র ভালোবাসার নিদর্শন হিসেবে রাজকুমারীকে দিয়েছিলো।সেটি ভালোবাসার নিদর্শন হিসেবে আগলে রেখেছিল রাজকন্যা।
কানফুলটি ধরতে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজকুমারী ঝাঁপ দেয় প্রবল স্রোতে।কানফুলটি তো নিতেই পারে না;সে তলিয়ে যেতে থাকে খরস্রোতা নদীর প্রবল স্রোতের মাঝে।
নিজের প্রিয়তমাকে বাঁচাতে রাজপুত্র ও ঝাঁপ দেয়—কিন্তু তার চেষ্টাকে বৃথা করে দিয়ে হারিয়ে যায় রাজকন্যা।প্রিয়তমাকে হারানোর বেদনা সহ্য করতে না পেরে রাজপুত্রও স্রোতের মাঝে হারিয়ে যায়। তারপর পর থেকেই নাকি এ নদীর নাম কর্ণফুলী।কানফুল থেকে কর্ণফুলী।
নামকরণে আরেকটি গল্প প্রচলিত আছে।একদিন এক পাহাড়ি রাজকন্যা তার বান্ধবীদের সঙ্গে কাঁইচা খালে গোসল করতে গিয়েছিলো। পানিতে ডুব দিয়ে গোছল শেষে তীরে উঠে দেখে তার ‘কানফুল’ হারিয়ে গেছে। অনেক চেষ্টা করেও তা আর খুঁজে পাওয়া যায় না।কানফুলের শোকে রাজকন্যা অসুস্থ হয়ে পড়ে। কিছুদিন পর তার মৃত্যু হয়। তখন থেকে ‘কাঁইচা খাল’ কর্ণফুলী নদী নামে পরিচিতি পায়।
তবে নদীর নামকরণ নিয়ে আরেকটি কাহিনী আছে। অষ্টম ও নবম শতাব্দীতে এক আরব বণিক এই নদী দিয়ে নৌযানে করে ‘করণফোল(লবঙ্গ)’ নিয়ে আসছিলেন। যাত্রাপথে নৌযানটি ডুবে যায়। নদীতে করণফোল বোঝাই নৌযান ডুবে যাওয়ায় তখন থেকে নদীটির নাম হয় ‘কর্ণফুলী’।
কর্ণফুলীর ইতিহাস নিয়ে প্রখ্যাত গায়ক,গীতিকার মলয় ঘোষ দস্তিদার তার ‘কর্ণফুলীর গান’-এ লিখেছেন—
“যেদিন কানোর ফুল হাজাইয়ে (যেদিন সে কানের ফুল হারালো),
হেই দিনত্তুন নাম কর্ণফুলী (সেদিন থেকে নদীর নাম কর্ণফুলী)।
লুসাই পাহাড়ুত্তুন নামিয়ারে যারগই কর্ণফুলী (লুসাই পাহাড় থেকে নেমে কর্ণফুলী প্রবাহিত হচ্ছে)…”
– টি এইচ মাহির