আব্দুর রাফি শেখ
ঝাঁকড়া চুলের বাবরি দোলানো বাতাসে আমার ঘন চুলগুলি উৎফুল্ল হয়ে আনন্দ উল্লাসে মেতেছে আজ স্ব-স্বাধীনতায়। বেলাটা ছিল অপরাহ্ণে নিজ ভবনের চিলেকোঠায় বসে। হাতে কলম নিয়ে ভাবছিলাম আমি লিখব টা কী আজ। হঠাৎ বয়ে এলো ঝাঁকড়া চুলের বাবরি দোলানো বাতাস। যেন এক বুক প্রশান্তি দিয়ে মন পূর্ণ করেও বারংবারই আপ্যায়ন করে চলেছে স্বেচ্ছায়। বস্তুত ইহা প্রকৃতির আপ্যায়ন। প্রকৃতির রূপে রয়েছে নানা বৈচিত্র। তবে তার প্রতিটা রূপই সূচনার অতীত থেকে করে আসছে আমাদের আপ্যায়ন। প্রকৃতি তার রূপে আমাদেরকে প্রতিনিয়ত করে তুলছে অনন্যময়ী মুগ্ধতার প্রেমিক। কখনো কি উপভোগ করা হয়েছে নদীর জোয়ার ভাটা, কাশবনের সৌন্দর্য, চোখ জোড়ানো মেঘলা আকাশ? উপভোগ করা হয়েছে অপরাহ্ণের সূর্যাস্তের ঝাপসা লাল আকাশ? অধিকাংশেরই উত্তর হবে, “না” হয়নি উপভোগ করা। অথচ পড়ন্ত বিকাল প্রকৃতিরই এক সৌন্দর্য হওয়া সত্বেও প্রকৃতি নিজেই নীরব হয়ে উপভোগ করে তার সৌন্দর্য পড়ন্ত বিকাল। আমরা প্রকৃতির অনন্যময়ী সৌন্দর্য উপভোগ করবই বা কি করে। আমরা তো আজ ব্যস্ত আছি প্রকৃতি ধ্বংস করাতে। প্রকৃতির সৌন্দর্যকে ধামাচাপা দিয়ে আমরা আজ ক্রমাগত কৃত্রিম সৌন্দর্য তৈরিতে মগ্ন। আমরা আজ এতটাই বোকা যে, আমাদের ধারণাটা কিছুটা এমন হয়ে গেছে,
কোনো শিশু জন্মানোর পর তাকে জননীর বুকের দুগ্ধ পান না করিয়ে পান করাচ্ছি কৃত্রিম মিল্ক পাউডার এবং দৃঢ় আশাবাদী হচ্ছি যে কৃত্রিম মিল্ক পাউডার শিশুর জন্য জননীর বুকের দুগ্ধ অপেক্ষা বেশি উপকারী। অথচ শিশুর জন্য জন্মগ্রহণের পর পরই জননীর বুকের দুগ্ধ অত্যন্ত জরুরী। জননীর বুকের দুগ্ধে যা বিদ্যমান রহিয়াছে তা অবশ্যই কৃত্তিম মিল্ক পাউডারে অনুপস্থিত। তেমনি সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত প্রকৃতিই আমাদের জন্য যথাযথ। যদিও তা উপেক্ষা করে আমরা আজ ক্রমাগত করেই চলেছি প্রকৃতির ধ্বংস। উপকারের দিক থেকে প্রকৃতিই সেরা। সর্বপ্রথম বলতে হয় আমরা খাদ্যের জন্য নির্ভর উদ্ভিদের উপর অর্থাৎ যা প্রকৃতিরই এক রূপ। চিকিৎসা ক্ষেত্রে সব ধরনের ঔষধ তৈরি হয় প্রকৃতি থেকে। প্রতিনিয়ত প্রকৃতির দানকৃত অহরহ সেবা গ্রহণ করেও আজ আমরা প্রকৃতির প্রতি বিন্দুমাত্র কৃতজ্ঞতা তো দূরে থাক সহানুভূতি ও প্রদর্শন করতে ইচ্ছা পোষণ করি না। বরং অতি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কারণে আজ আমরা নিমিষেই ধ্বংস করে চলেছি হাজারো উদ্যান, দূষিত করছি নদী, বায়ু। যেখানে কারো দ্বারা সামান্য উপকৃত হলে আমরা কৃতজ্ঞতা প্রদর্শন করি। সেখানে আজ আমরা যার দ্বারা প্রতিনিয়তই উপকৃত হচ্ছি আজ তাকেই ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে দাড় করাতে ব্যস্ত আমরা। আমাদের চিন্তাধারা এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশে রয়ে গেছে চরম ঘাটতি।হয়তো বদলাতে হবে চিন্তাধারা এবং প্রদর্শন করতে হবে যথোপযোগী কৃতজ্ঞতা। অন্যথায় হৃদয়ঙ্গমে ধারণ করতে হবে নিজেকে এক অকৃতঘ্ন বাদুর স্বরূপ। সর্ব অন্তে চিরন্তন সত্য দুটি কথা না বললেই নয়।
প্রকৃতি তুমি বিরল।
তুমি অতীত।
তুমি চলমান।
তুমিই আগামী।